হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি : বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করুন বাংলাদেশে আমরা ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যার ভয়াবহ নমুনা দেখছি

লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ২৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:২৪:০০ দুপুর



বাংলাদেশে নির্বাচনের পর চলমান ক্র্যাকডাউনে (দমন-পীড়নে) বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অবিলম্বে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।

গতকাল এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি এ আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি যে বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তার স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে সরকারকে। নিরাপত্তা হেফাজতে বন্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সরকারকে জনসমক্ষে নির্দেশ দিতে হবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংসতার অভিযোগে বিরোধী দলের সমর্থকদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মৃত্যুর জন্য ‘ক্রসফায়ারে’র কথা বললেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর আগে জানতে পেরেছে যে, বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে নিহত হচ্ছে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা।

সংস্থার এশিয়া ডিরেক্টর ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যার ভয়াবহ ধরন দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা দরকার। এসব মৃত্যুর ঘটনার স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে।’


বিবৃতিতে বলা হয়, ২১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যৌথবাহিনী ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সহিংসতায় জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না বলে হুশিয়ার করে দেন তিনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে সহিংসতায় অন্তত ১৫০ জন নিহত হয়। এটা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা।

বিবৃতিতে সম্প্রতি সাতক্ষীরা ও নীলফামারীতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর হত্যার কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সংস্থাটির তদন্তে এগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছে।

নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভয়াবহ নির্যাতন চলছে বলেও মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

গত অক্টোবরে ছাত্রশিবিরের একজন নেতা গ্রেফতারের পর তার ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘সাত থেকে আটজন লোক আমাকে কিলঘুষি, লাথি ও লাঠি দিয়ে পেটায়। আমার হাতকড়া পরা থাকার পরও একজন লোক আমাকে ধরে রাখে এবং আরেকজন মারতে থাকে। থানায় লাথি দিয়ে একজন আমাকে ফ্লোরে ফেলে দেয়।’

তিনি জানান, মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আরো দুজন বের হচ্ছিল। পুলিশ তাদের একই দলের বলে মনে করেছিল। কিন্তু অন্য দুজনকে তিনি আগে কখনো চিনতেন না। তিন মাস কাশিমপুর কারাগারে থাকার পর তিনি মুক্তি পান।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার সেলে ২০০ লোক ছিল। বেশিরভাগই ছিল ১৮ দলীয় জোটের সদস্য। সেখানে খুব গরম ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সেখানে কোনো বিছানা ছিল না। লোকজন ফ্লোরে ঘুমাতো। বন্দিদের একজন ছিলেন মিরপুরের শিবিরকর্মী। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে। তার প্রতিটি জোড়া ফুলে যায়। তার উপযুক্ত চিকিত্সা হয়নি। সে নিজ হাতে খেতে পারতো না এবং অন্যের সাহায্য ছাড়া টয়লেটে যেতে পারতো না।


বিবৃতিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মৌলিক নীতিমালা মেনে চলতে প্রকাশ্যে নির্দেশ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

জাতিসংঘের শক্তি ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগের ২২ ও ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, শক্তি ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগের আগে অহিংস উপায় অবলম্বন করবে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রতিটি ঘটনার প্রতিবেদন দিতে হবে এবং কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তার বিস্তারিত প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে, যাতে এটা নিয়েও প্রশাসনিক ও বিচার প্রক্রিয়া চলতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।

ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহজনক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সংকটে নিপতিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা এমনটা আর দেখিনি। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন ক্রসফায়ারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সরকারে থাকার সময় তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে এখনই জনসমক্ষে এসব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের নিন্দা জানাতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিষয়: রাজনীতি

১১৪৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

169546
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৫১
বিন হারুন লিখেছেন : ওরাতো বলে দিয়েছে আমাদের খতম না করে ওরা শান্ত হবে না.আমি এখন কাউকে বন্ধু মনে করি না, শুধু আল্লাহর গায়েবী সাহায্যের অপেক্ষায়.
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৪২
123251
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : আল্লাহর গায়েবী সাহায্যে অবশ্যই চাইবো , তবে নিজেদেরও আরো সাবধানী হতে হবে ।
169552
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৫৪
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৪২
123252
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : Happy
169603
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৪
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : হিউমেন রাইট ওয়াচ বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা কি ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করলো- তা হচ্ছে শুধু মাত্র আইওয়াশ। বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যা ও সংকট নিয়ে চিন্তার করতে হলে এর অন্তর্নিহিত রহস্য জানা জরুরী।
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
123465
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
169849
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২৩
শেখের পোলা লিখেছেন : আওয়ামী সরকারের সমালোচনা! ওদের ঘাড়ে কটা মাথা আছে?
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
126089
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : Happy>-

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File