ঈসা আঃ এর অবতরণ, ইমাম মাহাদী এবং কাদিয়ানির 'ভ্রান্ত মতবাদ' পর্ব-৬

লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৩:৩৪ সন্ধ্যা

ঈসা আঃ সংক্রান্ত মিথ্যাচারের জবাব.........

মির্জা গোলাম কাদিয়ানি রচিত ‘মসীহ হিন্দুস্থান মে’(এই গ্রন্থটি আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইটে আছে) গ্রন্থের ৫২ পৃষ্টায় লিখিত আছে, “হাদীসের সহীহ রিওয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে মোহাম্মদ সা; বলেছেন, মসীহ একশত পচিশ বছর আয়ু লাভ করেছিলেন”।

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনেকগুলো মিথ্যাচার এর আগেও আমি বলেছি, এটি সেই রকমই একটি মিথ্যাচার। হাদীসের সহীহ কোন রিওয়াত দ্বারা প্রমাণিত?? এটা মোহাম্মদ সাঃ এর প্রতি একটি স্রেফ মিথ্যাচার। আর মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “যে আমার নামে মিথ্যা রচনা করবে সে তার বাসস্থান পাবে জাহান্নামে” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সূনানে আবু দাঊদ)। সহীহ রিওয়াত তো দূরের কথা কোন জাল রেওয়াতও নেই এই হাদীসের বিপরীতে!

এই বইয়েরই একই (৫২ পৃঃ) পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে “ইসলামের সকল ফির্কা একমত যে ঈসা আঃ ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি বিশ্বের বেশীরভাগ দেশ ভ্রমণ করেছেন তাই তাঁকে ‘পর্যটক নবী’ বলা হয়”।

আবার মিথ্যাচারঃ ইসলামের কোন ফির্কা একমত?? বিশ্ব মুসলিম বলতে যাদের চিনে সেই ‘সুন্নী’ কিংবা ‘শিয়া’ কেউই একমত না যে ঈসা আঃ ১২৫ বছর বেঁচেছিলেন, বরং সবাই এই বিষয়ে একমত যে তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর কোথায় ঈসা আঃ কে ‘পর্যটক নবী’ বলা হয়েছে??? কোরআনে না হাদীসে?? এই সবই ‘মিথ্যুক’ মির্জার মিথ্যাচার।

এছাড়া একইপৃষ্টায় আরো বলা হয়েছে, রাসুল সাঃ নাকি বলেছেন, “যারা দিন অবলম্বন করে মসীহর দিকে পলায়ন করে”। এই হল মির্জা গোলাম কাদিয়ানির মিথ্যাচারের নমুনা। মোহাম্মদ সাঃ কোন হাদীসে এই কথা বলেছেন??

এছাড়া মির্জা রচিত “মসীহ হিন্দুস্থান মে” গ্রন্থে হাদীসের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, “কনযুল উম্মাল’ গ্রন্থ থেকে!! আমি বুঝিনা কেন যারা মির্জাকে ‘মসীহ’ মানে তাদের মাথায় কেন আসছেন যে, সহীহ মুসলিম, সহীহ বুখারী, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, সুনানে নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত শরীফ কিংবা হাদীসের প্রাচীন গ্রন্থ মুয়াত্তা মালিক –এ ঈসা আঃ সম্পর্কিত কয়েক হাজার হাদীস বর্ণিত থাকতে ‘উদ্ভট’ সব গ্রন্থ থেকে কেন রেফারেন্স দেয়া হচ্ছে?? এটা মির্জার একটা কৌশল যাতে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়া যায়।

এবং ‘মসীহ হিন্দুস্থান মে’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ক্রশ থেকে নামার পর নাকি ঈসা আ; এর কাছে আল্লাহ ওহী করেছেন যেন তিনি একদেশ থেকে অন্য দেশে যায় যাতে কেউ তাঁকে কষ্ট না দেয়” (৫২ পৃষ্টা)। এই লাইন মির্জা কোথায় পেল?? এটা কি কোরআনে আছে??

কোরআনে ঈসা আঃ সম্পর্কে এত কিছু বলা আছে, তার প্রায় ৩৩ বছরের (আসমানের উঠার আগ পর্যন্ত) জীবন সম্পর্কে ১৫ টি সূরার ৯৮ আয়াতে বর্ণিত আছে, তার মায়ের নামে একটি সূরার নামকরণ করা হয়েছে (সূরা মরিয়াম ১৯ নং সূরা), এছাড়া তাঁর নানা বা মারিয়াম আঃ এর পিতার নামে (সূরা আলে ইমরান সূরা নং ৩), এছাড়া তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পাঁচজন রাসূলদের একজন (আল কোরআন ৩৩;৭ এবং ৪২;১৩) , অথচ তাঁর ক্রুশ থেকে কাশ্মির যাওয়া সম্পর্কে কোন আয়াত নাই, তাঁর কাশ্মির বাস সম্পর্কে কোন আয়াত নাই (যদিও মির্জা দাবি করেছে ঈসা আঃ কাশ্মিরে প্রায় ১২০-৩৩ = ৮৭ বছর বেঁচেছিল)। এবং মির্জার দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ঈসা আঃ এর কাছে ক্রুশ থেকে নামার পর (মসীহ হিন্দুস্থান মে ৫২ পৃষ্টা) যেই অহী নাযিল করেছে, তা কোরআনে স্থান পেলোনা??!!!

এইবার শুনু ঈসা আঃ যে কাশ্মিরে গিয়েছেন তা মির্জা পেল কোথায়??


‘মসীহ হিন্দুস্থান মে’ গ্রন্থের মুখপ্রবন্ধে আছে............

“বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন রেকর্ড পত্র থেকেও ইমামা মাহাদী আঃ (মির্জা কাদিয়ানি) প্রচুর তথ্য প্রমান উপস্থাপন করেন। বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন রেকর্ড এবং দলিল-দস্তাবেজ থেকে তথ্যাদি উদ্ধার করে একটা জটিল বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন”

এই হলো অবস্থা!! এটা চিন্তা করতেও কষ্ট হয়, ইমাম মাহাদী কিংবা ইসলামের কোন নবী কিংবা কোন রাসূল বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ গবেষণা করে ঈসা আঃ এর মৃত্যুর সমাধান দিচ্ছেন!!

আমরা বলিঃ হ্যাঁ, মির্জা কাদিয়ানি বৌদ্ধ ধর্ম, শিখ ধর্ম, জৈন ধর্ম থেকেই সমাধান দিবেন!! তিনি গৌতম বুদ্ধ থেকেই সমাধান দিবেন!! মির্জা সাহেবকে বলি, বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আপনি এই টা কে সমাধান দিলেন না যে ঈশ্বর বলতে কেউ নেই?? কারণ বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর বলতে কেউ নাই, তাদের দলিল-দস্তাবেজ অন্তত তাই বলে, ত্রিপিটক অন্তত তাই বলে।

কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যা ও মির্জার কূট (অপ) কৌশল.........

কোরানের কোন আয়াতের ব্যাখ্যা করতে হলে-

প্রথমতঃ দেখতে হবে কোরআনে ঐ সম্পর্কে অন্য আয়াতগুলোতে কি বলা আছে। সোজা কথায়ঃ ঈসা আঃ সংক্রান্ত আয়াতের ব্যখ্যা করতে হলে ঈসা আঃ সংক্রান্ত অন্য যেসব আয়াত কোরআনে বর্ণিত হয়েছে ঐগুলো দেখতে হবে। এবং

দ্বিতীয়তঃ রাসূল সাঃ এই আয়াত সম্পর্কে কী বলেছে তা দেখতে হবে, মানে হাদীস দেখতে হবে, কোরানের ব্যাখ্যা করা ছিল রাসূল সাঃ এর দায়িত্ব,

আল্লাহ বলেন- “আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি কোরআন যাতে আপনি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা ভেবে দেখে”। -(সূরা আন নাহল-৪৪)



আর রাসূল সাঃ ও ‘স্পষ্টভাবে’ আমাদের কোরআন বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবং আয়াত নাযিল হল

-

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরীপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম”। (আল মায়েদা-৩)

অর্থাৎ ইসলাম পরিপূর্ন যখন এই আয়াত নাযিল হয় তখন থেকেই। তাই কোরআন ব্যাখ্যা করতে হবে রাসূল সাঃ যেভাবে করেছেন এবং বুঝতে হবে সাহাবাগণ যেভাবে বুঝেছেন। সব ভাষার মত আরবীতেও এমন অনেক শব্দ রয়েছে যার বিভিন্ন রকম অর্থ হয়। এক্ষেত্রে কোরআনে কোন অর্থে শব্দটি এসেছে তা দেখতে হলে, কোরআনে ‘একই বিষয়বস্তু’ সম্বলিত আয়াতগুলো দেখতে হবে। মানে মূসা আঃ সম্পর্কিত ব্যবহৃত কোন ‘শব্দ’ এর ব্যখ্যা ঈসা আঃ সম্পর্কিত আয়াত দ্বারা দেয়া যাবেনা যদিনা মোহাম্মদ সা; এর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। আর সর্বক্ষেত্রেও হাদীসে দেখতে হবে, এই আয়াতের ব্যখ্যা কীভাবে করা আছে।

কিন্তু ব্রিটিশদের গোলাম মির্জা কোরানের অপব্যাখ্যার জন্য নতুন কৌশল নেয়। সে প্রমাণ করতে গেল, ঈসা আঃ মৃত। তাই সে মুসলিম ও বুখারী সহ ঈসা আঃ এর অবতরণ কিংবা কিয়ামতের পূর্বে আগমন সংক্রান্ত হাজার হাজার সহীহ হাদীসকে পাশ কাটিয়ে কোরানের নতুন ব্যাখ্যা দাড় করাল।

আর কাদিয়ানিদের কৌশল হচ্ছে, তারা কিছু আরবি শব্দের ব্যাখ্যা শুরু করেছে যেমন তাওয়াফফিকা কিংবা রাফা। এখন একজন ব্যক্তি যে আরবি জানেনা তাকে যদি বলা হয় রাফা মানে সশরীরে উঠানো নয়, রাফা মানে মর্যাদায় বৃদ্ধি করা তাহলে সে কী বুঝবে!! আমার এক বন্ধু কয়েকদিন আগে আমাকে ‘রাফা’ শব্দটির ব্যখ্যা দিচ্ছিল। আমি আমার সেই বন্ধুটিকে বলি, তুমি নিজেও এর অর্থ জানোনা, কিংবা তুমি আরবি ব্যাকরণ তো দূরের কথা আরবী সাধারন কথাও জানোনা। তুমি, কাদিয়ানিদের রচিত ‘মসীলে ঈসা কিংবা ওফাতে ঈসা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছ। কিন্তু তুমি কি একটি বারও যাচাই করে দেখেছ কিনা যে ‘রাফা’ আসলে কোরআনে কি অর্থে উক্ত আয়াতে এসেছে কিংবা মোহাম্মদ সা; ঈসা আঃ এর ভবিষ্যত আগমন সম্পর্কে কি বলছে??

আর মোহাম্মদ সা; এর মৃত্যু পর থেকে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জন্ম নেয়া কয়েকশ কোটি আরব কোরানের আরবী বুঝে নাই আর মির্জা কাদিয়ানি ভারতে জন্ম গ্রহণ করে আরবদের আরবি শেখাচ্ছে!! খুবই মজার বিষয়। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম, ইংল্যান্ড থেকে একজন ইংরেজ এসে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কিংবা প্রমথ চৌধুরীকে বাংলা ব্যাকরণ শেখাচ্ছে!! এই জন্যেই কাদিয়ানিদের সব আরব দেশে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়!! এমনকি উপমহাদেশের পাকিস্তানেও বর্তমানে তাদের অমুসলিম ঘোষনা করা হয়েছে ।

আর হাদীস সংক্রান্ত মির্জার জ্ঞান, তার ভাষায় শুনুন-----

“তবে হাদীস, ঊসূল ও ফিকহ শাস্ত্রে আমার গভীর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ হয়নি। নামমাত্র কিছু পড়াশোনা করেছি” (গোলাম কাদিয়ানির রচিত ‘আত-তাবলীগ ইলা মাশাইখিল হিন্দ’ থেকে)

আর আরবি সংক্রান্ত কাদিয়ানির আরেকটু ধারণা জেনে নেই.........

গোলাম কাদিয়ানি তার ‘আইনুল মা’রেফাত’ নামক গ্রন্থের ২৮৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে (১ম সংস্করণ), “রাসূল সা; এর এগারো জন পুত্র জন্ম গ্রহণ করেন এবং সবাই মারা যান”।

অথচ সত্য হল রাসূল সাঃ এর পুত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ জন।

গোলাম কাদিয়ানি তার ‘তিরইয়াকুল কুলুব’ গ্রন্থে লিখেছে,

“প্রতিশ্রুত সন্তান ইসলামী মাসের চতুর্থ মাস অর্থাৎ সফরে জন্ম গ্রহণ করেছেন” । কথা হল, সফর কি আরবি ৪র্থ মাস??

‘আর ঈসা আঃ কে আকাশে তোলা হয়নি তিনি মারা গেছেন’-এই ধারণা মির্জা কাদিয়ানি আবিষ্কার করে ১৮৮০ সালের পরে। তার মানে সেই ৬০০ সাল থেকে ১৮০০ সালের আগ পর্যন্ত সবাই ভূল বুঝেছিল কোরানের অর্থ?? এমনকি মোহাম্মদ সা; এবং সাহাবীগণও?? অথচ কোরআনে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “আমিই স্বয়ং এ কোরআন নাযিল করেছি এবং আমিই স্বয়ং এর হেফাজত কারী” (সূরা আল হিজর-৯) । কাদিয়ানি ভাইদের বলি, এই আয়াত কি ১৯০০ সালে নাযিল হয়েছিল?? না সপ্তম শতাব্দীতে??

এই আয়াত মোহাম্মদ সাঃ এর যুগেই নাযিল হয়েছে, পরে নয়। মানে মুসলমানরা, সাহাবারা ঈসা আঃ সংক্রান্ত যেই আয়াতের অর্থ যেভাবে বুঝেছেন ঠিক সেভাবেই বুঝতে হবে না হলে আল হিজরের এই আয়াত মিথ্যা হয়ে যাবে। কারণ না হলে, আল্লাহ কি ৭০০ খ্রি; -১৮০০ খ্রিঃ পর্যন্ত কোরআন এর অর্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন?? আর কিছু ভ্রান্ত কাদিয়ানি ছাড়া বিশ্বে সকল মুসলিম কোরানের এই অর্থেই বিশ্বাস করে যে ঈসা আঃ কে আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে।

কাদিয়ানিরদের যুক্তিঃ মানুষ আকাশে যেতে পারেনা (‘ওফাতে ঈসা ও মসীলে ঈসা’ গ্রন্থ থেকে, এটি এখনও আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইটটিতে পাওয়া যাবে), বইটির ৬ পৃষ্টা থেকে......



প্রথমতঃ এখানে শুরুতেই কাদিয়ানিদের স্বভাব অনুযায়ী কোরানের ভূল অনুবাদ করা হয়েছে!! ব্র্যাকেটের মধ্যেকার “(অনর্থক কার্য করা)” কি কোরানে আছে?? না নেই। এটা তাদের অতিরিক্ত বসানো। এছাড়া এখানে, “আমার প্রভু এই সকল থেকে পবিত্র” অনুবাদও সঠিক নয়। কারণ “এই সকল থেকে” অনুবাদটি কাদিয়ানিরা নতুন করে বসিয়েছে। আসল অর্থ হচ্ছে, “ক্বুল সুবহা-না রব্বী হাল কুনতু ইল্লা-বাশাররা রসূলা” অর্থ “বলুন, পবিত্র আমার রব। আমি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নই”। নিছে আয়াতের এই অংশের প্রত্যেকটি শব্দের অর্থ ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়া হল

০১। ক্বুল (বলুন) ০২। সুবহা-না (পবিত্র/প্রশংসিত) ০৩। রব্বী (আমার রব) ০৪। হাল (যা, what) ০৫। কুনতু (আমি হই) ০৬। ইল্লা (কিন্তু) ০৭। বাশাররা (একজন মানুষ) ০৮। রসূলা (একজন রসূল, বার্তাবাহক)

আবার বলি, এই অংশের অনুবাদ হচ্ছে,

সঠিকঃ “বলুন, পবিত্র আমার রব। আমি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নই”

কাদিয়ানীঃ “তুমি এদেরকে বলে দাও যে আমার প্রভু এই সকল (অনর্থক কার্য করা) থেকে পবিত্র।

দু'টি বিখ্যাত ইংরেজী অনুদবাদ দিলাম যাতে বুঝতে সহজ হয়

Sahih International

Or you have a house of gold or you ascend into the sky. And [even then], we will not believe in your ascension until you bring down to us a book we may read." Say, "Exalted is my Lord! Was I ever but a human messenger?"

Yusuf Ali

"Or thou have a house adorned with gold, or thou mount a ladder right into the skies. No, we shall not even believe in thy mounting until thou send down to us a book that we could read." Say: "Glory to my Lord! Am I aught but a man,- a messenger?"

আর সূরা বনী ইসরাঈলের ৯০-৯৩ আয়াত......

“আর তারা বলল, আমরা কখনোই ঈমান আনয়ন করব না মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত ছাড়া। আর তারা বলল, আমরা কখনোই ঈমান আনয়ন করব না মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত ছাড়া। অথবা খেজুর বা আঙ্গুরের এমন একটি বাগান থাকবে আর তুমি সে বাগানে বহু নহর প্রবাহিত করে দেব। অথবা তোমার বর্ণনানুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে কিংবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে সামনে আনবে। অথবা সবর্ণ নির্মীত কোন ঘর থাকবে, অথবা আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আরোহণ করাকেও কখনও বিশ্বাস করবেনা, যতক্ষণ না আমাদের জন্য পথনযোগ্য কিতাব না দাও। বলুন, পবিত্র আমার রব। আমি একজন মানুষ, একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নই”

এখানে কাফিররা মোহাম্মদ সা; এর কাছে এসে বললো তুমি যদি আল্লাহর রাসূল হও তবে এগুলো এগুলো করে দেখাও। কিন্তু এগুলো করে দেখালেও তারা কখনোই ঈমান আনতো না, তারা শুধু মাত্র মোহাম্মদ সাঃ কে অপমাণ করার জন্য এগুলো বলেছে। (দ্রষ্টব্যঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)

কিন্তু কাদিয়ানিরা এর অর্থ করেছে রাসূল সাঃ আকাশে উঠা আল্লাহর স্বভাব বিরুদ্ধ। অথচ রাসূল সাঃ শুধু আকাশে নয় এখানের সব গুলো দাবীও যদি পূরণ করতেন তবেও কাফিররা মুসলিম হতোনা। আল্লাহ এটা ভালো করেই জানেন। এজন্যেই লাইনের পরবর্তী অংশ ‘বলুন পবিত্র আমার রব। আমি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নই’। অর্থঃ আমি তো শুধু সতর্ককারী (দ্রষ্টব্যঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)।

আর এই লাইনের ব্যাখ্যা যদি এই করা হয় যে, রাসূল সাঃ আকাশে উঠে দেখাননি তাই আকাশে উঠা আল্লাহর নীতি বিরুদ্ধ। তাহলে এখানে কাফিরদের করা অন্যান্য দাবী গুলোও আল্লাহর নীতি বিরুদ্ধ হবে। কাফিরদের অন্যান্য দাবী...

১। মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত করা (আল্লাহ কী মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত করেন না?? বিশ্বে কি ঝর্ণা বা পানির স্রোত মাটি থেকে বের হয়না??

২। খেজুর বা আঙ্গুরের একটি বাগান (বিশ্বে খেজুর বা আঙ্গুরের বাগান কি নেই??)

৩। আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করা (এখানে কেয়ামতের কথা বলা হচ্ছে। আর আকাশকে খন্ড বিখন্ড কি আল্লাহ করবেন না??)

৪। সবর্ণ নির্মিত ঘর সামনে আনা (সবর্ণ নির্মিত ঘর কি তৈরী অসম্ভব??)

৫। পাঠযোগ্য কিতাব (কোরআন কি পাঠযোগ্য কিতাব নয়?)

আসলে এখানে কাফিররা শুধু মোহাম্মদ সাঃ কে অপমাণ করার জন্য এসব করতে বলেছে। কিন্তু আল্লাহ জানেন, এসব করলেও তারা মুসলিম হবেনা। যেমন “আরোহন করাকেও কখনও বিশ্বাস করবেনা, যতক্ষণ না আমাদের পাঠযোগ্য কিতাব না দাও”। অথচ তাদের প্রতি কোরআন নাযিল হয়েছিল, যা পাঠযোগ্য!!

আর শেষে ‘আমি একজন মানুষ, একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নই’ এর মানে এটা না যে মানুষ আকাশে যেতে পারেনা। পরবর্তী দু’টি লাইন পড়লেই এটা সহজে বুঝা যায়,

সূরা বনী ইসরাঈল ৯৪ এবং ৯৫ আয়াত......

“হেদায়েত আসলে ঈমান হতে লোকদেরকে বিরত রাখে শুধু এ উক্তিটি, আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠালেন? বলুন, ফেরেশতারা যদি নিশ্চিন্ত মনে ভূপৃষ্টে বিচরণ করত তবে আমি আকাশ হতে ফেরেশতাই প্রেরণ করতাম রাসূল করে”

কাফেররা এখানে শুধু মাত্র মোহাম্মদ সাঃ কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার জন্য বলে, মানুষ কীভাবে ফেরেশতা হয়?? এটা তাদের কথা কথা। আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে যদি মানুষ না থেকে ফেরেশতা থাকত তবে তিনি ফেরেশতাই পাঠাতেন। এবং আগের বাক্য, আমি তো মানুষ এবং রাসূল ব্যতিরেকে কিছুই নই। মানে আমি মানুষ, মানুষের জন্য নবী হিসেবে মানুষই আসবে ফেরেশতা নয়। আর তোমাদের দাবী যদি আল্লাহ চান তবে আমি পূরণ করতে পারব, না চাইলে পারবোনা, কারণ আমি মানুষ।

আর কাফেরদের এইরকম অনেক দাবী মোহাম্মদ সাঃ মো’জেযা স্বরূপ পূরণ করেছেনও...যেমনঃ চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করা। আল্লাহ বলেন, “ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে গেছে” (সূরা ক্বমার-১)

এখানে কাফিররা মোহাম্মদ সাঃ কে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার দাবী করলে, আল্লাহর নির্দেশে তিনি তা করেন। এরপরো অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহ বলেন,

“আর কোন নিদর্শন দেখেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, এবং বলে এটা তো চলমান যাদু” (সূরা ক্বমার-২)

তাহলে এসব নিদর্শন দেখানো আল্লাহর নিয়মের ভিতরেই, নিয়মের বাইরে নয়, আর রাসূলদের মু’জিযা সাধারন মানুষের জন্য নিয়মের বাইরে, রাসূলদের জন্য নয়। যেমনঃ মূসা আঃ লাঠিকে সাপে পরিণত করেছেন। লাঠি দিয়ে সাগর দ্বিখণ্ডিত করেছেন। এছাড়া ঈসা আঃ মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন, জন্মন্ধ কে ভাল করেছেন, মাটি দিয়ে পাখি তৈরী করে উড়িয়েছেন, কিংবা পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণ করেছেন। এসব কী আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে হয়েছে?? তাহলে এই কথা খাটেনা, এসব আল্লাহর নিয়মের মধ্যে নয় যে মানুষকে আকাশে উত্তোলন করা।

এছাড়া কাদিয়ানিদের উক্ত ব্যাখ্যায়, সূরা বনী ইসরাঈল এর যেই আয়াত দেয়া হয়েছে তারও অপব্যখ্যা দেয়া হয়েছে...... “আল্লাহ নিয়মের কখনো ব্যতিক্রম করেন না”

হ্যাঁ। আল্লাহ নিয়মের কখনো ব্যতিক্রম করেন না। তবে আল্লাহর নিয়মটা কি তা বুঝতেই কাদিয়ানিরা ভূল করছে কিংবা অপব্যখ্যা দিচ্ছে। আয়াতটি সূরা বানী ইসরাঈলের ৭৭ নং আয়াত......পুরো আয়াতটি হল..... “তারা তো চেয়েছে আপনাকে দেশ হতে বের করতে। আর যদি এরুপ ঘটেই যেতো তবে আপনার পর সেখানে স্বল্পকাল টিকে থাকত। আপনার পূর্বে আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, এরুপই তাদের নিয়ম ছিল, আর আপনি আমার নিয়মের ব্যতিক্রম পাবেন না” (সূরা বানী ইসরাইল আয়াত ৭৬ ও ৭৭)।

কাফেররা মোহাম্মদ সাঃ কে দেশ (মক্কা) থেকে বের করার হুমকি দিয়েছিল কিংবা বের করও দিয়েছিল। এবং পরবর্তীতে মোহাম্মদ সাঃ বিজয়ীর বেশেই মক্কাতে ফিরলেন। আল্লাহ তাই বলেছেন, আপনার পূর্বের সকল নবী রাসূলকেও এই রকম লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা আবার বিজয়ের বেশে দেশে এসেছেন এবং আপনাকেও অন্যান্য রাসূলদের মতো সাহায্য করা হবে, মানে আপনি আল্লাহর এই নিয়মের কোন ব্যাতিক্রম পাবেন না যেই নিয়ম ছিল পূর্ববর্তী রাসূলদের বেলায়। একটি উদাহরণ দেয়া যাক, রাসূলদের আল্লাহ ওহী দেন তাই এখানে আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে রাসূলদের ওহী দেয়া আর সাধারণ মানুষ ওহী পায়না এখানে আল্লাহর নিয়ম সাধারন মানুষ ওহী পাবেনা। আবার রাসূলদের আল্লাহ বিভিন্ন মু’যেজা দেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে দেন না, রাসূলদের নিয়ম আর সাধারন মানুষদের নিয়ম একনা। তাই সাধারন মানুষ আকাশে যেতে পারবেনা তার মানে এই না যে রাসুলরাও আকাশে যেতে পারবেনা। আর সাধারণ মানুষ আকাশে যাচ্ছেনা?? বর্তমান যুগ কি বলে??

আর মোহাম্মদ সাঃ মিরাজে আসমানে গিয়েছেন, তবে ঈসা আঃ কেন যেতে পারবেনা?? এখানে কাদিয়ানিরা অপব্যাখ্যা দেও...যে মোহাম্মদ সাঃ মিরাজে গিয়েছেন আধ্যাত্মিকভাবে। অথচ শত শত হাদীস আছে তার সশরীরে যাওয়ার ব্যাপারে। অথচ আমি কাদিয়ানি ভাইদের বলব, মোহাম্মদ সাঃ আধ্যাত্মিকভাবে মিরাজে গিয়েছেন এই রকম একটা সহীহ হাদীস দেখান। আছে কি এই সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস??

মিরাজ সম্পর্কে আমি এখানে শুধু ৫ টা সহীহ হাদীস দেবো, মিরাজ সম্পর্কে যেহেতু এই পোস্ট নয়, তাই আমি এই নিয়ে এখানে বেশী আলোচনা করবোনা। পরে এই নিয়ে ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা হবে।

১। আবু যর কর্তৃক বর্ণিত আছে যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া তাঁর পেটের উর্ধব হইতে নিম্ন দেশ পর্যন্ত ফাঁড়া হইয়াছিল এবং তাঁহার কলব বাহির করিয়া সুরক্ষিত জমজম শরীফের পানি দ্বারা ধৌত করা হইয়াছিল” (সহীহ মুসলিম)

আধ্যাত্মিক কোন কিছু হইলে অবশ্যই শরীর কেটে ক্বলব বের করে পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যাপার ঘটতোনা।

২। অন্য হাদীসে আছে, “অতঃপর ক্বলব কে নিজ স্থানে রাখিয়া জখম ভাল করিয়া দিয়াছিল” (সহীহ মুসলিম)

আধ্যাত্মিক কোন কিছুর যখন হয়না, তাই ভাল করার ও দরকার হয়না।

৩। “অতঃপর প্রিয়তম নূর নবীর নিকট বোরাক নামে সাদা রঙয়ের একটি জন্তু উপস্থিত করা হইল। যাহা গর্দভ হইতে কিঞ্চিত উঁচু এবং খচ্চর হইতে কিঞ্চিত নীচু ছিল। উহার গতি বিদ্যুতের ন্যায় এইরুপ ছিল যে ইহার এক একটি পা তাঁহার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে ফেলিত” (সহীহ মুসলিম)

আধ্যাত্মিক ভ্রমণের জন্য বাহন প্রয়োজন হয়না। বাহনের বিবরণ তো দূরে থাক।

৪। হযরত আনাস রাঃ বলেন, মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “আমি নিজেই বোরাককে একটি গোলকের সহিত বাঁধিয়াছিলাম যাহার সহিত আম্বিয়া আঃ গণ তাহাদের সওয়ারী গুলো বাঁধিয়াছিল” (সহীহ মুসলিম)

উল্লেখ্যঃ এখানে বাইতুল মাকদিস এ সওয়ারী বাঁধার কথা বলা হচ্ছে।

আগেই বলেছি, আধ্যাত্মিক ভ্রমণে কোন বাহন লাগে আর বাঁধা তো দূরের কথা। অথচ মোহাম্মদ সা; বলছেন, উনি নিজ হাতে সওয়ারী বেঁধেছিল।

৫। অন্য বর্ণনায় আছে, “মোহাম্মদ সা; নামায শেষ করিয়া বাহিরে তাশরিফ আনিলেন সেই সময় জিবরাঈল আঃ এক পাত্রে শরাব আর এক পাত্রে দুগ্ধ লইয়া হুজুরের সমীপে পেশ করিলেন। হুজুর বলেন, আমি দুগ্ধ পাত্রকেই গ্রহণ করলাম। ইহাতে জিবরাঈল সাঃ বললেন আপনি ফিতরাত গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আসমান পথে উঠিয়া গেলেন” (মুসলিম)

আধ্যাত্মিক কোন ভ্রমণে দুগ্ধ পান করা যায়না।

সবচেয়ে বড় কথা মিরাজ যে আধ্যাত্মিক এটা কাদিয়ানিরা পেল কোথায়?? কাদিয়ানিরা এও বিশ্বাস করে ঈসা আঃ যে মানুষকে জীবিত থেকে মৃত করেছেন তা বাস্তবে নয়, তা হচ্ছে মানসিক বা আধ্যাত্মিকভাবে মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন। কথা হচ্ছে, এই কথাও মির্জা গোলাম পেল কোথায়?? যে ঈসা আঃ মৃতকে জীবিত করেছেন আধ্যাত্মিকভাবে।

অথচ আল্লাহ বলেন, “আর যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াত পঠিত হয়...” (সূরা ইউনুস-১৫)

“এভাবে স্পষ্ট নিদর্শনরুপে তা (কোরআন) নাযিল করেছি, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎ পথ প্রদর্শন করেন” (সূরা হাজ্জ-১৬)

কোরআন স্পষ্ট ভাবেই নিদর্শন বর্ননা করে, আধ্যাত্মিকতার স্থান নেই। আর কোন কিছু আধ্যাত্মিক হতে হলে স্পষ্টভাবে কোরআন বা হাদীসে বর্ণনা থাকতে হবে যে ঐ ঘটনাটি আধ্যাত্মিক।

আসলে মির্জা কাদিয়ানি ইসলামটাকেই ‘রুপক’ বানিয়ে দিয়েছে আর কোরয়ানকেও সম্পূর্নরুপে রুপক বানিয়ে অপব্যখ্যা দিয়েছিল, কারণ তার প্রভু ব্রিটিশদের জন্য ‘ইসলাম’ ছিল বিপদ স্বরূপ। তাই ব্রিটিশরা চেয়েছে যাতে করে মুসলিমরা ‘প্রাক্টিক্যাল ভাবে’ ধর্ম চর্চা না করতে পারে। এজন্যেই মির্জার ভাষ্য, “আমি অসির কাজ মসী দিয়েই করেছি” (আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইট)

আমরা বলিঃ অসি কাজ মসী দিয়ে করা গেলে মোহাম্মদ সাঃ তাঁর জীবনে এত যুদ্ধ করতেন না, আর আল্লাহও বলতেন না......... “কাফির ও মুনাফিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন ও কঠোর হন, তাদের বাসস্থান জাহান্নাম, তা কতই না নিকৃষ্ট স্থান” (সুরা তাওবাহ-৭৩)

তাই আবারো বলি-

“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার উপমা আদমের উপমার মত; তিনি তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করে বললেন, হও, তখন হয়ে গেল। এ সত্য আপনার রবের নিকট হতে; তাই সন্দেহকারী হবেন না” (সূরা আলে ইমরান-৫৯ এবং ৬০ নং আয়াত)

আদম আঃ যেইরুপ পিতা মাতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে সেইরুপ ঈসা আঃ ও পিতা ছাড়া জন্মেছে। আর আল্লাহই বলছেন, আদম আঃ এর জন্ম যেই রকম সত্য ঈসা আঃ এর জন্ম এবং মু’জেযা সবই সত্য আর সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত না হতে আল্লাহর নির্দেশ, কেননা আল্লাহর নিকট কিছু করা অতি সহজ, উনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর অমনি তা ‘হয়ে যায়’।

ঈসা আ; এর প্রতি প্রত্যেকটা মু’জেযা ছিল সুস্পষ্ট---

(কাদিয়ানিদের আরেকটা কথা হচ্ছে মোহাম্মদ সাঃ যা পারেন না তা কোন নবীই পারেন না। এটা হচ্ছে একটা ভন্ডামী আর ইসলাম সম্পর্কে কিছু না জানার ফল। প্রত্যেকটা নবীর মু’জেযা ছিল আলাদা ও স্বতন্ত্র।)

“সে (মরিয়ম) ছেলের প্রতি ইংগিত দিল; তারা বলল, কোলের শিশুর সাথে কিভাবে কথা বলব? শিশু বলল, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দাহ। আমাকে তিনি কিতাব প্রদান করেছেন, এবং আমাকে নবী করেছেন” (সূরা মরিয়াম-২৯ এবং ৩০ নং আয়াত)

কাদিয়ানিরা কি এসব আয়াত দেখে না?? ঈসা আঃ জন্মের পরপরই কথা বলেছেন, তার জন্মই হয়েছে অলৌকিকভাবে পিতা ছাড়া!! এসব কি ‘ব্যতিক্রম’ নয়?? আল্লাহর পক্ষে সবই সহজ, তিনি শুধু বলেন ‘কুন’ অমনি তা হয়ে যায়। আর ঈসা আঃ কে আকাশে নেওয়াতো কোন ব্যাপারই না। আর এটা তার নীতি বিরুদ্ধও নয়, যেই রকম পিতা ছাড়া জন্মানো কিংবা ছোট বেলায় কথাও তার নীতি বিরুদ্ধ নয়। বরং নবী রাসূলদের বেলায় এটাই আল্লাহর নীতি যে তারা ব্যতিক্রম মু’জেযা বা নিদর্শন দেখাবে।

ঈসা আঃ এর আরো কিছু স্পষ্ট ব্যতিক্রম মু’জেযা (মু’জেযা ব্যতিক্রমই হয়)—

“যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! আমার নেয়ামতের কথা স্মরন কর যা তোমার ও তোমার মাতার প্রতি ছিল। জিব্রাইল দ্বারা তোমাকে সাহায্য করেছি, তুমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে-তোমাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজিল শিক্ষা দিয়েছি; আর আমার অনুমতিতে মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি ঘটন করে ফুঁক দিলে, তা আমার হুকুমে উড়ত। আমার অনুগ্রহে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রুগীকে ভাল করতে, আমার হুকুমে মৃতকে জীবিত করতে.........” (সূরা মা’ইয়িদা-১১০)

কাদিয়ানিরা বলে এখানে মৃতকে আত্মিকভাবে জীবিত করেছেন!! তাদের প্রতি আল্লাহর এই আয়াত, “এ সত্য আপনার রবের নিকট হতে; তাই সন্দেহকারী হবেন না” (সূরা আলে ইমরান-৬০)

আর আত্মিক ভাবে জীবিত করন কোন নিদর্শন হতে পারেনা। যে কেউই যে কাউকে আত্মিক ভাবে জীবিত করার দাবী করতে পারে। কারণ আত্মিকভাবে জীবিত করা স্পষ্ট নিদর্শন নয়। আর ঈসা আ; এর এসবই স্পষ্ট নিদর্শন। আর কাফেরদের সামনে যখন তিনি এসব অলৌকিক কার্য করে দেখালেন তারা বলল, আল্লাহর ভাষায়, “তুমি তাদের সামনে প্রকাশ্য নিদর্শন আনলে, তখন কাফেররা বলল, এতো শুধু যাদু” (সূরা মা’ইয়িদা-১১০)

আত্মিকভাবে জীবিত করলে, প্রকাশ্য যাদু বলার কোন কারণ নেই। ব্যাপারটা এই রকম, আমি দাবী করলাম (যেই রকম আমাদের দেশে সূফীরা দাবী করে) আমি ঐ ব্যক্তিকে আত্মিকভাবে জীবিত করলাম। এতে কারোই কিছু যায় আসেনা, কারণ আত্মিকভাবে জীবিতকরণ প্রমাণ করা যায়না। অন্যথায় কেউ যদি মৃত মানুষকে জীবিত করে তাহলে আপনাকে মানতে হবে এটা অলৌকিক কিংবা আপনি বলবেন এটা যাদু, যেইরকম কাফিররা বলেছে। আসলে মির্জা কাদিয়ানি, ইসলামটাকেই আধ্যাত্মিক বানিয়ে দিয়েছে আর কোরআন কে আধ্যাত্মিক বই বানিয়ে দিয়েছে কারণ ব্রিটিশদের জন্য তা দরকার ছিল। অথচ আল্লাহর কোরআন স্পষ্ট এবং আল্লাহর রাসূলদের মু’জেযা ও প্রকাশ্য। আর কোরানের কোন কিছু রুপক হতে হলে, তা কোরয়ানেই বলে দেয়া লাগবে কিংবা কোন সহীহ হাদীসে। আর সকল নবী রাসূলদের মো’জেযাই ছিল প্রকাশ্য, বাস্তব, এক্ষেত্রে সবই সত্য।

ঈসা আঃ জন্ম থেকেই অলৌকিক ভাবে জন্মেছেন পিতা ছাড়া। তিনি মাটি দ্বারা পাখি তৈরি করে উড়িয়েছেন, জন্মান্ধকে ভাল করেছেন, মৃতকে জীবিত করেছেন। এছাড়া তার সাথীরা যখন তাঁকে আসমান থেকে খাদ্য আনতে বলল, তখন আসমান থেকে খাদ্য আসল (সূরা আল মায়েদা-১১২ থেকে ১১৫), এছাড়া তাঁর মা মরিয়ম আ; এর কাছের আসমান থেকে খাদ্য এসেছিল, “...যখন যাকারিয়া তাঁর কক্ষে যেতেন, কিছু খাবার দেখতেন; বলতেন, হে মারইয়াম! তোমার কাছে এসব কোত্থেকে আসে? বলতেন, তা আল্লাহর পক্ষ হতে আসে...” (সুরা আলে ইমরান ৩৭)

বিষয়: বিবিধ

২২৭২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

264637
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৪
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:১৬
208425
সত্য প্রিয় বাঙালী লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File