ক্রিমিয়ার রাশিয়ায় অন্তর্ভূক্তি : অনিশ্চয়তার মুখে তাতার সম্প্রদায়
লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৮:১০:০৭ সকাল
একটা বিশেষ কারণে আজকের এই লেখা । গত কদিন ধরে আমি ক্রিমিয়াকে নিয়ে লিখে যাচ্ছি । এতে অনেকে প্রশ্ন করেছেন,আমি কি বাংলাদেশের সমস্যা দেখি না ? হটাৎ ক্রিমিয়াকে নিয়ে কেন উঠে পরে লাগলাম । বা কেও বলছেন ক্রিমিয়া রাশিয়ায় অন্তর্ভূক্তি হয়ে ভালো হয়েছে । মুলত সেই ভাইদের তার স্বজাতি মুসলমানদের সম্ভাব্য অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা জানাতেই এই লেখা :
★অনিশ্চয়তার মুখে তাতার সম্প্রদায়★
ক্রিমিয়ার স্বাধীনতা এবং রাশিয়ায় অন্তর্ভূক্তি নিয়ে বিজয় ধ্বনিতে হারিয়ে গেছে অন্য একটি কন্ঠস্বর। ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়ার আইনের আওতায় আসার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি।
ব্ল্যাক সি উপদ্বীপের মোট ২০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশই তাতার জনগোষ্ঠী। তুর্কি বংশোদ্ভূত সুন্নী মুসলিম তাতাররা ক্রিমিয়াকেই নিজস্ব ভূ-খন্ড বলে মনে করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা বিতাড়িত হওয়া এবং তার আগে জোসেফ স্টালিনের দমনের শিকার হওয়ার পর ইউক্রেনকেই নিজেদের জন্য উপযোগী বলে মনে করে তাতাররা। আর তাই ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টায় শুরু থেকে বিরোধিতা করে আসছিল তারা। বর্জন করেছিল গণভোট। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।
আর শেষ পর্যন্ত নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত হতে হচ্ছে তাদের।
★কারা এই তাতার সম্প্রদায় ?★
ক্রিমিয়ান তাতার হচ্ছে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত ইউক্রেনের একটি স্বায়িত্বস্বাসিত প্রজাতন্ত্র। বহু উত্তান পতনের নীরব সাক্ষী ক্রিমিয়া। ক্রিমিয়ার এ বিস্তীর্ণ অঞ্চল শত বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শাসকদের দ্বারা শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। ২৬, ২০০ কিলোমিটারের আয়তন বিশিষ্ট ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্রের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৯, ৭৩, ১৮৫ জন। ক্রিমিয়া হচ্ছে ক্রিমিয়ান তাতারদের জন্মভূমি, যারা নৃতাত্ত্বিকভাবে সংখ্যালঘু। গোটা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ ক্রিমিয় তাতার।
ক্রিমিয়ান তাতারদের পূর্বপুরুষ হচ্ছে তুর্কী। ত্রয়োদশ শতাব্দী হতে তারা ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে বসবাস করে আসছে। মূল তাতারগণ পঞ্চম শতাব্দীতে গোবী মরুভূমির উত্তর পশ্চিমে বসবাস করত। নবম শতাব্দীতে খিতানগণ তাদের এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে তারা দক্ষিণ অভিমূখে যাত্রা করে। চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মোঙ্গল শাসন কায়েম করে। চেঙ্গিস খানের দৌহিত্র বাতু খানের পরিচালনায় তাতারগণ পশ্চিম দিকে রাশিয়ার সমতল অভিমূখে রওনা হয়। যাত্রার সময় তারা তাদের সাথে তুর্কী উরাল বংশোদ্ভুত জনগণকেও সাথে নিয়ে যায়।
বর্তমানে ভাগ্য বিড়ম্বিত বিপুল তাতার রাশিয়া, ইউক্রেন, মলদোভা, লিথুয়ানিয়া, বেলারুশ, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, চীন, কাজাখস্তান, তুরস্ক ও উযবেকিস্তানে বসবাস করে আসছে। তাতার জনগোষ্ঠীর একটি অংশ হেলসিংকী, ফিনল্যান্ড ও নিউইয়র্কে হিজরত করে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে। গোটা দূনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাতারদের জনসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
[শুধু তাতারদের নিয়ে একটি আলাদা লেখা লিখবো ইন্সাআল্লাহ]
★মজলুম তাতারেরা সুখের দিন গুনছিলো★
রুশ বলয়ভূক্ত ক্রিমিয়ার ঐতিহ্যসমৃদ্ধ তাতার মুসলিম জনগোষ্টী তিন শ’ বছরের বাধা-বিপত্তি ও গোলামীর জিঞ্জির ছিড়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর সংগ্রামে বিজয়ী হতে চলেছিল। অব্যাহত নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও গণ নির্বাসন চালিয়েও তাতারদের মুসলিম জাতিসত্ত্বা মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। আবার তারা জেগে উঠছিল ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিজস্ব বলয়ে। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে আবার দেখা দিয়েছে ইসলামী নবজাগরণ। নতুন নতুন মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে এবং আনুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে নামাযীদের সংখ্যা। উত্তরাধিকার ঐতিহ্য ও তাওহিদী চেতনায় জীবন গড়ার তাগিদ তীব্রভারে অনুভূত হচ্ছে তাতারদের মাঝে। হারিয়ে যাওয়া তাতার ভাষার পুনরুজ্জ্বীবনের জন্য ক্রিমিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গড়ে উঠেছে তাতার ভাষা স্কুল।
★বর্তমান সংকট★
ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়ার আইনের আওতায় আসার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি।ইউক্রেনকেই নিজেদের জন্য উপযোগী বলে মনে করে তাতাররা। আর তাই ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টায় শুরু থেকে বিরোধিতা করে আসছিল তারা। বর্জন করেছিল গণভোট।
কেন তারা রাশিয়ার অংশ হতে চান না? এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা আসাবা নামে তাতারদের এক নেতা বলেন, ‘রাশিয়ার সরকার নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না, কারণ এর প্রধান একজন স্বৈরাচারী।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা উপভোগ করেছি এবং এখন যদি তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালায় তবে আমরা তা প্রতিহত করব।’
৫৮ বছর বয়সী আসাবার জন্ম উজবেকিস্তানে। তাতারদের বিশেষ নাৎসী ইউনিটে যোগ দেয়ার সাজা হিসেবে ১৯৪৪ সালে সেখানে নির্বাসিত করা হয় তার পরিবারকে। অনেকে রেড আর্মিতে নিয়োজিত থাকলেও, রুশ সেনারা ব্ল্যাক সি উপদ্বীপ পুনর্দখলে নেয়ার পর সমগ্র তাতার সম্প্রদায়কে নির্বাসনে পাঠান স্টালিন।
আর তাই তাতারদের থেকে খুব সংক্যক মানুষই ক্রিমিয়া ছাড়বে বলে দাবি করেন তিনি। আসাবা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তাতারদের ৯৫ শতাংশ মানুষই ক্রিমিয়ায় থাকবে। কারণ ক্রিমিয়া আমাদের মাতৃভূমি।
এদিকে আতঙ্কিত হয়ে তাতারদের অনেকেই এরইমধ্যে খাদ্য মজুদ করতে শুরু করেছেন। তাদের আশঙ্কা তাতারদের সম্পত্তি দখল করবে রাশিয়া। কারণ হিসেবে তারা জানায়, তাতারদের বেশিরভাগ সম্পত্তিরই নিবন্ধন করা হয়নি। আর রাশিয়ার আইন খুব কড়া হওয়ায় তা বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে গেল সপ্তাহে বেশ কয়েকজন তাতার ক্রিমিয়া ছাড়ার পর তাদের আর হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তাতারদের আরেক নেতা রিফাত চৌভারভ।
আল্লাহ আমার মজলুম ভাইদের রক্ষা করুন । সকল মুসলমানদের তাদের পক্ষে কথা বলার শক্তি দিন-ইচ্ছা দিন-দিন ইমানী জজবা । আমীন ।
বিষয়: রাজনীতি
২০৯৭ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অত্যন্ত চমৎকার লেখা।জাজাকাল্লাহ
কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না সেখানের ব্যবস্থাপনা মুসলমানের অবস্থানের ব্যপারে, কারন দেশটির ব্যপারে অনেকেই অজানা
তাই আপনার লেখা থেকে অনেক কিছুই বুঝতে পারলাম এবং জানতে পারলাম।
সব মুসলমান কম বেশি কষ্টের মধ্যে আছে এমনকি সংখ্যা গরিষ্ট মুসলিমদেশ আমাদের দেশেও, তবে দোয়া করছি যাতে সব দেশে মুসলমানদের ধৈর্য্যের পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার জন্যে
ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন