মুফতী এ আযম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.), মুহাদ্দিস, ফকীহ ও মুফতী এবং ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের বহু উচ্চ মানসম্পন্ন গ্রন্থাবলীর রচয়িতা ও সংকলক
লিখেছেন লিখেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০২:২৭:০৫ রাত
ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন গুরুতপূণ বিষয়ে মতামত জানার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি আরব দেশের বড় বড় আলিমদের দিকে, অথবা ভারতীয় উপমহাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দ এর আকাবেরদের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশেও এমন একজন আলেমে দ্বীন ছিলেন যার কিতাবকে মিশরের বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উস্তাদেরা পাঠ্যসূচীর অন্তভূক্ত করেন, তার ফতওয়াকে আরব দেশের আলিমরা শ্রদ্ধা করতেন। তিনি নিজ পুরো জীবনে মেহনত করেছেন বাংলাদেশকে ইসলামের আর্দশ উন্নত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার।
আমরা সকল বাংলাদেশীই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সম্মানের সাথে স্মরণ করি। কিন্তু কখনই চিন্তা করেছেন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কেমন ছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম এর অবস্থা? সেখানে কি কোন সংঘাত হয়েছিল? কে ছিলেন সে সময় বায়তুল মুকাররম মসজিদের খাতীব?
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় পুরো দেশময় সংঘাত, সংঘর্ষ লেগে থাকলে ও সে সময় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম ছিল একটি নিরাপদ স্থান যেখানে সে সময় কোন মারামারি বা সংঘাত হয়নি। এর পিছনে প্রধান ভূমিকা ছিল সে সময় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকারমের খাতীবের যিনি মসজিদকে কেন্দ্র করে কোন সংঘাত হতে দেননি। তাঁর দৃঢ় ব্যাক্তিত্বের কারণে যেমন পাক সেনারা তার কোন ক্ষতি করার সাহস করেনি তেমনি মুক্তিযোদ্ধারা তাকে সম্মান করেছে এবং তার পাশে ছিল।
কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই মহান ইসলামী ব্যক্তির ব্যাপারে যে তিনি ছিলেন ভারতে জন্মগ্রহণকারী একজন উর্দূভাষী ব্যাক্তি যিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকায় আসেন এবং তাঁর ইলমী ফয়েজে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন বায়তুল মুকাররম মসজিদ কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে তিনি সেই মসজিদের খতীব এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
চিন্তা করুন একজন উর্দূভাষী ব্যাক্তি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বায়তুল মুকাররম মসজিদের খাতীব ছিলেন। বিজয় অর্জিত হবার পর তিনি বায়তুল মুকাররমে খাতীবের দায়িত্ব চালিয়ে নিতে ইতস্ত বোধ করছিলেন। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে অভয়বাণী দিয়ে বলল হুজুর আপনি নির্ধিধায় আপনার খাতীবের দায়িত্ব চালিয়ে যান, ইনশাআল্লাহ কেউ আপনার কোন ক্ষতি করবেনা। সেই থেকে আমৃত্যু তিনি বায়তুল মুকাররমে খাতীবের পদে নিযুক্ত ছিলেন।
তাঁর সম্বন্ধে আরও কিছু তথ্য যেনে নেয়া যাক
• তিনি একজন নাজিবুত্তারাফাইন (পিতা ও মাতা উভয়ই সাইয়্যেদ) এবং পিতা ও মাতা উভয়ই সূত্রেই প্রিয়নবীর বংশধর
• তিনি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং “মুমতাজুল মুহাদ্দিসিন” উপাধি প্রাপ্ত হন।
• তিনি কলকাতায় ছিলেন GRAND MUFTI OF Calcutta এবং ঢাকায় আগমনের পর মুফতী এ আযম নামে বিখ্যাত ছিলেন।
• তিনিই একমাত্র এমন ব্যাক্তি যিনি দুই বাংলার ঈদগাহতে (কলকাতা এবং ঢাকা) ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
• তিনি এমন প্রথম ব্যক্তি যিনি আলীয়া মাদ্রাসারই ছাত্র ছিলেন এবং পরবর্তী তিনি সেই মাদ্রসার হেড মাওলানা হোন।
• তাঁর রচিত ”মীযানুল আখবার কিতাব ” আলিম শ্রেণীর পাঠ্য বই
• তাঁর রচিত ” কাওয়ায়েদুল ফিকহ ইলমে” ফিকহ শিখার মৌলিক কিতাব
• তাঁর রচিত ”ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার” আলিয়া ও কওমী উভয় মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতির এক মৌলিক কিতাব। কেউ যদি মুফতী হতে চায় তবে অবশ্যই তাকে ”ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার” এবং কাওয়ায়েদুল ফিকহ কিতার পড়তে হবে। ” ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার” কিতাব মিশরের বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তভূক্ত।
• তাঁর রচিত কিতাবের সংখ্যা ২৫০+ এর অধিক।
• তিনিই বাংলাদেশে নামাযের চিরস্থায়ী কালেন্ডার প্রণয়ন করেন
• তিনিই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম প্রতিষ্ঠার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে বায়তুল মুকাররম মসজিদের প্রথম খাতীব (১৯৬৪-৭৪) হিসেবে নিযুক্ত হন।
• তিনিই এমন ব্যাক্তি যিনি যিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় বায়তুল মুকাররম মসজিদের খাতীব হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং আমৃত্যু সেই পদে নিযুক্ত ছিলেন।
এই মহান ইসলামী ব্যক্তির নাম হচ্ছে মুফতী এ আযম
সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.)। তিনি ছিলেন একাধারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ ও মুফতী এবং ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের বহু উচ্চ মানসম্পন্ন গ্রন্থাবলীর রচয়িতা ও সংকলক। আমাদের বাংলাদেশের সৌভাগ্য তার মত ইসলামী ইলম এর জগতে এমন এক উজ্জল দীপ্তীমান নক্ষত্র যিনি বাংলার জমীনেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
ইনশাআল্লাহ হযরত মুফতী এ আযম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) এর আলোময় জীবন সম্বন্ধে আগামী তিনপর্বে ধারাবাহিক আলোচনা করা হবে। আশা করছি আপনারা তাঁর নূরানী জীবন থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় জানতে পারবেন।
তত্ত্ব সূত্র = https://www.facebook.com/IslamiChattraSena1980
বিষয়: সাহিত্য
২২৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন