ফিয়েট (Fiat) মানির ইতিকথা। ইকোনমিক রি-কোলোনিয়ালাইজেশন!
লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ১৪ আগস্ট, ২০১৫, ১০:১২:০২ সকাল
দু'টো দেশের কথা চিন্তা করুন। একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, বিশেষ করে গোল্ড এবং অন্যটি কিছুটা কম উন্নত। দু'টো দেশের মানুষই সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। প্রথমটি গোল্ড কে মুদ্রা বা কারেন্সি হিসেবে ব্যবহার করে আর দ্বিতীয়টি বার্টার (পণ্যের বদলে পণ্যের বিনিময় প্রথা) সিস্টেমে চলে। যাই হোক, প্রত্যেক টা দেশের মানুষ ভালোভাবেই চলছে, সৎভাবে জীবন যাপন করছে।
দূরের কোন দেশ থেকে দু'জন ব্যক্তি একটা টাকার মেশিন নিয়ে ১ম দেশটিতে আসল, এবং তাদের বলল গোল্ড ব্যবহার অনেক সমস্যাকর, ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এই দু'জন ব্যক্তি মানুষকে পরামর্শ দিল সবাই যাতে সব গোল্ড জমা দিয়ে এর বিপরীতে পেপার মানি নিয়ে যায়। এক গোল্ড এর বিনিময়ে একটা কাগুজে মুদ্রা। মোট ১০০০ গোল্ড জমা হলো এবং ১০০০ টি কাগুজে মুদ্রা সবাইকে দেয়া হল এবং বলা হল যে কেউ ইচ্ছা করলে যে কোন সময় কাগুজে মুদ্রা জমা দিয়ে গোল্ড নিয়ে যেতে পারবে।
মানুষ গড়ে সাধারণত ১০০ টার বেশী গোল্ড ব্যবহার করতোনা, পেপার মানি দিয়েই সব কাজ করত। কিছুদিন পর এই লোক দু'টি একটা অসত উপায় অবলম্বন করল। তারা ২য় দেশটিকেও বার্টার এর পরিবর্তে কাগুজে মুদ্রার পরামর্শ দিল এবং যথারীতি আরোও ১০০০ কাগুজে মুদ্রা ছাপিয়ে দিল ঋণ হিসেবে, যা এক বছর পর ১৫% সুদ সহকারে ফেরত দিতে হবে। ২য় দেশের মানুষ তো খুব খুশী এই কাগুজে মুদ্রা দেখে।
যেহেতু প্রথম দেশের মানুষের জন্য গড়ে ১০০ টার বেশী গোল্ড রাখতে হচ্ছেনা, মোট গোল্ড এর ১০%। তাই এই দুই ব্যক্তি আরো ঋণ দেয়া শুরু করলো, যার পরিমাণ এসে দাঁড়ালো ১০০০০ এ (১০০০/.১০=১০০০০)। এই দুইজন ব্যক্তি দু'টি দেশেই এসব ঋণ দিল পূর্বের সুদের হারে। সোজা কথায় ১০০০ গোল্ডের বিপরীতে ইকোনমিতে মোট কাগজ ছাড়া হলো ১০০০০ টি, যার মধ্যে ৯০০০ টাকা ঢুকেছে আবার ঋণ হিসেবে।
বছর শেষে এই দুই ব্যক্তি সবাইকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য বলল, সুদ সহ ঋণ এর পরিমাণ এখন ১০৩৫০। (সুদ = ৯০০০*.১৫=১৩৫০)। কিন্তু এই দু'টি দেশে এক হাজার গোল্ড এবং বাকী ৯০০০ ফাইট মানি (যেই মানির বিপরীতে গোল্ড জমা নেই) সহ মোট মুদ্রার পরিমাণ ১০০০০। যেহেতু ঋণ (সুদ সহ) এর চেয়ে মুদ্রার সংখ্যা কম, তখন মানুষ এর জন্য প্রতিযোগীতা শুরু করল, এই দু'টি শান্তির দেশে শুরু হল অরাজকতা। যেভাবেই হোক ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু কিছু লোক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হল, যেহেতু মোট মুদ্রার চেয়ে ঋণ এর পরিমাণ ৩৫০ টাকা বেশী, তাই অনিবার্য ভাবেই কিছু লোক ব্যর্থ হল। তখন এই টাকার মেশিন বানানো দুই ব্যক্তি কিছু লোকের সম্পদ হস্তগত করে নিল ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় আর কিছু লোককে আর কিছু কাগজ ছাপিয়ে দিল (লোন রিশিডিউলিং/রিস্ট্রাকচারিং)। বছর ঘুরতে আবারও একই দশা। মোট ঋণ (সুদ সহ) কোন ভাবেই পরিশোধ সম্ভব হচ্ছেনা, এভাবে এক জন এক জন করে সবার সম্পদ হস্তগত করে নেয়া হলো। এখন দূর দেশ থেকে টাকার মেশিন নিয়ে আগত এই দুই ব্যক্তি হয়ে বসল এই দু'টো দেশের নিয়ন্ত্রক, শুধু একটা কাগজ ছাপানোর মেশিনের কল্যাণে। আর শান্তির এর দু'টো দেশে শুরু হলো দারিদ্রতা, ঋণ খেলাপী কার্যক্রম। আগে যারা সুখে শান্তিতে ছিল, এখন সারা দিন পরিশ্রম করেও ঋণ পরিশোধ হচ্ছেনা, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তেই আছে, বাড়তেই আছে।
এইবার একটু থামুন, এবং জাতীয় ক্ষেত্রে এই দু'টি মানুষ এর জায়গায় ব্যাংকগুলোর কথা চিন্তা করুন আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আইএমএফ কিংবা যারা ডলার ইউরো ছাপায় তাদের কথা মাথায় রাখুন, আর মাথায় রাখুন ১৯৭১ এ ব্রিটেন উডস কলাপস করার পরে কাগুজে মুদ্রার বিপরীতে পর্যাপ্ত গোল্ড না রেখে ডলার রাখার প্রথা শুরু হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১০০০০০০০০% সহমত। আজই যদি কোনো গরিব দেশ কাগজের বদলে আন্তর্জাতিকভাবে গোল্ড সিলভারকে মূল কারেন্সী হিসেবে ধরে লেনদেন করে,তাহলে ডলার ওয়ালারা যুদ্ধ করবে নয়ত ,এটা ঘটতে থাকলে থালা নিয়ে ভিক্ষা করবে
মন্তব্য করতে লগইন করুন