২২ দিনে ২৭ রাজনৈতিক কর্মী খুন : দায় কার ???

লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:২৯:০১ সকাল



নির্বাচন প্রতিহতের নামে ৫ জানুয়ারির পূর্ববর্তি দুইমাসে বিএনপি-জামায়াত দেশব্যাপি যে সংহিংসতা চালিয়েছে এককথায় তা নজিরবিহীন। যা দেশে বিদেশে প্রচুর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বাসে আগুন-নিরাপত্বা বাহীনির গুলি সহ নানা ভাবে প্রায় অর্ধশতাধীক মানুষ নিহত হয়েছে। যার দায় বিরোধী জোট কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

তবে তার চাইতে আসংকার দিকটি হল ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশ ব্যাপি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। ৬ জানুয়ারি থেকে গত তিন সপ্তাহে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৭ জন খুন হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম গুলো । এর ফলে উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মনে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনীর গুলিতে আজহারুল ইসলাম নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। তিনি তালা উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন।

এরমধ্যে প্রায় ২৭ জন বিএনপি এবং জামায়াত কর্মীরা হয় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন অথবা গুম হওয়ার পর তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতিটি ঘটনা থেকে যে বিষয়টি প্রতিয়মান হয় তা হলো : ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিরোধী জোটের নেতার সিরিয়াল কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন । কিন্তু মানবাধিকার সংস্থা বা মিডিয়া গুলো আশ্চার্য যনক ভাবে নিরবতা পালন করছে । যদিও ৫ জানুয়ারির পূর্ববর্তি দুইমাসের সহিংসতা চলাকালে প্রতিটি বেসরকারী টিভি চ্যান্যাল বিশেষ বুলেটিন , বিশেষ বিজ্ঞাপন দর্শকদের ভালোই নজর কেড়েছে । এমনকি নির্বাচনের পর সংঘালঘুদের ওপর হামলার বিষয় গুলো ঘটা করে প্রকাশ করলেও [ এই ধরনের বিষয় সাংবাদপত্রে সাধারনত কম প্রকাশ করা হয়] চলমান কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা দারুন লুকচুরির আশ্রয় নিচ্ছেন । যদিও এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ যে কি সচেতন মহল মাত্রই অবগত । লিমনের ঘটনাটি নিস্চয়ই আমরা ভুলিনি ? সবচেয়ে আসংকার দিকটি হলো একসময় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতরা চিন্হিত সন্ত্রাসী হলেও হালের ‘বন্দুকযুদ্ধে’র শিকারের অধিকাংই বিরোধী জোটের নেতা অথবা নিরীহ সমর্থক ।

এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠে , এই ‍খুন গুলোর দায় কে নেবে ?

যেহেতু ৫ জানুয়ারি পূর্ববর্তি দেশব্যাপি যে সংহিংসতার দায় বিএনপি-জামায়াতের , সেই সুত্র ধরেই যদি বলি । ৫ জানুয়ারি মাঠ থেকে একদম গায়েব বিরোধী জোটের উপর চলিত কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের দায় কে নেবে ? বিরোধী জোট তো এখন সংহিংসতায় নেই , তবে এই সংহিংসতা কেন ? কারা করছে এই সংহিংসতা ?

সাধারনত নির্বাচন পরবর্তি যে সহিংসতা হয় তাতে ক্ষমতার পালাবদলের একটি বিষয় কাজ করে ,এবার তো তাও নাই । ক্ষমতাষীনরাই ক্ষমতাষীন। বিরোধীরাই বিরোধীপক্ষ । খুন হচ্ছে বিরোধী পক্ষ । এই বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলার কি কেও নেই ?

নিহতের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে ,তাই বলে বিনা বিচারে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খুনের দায় কার ???

নিচে কিছু ঘটনার বিবরণ দেয়া হল :

>>>গত শনিবার দিবাগত রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটায় এবং ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জামায়াত-শিবিরের দুই নেতাসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদেরও আগের দিন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে অস্ত্র অভিযানে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

সোমবার নীলফামারী এবং মাদারীপুরে বিএনপি এবং জামায়াতের দুই নেতা খুন হন। দুইজনের বিরুদ্ধেই নাশকতার অভিযোগ রয়েছে। নীলফামামীর টুপামারীত ইউনিয়নের ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আতিকুল ইসলাম আতিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আওয়ামী লীগের এমপি ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগে মামলার তিন নম্বর আসামি ছিলেন। ওই একই মামলার প্রধান আসামি গোলাম রাব্বানির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

এর আগের রোববার মেহেরপুরে জামায়াতের জেলা সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

গত ১৮ জানুয়ারি নরসিংদীতে জনি নামক এক ছাত্রদল কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি পাঁচ জেলায় বিএনপির দুই, এবং শিবিরের এক কর্মী নিহত হন।

///সাতক্ষীরায় শিবিরকর্মী হানিফ ছোটান (১৪) নামে নবম শ্রেণী পড়ুয়া এক মাদ্রাসা ছাত্র পুলিশের সঙ্গে কথিত‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। যা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিকৃয়া সৃষ্টি করেছে। যদিও অধিকাংশ মিডিয়া বিষয়টি এড়িয়ে গেছে ।///

১৫ জানুয়ারি মেহেরপুরে আবু বকর নামে এক বিএনপি সমর্থকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানুয়ারির ১৪ তারিখে সাভারে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিজানুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাতক্ষীরায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন জামায়াতের রোকন আনওয়ারুল ইসলাম।

গত ১৩ জানুয়ারি যুবদল কর্মী জামিল হোসাইন (৩৩) এর লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে শিবিরকর্মী মামুন হায়দার(২৭) নিহত হন।

১১ জানুয়ারি নারায়নগঞ্জের ফিনিশঘাটের তারাবোতে যুবদল নেতা আমজাদ হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই একই দিনে গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে জাময়াত নেতা নাজমুল হাসানের লাশ পাওয়া যায়।

৯ জানুয়ারি বিএনপি কর্মী আল মামনুনের লাশ একটি বগুরার শেরপুর উপজেলায় এক খালে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।

গত ৬ জানুয়ারি অর্থ্যাৎ নির্বাচনের পরদিন দোহারে আওয়ামী লীগের হামলায় জাতীয় পার্টির মুসা খন্দকার, মাসুদ খন্দকার এবং মকবুল হোসাইন নিহত হন।

একই দিনে নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতা মাহফুজ আহমেদ রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন। দিনাজপুরে বিএনপি কর্মী আসাদুল্লাহ নিহত হন।

সবশেষে বলি : কোন বিনা বিচারে হত্যাকান্ডই দেশের জন্য কল্যানকর নয়।

বরং আজকের শিকার অন্য কেও মানে আগামীকালের শিকার আপনি ।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

168804
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩০
মোঃ আকরাম হক লিখেছেন : এটা চলতেই থাকবে।
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৪
122856
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : না এভাবে চলতে পারে না,চলতে দেয়া যায় না ।
168855
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : হেআল্লাহ তুমি দেশ ও জাতিকে রক্ষা কর।
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৩
122855
আমি আহমেদ মুসা বলছি লিখেছেন : আমীন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File