ঈসা আঃ এর অবতরণ, ইমাম মাহাদী এবং কাদিয়ানির 'ভ্রান্ত মতবাদ' পর্ব-২

লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ২৩ জুন, ২০১৪, ০১:০২:৪৬ দুপুর

ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু কথা..................

তুরস্কের উস্মানি খিলাফাত পতনের সময় ভারতীয় মুস্লিমগন তীব্র প্রতিবাধের ঝর তুলে খিলাফাত পুনঃ প্রতিষ্ঠার দাবী করেন। এই আন্দোলনের নাম ছিল “খেলাফাত আন্দোলন” । এর প্রতি ইঙ্গিত করে হিন্দু লেখক বলেন যে কাদিয়ানীরা খেলাফাত পুনঃ প্রতিষ্টার দাবীতে মুস্লিমদের সমর্থন করেনি।

প্রত্যেকটি কাদিয়ানি সে যেখানেই থাকুক না কেন, চাই আরব, তুর্কীস্তান , ইরান আথবা পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে অবস্থান করুক, সর্বদাই তার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা কাদিয়ান আভিমুখে হবে এবং কাদিয়ান তার মুক্তির কেন্দ্রস্থল হবে। আর এতেই ভারত কে পবিত্র মনে করার রহস্য নিহিত। প্রত্যেকটি কাদিয়ানি ভারতকে পবিত্র মনে করবে। কেননা কাদিয়ান ভারতে অবস্তিত এবং গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ও ভারতীয়। তার খলিফাগন ও প্রতিনিধিগন সকলেই ভারতীয়। এই কারনে ধর্মান্ধ (সঠিক কুরআন ও সুন্নাতের অনুসারী) মুসলমানগণ কাদিয়ানী মতবাত কে সন্ধেহের চোখে দেখে। কেননা,তাদের ধারনা যে, কাদিয়ানী মতবাত আরবী সভ্যতা ও প্রক্রত ইস্লামের শত্রু। এই জন্যেই ‘খেলাফত আন্দোলনে’ কাদিয়ানীরা মুসলমানদের সমর্থন করেনি। কারন তাঁরা আরব ও তুরস্কের পরিবর্তে কাদিয়ানেই খিলাফত প্রতিষ্টা করতে চাই। আর এইটাই সাধারন মুসলিমদের উপর, যারা ইস্লামের পুনঃরুথানের স্বপ্ন দেখে, একটা বড় আঘাত। অপর পক্ষে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জন্যে আনন্দের বিষয়”। --- ডঃ শঙ্কর দাস। বি এস সি, এম বি বি এস। এর প্রবন্ধ যা হিন্দুদের পত্রিকা “বন্দে মাতরামে” লিখিত এবং ২২ এপ্রিল ১৯৩২ সালে প্রকাশিত।

এই কাদিয়ানী আন্দোলন যখন গড়ে উঠেছিল, তখন গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আশা ছিল যে ইসলাম বিরুধী শক্তি সমূহ তাকে সহায়তা করবে। কার্যত তাকে সাহায্য করেছে এবং সমর্থন দিয়েছে। এমন কি সাম্রাজ্যবাদীরা একে সংঘটিত ও শক্তিশালী করার জন্য লোকজন কে ঊহার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এদের অধিকাংশই ছিল উপনিবেশবাদী ইংরেজ সরকারের বেতন ভোগী আমলা ও জায়গিরদার; যাদের কোন ধর্ম নেই, একমাত্র সরকারের সেবা ও সন্তুষ্টি লাভ করা ছাড়া এদের আর কোন দীন-ধর্ম নেই। নবুয়াতের মিথ্যা দাবীদার গোলাম আহমাদ নিজেই এই কথা স্বীকার করেছে ।

সে বলেছে যে, “আমার দলে যারা প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ ইংরেজ সরকারের সদস্য বড় বড় চাকুরিজীবী, বা তারা এদেশের নেতৃত্ত স্থানীয় লোক ও ব্যবসায়ী, অথবা তারা উকিল ও ইংরেজি শিক্ষার্থী কিংবা তারা আলেম ফাযেল যারা অতীতে ইংরেজ সরকারের সেবা করেছে বা বর্ত্মানেও করছে এবং তাদের আত্মীয় সজন ও বন্ধু-বান্ধব। মোটকথা এ দলটি তার মুরুব্বি ইংরেজ সরকার দ্বারা ঘটিত, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনকারী এবং তাদের পুরুষ্কারে ধন্য। সুতারাং আমি এবং অনুসারী শিক্ষিত সমাজ মানুষের কাছে এই সরকারের অবদান সমূহ বর্ননা করে আসছি এবং হাজার হাজার লোকের অন্তরে এর আনুগত্য দৃঢ় করছি” । ----- ইংরেজ সরকারের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নরের কাছে গোলাম কাদিয়ানীর চিঠি “তাবলীগে রিসালাত” নামক গোলামের ঘোষনা বলীর অন্তর্ভুক্ত, ৭ম খন্ড কাসেম কাদিয়ানি কর্তৃক সংকলিত।

কাদিয়ানীরা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট



সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য গোলাম কাদিয়ানীর সবচেয়ে বড় খেদমত ছিল তার সেই কুখ্যাত ফতওয়া।“ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নহে ।কারন জেহাদের হুকুম রহিত হয়েগেছে এবং ইংরেজরা হল এই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। সুতারাং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়”। এতে সাম্রাজ্যবাদীরা তার উপর অত্যধিক খুশি হল। এবং সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ও অর্থ সম্পদ তার সামনে পেশ করল। এমন কি তার অনুসরন অনুকরন করার জন্য কতগুলো লোক জুটিয়ে দিল। ফলে যে ব্যাক্তি তার দীর্ঘজীবনে কখনো একসাথে একশ পাউন্ড দেখে নাই সে আজ লক্ষ লক্ষ পাউন্ড নিয়ে খেলতে শুরু করে। সে ছিল মিস্কিন সামান্য বেতনভুগী কর্মচারী, মাসে পাঁচ পাউন্ড এর বেশী পেত না, জীবিকার অন্বেষণে নগরে নগরে এবং গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেরাত;সে আজ বিরাট অট্টালিকা তৈরি করতে লাগল এবং দামী গাড়ীতে চড়তে লাগল। আর তার চাকর নোকররা অনেক বড় বড় লোকদের চেয়ে বেশী জীবিকা অর্জনের সুযোগ লাভ করতে শুরু করে।------- ব্রিটেনের রাণীর ভারতবর্ষে আগমন উপলক্ষে কাদিয়ানি যে মানপত্র প্রদান করেছিল, তাতে সে এ কথা স্বীকার করেছে।

গোলাম আহমদের ছেলে, তার ২য় খলীফা কর্তৃক ব্যক্ত স্বীকারোক্তি “কাদিয়ানি ধর্ম সাম্রাজ্যবাদীদের ফসল ছাড়া আর কিছু নয়”। সে বলেছে আমাদের উপর সাম্রারাজ্যবাদীদের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা পূর্ন শান্তি ও আরামের সহিত আমাদের উদ্দেশ্য সাধন করেছি এবং বিভিন্ন দেশে প্রচারের উদ্দেশ্যে আমরা যেতে পারছি। ব্রিটিশ সরকার আমাদের এখানেও সাহায্য করছে। এটা হল আমাদের উপর তাদের পূর্ন করুণা ও দয়া ।---------- মাহমুদ আহমদ রচিত ‘বারাকাতুল খেলাফত’ নামক গ্রন্থ হতে।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পিতা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে

স্বয়ং গোলাম আহমদ কাদিয়ানি তার কিতাব “তোহফায়ে কায়সারিয়ায়” উল্লেখ করেছে যে “আমার পিতা গোলাম মুর্তজা ঐ সমস্ত লোকদের একজন ছিলেন, ইংরেজ সরকারের সাথে যাদের সুসম্পর্ক ও ভালবাসার বন্ধন ছিল, এবং রাজদরবারে তার একটা আসন সংরক্ষিত ছিল। সে ইংরেজ সরকার কে সর্বতভাবে সাহায্য করেছিল যখন তার স্বদেশি ও স্ব ধর্মীয় ভারতীয়রা ১৮৫১ সালে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিল। এমন কি সে নিজের পক্ষ থেকে পঞ্চাশজন সৈন্য ও পঞ্চাশটি ঘোড়া দ্বারা তাদের সাহায্য করে এবং সে তার সাধ্যাতীত ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষের সেবা করেছে”-------- তোহফায়ে কায়সারিয়া হতে।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মানসিক ভারসাম্যহীন প্রকৃতির লোক ছিল

তার সম্পর্কে বলা হয় যে “তাকে ঘর থেকে চিনি আনার কথা বলা হলে সে চিনির বদলে লবণ নিয়ে আসে। একান্ত নির্বুদ্ধিতা ও ভারসাম্যহীনতার কারনে সে পথিমধ্যে উহা খেতে আরম্ভ করে। যখন লবণ তার গলায় পৌছে আঁটকে যায় তখন তার চক্ষু দ্বয় থেকে অশ্রু নির্গত হয়”।---- তার পুত্র বশীর আহমদ কর্তৃক লিখিত ‘সীরাতুল মাহদী’ নামক গ্রন্থ।

এছাড়া গোলাম কাদিয়ানির ‘মুরাক’ বা ‘হিস্ট্রিয়া’ রোগ ছিল। মুরাক এমন রোগ যার কারণে মানুষ সঠিক চিন্তা করতে পারেনা।



সে ছিল ভীরু কাপুরুষ ও নিচুপ্রকৃতির লোক

সে এত ভীরু ছিল যে, কখনও যুদ্ধ ও কুস্তীতে অংশগ্রহণ করে নি। অথচ ঐ সময় ভদ্র পরিবারের সকলেই সামরিক শিক্ষা গ্রহন করত। এ কারনেই সে একদিন “একটা মুরগীর বাচ্ছা জবাই করতে গিয়ে তার আঙ্গুল কেটে ফেলে এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে সে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে সরে পড়ে। কারন সে জীবনে কোন প্রাণী জবাই করেনি”।------সীরাতে মাহদী ২য় খন্ড হতে।

সে কি পরিমান ছোটলোক ছিল তার প্রমান আপনারা তার লিখিত চিঠি মধ্য থেকে পাবেন। সে তৎকালীন ভারতবর্ষে নিযুক্ত ভাইসরয়ের কাছে এমন কতগুলি শব্দ ও পদ্ধতি ব্যবহার করে দরখাস্ত পেশ করল, যা কোন মর্যাদা সম্পন্ন লোকের পক্ষে শোভা পায় না। আর আল্লাহর নবীতো এই সব কিছু থেকে কত উর্ধে!

আমার অনুসারীদের নাম সম্বলিত যে আবেদন পত্রটি আপনার সমীপে পেশ করছি, এর উদ্দেশ্য হল এই যে, আমি ও আমার পূর্ব পুরুষেরা আপনাদের জন্য যে বিরাট খেদমত করেছি উহার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। আমি মহান সরকারের কাছে আরও আশা রাখি যে সরকার ঐ পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যে দীর্ঘ পঞ্চাশ বত্সর যাবৎ পরিপূর্ন বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সহিত প্রমান করেছে যে, এ পরিবার সরকারের প্রতি সবচেয়ে বেশি নিষ্ঠাবান। মহান সরকারের শাসকবর্গ এ পরিবারের ভালবাসার স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং এ পরিবারের জন্য অঙ্গিকার পত্র ও সনদপত্র দান করেছে যে ইহা একটি সেবক ও নিঃশ্বার্থ পরিবার। এ জন্যে আমি আপনাদের নিকট আশা রাখি যে, আপনারা অধিনস্থ প্রশাসকদের লিখবেন যাতে তারা ঐ বৃক্ষের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং এর রক্ষনাবেক্ষন করে; যা আপনারাই রোপণ করেছেন। আরো আশা করি, তারা যেন আমার অনুসারীদের প্রতি বিশেষ স্নেহের দৃষ্টি রাখে। কেননা অতীতে কখনও আমরা আপনাদের জন্য প্রাণ ও রক্ত উত্সর্গ করতে পিছিয়ে থাকি নি আর ভবিষতেও পিছিয়ে থাকব না। এ মহান অবদানের প্রেক্ষিতে আমরা মহান সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা দাবী করার অধীকার রাখি, যাতে কেহ আমাদের উপর আক্রম্নের সাহস না পায়”।---------ভারতবর্ষের প্রতি গোলাম আহমদের পত্র যা কাশেম কাদিয়ানি লিখিত ‘তাবলীগে রিসালাত নামক পুস্তকের ৭ম খন্ডে উল্লেখিত।

পুনরায় সে তাদের বিরাট বিরাট সেবার কথা উল্লেখ করে বলেছে যে, ইংরেজদের প্রশংসায় আমার রচিত পুস্তকাবলী দ্বারা আমি গ্রন্থাগার পরিপূর্ন করে দিয়েছি। বিশেষ করে, সরকারের প্রতি এইটাই আমার বড় অবদান। আমি আশা করি যে আমাকে এর উত্তম বিনিময় প্রদান করা হবে।

এই হল নবী দাবী করা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির সংক্ষীপ্ত ইতিহাদ ও চরিত্র........

পূর্বের পোস্ট-

কাদিয়ানী/আহমদিয়া 'সর্বশেষ নবী' ও 'প্রতিবিম্ব নবী' পর্ব-১

বিষয়: বিবিধ

১৯৩৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237890
২৩ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:২৬
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এ জন্যে আমি আপনাদের নিকট আশা রাখি যে, আপনারা অধিনস্থ প্রশাসকদের লিখবেন যাতে তারা ঐ বৃক্ষের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং এর রক্ষনাবেক্ষন করে; যা আপনারাই রোপণ করেছেন। আরো আশা করি, তারা যেন আমার অনুসারীদের প্রতি বিশেষ স্নেহের দৃষ্টি রাখে। কেননা অতীতে কখনও আমরা আপনাদের জন্য প্রাণ ও রক্ত উত্সর্গ করতে পিছিয়ে থাকি নি আর ভবিষতেও পিছিয়ে থাকব না। এ মহান অবদানের প্রেক্ষিতে আমরা মহান সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা দাবী করার অধীকার রাখি, যাতে কেহ আমাদের উপর আক্রম্নের সাহস না পায়

ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ
২৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৪২
184485
সত্য প্রিয় বাঙালী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File