ইসলাম পন্থিদের ঐক্য সময়ের দাবী -২
লিখেছেন লিখেছেন আমি আহমেদ মুসা বলছি ১৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৫৩:৩৭ দুপুর
ঐক্যের কেন্দ্র বিন্দু রাসুলে করীম [স:]:
ইসলামীঐক্যের বিষয় এবং তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর ভূমিকাখুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এবিষয়টি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সিরাত সম্পর্কে গবেষণা করতে গেলে প্রতিটিচিন্তাবিদ প্রথমেই তা উপলব্ধি করতে পারবেন।
« قل هذه سبیلی أدعوا إلی الله علی بصیرهٔ أنا و من اتبع ে
ইসলামের নবীপ্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা) দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে জনগণকে ইসলামের দাওয়াত দিতেগিয়ে ব্যাপক দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন।মদিনায়বসবাস করার সময় তিনি ইসলামী সরকার গঠন করে মুসলিম সমাজে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠারজন্যে ব্যাপক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অবশ্যআল্লাহর আদেশেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কেননাকোরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নবীজীর চেষ্টায় তাঁর সময়ে ইসলামী সমাজঐক্য ও সহমর্মিতার আস্বাদ লাভ করে। ইসলামীঐক্য এবং তা সৃষ্টি ও বিস্তারের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর ভূমিকা এত বেশী যে, নি:সন্দেহে এক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর পদক্ষেপ মুসলমানদের জন্য খুবইগুরুত্বপূর্ণ হবে। কেননাতিনি আল্লাহর মনোনীত নবী ও রাসূল (সা.) যার সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনবলছেন:
« لقد كان لكم فی رسول الله اسوة حسنة لمن كان یرجو الله و الیوم الآخر و ذكر الله كثیرا » (সূরাআহযাব, আয়াত: ২১ )
যারাআল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
উসওয়াঅর্থাৎ নেতা, পথপ্রদর্শক এবং আদর্শ। তা'সী অর্থাৎকাউকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা। সুতরাংআলোচ্য আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী রাসূল (সা.) এর প্রতিটি কর্ম এবং সিদ্ধান্ত সকলমুসলমানের জন্য মানদণ্ড এবং অকাট্য দলিল। মুসলমানদেরকেওরাসূল (সা.) এর জীবনী নিয়ে চিন্তা করা ও ভেবে দেখা একান্ত জরুরী।
উসওয়াশব্দের অর্থ হচ্ছে অনুসরণ ও অনুকরণ করা। রাসূল(সা.) এর উসওয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি আমাদের আদর্শ অর্থাৎ তার অনুসরণ ও অনুকরণ আমাদের জন্য অবধারিত ও অপরিহার্য। যেহেতু পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
لقد كان لكم فی رسول الله اسوةحسنة অর্থাৎতোমরা সর্বদা এবং অনবরত রাসূল (সা.) এর অনুসরণ কর। পবিত্র কোরআনের আহ্বান হচ্ছে তোমরা রাসূলেরঅনুসরণ কর অর্থাৎ তার কথা এবং কাজ উভয়েরই অনুসরণ কর।
সুতরাংইসলামী ঐক্য বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর সিরাত সম্পর্কে জানাঅতীব জরুরী একটি বিষয়।
রাজনৈতিকদিকেরই প্রমাণ বহন করে। নি:সন্দেহেএই পথে রাসূল (সা.) এর ভূমিকার দিকে দৃষ্টিপাত আমাদেরকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করবে। অনুরূপভাবেএটা আমাদের জন্য রাসূল (সা.) এর আদর্শ গ্রহণ করার পথে এবং তার অনুসরণ ও আনুগত্যেরপথে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
« من یطع الرسول فقد اطاع الله و من تولی فما ارسلناك علیهم حفیظا » (সূরা নিসা, আয়াত: ৮০)
যারারাসূলের আনুগত্য করবে তারা আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যারা বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসাবে নিযুক্ত করে পাঠাই নি।
এইবিষয়বস্তুর দিকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, ইসলামী উম্মাহর ঐক্যকে অন্য ভাবেও ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব:
প্রথমত:উম্মতের ঐক্যের বাস্তবায়ন হচ্ছে একটি উপযুক্ত ইসলামী আদর্শের ঐক্য; অর্থাৎ একটি মাত্র ইসলামী উম্মত।
দ্বিতীয়ত:ইসলামী উম্মাহর ঐক্য, বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতেমুসলমানদের জন্য সর্বশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এটা নিশ্চিত যে, উম্মতের ঐক্যের বাস্তবায়ন মুসলমানদের বর্তমান পরিস্থিতিকে বাদ দিয়েসম্ভব নয়। কেননাএকটি ইসলামী উম্মত হচ্ছে ইসলামী ঐক্যের বৈশিষ্ট্য ও তার শর্ত সাপেক্ষে সেই ইসলামীসমাজ ব্যবস্থা।
তৃতীয়ত:"ইসলামী উম্মাহর ঐক্য" বিষয়বস্তু থেকে আরও কিছু বিষয়বস্তু বের করা সম্ভবআর তা হল: "ইসলামী ঐক্য"। যেমনএকটি উম্মত বলতে আমরা একটি বিশ্বজনীন উম্মতকে (বিশ্বজনীন ঐশী হুকুমতকে) বুঝি। আর এটা ইসলামী ঐক্য বৈ আর কিছুই নয়।
সুতরাং রাসূল (সা.)এর সিরাতকে বিশ্লেষণ করার জন্য তিনটি মূল ভিত্তিকে পৃথক করার গুরুত্ব আমাদের সামনেস্পষ্ট হয়ে যায়, যথা: ইসলামী সমাজ, একটি মাত্র ইসলামী উম্মত এবং ইসলাম পন্থিদেরঐক্য।
যেহেতু আমরা সকলে এই কথা বিশ্বাষ করি যে,"বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র অস্তিত্ব আন্তর্জাতিকঅঙ্গনে বিভিন্ন চিন্তাধারা বা আকীদা-বিশ্বাস ও সব মুসলিম জাতিগুলোর ভালবাসারসম্মিলন-বিন্দু বা মিলন-মেলা।" সেহেতু , রাসূলের জীবন সূত্র ধরেই বাংলাদেশের ইসলাম পন্থিরা একহতেপারে বা হতে হবে ।
সাহবায়ে কেরামের জীবনের আলোকে :
ইসলামের নবীর ওফাতের পরপরই তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়ে ব্যাপক মতানৈক্য দেখা দেয়। একদল বললো জনগণ কিংবা তাদেরপ্রতিনিধিদের রায়ের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচন করা উচিত।আবার আরেক দল বললো গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল এই বিষয়টিআল্লাহ এবং রাসূলে খোদার আদেশ অনুযায়ী ফয়সালা হওয়া উচিত । এমনই পরিস্থিতিতে ঐক্যের অবস্থান এবং মূল্য সম্পর্কেইমাম আলী (আ) বলেন, ‘ইসলামী সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকো,কেননা আল্লাহর হাত সবসময় সমষ্টির সাথে থাকে এবং বিচ্ছিন্নতা পরিহার করো,কেননা বিচ্ছিন্ন হলে শয়তানের গ্রাসে পরিণত হতে হয় যেমন দুম্বাপাল ছাড়া হলে নেকড়ের শিকারে পরিণত হয়।'
বিষয়: বিবিধ
১৪২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন