কাদিয়ানি/আহমেদিয়া এবং “সর্বশেষ নবী” ও “প্রতিবিম্ব নবী” পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ১৫ জুন, ২০১৪, ০৮:৪৭:৪৮ রাত
আমাদের যুব সমাজ দিন দিন কোরআন থেকে বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। হাদীসের কথা নাই বললাম। মাঝে মধ্যে আমার বন্ধুদের বলি, “দোস্ত কোরআন কবে পড়েছিস?” । পাঁচ ছয় মিনিট হিসেব করার পর কেউ উত্তর দেয় ৬ মাস, আবার কেউ বলে ৭ মাস আগে! আর কেউ বলে, ভূলে গেছি!! আর হাদীসের কথা কী বলব। হাদীস গ্রন্থ গুলোর তো নামই জানেনা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে কিছু সংখ্যক লোক, এরা মুসলিম যুবকদের সহজেই অমুসলিম করে তুলছে। এই রকমই একটি দলের নাম ‘কাদিয়ানি’। যদিও এরা নিজেদের এখন নাম পরিবর্তন করে রেখেছে, “আহমেদিয়া”।
এই লিখাটি তাদের উদ্দেশ্যে যারা এই অপপ্রচারে ভ্রান্তিতে আছে কিংবা ভ্রান্ত হয়েছে, তাদের প্রতি আহ্বান-
“এতে রয়েছে শিক্ষা ও উপদেশ তার জন্য যার আছে বুঝার মত অন্তঃ করণ অথবা যে মনোযোগ ও নিবিষ্ট চিত্তে শ্রবণ করে”। -আল কোরআন (সূরা ক্বাফ-৩৭)
কাদিয়ানি/আহমেদিয়া দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজেকে নবী দাবী করেছে, কিন্তু কোরআনে মোহাম্মদ সাঃ শেষ নবী (খাতামুন নাবিয়্যিন) শব্দটি স্পষ্ট করে দেয়া আছে।
“মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কারো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী (খাতামুন নাবিয়্যিন)। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ”। (সুরা আহযাব -৪০)
কোরআনে যেহেতু “খাতামুন নাবিয়্যিন” শব্দটি আছে, তাই কাদিয়ানি নিজের নবুয়্যাত প্রমাণের জন্য, সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতের একটা ব্যখ্যা দাড় করিয়েছে, ব্যখ্যা হল, “খাতামুন নাবিয়্যিন” অর্থ “শেষ নবী” নয়, এর অর্থ হচ্ছে “নবীদের মোহর”। এবং পরবর্তী নবীরা তাঁর মোহরাঙ্কিত হয়ে আসবে। এবং মোহাম্মদ সাঃ শেষ নবী নয়, তিনি শ্রেষ্ঠ নবী। এবং ব্যখ্যা দেয়া হলো যে, আংটি যেই রকম হাতের আঙ্গুলের শোভা বর্ধন করে, মোহাম্মদ সাঃ ও ঠিক সেই রকম, তিনি ইসলামের শোভা বর্ধন কারী, তবে শেষ নয়। এবং মোহাম্মদ সাঃ এর পর তাঁর মোহরাঙ্কিত হয়ে আরো নবী আসবেন, কাদিয়ানি হল সেইসব নবীদের একজন।
এখন “খাতামুন নাবিয়্যিন” অর্থ কী “শেষ নবী” না অন্য কিছু। কোরআনে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ কোন অর্থে এসেছে ??
সেইসব কাদিয়ানির ভক্তদের প্রতি-
কোরআন বুঝতে হবে, ব্যখ্যা করতে হবে যেভাবে হযরত মোহাম্মদ সাঃ কোরআন বুঝেছেন এবং ব্যখ্যা করেছেন। এটা তাঁর ওপর আল্লাহর নির্দেশ, কোরআন ব্যখ্যা করা তাঁর নব্যুয়তের একটি প্রধান কাজ –
“আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি কোরআন যাতে আপনি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা ভেবে দেখে”। -(সূরা আন নাহল-৪৪)
তাই আসুন দেখি মুহাম্মদ সাঃ কীভাবে আমাদের এই আয়াতের অর্থ ‘সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে” দিয়েছেন। তিনি কী “খাতামুন নাবিয়্যিন” এর অর্থ “শেষ নবী” বুঝিয়েছেন, না অন্য কিছু।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান্ত হলো এই যে এক ব্যক্তি একটি দালান তৈরী করলো এবং খুব সুন্দর ও শোভনীয় করে সেটি সজ্জিত করলো। কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান শূন্য ছিল। দালানটির চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে মানুষ বিষ্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল, “এই স্থানে একটি ইট রাখা হয়নি কেন? বস্তুত আমি সেই ইট এবং আমিই শেষ নবী”। -(সহীহ মুসলিম-কিতাবুল ফাযায়েল, সূনানে তিরমিযী-কিতাবুল মানাকিব, ইমাম আহমাদও এটি বর্ণনা করেছেন)
নবীদের দালানের ‘শেষ ইট’ টি ছিল মোহাম্মদ সাঃ। কাদিয়ানি কিংবা অন্য কারো জন্য আর সেই দালানে কোন স্থান নেই। সেই দালানের আর বিন্দুমাত্র জায়গা খালি নেই, অর্ধেক ইটের জায়াগাও খালি নেই।
এরপরেও কি আরো প্রমাণ দিতে হবে?????????
তারপরো আরও কিছু প্রমাণ- যদি তারা সঠিক পথে ফিরে আসে, “তুমি তোমার মালিকের পথে মানুষকে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান করো......” (সূরা আন নাহল-১২৫)
“রিসালাত ও নব্যুয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং আমার পরে আর কোন রাসূল বা নবী আসবেনা”। (ইমাম আহমাদ ও ইমাম তিরমিযী এটি বর্ননা করেছেন)
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, “রাসূল সাঃ বলেছেন, “ছয়টা ব্যাপারে আমাকে অন্য নবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে, .....................(০৫) সমগ্র দুনিয়ার জন্য আমাকে রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে, (০৬) আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে” (ইমাম তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ এটি বর্ণনা করেছেন, এবং ইমাম তিরমিযী একে হাসান সহীহ বলেছেন)
এছাড়া মোহাম্মদ সাঃ যে শেষ নবী এই বিষয়ক প্রায় দুই শতাধিক হাদীস আছে। আমি কয়েকটি উল্লেখ করলাম। এখানে, কাদিয়ানিরা বলে “খাতামুন নাবিয়্যিন” মানে “নবীদের সীলমোহর”। উক্তিটি ভুল না। কোন জিনিসের মধ্যে ‘সিল’ করা মানে তার দ্বার বন্ধ করে দেয়া। চিঠির ওপরে সিল মোহর লাগানো হয়, যাতে করে কোন কিছু ভিতরে না প্রবেশ করতে পারে কিংবা ভিতর থেকে বাইরে যেতে পারে। কিন্তু যখন “নবীদের সীলমোহর” অর্থ, “শেষ নবী” না করে করা হয়, “শ্রেষ্ঠ নবী” তখনই সমস্যা। কারণ হাদীস বলছে, মোহাম্মদ সাঃ ই শেষ নবী, আর কোন নবী নেই।
আরবী অভিধানে, “খতম” শব্দের অর্থ দেয়া আছে, মোহর লাগানো, বন্ধ করা, শেষ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া এবং কোন কাজ শেষ করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করা। (দ্রষ্টব্যঃ লিসানুল আরব, কামুস এবং আকরাবুল মাওয়ারিদ, এছাড়া যেকোন ভাল আরবি অবিধান দেখে নিন)
‘খতম’ অর্থ তাই শেষ, সীলমোহর। এই জন্যেই কোরানের প্রত্যেকটি সূরার শেষ আয়াতকে বলে ‘খাওয়াতিম’। তাই এটাই প্রমাণিত হল, ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ মানে মোহাম্মদ সাঃ ই শেষ নবী, এর অর্থ এটা নয় যে, মোহাম্মদ সাঃ এর মোহরাঙ্কিত হয়ে অনেক নবী আসবেন।
এই সূরার ৩৮, ৩৯ নং আয়াতে মোহাম্মদ সঃ তাঁর (পালক) পুত্রবধূকে বিয়ে করার উত্তর দেয়া হচ্ছিল। কুরাইশরা বলতে লাগলো, মোহাম্মদ সাঃ এর শরীয়তেই তো পুত্রবধুকে বিয়ে করার হারাম, অথচ মুহাম্মদ সাঃ তা নিজেই করলেন, এখানে বলা হচ্ছে, মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কার পুরুষের পিতা নন, ইসলামে পালক পুত্র বলতে কিছু নেই, তাই পালক পুত্রের পুত্র বধুও নেই। যেহেতু পালক পুত্র বলতে কিছু নেই, তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?? এবং এটাও বলে দেয়া হল, তিনি শেষ নবী। যাতে করে কাফেররা এই প্রশ্ন তুলতে না পারে যে, ঠিক আছে, মানলাম, পালক পুত্র বলতে কিছু নেই, কিন্তু এই বিয়ে করার দরকার কি ছিল?? আপনি এই বদ প্রথা টি না ভাঙ্গলেও তো চলতো, পরবর্তী কেউ এসে এই প্রথা ভেঙ্গে দিত। কিন্তু হঠাত করেই বলা হলো, তিনি শেষ নবী। কিন্তু কেন?? বিয়ের প্রসঙ্গ থেকে কেন কোরআনে হঠাত শেষ নবী প্রসঙ্গে আসল?? কারণ, এতে করে উত্তর দেয়া হল যে, যেহেতু মোহাম্মদ সাঃ ই শেষ নবী, তাই এই বদ প্রথা যদি তিনি উতখাত না করেন, তবে কে করবে??
তাই আবারো বলি-
“মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কারো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী (খাতামুন নাবিয়্যিন)। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ”। (সুরা আহযাব -৪০)
এই সব রেফারেন্স দেখে বলা হলো, ওকে ঠিক আছে, মোহাম্মদ সাঃ শেষ নবী। তবে, কাদিয়ানি নবী নয়, উনি হচ্ছেন ‘ছায়ানবী’ বা ‘প্রতিবিম্ব নবী’, মানে উনি নতুন শরীয়ত কায়েম করেননি, উনি শরীয়ত বিহীন নবী মানে উপনবী বা ছায়ানবী।
একটা মিথ্যাকে সত্য তৈরী করতে হলে, যা যা করতে হয়, কাদিয়ানি সবই করেছে, তবে মিথ্যা সত্য হয়নি, মিথ্যাই রয়ে গেছে। সেই সব ভ্রান্ত পথিক দের প্রতি-
ইসলামে কি ‘প্রতিবিম্ব’ নবী বলে কিছু আছে?? কিংবা ‘উপনবী’?? অন্তত একটি সহীহ হাদীস বের করুন। কোরানের কথা তো বাদ ই দিলাম।
আল্লাহ বলেছেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরীপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম”। (আল মায়েদা-৩)
তাই বলি, ইসলাম ‘পরিপূর্ণ’ এখানে কোন প্রকার ‘প্রতিবিম্ব’ নবী, কিংবা ‘ছায়া নবী’ প্রবেশের সুযোগ নেই।
আরো কিছু প্রমাণ-
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে, “মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “আমার পরে মোবেশ্বারাত ব্যতীত নবুয়্যতের কিছুই বাকী নেই। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূল, মোবেশ্বারাত কি বস্তু?? তিনি বললেন, সত্য স্বপ্ন”। (তিবরানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)।
এই হাদীসের দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান হয়, নবুয়্যতের কিছুই বাকী নেই, হোক তা নব আবিষ্কৃত উপনবী কিংবা ছায়ানবী!!
এখানে বলা দরকার, শরীয়ত বিহীন হোক কিংবা শরীয়ত সহকারে হোক, কোন উপনবীর কিংবা ছায়া নবীর স্থান ইসলামে নেই।
এখানে একটি উদাহরণ ই যথেষ্ট, মূসা আঃ এবং হারূন আঃ ছিলেন ভাই, এবং মূসার আঃ এর ভাষায়, “আমার আপনজনদের মধ্য থেকে একজনকে আমার সাহায্যকারী বানাও। এবং হারুন হচ্ছে আমার ভাই (তাকেই বরং তুমি আমার সহযোগী বানিয়ে দাও)” (সূরা ত্বাহা-২৯ এবং ৩০)
আমরা সবাই জানি যে, হারুন আঃ কোন উপনবী ছিলেন না। যদিও তাঁর আলাদা উম্মত নেই, শরীয়ত নেই, বরং তিনি ছিলেন, “নবী”, উপনবী নয়। আল্লাহ বলেন, “আমি আমার নিজ অনুগ্রহে তাঁর ভাই হারুনকে নবী বানিয়ে তাঁকে (সাহায্যকারী হিসেবে) দান করলাম”। (সুরা মারইয়াম-৫৩) । তাই ইসলামে কোন, উপনবী, কিংবা ছায়ানবীর স্থান নেই।
কাদিয়ানিরা যুক্তি হিসেবে দেয়, ঈসা আঃ তো আসবেন, তাহলে অন্য নবী আসলে, “খতমে নব্যুয়াত” এর তো সমস্যা হচ্ছেনা। কথা হল, হাদীস থেকে প্রমানীত, মোহাম্মদ সাঃ এর পরে কেউ নবী হয়ে আসবে না। ঈসা আঃ তো নবী হয়েছেন মোহাম্মদ সাঃ এর আগে। এবং তিনি পরে এসে, তাঁর নিজসব শরীয়ত অনুযায়ী চলবেননা। তিনি মোহাম্মদ সাঃ এর শরীয়তেই চলবেন, মানে তিনি মোহাম্মদ সাঃ এর উম্মত হিসেবে আসবেন। এই বিষয়ে হাদীস সহকারে পরবর্তীতে পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ।
এখানে উল্লেখ্যঃ কাদিয়ানিরা বিশ্বাস করে ঈসা আঃ মারা গিয়েছেন। এবং তর্কের সময় ঈসা আঃ এর উদাহরণ দেন। বড়ই আজিব!! জাতি। মারা গেলে তো তাঁর আসার প্রশ্নই আসেনা, নবী হয়ে আসবেন কীভাবে?? আর যদি মারা না যান তবে তিনি আসবেন। কোরআনে স্পষ্ট আয়াত আছে এই সম্পর্কে। যাই হোক ঈসা আঃ, ইমাম মাহদী এবং কাদিয়ানি সম্পর্কে পরবর্তী পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ।
বিষয়টা আরো পরিষ্কার হওয়ার জন্য-
মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “আমার পরে কেউ যদি নবী হত সে হতো উমার ইবনে খাত্তাব”। এবং তিনি তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে আলী রাঃ কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমার সাথে তোমার সম্পর্ক মূসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী নেই” (বুখারী ও মুসলিম)।
তাই সেই সব কাদিয়ানি ভক্তদের বলি-
স্পষ্টতই বলা হয়েছে, আমার পরে নবী হলে সে হতো উমার রাঃ , কিন্তু উমার রাঃ নবী ছিলেন না, আলী রাঃ ও নবী ছিলেন না, কিংবা উপনবীও ছিলেন না। আর বুঝতে বাকী আছে??
কথা হচ্ছে, কাদিয়ানি-ই কী নব্যুয়তের প্রথম দাবীদার মোহাম্মদ সাঃ এর পরে...?? উত্তরঃ না। মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “আর কথা হচ্ছে এই যে, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমার পর আর কোন নবী নেই” (বুখারী-কিতাবুল মানাকিব, আবু দাঊদ-কিতাবুল মালাহেম, সূনানে তিরমিযী)।
বরং রাসূল সাঃ এর যুগেই এই রকম ভন্ড নবীর আবির্ভাব হয়েছিল। এই রকম একজন, মুসাইলাম। তিনি মোহাম্মদ সাঃ এর ইন্তিকালের পূর্বে তাঁর নিকট একটি চিঠি লিখেছিলেন, ভাষাটি এই রকম, “আল্লাহর রাসূল মুসাইলামা থেকে আল্লাহর রাসূল মোহাম্মদের নিকট”। মোহাম্মদ সাঃ কিংবা সাহাবীরা মুসাইলামার কাছ থেকে নবীর প্রমাণ চাননি, উল্টো আবু বকর রাঃ এর প্রথম খিলাফা কালে, মুসাইলামার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়, কারন সে নব্যুয়তের দাবী করেছে এবং অন্যরা এতে ঈমান এনেছে। এবং সাহাবীরা এই ব্যাপারে এক মত ছিলেন যে, আর কোন নবী, রাসূল নেই।
আরো কিছু বক্তব্য-
ইমাম আবু হানিফার যুগে (৮০-১৫০ হিঃ) এক ব্যক্তি নব্যুয়তের দাবী করে, এবং বলে, “আমাকে সুযোগ দাও, আমি নব্যুয়তের চিহ্ন পেশ করবো”। একথা শুনে আবু হানিফা বলেন, “যেই ব্যক্তি এই লোক থেকে নব্যুয়তের চিহ্ন তলব করবে সেও কাফের হয়ে যাবে”।
ইমাম আবু হানিফার এই বানী কাদিয়ানির জন্মের অনেক শতাব্দী আগের। আমি আরো কয়েকজন ইসলামিক চিন্তাবিদের মতামত তুলে ধরবো, যাদের জন্ম, কাদিয়ানির জন্মের বহু শতাব্দী পূর্বের যাতে করে, কেউ এই কথা বলতে না পারে যে এরা কাদিয়ানির সাথে শত্রুতা করে এসব বলেছেন।
ইবনে জারীর তাবারী (২২৪-৩১০ হিঃ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীরে বলেছেন, “যে নব্যুয়তকে খতম করে দিয়েছে এবং তাঁর ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে, কিয়ামত পর্যন্ত এর দরজা আর কারো জন্য খুলবেনা” (তাফসীরে ইবনে জারীর ২২ খন্ড, ১২ পৃষ্টা)।
আল্লামা শাহরিস্তানি(মৃত্যুঃ ৫৪৮ হিঃ) তাঁর মশরুর কিতাব আল মিলাল ওয়ান নিহালে লিখেছেন, “এবং যে এভাবেই বলে মোহাম্মদ সাঃ এর পরও কোন নবী আসবে (হযরত ঈসা আঃ ছাড়া), তার কাফের হওয়া সম্পর্কে যেকোন দু’জন ব্যক্তির মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারেনা”।
ইবনে কাসীর (মৃত্যু ৭৭৪ হিঃ) তাঁর তাফসীরেও মোহাম্মদ সাঃ কে শেষ নবী ও রাসূল বলে স্পষ্টভাবে ব্যখ্যা করেছেন। (দ্রষ্টব্যঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আল আহযাব-৪০)
অবশেষে-বিশ্বখ্যাত কিছু অনুবাদকের অনুবাদ দিলাম (সূরা আহযাব -৪০ সম্পর্কে)
Sahih International
Muhammad is not the father of [any] one of your men, but [he is] the Messenger of Allah and last of the prophets. And ever is Allah , of all things, Knowing.
Muhsin Khan
Muhammad (SAW) is not the father of any man among you, but he is the Messenger of Allah and the last (end) of the Prophets. And Allah is Ever AllAware of everything.
Pickthall
Muhammad is not the father of any man among you, but he is the messenger of Allah and the Seal of the Prophets; and Allah is ever Aware of all things.
Yusuf Ali
Muhammad is not the father of any of your men, but (he is) the Messenger of Allah, and the Seal of the Prophets: and Allah has full knowledge of all things.
Shakir
Muhammad is not the father of any of your men, but he is the Messenger of Allah and the Last of the prophets; and Allah is cognizant of all things.
Dr. Ghali
In no way is Muhammad the father of any of your men, but (he is) the Messenger of Allah, and the Seal (Or: Terminator; Last) of the Prophets; and Allah has been Ever-Knowing of everything.
আমন্ত্রণ রইল, পরবর্তী পোস্ট গুলোতে, ইন-শা -আল্লাহ লিখা হবে-
কোরআনে নবী- রাসূলের প্রয়োজনীয়তা এবং কাদিয়ানি-পর্ব ২
মাসীলে মসীহ, ঈসা আঃ, ইমাম মাহদী এবং কাদিয়ানি-পর্ব ৩
বিষয়: বিবিধ
২৫৭৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন