মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও প্রেস খুলে দিতে সরকারকে আল্লামা শফীর আহ্বান

লিখেছেন লিখেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:০০:৩৮ দুপুর

http://www.24livenewspaper.com/site/index.php?url=www.amardeshonline.com



হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা অবিলম্বে সরকারকে নাস্তিকদের কঠোর শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবি এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও পত্রিকার প্রেস খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আরও বলেছেন, ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতা তাদের এসব ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জোর প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় এক জরুরি বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।



এছাড়া বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত আগামী ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়।

গতকাল দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগামী ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা ও নীতিনির্ধারণের জন্য সকাল ১০টায় এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, আল্লামা হাফেজ তাজুল ইসলাম, নূর হোসাইন কাসেমী, আবদুল মালেক হালিম, মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, পটিয়া মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মুফতী মোজাফফর আহমদ, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস, অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রাকীব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা লোকমান হাকীম, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী প্রমুখ।



বৈঠকে আল্লামা শফী বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, আখেরি নবী হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.), পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের রীতিনীতি নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগাররা যেসব মিথ্যা, বানোয়াট, জঘন্য অশ্লীল ও উদ্ভট কল্পকাহিনী ব্লগে তুলে ধরে দীর্ঘদিন থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার যে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে, তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়ায় ইসলামের দুশমনরা দ্বিগুণ উত্সাহে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চ থেকে এদেশের হক্কানি ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য ও হুংকার দেয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে তারা। তিনি বলেন,



দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওলামা-মাশায়েখ ও কোটি কোটি তৌহিদি জনতা নয়, বরং সরকার ইসলামবিদ্বেষীদের দাবি বাস্তবায়নে কাজ করছে। সর্বশেষ কথিত গণজাগরণ মঞ্চের দাবিমতে, সরকার আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার এবং পত্রিকাটির প্রেসে তালা দিয়ে পত্রিকাটি বন্ধের সব ব্যবস্থা নিয়েছে। আল্লামা শাহ আহমদ শফী দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে শরিক হয়ে ইসলামবিরোধী সব অপতত্পরতা ও অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধের ঈমানি দাবিতে শরিক হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনই এসব বন্ধে যদি আমরা সক্ষম না হই, আগামীতে মুসলিম পরিচিতি নিয়ে এদেশে বসবাস করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বৈঠকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী গত ১৩ এপ্রিল সরকারের কাছে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ ও মাওলানা রুহুল আমীনের নেতৃত্বে উত্থাপিত কওমি মাদরাসা শিক্ষানীতি ২০১২ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তাদের এ রিপোর্টের সঙ্গে আমার এবং বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) কোনো সম্পর্ক নেই। তারা অনুমতি ছাড়াই আমার নাম ব্যবহার করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

সভায় জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে আগামী ৫ মে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা, রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং জেলাভিত্তিক হেফাজতে ইসলামের কমিটির সঙ্গে আলোচনা এবং কেন্দ্রীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির আওতায় ৭টি উপ-কমিটি আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠকের জন্য দেশব্যাপী সফর শুরু করবেন। তারা হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।

বৈঠকে আগামী ১৯ এপ্রিল শুক্রবার দেশব্যাপী সব কওমি মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন, আহতদের সুস্থতা এবং দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য খতমে বুখারি, খতমে ইউনুস ও বিশেষ দোয়া আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।



এদিকে গত সোমবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) নাজমুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রবিউল হোসেন এবং হাটহাজারী মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ একেএম লিয়াকত আলী হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তারা আল্লামা শফীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী ও মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ। এ সম্পর্কে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু করলে আমরা তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, ৯ মার্চ জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষ ইসলামী নেতারা ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উপযোগী এই ১৩ দফা দাবি নির্ধারণ করেন। আমাদের সব দাবি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারকে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই।



হেফাজত মহাসচিব আরও বলেন, ফটিকছড়ির ১১ এপ্রিলের ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারেও আমরা তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়েছি, সেদিন হেফাজতে ইসলামের ফটিকছড়িসহ দেশের কোথাও কোনো কর্মসূচি ছিল না। ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। ঘটনার দিন ফটিকছড়ির আল-মাহাদুল ইসলামীর পরিচালক মুফতি মাহমুদ হাসান ও কাজিরহাট মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জুনায়েদ বিন জালালসহ মাদরাসার শিক্ষকরা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করেছিলেন। উদ্ভূত ঘটনার সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের জড়ানোর চেষ্টা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

http://www.24livenewspaper.com/site/index.php?url=www.amardeshonline.com



বিষয়: বিবিধ

১১৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File