চকোলেট গাছ
লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫৬:১৫ সন্ধ্যা
আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, চকলেট.. চকলেট! চকোলেট আবার গাছে ধরে নাকি! হুমমম.. ধরে! চকোলেটেরও আছে গাছ! আর সেই গাছের নাম চকোলেট গাছ। ওটার কিন্তু আরো একটা নাম আছে। এখুনি বলছি না সেটা, তোমাদেরকে চকোলেটের আগাগোড়া কাহিনী জানাচ্ছেন আরিফ হাসান
চকোলেটের ইতিহাস
মায়ান সভ্যতার নাম শুনেছ নিশ্চয়ই। আজ থেকে তিন-চার হাজার বছর আগেকার সভ্য মানুষ ছিল ওরা। আমেরিকা-মেক্সিকোর আশপাশের অঞ্চল জুড়ে ছিল তাদের বাস। আর তারা কিনা আমাদের মতোই চকোলেট খেত! নাহ, খেত বললে ভুল হবে, ওরা আসলে চকোলেট পান করত! কারণ তখন প্যাকেটে ভরে শক্ত চকোলেট বানানোর জন্য যন্ত্রপাতি ছিল না। চকোলেট গলে পানির মতো তরল হয়ে গেলেই গিলে ফেলতো মায়ানরা। মায়ানদের মতো চকোলেট খেত আরেক প্রাচীন আজটেক সভ্যতার মানুষেরাও। ওরা শুধু খেতই না, চকোলেটকে টাকা হিসেবেও ব্যবহার করত!
দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন এই জাতি মনে করত চকোলেট বা কাকাওগাছ হলো ক্ষমতা ও সম্পদের উৎস। গাছটার আসল নাম হলো কোকোআ। অনেকে কাকাও নামেও ডাকে। আর হ্যাঁ, কাকাওগাছ থেকে কিন্তু চকোলেট পেড়ে খাওয়া যায় না। কারণ তাতে সরাসরি চকোলেট ধরে না। শিম বা মটরশুঁটির মতো দেখতে এক রকম ফল থেকেই বের হয় চকোলেট।
কাকাও শব্দটি এসেছে মায়ানদের কাছ থেকে। আর আজটেক ভাষায় এটাকে বলা হয় চকোলেট। অর্থাৎ চকলেটের ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে আছে মায়া ও আজটেক জাতি।
আজটেক সভ্যতার মানুষদের কাছে চকোলেট ছিল একটি পবিত্র খাবার। ইতিহাসবিদরা মনে করেন পাহাড়ের তলায় মাঝে মাঝে কাকাও গাছ থেকে পড়া চকোলেট খুঁজে পেয়ে আজটেকরা ভেবেছিল, এটা বুঝি দেবতার পাঠানো উপহার!
তবে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত দুনিয়ার বাকি লোকেরা কিন্তু চকলেটের কথা জানত না। আমেরিকা আবিষ্কার করে স্পেনে ফেরার পর রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলার হাতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন উপহার হিসেবে 'কোকোআ'র কিছু ফল তুলে দিয়েছিলেন, তার পরই জানা গেল পৃথিবীতে কাকাও বা চকোলেট নামে এক দারুণ খাবার আছে!
চকোলেট গাছ দেখতে কেমন
কাকাওগাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। অনেক শাখা-প্রশাখা থাকে এ গাছে। দেখতে অনেকটা ঝোপের মতো। পাতাগুলো ৪ থেকে ৮ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। পাতা বেশ নরম, বাঁকালেও ভাঙে না। রং হালকা থেকে গাঢ় সবুজ।
ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে গাছে। ফল ধরে থোকায় থোকায়। এক থোকায় তিন থেকে পাঁচটি ফল হয়। খোসা বেশ শক্ত। ফলের আকার লম্বাটে এবং গোলাকার দু রকমই হয়। রংয়েও আছে বৈচিত্র্য। লাল, হলুদ ও কমলা রঙের ফল হয় কাকাও গাছে। প্রতিটি ফলে বীজ থাকে ২০ থেকে ৫০টি। গাছ লাগানোর দুই থেকে তিন বছরেই ফল ধরে।
নানা রং নানা স্বাদ
দেখামাত্রই চকোলেট যাতে তোমার মন কেড়ে নিতে পারে সে জন্য চকোলেট তৈরির সময় মেশানো হয় নানা রকম রং। তবে বাজারে ছাড়ার আগে কোম্পানিগুলো চকলেটের স্বাদ নিয়েও পরীক্ষা করে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মিল্ক চকোলেট। পাশাপাশি ডার্ক ও হোয়াইট চকোলেটও অনেকের প্রিয়। তোমাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মিল্ক চকলেটে কী পরিমাণ দুধ ও অন্যান্য উপাদান মেশাতে হবে সেটা বিভিন্ন দেশের সরকার নির্দিষ্ট করে দেয়। যেমন আমেরিকায় তৈরি চকলেটে শতকরা ১০ ভাগ চকোলেট লিকার থাকতে হয়, বাকিটা থাকে দুধ। ইংল্যান্ডে আবার অন্য রকম। সেখানে চকলেটে কমপক্ষে ২৫ ভাগ কাকাও থাকতে হয়। চকলেটের স্বাদ ও রং আকর্ষণীয় করার জন্য তাতে পরিমাণমতো মিন্ট, কমলা ও স্ট্রবেরির ফ্লেভার যোগ করা হয়। কখনো কখনো অবশ্য বাদাম, বিভিন্ন রকম ফল ব্যবহার করা হয়।
চকোলেট কখন থেকে জনপ্রিয় হলো
চকোলেট মানুষের মন জয় করে ১৮০০ সালের দিকে। এই সময় ছাঁচে ফেলে বাহারী চকোলেট বানানো শুরু হয়। তখন কাকাও বীজ গুঁড়ো করে তাপে গলানো হতো। তারপর সেটা ঢালা হতো বিভিন্ন ধরনের ছাঁচে। ঠাণ্ডা হলেই সেই তরল কাকাও হয়ে যেতো শক্ত চারকোণা চকোলেট।
১৯২৫ সালে ডেনমার্কের কনরাড ভন হাউটেন নামের এক ব্যক্তি কাকাও থেকে তৈরি করেন কাকাও বাটার বা কাকাও মাখন। এর কয়েক বছর পর অর্থাৎ ১৮৩১ সালে ইংল্যান্ডের ক্যাডবেরি নামের একটি কোম্পানি চকোলেট তৈরি শুরু করে। আজকের 'ক্যাডবেরি' কিন্তু তাদেরই সৃষ্টি।
চকোলেটে পুষ্টি
চকলেটের উপকার অনেক। তবে সে যাই হোক, চকোলেট চাই চাই। তবু জেনে নাও চকলেটের কিছু উপকারের কথা। ব্রাজিলের মানুষরা কোকোআ'র বাটার থেকে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী আর ওষুধ।
বড়রা অনেক সময় তোমাদের নানান কথা বলে চকোলেট খাওয়া থেকে দূরে রাখতে চান। তাদের কানে কানে বলে দিয়ো, ১০০ গ্রাম চকলেটে আছে ১৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২১.৫ গ্রাম প্রোটিন, ১১ গ্রাম চর্বি, ৩৪ গ্রাম হজমযোগ্য আঁশ, ৭ থেকে ১৮ গ্রাম পলিফেনল, ২.৫ গ্রাম থিয়োব্রোমিন ইত্যাদি।
নানা দেশে নানা নাম
চকলেটের ফলটিকে ইংরেজিতে বলা হয় কোকোআ বা কাকাও। স্প্যানিশরা বলে কাকাও বা চকোলেট, পর্তুগিজদের কাছে কাকাউ, ফরাসিরা কাকাওতিয়ের, জার্মানরা চকোলেদ, ইতালিয়ানরা সিওককোলাতো ও ফিনল্যান্ডের বাসিন্দারা বলে সুকলা বা সুওমি।
চকোলেট ও দাঁত
যে চকোলেট দেখলেই জিভে জল চলে আসে সেটা নিয়ম মেনে না খেলে কিন্তু দাঁতের বারোটা বাজতে পারে! চকোলেট খাওয়ার পর যদি ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ না করো তাহলে মুখ ও দাঁতের ফাঁকে নানা রকম জীবাণু খেলা দেখাতে শুরু করবে! ওরাই তোমার দাঁত কালো করে দেবে। সুযোগ পেলে দাঁত খেতেও শুরু করবে! কী ভয়ংকর! সুতরাং চকোলেট খাওয়ার পর অবশ্যই দাঁতের যত্ন নিতে হবে। না হলে বন্ধুর ফোকলা দাঁতের 'অমুক' বলে খেপানো শুর' করবে কিন্তু!
বিষয়: বিবিধ
১৩৬২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার শেয়ার।পড়ে ভালো লাগলো । অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন