রাহা, তিন্নি, ঐশী এবং কথিত নারীবাদ!
লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সামাদ রাজু ২০ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫৪:৫৪ রাত
লেখার শুরুতেই কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাখি। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- একটি মেয়ে খুন করেছে তাতে এত হৈ হুল্লোড় কেন? প্রতিদিন কত ছেলেই তো উচ্ছন্নে যাচ্ছে, করছে খুন খারাবি! কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন- মাদকাশক্ত হয়ে কত ছেলেই তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিংবা কেউ কেউ রিকভারী ইন্সটিটিউটে ভর্তি হচ্ছে তাহলে কেন মেয়েদের বেলায় এত মাতামাতি? আবার কেউ এও জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে- আত্মহত্যা প্রতিদিন কত ছেলেরাওতো করে একটা মেয়ে আত্মহত্যা করলে কী এমন হয়ে গেল যে এত হৈ-হুল্লোড় করতে হবে!
হ্যাঁ এসব বিষয় আমি মানছি। সাধারণ অর্থে সবার ক্ষেত্রেই সমান ভাবে সবকিছু ভাবা উচিৎ। যেমন একটা ছেলের অন্যায়ে যতটুকু কথা বলা উচিত ঠিক ততটুকুই একটা মেয়ের ক্ষেত্রেও। কিন্তু কথা হলো অন্য জায়গায়। একটা পরিবারের একজন মা ও একজন বাবা যতটুকু নিরাপদ ছিলেন তাদের ছেলের কাছে তারচেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত থাকতেন তাদের মেয়েদের কাছে। অথচ সেই কন্যাসন্তানের হাতেই এখন খুন হতে হয় মা বাবাকে। তাহলে কী আমরা ধরে নিব না- কথিত নারী স্বাধীনতার নামে নারীদেরকে চিরন্তন কোমল স্বভাব ঠেলে হিং¯্র করে তৈরি করছেন সমাজের কতিপয় নারীবাদীরা! দ্বিতীয় প্রসঙ্গ: প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখি কিংবা তারও অন্তরালে অসংখ্য ছেলেরা মাদকাশক্ত হয়ে উচ্ছন্নে যাচ্ছে। কেউবা একেবারেই না ফেরার দেশেও চলে যাচ্ছে। কিন্তু কথা হলো- আমরাতো আমাদের প্রিয়তমাদের মুখ থেকে লাল পানির গন্ধ আশা করিনি। আমরাতো চাইনি আমাদের মা-বোনেদের মুখ নেশার কবলে বিকৃত হয়ে যাক! নারী-পুরুষ সমান অধিকার বলতে কী তাহলে পুরুষের মতো জঘন্য মদ, গাঁজা কিংবা যাবতীয় নেশাজাত দ্রব্য সেবনকেই বুঝায়? তৃতীয় প্রসঙ্গ: আত্মহত্যা বর্তমান পৃথিবীতে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন কতশত ছেলে আত্মহত্যা করে তার কোন ইয়ত্তা নাই। কিন্তু যেই নারীর ভালবাসা আর আশ্বাসে হাজারো পুরুষ এতদিন আত্মহত্যার অন্ধটানকে উপেক্ষা করতো সেই নারীই কেন আজ আত্মহত্যার মতো জঘন্য পন্থা বেছে নিচ্ছে? এটাও কী নারী অধিকার?
এবার মুল লেখায় আসি। আমি নারী অধিকারে বিশ্বাস করি। কারন একজন অধিকারবঞ্চিত নারী মানেইতো আমার মা হতে পারে। কিংবা শ্বশুরালয়ে নির্যাতিত একটি মেয়েতো আমার বোনও হতে পারে। তাহলে কেন আমরা নারী অধিকারের বিপক্ষে কথা বলবো? এখন প্রশ্ন হচ্ছে নারী অধিকার বলতে কী নারীদেরকে আত্মহত্যার সার্টিফিকেট দেয়া? নারী অধিকার মানে কী নিজের লাগামহীন জীবন অপছন্দ করলে জন্মদাতা মা-বাবাকে খুন করার অধিকার দেয়া? যদি তাই হয় তবে আমি নারী অধিকার বিরোধী। আর এমনটি পুরুষের ক্ষেত্রে ঘটলে তারও বিরোধী।
অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছি ঐশীর লেখা চিরকুট থেকে। সেখানে ঐশী তার অধিকার হরণের হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য লিখেছেন। আর সেজন্য আত্মহননের পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু আমরা যদি ঐশীর সেই অধিকারগুলো বিশ্লেষণ করতে যাই তাহলে গা ছমছম করা ভয়ে কুঁকড়ে যেতে হয়। কারণ ঐশী’র অধিকার মানে তো ছিল নিয়মিত রাত করে বাসায় ফেরা, কয়েকটা বয়ফ্রেন্ড থাকা, মাদকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকা। আর তার মা-বাবা তার অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল বলতে সে যা বুঝাতে চায় সেসবতো নিশ্চয়ই এগুলোই! তাই নয় কী? এছাড়াও লাক্স তারকা রাহা এবং অভিনেত্রী তিন্নি’র কথাও বলা যায়। তারাও জীবনের হতাশায় কিংবা জীবনের অর্থ খুঁজতে কেউ আত্মহত্যা করেছেন কিংবা কেউ মাদক নামের লাল জগতে পা বাড়িয়েছেন। এসব তো জনসম্মুখে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এখানে কোন প্রমাণতো আর দিতে হবে না।
এখন মনের মাঝে একটি প্রশ্ন কিলবিল করছে। ঐশী, তিন্নি কিংবা রাহা নতুন আবিষ্কার করা কোন পদ্ধতির জীবন বেছে নেননি। তারা কেউ বিশেষজ্ঞ কিংবা উদ্ভাবকও নন। তাহলে পরিষ্কার যে তারা একটি গতানুগতিক ধারা বেছে নিয়েছেন অর্থ্যাৎ কোন একটি জীবনাচরণ তাদের পছন্দ হয়েছে আর তাই তারা গ্রহণ করেছে। এখন আবার প্রশ্ন, কী সেই জীবনাচরণ?
প্রথমেই বলা দরকার- আবহমান বাংলার নারীরা মাদক, আত্মহত্যা কিংবা হত্যার সাথে কখনো জড়িত ছিল না। তারা একটি রীতিবদ্ধ সরল কোমল জীবন যাপন করে এসেছে। সেখানে লাঞ্চনা পেয়েছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো অধিকার হারানোর আক্ষেপ থেকেছে। কিন্তু এখনকার মতো এই অধিকার ভোগ করার আশাও তারা করেননি। তাহলে অধিকারবাদী নারীরা কোত্থেকে পেলো এসব অধিকার? নিশ্চয়ই কারো শেখানো রুটেই তারা পরিচালিত হচ্ছেন! তাহলে এবার একটি শক্ত কথা বলতে হয়। নারীবাদি নামে কিছু ব্যাক্তিকে দেখি ইদানিং তারা বিভিন্নভাবে নারীদেরকে ভিন্ন একটি জীবনধারা বেছে নেয়ার প্রস্তাব করে থাকেন। যেমন সেখানে রয়েছে- অবাধ চলাফেরার অধিকার, সেখানে রয়েছে সম্পূর্ণ স্বাধীণতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা। রয়েছে বহুগামিতা, ক্লাব/ বার যাত্রা এবং আরো নানাবিধ অধিকারের সুযোগ। আর নারীদেরকে তারা শেখাচ্ছেন- “এসব তোমাদের অধিকার, এতদিন তোমাদেরকে এসব থেকে বঞ্চিত রেখে একটি ধর্ম তাদের সংকুচিত চিন্তার বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছিল। ঐ ধর্মের এরকম খামখেয়ালির শিকল ভেঙে নারী তুমি গর্জে উঠো। ”
হ্যাঁ নারী গর্জে উঠেছে বাঘিনীর মতো। কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেছে। এসব বাঘিনীদের প্রায় সবগুলোর চেহারায় দেখি, রক্তপিপাষা। আবার তাদের চেহারায় দেখি আত্মযন্ত্রণার তীব্র জ্বালা সইতে না পেরে ধুঁকতে থাকার চিত্র। তাহলে কী হবে এই অধিকার বাস্তবায়নে। কী হবে এই বহ্নিশিখায়!
আরো দু’চারটি কথা। আমি আবারো বলছি। নারীবাদ কিংবা নারী অধিকারের বিপক্ষে আমিও নই। আমারও ইচ্ছে করে নারীরা সুখে থাকুক হাসুক নির্মল। কিন্তু কোত্থেকে কোন এক নতুন নারীবাদের উত্থান হলো যে- সেখানে মাতলামী, আত্মহনন আর জিঘাংশার মতো অধিকার বাস্তবায়নের স্বীকৃতি রয়েছে? সেই নারীবাদকে বলছি- এখন কী বলবে তোমরা? নারীবাদ আর নারী অধিকার নিয়ে তোমরা যা ফেরী করছো তা নিয়ে কী নতুন করে ভাবার সময় হয়নি? নাকি তোমাদের ভিন্ন একটি উদ্দেশ্য রয়েছে?
হ্যাঁ সেই উদ্দেশ্যও আমরা টের পেয়েছি অনেক আগেই। কিন্তু বাস্তবায়ন হবে না। হতে দেয়াও যাবে না। তা বাস্তবায়ন হলে যে আমার মা, মা থাকবে না, বোনকে ভয় পেতে হবে প্রিয়তমার কোল হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর স্থান!
http://www.bdbreaking24.com/view.php?id=3353
বিষয়: বিবিধ
২১৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন