হাটহাজারীতে ওলামা পরিষদের সংবর্ধনা : ইসলামের ইজ্জত রক্ষার্থে হেফাজত আরও বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত - জুনায়েদ বাবুনগরী
লিখেছেন লিখেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ০৯ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৫৫:২১ দুপুর
http://www.24livenewspaper.com/site/index.php?url=www.amardeshonline.com
হাটহাজারী ওলামা পরিষদ আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম কখনও ক্ষমতার অংশ হতে চায় না। আমরা কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে ও নামাতেও চাই না। হক্কানি ওলামায়ে কেরামকে আল্লাহ যে সম্মান দিয়েছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর গদির চেয়েও কোটি গুণ বেশি মর্যাদার। হেফাজতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে যায়নি, বরং আরও জোরদার হয়েছে। তবে হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সরাসরি কখনও কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে বলবে না। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ ও ঈমান-আকিদাবিরোধী অপতত্পরতার বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম কখনও আপস করবে না। এতে যদি কারও মনে জ্বালা ধরে যায়, তার জন্য আমরা দায়ী নই; বরং যারাই নাস্তিক্যবাদ ও ইসলামবিদ্বেষীদের পক্ষাবলম্বন করবে, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে, তারাই হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইসলামবিরোধী অপতত্পরতায় জড়িত না থাকলে কোনো দলেরই হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় নেই। তিনি বলেন, ইসলামের ইজ্জত রক্ষার্থে হেফাজত আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছে।
গতকাল সোমবার হাটহাজারী ওলামা পরিষদের উদ্যোগে ডাকবাংলো ময়দানে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর জামিনলাভ ও চিকিত্সা শেষে ফিরে আসায় এক গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। হাটহাজারী পার্বতী স্কুল মাঠে সংবর্ধনা সভা আয়োজনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মাঠের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে ডাকবাংলো ময়দানে সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বেলা ২টায় সংবর্ধনার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। বাদ জোহর ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তৌহিদি জনতা ব্যানার-ফেস্টুন ও মিছিল নিয়ে দলে দলে সভাস্থলে জমায়েত হতে থাকেন। ২টার আগেই ডাকবাংলো ময়দান ও এর পাশে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক কানায় কানায় ভরপুর হয়ে যায়। এ সময় অনেককে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মার্কেটসহ বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান করতেও দেখা গেছে। এ সময় সড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।
হাটহাজারী ওলামা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী পৌরসভার সভাপতি মাওলানা মীর ইদরীস, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মাহমুদুল হাসানের পরিচালনায় বেলা ২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সংবর্ধনা সভা শুরু হয়।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির, হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সভাপতি এবং দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস হজরত আল্লামা হাফেজ শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতা করেন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের সহ-সভাপতি মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা কাতেব সুলায়মান আরমান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরি, মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস, মাওলানা নোমান ফয়জী, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা ফোরকার আহমদ, মাওলানা মুহাম্মদ শফি, হেফাজত আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থ সম্পাদক মাওলানা কাতেব ইলিয়াছ ওসমানী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, নেজাম ইসলাম নেতা আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ নদভী, মাওলানা জাফর আহমদ, মাস্টার মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মাওলানা জালাল উদ্দীন, এসএম ফারুক, মাওলানা মাহমুদ হাসান, মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা সফি উল্লাহ, মাস্টার মুহম্মদ শফিউল আলম, মাওলানা জোনায়েদ, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা কামরুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, রাশেদ প্রমুখ।
সভায় হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন, আমার মুক্তি ও সুস্থতার জন্য আপনাদের সবার দোয়া ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মহান আল্লাহর দরবারে সবার জন্য বিশেষ দোয়া করছি। আপনাদের দোয়া এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত না থাকলে যেভাবে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় আমাকে অন্যায়ভাবে আসামি করে গ্রেফতারের পর লাগাতার রিমান্ডে নেয়া হচ্ছিল, তাতে হাটহাজারী মাদরাসায় আমার ফিরে আসার সৌভাগ্য হয়তো জীবনে হতো না। তবে এত কিছুর মধ্যেও আমি মহান আল্লাহর ওপর আস্থা-ভরসা ও মনোবল হারাইনি। ইসলামের জন্য নবী-রাসুল ও আমাদের পূর্বসূরি ওলামায়ে কেরাম যে সীমাহীন আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার কাছে আমার এই ত্যাগ কিছুই নয়।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের চলমান নাস্তিক্যবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের বহুমুখী অর্জন রয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী শক্তির কাছে আমরা জোরালোভাবে এই বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি যে, এদেশে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের অবমাননা, পবিত্র কোরআনের অবমাননা, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং অপতত্পরতা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তাছাড়া জনগণের সামনে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, শত উস্কানি, হামলা-মামলা-গ্রেফতার ও হয়রানি করলেও ওলামায়ে কেরাম ও কওমি মাদরাসাগুলো প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে না। তাছাড়া নাস্তিক্যবাদের পক্ষাবলম্বনকারীরাও স্পষ্ট বুঝতে পারছেন যে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, ৫ ও ৬ মে’র চরম জুলুম-অত্যাচারের পরও এদেশের ওলামায়ে কেরাম কোনোরূপ প্রতিশোধ ও সহিংসতায় না জড়িয়ে চরম ধৈর্যধারণ করে এর বিচারের জন্য মহান আল্লাহর দরবারেই ফরিয়াদ জানিয়েছে। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি জোরালো হয়েছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের চলমান ঈমান, দেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার এই আন্দোলনে যুবক ভাইদের এগিয়ে আসতে হবে এবং এ কাজে সচেতন নারীদেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মদিনার সনদে দেশ চলবে। আমি বলি, হেফাজতের ১৩ দফা মদিনার সনদের বাইরে নয়। সুতরাং মদিনার সনদে দেশ চালাতে হলে ১৩ দফা মানতেই হবে।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী তার বক্তব্যে বলেন, ৫ ও ৬ মে মৃত্যুবরণকারী সব শহীদ এবং হাটহাজারীতে যে ৬ জন শহীদ হয়েছেন, তাদের মাগফিরাত কামনা করেন। আর যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুস্থতা কামনা করছি। তিনি হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য মিডিয়া কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান।
জুনায়েদ বাবুনগরী নান্তিক ধর্মদ্রোহী রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারী ব্লগারদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান, ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থার নীতি ফিরিয়ে আনাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। হেফাজতের নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের ওপর হয়রানি বন্ধ, দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার করা আলেম-ওলামাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে নাস্তিক ব্লগারসহ ধর্ম অবমানকারীদের পক্ষ নেয়া ও সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বিরত থেকে এদেশের গণমানুষের অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সরকারের প্রতি আবারো অনুরোধ জানান।
সংবর্ধনা সভায় হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, গত ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের আগে রাসুল (সা.)-এর প্রতি কটূক্তিসহ ধর্ম অবমাননার কারণে চিহ্নিত নাস্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার আগে ১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছিল মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ ও সুব্রত অধিকারী নামে আরও তিনজনকে। সরকার এরই মধ্যে এদের সবাইকে জামিন দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছে। গত ২৭ জুন আসিফ মহিউদ্দিনকে জামিন দেয়া হয়। অথচ একই দিন একই আদালতে প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে দেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক হাফিজুর রহমান রানাকে ৭ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে। গত ১২ মে অন্য তিন ব্লগারকে জামিন দেয়া হয়। একই আদালতে একই দিন এই ঘটনায় আমরা হতবাক। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে এই সরকারের আসল চরিত্র আবারও জাতির কাছে ফুটে উঠছে বলে আমরা মনে করছি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের সাত বছরের কারাদণ্ড হলেও মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় রাসুল অবমাননাকারীদের জামিনে মুক্তি দিয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এদেশের ঈমানদার ধর্মপ্রাণ মানুষের দাবি ও অনুভূতির বিপরীতে নাস্তিক ও রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারীদের পক্ষে সরকারের পরিষ্কার অবস্থান আমরা এখনও লক্ষ করছি।
সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম বলেন, আমরা আগেও বলেছি, ৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশে তাদের ঈমান আকিদার বিপক্ষে, ইসলামের বিপক্ষে এবং নাস্তিক ব্লগারসহ ধর্মদ্রোহীদের পক্ষে এভাবে অবস্থান নিয়ে কেউ ক্ষমতায় যেমন টিকে থাকতে পারবে না, তেমনি কেউ ক্ষমতায় যেতেও পারবে না। এদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতা, আলেম-ওলামা এখন দলমত ও ছোটখাটো এখতেলাফ (মতভেদ) ভুলে গিয়ে ১৩ দফা ঈমানি দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। দিনের পর দিন এই ঐক্য সীসাঢালা প্রাচীরের মতো রূপ নেবে ইনশাল্লাহ। মুসলমানদের ঈমানি দৌলত ও হিম্মতের কাছে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি আবারও পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি এদেশের অধিকাংশ মানুষের দাবি। এ দাবি গণদাবি। জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করার পরিণাম শুভ হবে না। যারা নাস্তিক ব্লগার, রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারী ধর্মদ্রোহীদের পক্ষ নিচ্ছেন, তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি
http://www.24livenewspaper.com/site/index.php?url=www.amardeshonline.com
বিষয়: বিবিধ
৩১৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন