আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে আমি জানি না - সাক্ষী : আইনজীবী দেরি করায় জেরা বন্ধ করেছেন ট্রাইব্যুনাল
লিখেছেন লিখেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০৭:২৬:৩৫ সকাল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী আবদুস সেলিম লতিফের জেরা শেষ হয়েছে। জেরার জবাবে সাক্ষী জানান, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে তাহা আমি জানি না। সাক্ষী বলেন, বাবাকে হত্যার বিষয়ে আমি কোনো খোঁজ নেইনি। সাক্ষী জানান, ১৯৭১ সালে পিতা হত্যার ঘটনায় আমি কোনো মামলা দায়ের করেনি। একই অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আ.লীগ নেতা হাজী মোবারক হোসেনের পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ট্রাইব্যুনালে দেরি করে আসায় ষষ্ঠ সাক্ষীর জেরা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রথম ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে মোবারকের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এদিকে একই অভিযোগে আটক জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে সৈয়দ কায়সারের স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে মেডিকেল রিপোর্ট আগামী ৩০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া একই অভিযোগে আটক জামায়াতের নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের চার্জ গঠনের শুনানি দু’দিন পিছিয়ে কাল বুধবার নির্ধারণ করেছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল। এদিকে নিজের আইনজীবীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষী জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল।
আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে আমি জানি না : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী আবদুস সেলিম লতিফের জেরা শেষ হয়েছে। ১৫তম সাক্ষীর জবানবন্দির জন্য আগামী ২৪ জুলাই দিন ধার্য করে ট্রাইব্যুনাল। জেরার জবাবে সাক্ষী জানান, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে তা আমি জানি না। সাক্ষী বলেন, বাবাকে হত্যার বিষয়ে আমি কোন খোঁজ নেয়নি। সাক্ষী জানান, ১৯৭১ সালে পিতা হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করেনি।
গতকাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রথম ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষীকে জেরা করেন আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে এলাকায় কতজন রাজাকার দেখেছি সংখ্যায় বলতে পারবো না। সাক্ষী বলেন, নিজামী সাহেব পাবনা এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন।
আইনজীবী দেরি করায় জেরা বন্ধ করেছেন ট্রাইব্যুনাল : একই অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আ.লীগ নেতা হাজী মোবারক হোসেনের পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ট্রাইব্যুনালে দেরি করে আসায় ষষ্ঠ সাক্ষীর জেরা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রথম ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে মোবারকের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
গতকাল এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী আবদুল মালেককে জেরার দিন ধার্য ছিল। এদিন বেলা ১০টা ৪৫ মিনিটে এজলাসে আসেন এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তখনও আসামিপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ট্রাইব্যুনাল প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষার পর এ আদেশ দেন। এ সময় এজলাস কক্ষে আসামি মোবারক হোসেনের ছেলে দাঁড়িয়ে বলেন, স্যার, আমি ফোন দিয়েছিলাম। উনি জানিয়েছেন গাড়ি মত্স্য ভবনের মোড়ে যানজটে আছে।
এ সময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন আসামিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কেউ রাস্তায় থাকবে, কেউ বাসায় থাকবে, এটা কি নিয়ম। কিন্তু কোর্টে তো কিছু নিয়ম আছে তাই না? এখানে সময় মতো আসতে হয়। আমরাও প্র্যাকটিস করেই এখানে এসেছি। ইতিমধ্যে ২৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, এরকমভাবে আগেও কয়েকবার সময় দেয়া হয়েছে। এ সময় আসামির প্রধান আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ট্রাইব্যুনালের এজলাসে এসে উপস্থিত হন। হেনা জেরার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত সময় চাইলে চেয়ারম্যান নাকচ করে দেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই এ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপক্ষ। জবানবন্দি শেষে গত রোববার জেরার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে গতকাল পুনরায় জেরার দিন ধার্য করা হয়। এর আগে ২৩ এপ্রিল মোবারকের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ১২ মার্চ অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ১৬ মে সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।
নিজের আইনজীবী প্রত্যাহার চেয়েছেন বিচ্ছু জালাল : নিজের আইনজীবীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষী জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল।
গতকাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে তিনি এ আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদনের শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করে দেন।
প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত জানান, গত রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবিরের ওপর হামলার ঘটনায় প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালালকে সতর্ক করে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করে মৌখিক আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ আদেশের আগে শুনানির একপর্যায়ে বিচ্ছু জালালের আইনজীবী মহসিন রশিদ বলেছিলেন, মাইলর্ড বিষয়টি সতর্ক করে নিষ্পত্তি করে দেন। পরে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়। বিচ্ছু জালাল এ আদেশের পর তার আইনজীবী মহসিন রশিদের বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন।
বিচ্ছু জালালের অভিযোগ হচ্ছে, তার আইনজীবী মুহসিন রশিদ তার সঙ্গে বিদ্রোহ করেছেন। তার দেয়া সাজেশন অনুযায়ী সাবমিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার আইনজীবী আমার জবাবের বাইরে মত দিয়েছেন। তিনি আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুলের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।’ আইনজীবী মহসিন রশিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে অভিযোগ দাখিল করবেন বলেও তিনি জানান।
বিচ্ছু জালালের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, গত ২৬ মে সেগুনবাগিচায় নূর মসজিদের সামনে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবিরের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী বিচ্ছু জালাল ও তার সহযোগীরা। হামলার সময় তারা আইনজীবী মুন্সী আহসান কবিরকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকে আর বলতে থাকে, রাজাকারের আইনজীবী হয়ে আমাকে জেরা করিস।
গত ২৭ মে আইনজীবী মুন্সী আহসান কবিরের ওপর সাক্ষী বিচ্ছু জালালের হামলার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেন। এরপর গত ২৮ মে প্রসিকিউশনের সাক্ষী বিচ্ছু জালালের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে ৫ জুন তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
কায়সারের জামিনের আবেদন : একই অভিযোগে আটক সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার। অন্যদিকে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত। কায়সারের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখিয়ে যে কোনো শর্তে জামিন আবেদন করেন ডিফেন্স আইনজীবী। তবে ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে সৈয়দ কায়সারের স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে মেডিকেল রিপোর্ট আগামী ৩০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল ট্রাইব্যুনালে কায়সারের জামিন আবেদন করে ডিফেন্স আইনজীবী বলেন, কায়সার সাহেব ৭৩ বছরের ব্যক্তি। তিনি এখনও অসুস্থ। তাই তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালে যে কোনো শর্তে জামিন দেয়ার আবেদন করেন আইনজীবী। অন্যদিকে প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত বলেন, এখানে জামিনের কোনো বিধান নেই। একমাত্র আবদুল আলীম সাহেব শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম হওয়ায় তাকেই শুধু শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয়া হয়েছে। এমনকি গোলাম আযমকেও জামিন দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। পরে ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ঠিক আছে আমরা সৈয়দ কায়সার সাহেবের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলছি। তারা আমাদের আগামী ৩০ জুলাই রিপোর্ট দেবে। তার পরে আমরা জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
ইউসুফের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে : অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির একে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে ডিফেন্স পক্ষের চার্জ গঠনের শুনানি দু’দিন পিছিয়ে আগামীকাল বুধবার নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল-২। গতকাল তার চার্জ গঠনের শুনানির কথা থাকলেও তা হয
বিষয়:
১৪৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন