মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানকে হত্যা করেছিল কারা?

লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৫:৫৫ রাত



আজ ৩০শে জানুয়ারী । জহির রায়হান অন্তর্ধান দিবস। কিন্তু আজো স্বাধীন বাংলার মানুষ জানতে পাড়েনি ঠিক কি কারণে ? কারা তাকে গুম বা হত্যা করে ?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মোর্শেদুল ইসলাম,তানভীর মোকাম্মেল,তারেক মাসুদ-এর মত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরিচালকের আবির্ভাব হলেও সব মিলিয়ে একথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে জহির রায়হানের মত প্রতিভা সম্পন্ন দ্বিতীয় চলচ্চিত্রকার বাংলাদেশে এখনো আসেন নি।যে পাকিস্তানীরা ভাবতো বাংলাদেশ এর আবহাওয়ায় চলচ্চিত্র নির্মাণই সম্ভব না,সেখানে তিনি একের পর এক ভালো ছবি নির্মাণ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছিলেন। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণই নয়,রাজনৈতিক দিক দিয়ে ও তিনি ছিলেন খুবই সক্রিয়।বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের বামপন্থী রাজনীতির সাথে তাঁর পরিচয় ঘটেছিল ছাত্র জীবনেই, তাদের গোপন সংবাদ আদান-প্রদান করার মাধ্যমে।তাঁর প্রতীতি জন্মেছিল,মানুষের মুক্তি এ পথেই,যদিও বড় হয়েছিলেন, রক্ষণশীল মুসলমান পরিবারে।বাংলাদেশের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্রকার নামে যদি কাউকে অভিহিত করা হয় তাহলে তিনি হবেন জহির রায়হান,যিনি যুদ্ধ করেছেন ক্যামেরা দিয়ে।ক্যামেরা নিয়ে চলে গিয়েছিলেন রণাংগনে,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলে এনেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল,যা প্রচার পেয়েছিল বিশ্বব্যাপী। তিনি চিন্তায় এতোটাই অগ্রসর ছিলেন যে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ জন্মের প্রক্রিয়া যে শুরু হয়ে গেছে তা বুঝে গিয়েছিলেন এবং তার খবর দেশের মানুষের কাছে আগাম পৌঁছে দেয়ার জন্য তৈরি করেছিলেন অসামান্য ছবি জীবন থেকে নেয়া,-গেয়েছিলেন শিকল ভাঙ্গার গান। যুদ্ধের সময় রণাংগনে এবং ভারতে মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ এর অস্থায়ী সরকারের কর্মকান্ডকে ডকুমেন্টারি ছবির মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ধরে রাখার জন্যেও তুলেছিলেন অনেক ছবি।বেঁচে থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে তিনি হয়তো আমাদের উপহার দিতে পারতেন আরো অসাধারণ সব ছবি,বিশ্বের চলচ্চিত্র অংগনে বাংলাদেশের ভাব-মূর্তি আরো উজ্জ্বল হতে পারতো।জহির রায়হান এর মৃত্যুতে সবচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র,এদেশের মানুষ এবং তাঁর সন্তানেরা।স্বাধীনতার পরে চোরা কারবারের টাকা দিয়ে অশিক্ষিত চিত্র পরিচালকদের হাতে কুরুচি পূর্ণ ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির যে ধারা শুরু হয়েছিল বেঁচে থাকলে জহির রায়হান একাই হয়তো তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ভালো ছবির দিকে তা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে জহির রায়হানের অকাল মৃত্যু নিয়ে রয়েছে নানা রহস্য।কেউ বলে তাকে হত্যা করেছে ঘাপটি মেরে থাকা রাজাকার,আল বদররা।কেউ বলে বিহারীরা।আর জামাত-শিবির সমর্থকরা নানান যুক্তি তুলে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের একাংশ এবং ভারতীয় বাহিনীর দিকে।শেষোক্ত মতামতটি গতি পেয়েছে জহির রায়হানের মৃত্যু রহস্য তদন্তে আওয়ামী লীগ সরকারের অনীহার কারণে।এক্ষত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শহীদ বুদ্ধি জীবী পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের হত্যার বিচারের দাবীতে ৩২ নম্বরে স্মারক লিপি দিতে গেলে পুলিসের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেনমহিলারা সহ।এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে জহির রায়হানকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রাপ্য মূল্যায়ন করা হয়েছিল বলে মনে হয় না।প্রতি বছর বুদ্ধিজীবীদের নাম এবং ছবি ছাপা হয়েছে,বিবৃতি দেয়া হয়েছে,কিন্তু জহির রায়হানের নাম যেন অনেকটা অবহেলা ভরেই শুধু তার অন্তর্ধান দিবসে উল্লেখ করা হত।তাকে নিয়ে সভা-সেমিনার হতেও খুব একটা শোনা যায় নি।আর এসবই এই তৃতীয় মতকে জোরদার করেছে। আমি জানি না বাংলা চলচ্চিত্রের এ ক্ষণজন্মা পুরুষটকে কোন গোষ্ঠিটি হত্যা করেছিল।আর এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো মতামত ও নেই।



আধারে ঘেড়া সেই রহস্য :

১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি।আলিয়স ফ্রসেজ-এ হচ্ছিল বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটি ফেডারেশনের একটি সেমিনার,জহির রায়হানের জীবনী এবং চলচ্চিত্রের উপর।সেখানে আমার ছোটবেলার প্রিয় শিশু-সাহিত্যিক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক ইসলাম ভাইকে আসল নাম দিলাম না,তিনি এখন বড় কর্মকর্তা নিয়ে গেলাম সেখানে।তিনি-ই প্রধান অতিথি ছিলেন।এই ভদ্রলোক ছিলেন জহির রায়হানের কাজিন শাহরিয়ার কবিরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ঘনিষ্ট বন্ধু।জহির রায়হানের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা শেষে অনিবার্য ভাবেই এলো তাঁর অন্তর্ধান প্রসংগ।এ পর্যায়ে এসে তিনি গম্ভীর হয়ে গেলেন।তিনি বললেন,স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে জহির রায়হানকে কারা হত্যা করেছে আমি তা জানি।কিন্তু বলবো না।তখন উপস্থিত প্রায় শখানেক তরুণ চলচ্চিত্র প্রেমিক চিতকার করে হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করতে বললো তিনি তখন বললেন,আমি যদি এখন নাম প্রকাশ করি তাহলে কাল আমার লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে।সেটা ছিল ১৯৮৭ সাল।

[নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সত্যানুসন্ধানীর ব্যাক্তিগত বয়ান থেকে]



সাপ্তাহিক বিচিত্রা - ০১ মে, ১৯৯২ সংখ্যায় সত্যজিত রায়-এর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত সেখানে জহির রায়হান অন্তর্ধান নিয়ে যা বলা হয় তা তুলে ধরা হল :

সত্যজিত রায় : জহিরের ব্যাপারটা কিছু জেনেছো?

শাহরিয়ার কবির : তাকে সরিয়ে ফেলার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করে যা বুঝতে পেরেছি তাতে বলা যায় ৩০ জানুয়ারি দূর্ঘটনায় তিনি হয়তো মারা যাননি। তারপরও দীর্ঘদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।

সত্যজিত রায় : স্ট্রেঞ্জ ! জহিরকে বাঁচিয়ে রাখার পেছনে কারণ কি?

শাহরিয়ার কবির : সেটাই ষড়যন্ত্রের মূলসূত্র বলে ধরছি। মিরপুর দূর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে গভীর ষড়যন্ত্র মনে করার কারণ ছিল না। আমি যতদূর জানি, বুদ্ধিজীবিদের হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন যা অনেক রথী-মহারথীর জন্যই বিপজ্জনক ছিল, সেজন্য তাকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন ছিল॥

আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি,জামাত,বামপন্থী বা এরশাদ পন্থী নই।অনেকের মত বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ মাত্র। তাই জহির রায়হান অন্তর্ধান জানতে চাই আজো, আছেন কেও জানাবেন ???

বিষয়: বিবিধ

১৫৯০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

170574
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : জহির রায়হানের প্রকৃত খুনি চিন্নিত করা সময়ের দাবি ,ধন্যবাদ
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২৪
124376
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : ধন্যবাদ ;Winking
170638
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:২৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : লেখক কবি সাহিত্যিক জহির রায়হানের খুনিদের ফাসি চাই।
৩১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
124606
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : ধন্যবাদ ;Good Luck
170948
৩১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১৯
বাংগালী লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File