চিরকুট
লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সামাদ রাজু ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৭:৫৪ সকাল
মায়ের গল্প
এইমাত্র ক্লাস শেষ হলো ফাহিমের। এখনি বাসায় যাওয়ার চিন্তা নেই, কারন বাসায় কাজের মেয়েটি ছাড়া আর কেউ নেই। ফাহিম পাশের একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে। ঢুকেই দেখে শিমু ম্যাডামও এখানে। তাকে দেখেই ম্যাডাম ডাক দেয়। এই সেরেছে। আর রেহাই নেই । একের পর এক প্রশ্ন করবে। ফাহিমের পুরো পরিচয় জানার পর শিমু ম্যাডাম কেন জানি প্রায়ই তাকে খুব বেশি কেয়ার করে। এমনকি মুখের ঘামগুলোও মুছে দেয় প্রতিদিন। “কি ভাবছো ফাহিম? এদিকে আসো।” ফাহিম কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। শিমু ম্যাডাম প্রশ্ন করে , “কি আজ হোটেলে খাবে? ” “হ্যাঁ ম্যাডাম বাসায় কেউ নাইতো তাই”।“কেন কোথায় গেল তোমার বাবা?” “অস্ট্রেলিয়া। হঠাৎ উঠে দাঁড়ায় শিমু ম্যাডাম। “চলো আজ তাহলে তোমার বাসায় রান্না করে খাবো। ” ফাহিম অবাক হয়ে যায়। “কিন্তু ম্যাডাম এখনতো সন্ধ্যা হয়ে আসছে আপনি আবার কখন ফিরবেন?” “কেন রাতেও রাতেও থেকে যাবো!” “সত্যি বলছেন ম্যাডাম?”“আমি তোমারা সাথে মিথ্যা বলবো?” ফাহিম মাথা নাড়ে। দুজনেই বেরিয়ে যায়। রিক্সা ডেকে ম্যাডাম উঠে পড়ে ফাহিমকেও তুলে নেয়। ফাহিম হিসাব মিলাতে পারছেনা। এভাবে হঠাৎ ম্যাডাম যাওয়ার কথা বলে বসল? এখন কিভাবে কি করবে তার জন্য? হঠাৎ একটি কান্ড দেখে বিস্মিত হয় ফাহিম। ম্যাডামই রিক্সাওয়ালাকে পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। “আচ্ছা ম্যাডাম আপনি আমাদের বাসা চিনেন কিভাবে?” “আরে তুমিইতো বলেছিলে”। ফাহিমের মনে পড়েনা কবে কখন কেন বলেছিলো । বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে যায়। হাত মুখ ধুয়ে ফাহিম ডাইনিংয়ে বসে , সাথে সাথে খুব স্বাচ্ছন্দেই ম্যাডামও বসে যায়। কাজের মেয়ে ভাত এনে দেয়। খাওয়া শেষে ফাহিমকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে শিমু ম্যাডাম । “আচ্ছা ফাহিম তোমার বাবা এই বাসায় কি আজীবনই থাকবে?” “মনে হয় ম্যাডাম” জবাব দেয় ফাহিম। “তিনি কি এখনও ব্যাংকের চাকরীটাই করেন?” ফাহিম নিশ্চুপ। ম্যাডাম আবার জিজ্ঞাসা কওে,“আচ্ছা ফাহিম তোমার বাবা তোমার প্রথম জন্মদিনে একটি সোনার চেইন দিবে বলেছিলো ওটা কি তোমার কাছে আছে?” এ প্রশ্নের জবাবও দেয়না ফাহিম। শিমু ম্যাডামও আর প্রশ্ন করেনা। আজকের পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন ম্যাডাম। তাকিয়ে দেখেন সোফায় ঘুমিয়ে পড়ছে ফাহিম। “ফাহিম সোফায় ঘুমাবেনা। হাঁড়ে ব্যাথা করবে, যাও বিছানায় যাও।” ফাহিম তার বিছানায় চলে যায়। শুয়ে থাকে কিন্তু এবার আর ঘুম আসেনা। এক কঠিন পোকা মাথায় ঢুকে পড়ে তার। ফাহিমের গা শিউরে উঠে। শিমু ম্যাডামকে মানুষ ভাবতে কষ্ট হয়। একজন মানুষ কিভাবে এরকম অপরিচিত একটি বাসার যাবতীয় সব কিছুই আন্দাজ করে বলে দেন আর তা ঠিকঠাক মিলেও যায়। ফাহিম ছটফট করে শুধু। আস্তে আস্তে শিমু ম্যাডাম তার ঘরে ঢুকে। ফাহিমের পুরো শরীর হিম হয়ে যায় ভয়ে। ম্যাডাম এসে তার মাথার পাশে বসে। দম বন্ধ হয়ে আসে ফাহিমের। শিমু ম্যাডাম বিড়বিড় করে বলে, “ঘুমাও , ঘুমাও ।” বলতে বলতে ফাহিমের কপালে হাত দেয়, চুলে হাত দিয়ে বিলি কেটে দেয় । কেন জানি ফাহিমের মন থেকে ভয় কেটে যায়। পুরো শরীর জুড়ে এক স্বর্গীয় প্রশান্তি বয়ে যায়। এতক্ষন ম্যাডামকে দেখানোর জন্য চোখ বুজে থাকলেও এবার সত্যিসত্যি ঘুমিয়ে পড়ে সে। শিমু ম্যাডাম মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আস্তে করে“ ফাহিম” বলে কপালে একটা চুমু দেয়। আবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে কতক্ষন কে জানে? ভোরের আলো ফুটে উঠে। জীবনের সবচেয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম শেষে ফাহিম জেগে উঠে। চোখ মেলেই দেখে এখনো ম্যাডাম তার শিয়রে বসা। দুচোখ বেয়ে জলধারার রেখা চিবুক পর্যন্ত। “স্যরি ম্যাডাম! আপনি ঘুমাননি? ” শিমু ম্যাডাম উঠে যায়। ফাহিম ভাবছে হয়তো ম্যাডাম ড্রইং রুমের দিকে যাচ্ছে । কিন্তু না, ম্যাডাম ব্যাগটি কাঁধে নিয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ফাহিম এগিয়ে যায় কিন্তু ততক্ষনে ম্যাডাম রাস্তায় উঠে যায়। ফাহিম কোন কিছু চিন্তা না করেই ডাক দেয়, “ম্যাডাম?” “বাই বাবা!” বলেই ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে ম্যাডাম। ফাহিম তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ ফাহিমের মোবাইলে ম্যাসেজ টোন । খুলে দেখে ফাহিম।“ ফাহিম তোমার বালিশের নিচে একটা চিরকুট আছে পড়ে নিও।” ফাহিম দৌঁড়ে বেডরুমে চলে যায়। বালিশ উল্টিয়েই দেখে একটি কাগজ । তাৎক্ষনিক ফাহিম তা খুলে পড়তে থাকে। নিপুন হাতে লেখা ,
ফাহিম
‘‘বাবা তোকে বিচ্ছেদের পর এই প্রথম প্রা............ণ ভরে দেখলাম , তোকে আর মানসিক দ্বন্ধে ফেলতে চাইনা বাবা , হ্যাঁ আমিই তোর মা! আমি ,আমিই। এই অভাগীনিই। ”
ইতি
শিমু(তোর দুঃখীনি মা)
হাত থেকে চিরকুটটি পড়ে যায়। ফাহিমের মনে পড়ে তার বাবাও এরকমই একদিন বলেছিলো। অপ্রকৃতিস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ফাহিম।
বিষয়: Contest_mother
১৬৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন