আল কায়েদা নাটকটা রেসমা নাটকের চাইতে দুর্বল হয়ে গেল না ?ヅ
লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:২৭:৫১ দুপুর
বাংলাদেশে জেহাদের আহ্বান সংবলিত কথিত এ অডিও বার্তার খবর প্রচারের পর প্রথম যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তা হলো সত্যিই এটা আলকায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির বক্তব্য কি না। আর তা কারা কিভাবে এটি ইন্টারনেটে ছাড়ল এবং এর উদ্দেশ্যই বা কী এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা।
অডিও বার্তাটি আলকায়েদার কি না এ নিয়ে প্রশ্ন জাগার কারণ হলো প্রচারিত অডিও বার্তাটিতে আয়মান আল জাওয়াহিরির স্থিরচিত্র দেখানো হয়েছে। রেকর্ডকৃত আরবিতে প্রচারিত কণ্ঠস্বর আয়মান আল জাওয়াহিরির বলে দাবি করা হয়েছে। সরাসরি তার ভিডিও বক্তব্য নয় এটি। আরবিতে অডিও বক্তব্যের নিচে তার অর্থ ইংরেজিতে লিখিত আকারে দেখানো হয়েছে পর্দায়।
এখন পর্যন্ত আলকায়েদার যত অডিও ভিডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে তার বেশির ভাগই কাতারভিত্তিক আলজাজিরা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে আলকায়েদার বলে প্রচারিত ভয়াবহ একটি অডিও বার্তা সত্যিকার অর্থে কে কোথা থেকে কবে প্রথম প্রচার করেছে তা নিয়ে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ আলকায়েদার মিডিয়া শাখা আস সাহাবের ওয়েবসাইটে গতকাল সন্ধ্যার পর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি এ বিষয়ে।
গত শনিবার দুপুরের পর বাংলাদেশের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে আলকায়েদার অডিও বার্তা সম্পর্কিত খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। অনলাইনে প্রচারিত খবরে দাবি করা হয়েছে তাদের কাছে এ অডিও বার্তার একটি কপি রয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে কিভাবে এ কপি তাদের কাছে এলো সে বিষয়ে বাংলায় পরিবেশিত খবরে কিছু বলা হয়নি। তবে অনলাইনটির ইংরেজি ভার্সনে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে জঙ্গি অডিও ভিডিও প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি ওয়েবসাইটে এটি প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটের নাম ঠিকানা এবং কবে কিভাবে কারা সেখানে এটি প্রচার করেছে সে বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। ইংরেজিতে পরিবেশিত খবরেও অনলাইনটি দাবি করেছে তাদের কাছে অডিও বার্তার একটি কপি রয়েছে।
শনিবার এ অনলাইন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারের পরপর বাংলাদেশের অন্যান্য অনলাইন সংবাদমাধ্যম, দৈনিক সংবাদপত্রগুলো এ বিষয়ে ইন্টারনেটে আরো খোঁজখবর নেয় এবং গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গুরুত্বসহকারে। দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এসব খবরে অডিও বার্তাটির সূত্র হিসেবে ইউটিউব, ব্লগ, ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। সবাই লিখেছে এটি এখন ইউটিউব, বিভিন্ন ব্লগ, ফেসবুক, জিহাদোলজিসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এ অডিও বার্তাটি সর্বপ্রথম কারা কোথায় প্রচার বা প্রকাশ করেছে সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত তথ্য পরিবেশন করতে পারেনি। কোথাও লেখা হয়েছে দাওয়া ইলাল্লাহ ব্লগে এটি এ বছর ১৪ জানুয়ারি আপলোড করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে জিহাদি ফোরামে এটি চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে। জিহাদোলজি নামে একটি ব্লগে এ অডিও বার্তাটি দেখা গেছে এবং এর সূত্র হিসেবে তারা আলকায়েদার মিডিয়া শাখা আস সাহাবকে উল্লেখ করেছে। কিন্তু গতকাল রাতেও আস সাহাবের সাইটে এ বিষয়ে কিছু পাওয়া যায়নি এবং এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্যও নেই। তবে পরিবেশিত খবরে সবাই একমত, অডিও বার্তাটি গত বছর নভেম্বর মাসে প্রস্তুত করা হয়েছে।
অডিও বার্তাটি কারা প্রকাশ ও প্রচার করেছে এ বিষয়ে অস্পষ্টতা এবং অডিও বার্তাটিতে আয়মান আল জাওয়াহিরির সরাসরি ভিডিও বক্তব্য না থাকায় গতকাল সব সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে সংশয়, সন্দেহ ও প্রশ্ন করা হয়েছে এটি আসলে সত্যি কি না। শুধু গত শনিবার দুপুরে যে অনলাইন সংবাদমাধ্যটি সম্প্রতি প্রথম এ খবরটি প্রচার করেছে তারা দাবি করেছে এর একটি কপি তাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু কপির এ সূত্র বিষয়ে তাদের পরিবেশিত খবরেও রয়েছে নীরবতা।
তবে মজার বিষয় হলো নতুন দিন নামে একটি অনলাইনে গত বছর ২৯ নভেম্বর জাওয়াহিরির এ অডিও বার্তা নিয়ে একটি খবর প্রচার হয়। খবরটির হেডলাইন ছিল আলকায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির বার্তা : বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। নতুন দিন জানায়, আরবির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় প্রকাশ করা একটি অডিও বার্তায় জাওয়াহিরি এ বক্তব্য প্রচার করেছে। বাংলাদেশ সময় ২৯ নভেম্বর শুক্রবার রাত ৩টায় ফেসবুকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে এ ভিডিও বার্তাটি রিলিজ করা হয়।
নতুন দিন অনলাইনে এ অডিও বার্তাটির যে বিবরণ দেয়া হয়েছে তার সাথে মিল রয়েছে গত শনিবার প্রচারিত জাওয়াহিরির অডিও বার্তার সাথে। নতুন দিন অডিও বার্তার লিংক দেয়নি। তবে অডিও বক্তব্যের ধরন সম্পর্কে বলা হয়েছে আরবিতে প্রচারিত বক্তব্য জাওয়াহিরির বলে দাবি করে একজন বক্তব্য রাখে তাতে। ভিডিওতে জাওয়াহিরির স্থিরচিত্র দেখানো হয়েছে। এর সাথে হুবহু মিল রয়েছে গত শনিবার প্রচারিত বলে দাবিকৃত জাওয়াহিরির কথিত অডিও টেপের সাথে। তা ছাড়া নতুন অনলাইন যতটুকু অডিও বক্তব্য কোড করেছে তার সাথেও বেশ মিল রয়েছে শনিবারের অডিও বক্তব্যের সাথে। যেমন জাওয়াহিরি বলছেন বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে, ওলামাদের কারাবন্দী ও শহীদ করা হয়েছে। তবে নতুন দিন দাবি করেছে, অডিওটি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ধারণ করা। জাওয়াহিরি সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রাখে বলে দাবি নতুন দিনের।
নতুন দিনে প্রচারিত অডিও বার্তা বিষয়ে খবরে বলা হয়েছে আরবিতে বক্তব্যের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় সাব টাইটেল ব্যবহার করা হয়েছে আরবির অর্থ প্রচারের ক্ষেত্রে। গতকাল ফেসবুকের একটি লিংকে নতুন দিনের এ খবরটির সন্ধান পাওয়া গেছে।
ইতঃপূর্বে আলকায়েদার যেসব অডিও টেপ বক্তব্য বিবৃতি প্রচারের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা, অঞ্চল বা দেশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্র ইউরোপের যেসব দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত তারাও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং হুমকি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে পরস্পর যোগসাজশে কাজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই প্রথম আলকায়েদার কথিত অডিওি টেপ প্রচারের পর এখন পর্যন্ত পশ্চিমা কোনো শক্তি এ বিষয়ে মুখ খোলেনি এবং সেসব দেশে এ নিয়ে তেমন কোনো খবর পরিবেশিত হতেও দেখা যায়নি।
বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের টকশো-তে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যামিরেটাস ড. জিল্লুর রহমান খান এ কথা বলেছেন, বাংলাদেশ দেশ নিয়ে আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির বক্তব্য যে ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে তা আল-কায়েদার কোনো সাইট নয়। এমনকি এটি আল-কায়েদার কোনো কাছাকাছি সাইটও নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এতো খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে জাওয়াহিরির কথা বলবে তা মনে হয় না। এছাড়া জাওয়াহিরি খুব ভালোভাবেই জানেন বাংলাদেশ অন্যান্য মুসলিম দেশের মত নয়। এটি একটি মুসলিম মডারেট দেশ। যদি এই দেশ অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো হতো তাহলে গত এক বছরে যেসব সহিংসতা হয়েছে, তারপরে আজকে দেশের এই অবস্থা থাকতো না।
তিনি বলেন, ‘জিহাদের প্রকৃত অর্থ বা ব্যাখ্যা বিকৃত হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের স্কলারদের সাথে আলোচনা করে সবাই একমত হয়েছে যে, জিহাদ মানে মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম। কিন্তু আল কায়েদা বা অন্যরা তা বিকৃত করেছে।’
এ সময় একাত্তর সংযোগে অংশ নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখতে হবে। যদি দেশীয় বিশেষজ্ঞরা তার সুরাহা করতে না পারে তাহলে বিদেশিদের সহযোগিতা নেয়া হতে পারে। তিনি বলেন, এখানে কোনো ভিডিও দেখানো হয়নি। কয়েটি অডিও বার্তা দেয়া হয়েছে। এই অডিওতে ভয়েস পরিবর্তনের কোনো কাজ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। বক্তব্যের ধরন আল-কায়েদার মতো নয়। তাদের অন্যান্য বক্তব্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। আর এই বক্তব্যে এমন কিছু নাম এসেছে যা আল-কায়দার জানার কথা নয়।
উপরের সবগুলো সমীকরণ মেলালে এই বিষয়টি ষ্পষ্ট হয় : আর তা হলো : আল কায়েদা নাটকটা রেসমা নাটকের চাইতে দুর্বল হয়ে গেল :-p
বিষয়: রাজনীতি
১২৪৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর এতে করে জুলুমবাজরা উৎসাহিত করে একের পর এক জুলুম চালিয়ে যেতে। তাই বলা যায় জুলুমের সহায়তাকারী হলো তারা, যারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন