"বিজ্ঞান" ই কি স্রষ্টার অস্তিত্ব 'নির্ণয়ের' মাপকাঠি??
লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ১৩ মার্চ, ২০১৪, ০৬:০২:২৬ সন্ধ্যা
রোবটের পক্ষে যেমন মানুষের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয় তেমনি ল্যাবরেটরী টেস্টের মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে যাওয়াও সব চেয়ে বড় বোকামী। শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে তখন তার কাছে সেটাই মহাবিশ্ব। কুয়োর ব্যাঙ কি চিন্তা করতে পারে, বাইরের বিশ্বটা ‘কুয়ো’ থেকে কত বড়। উত্তর হবে না। তাহলে কী বিশ্বের অস্তিত্ব নাই হয়ে যাবে। বর্তমান বিজ্ঞান আর মিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগের বিজ্ঞান কী একই উত্তর দেয়?? এই মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে মানুষ জানতে শুরু করেছে কবে?? মিলিয়ন বছর আগের বিজ্ঞান যে উত্তর দেয়ে আজকের বিজ্ঞান কী একই উত্তর দেয়?? কিংবা আজকের বিজ্ঞান যে উত্তর দেয়, আজ থেকে সহস্র বছর পরের বিজ্ঞান কী একই উত্তর দিবে?? বিগব্যাং থিউরি উদয়ের আগ পর্যন্ত নাস্তিকদের ধারণা কী ছিল?? মানুষ ‘চিরস্থায়ী’? আর বিগব্যাং এর পর?? সব কিছুরই একটা শেষ আছে। বিজ্ঞানের ধারণা প্রতিনিয়তই পরিবর্তন শীল। কেউ যদি বলে বিজ্ঞান স্রষ্টাকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ, তাই আমি নাস্তিক। তার মানে ঐ ব্যক্তি বিজ্ঞানের ‘ইতি’ টেনে দিচ্ছে। মানুষ কী সব জানে?? বিজ্ঞান কী “পরিপূর্ণ”?? আজকের বিজ্ঞান কিছু প্রমান করতে না পারলেই কী তা মিথ্যা হয়ে যাবে?? বিজ্ঞান যতই উন্নত হচ্ছে, মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে ততই নতুন কিছু ধারণা পাচ্ছে। এইবার একটা গল্প করা যাক।
একদা কিছুই ছিল না। মহাশূন্যও না। হঠাৎ করে একদিন মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাশূন্য, বস্তু, ও শক্তি ইভল্ভ (!) করলো। তারপর ধীরে ধীরে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি ও গ্রহ-নক্ষত্র ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে পানি ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে আলো-বাতাস ইভল্ভ (!) করলো। সেই সাথে দৈবক্রমে অনেক রাসায়নিক পদার্থও ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ম ইভল্ভ (!) করলো। তারপর হঠাৎ করে একদিন মিউট বিস্ফোরণের মাধ্যমে কোনো এক পুকুর থেকে একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া ইভল্ভ (!) করলো। তবে সেই ব্যাকটেরিয়াটি পুংলিঙ্গ নাকি স্ত্রীলিঙ্গ নাকি ক্লীবলিঙ্গ ছিল তা জানা নেই! তারপর সেই ব্যাকটেরিয়া থেকে ধীরে ধীরে পুরো প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত ইভল্ভ (!) করলো এবং সকল প্রকার প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যও ইভল্ভ (!) করলো।
“স্রষ্টার সৃষ্টি কর্তা কে?” নাস্তিকদের সবচেয়ে যুক্তি মূলক প্রশ্ন ! তাদের পালটা প্রশ্ন করেন। আচ্ছা ধরেই নিলাম স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। তাহলে মহাবিশ্ব, কীভাবে আসল?? বিগ ব্যাং থিউরি!!
আমি আর আমার এক ছোট ভাই রুমে বসে গান শুনতেছিলাম। হঠাত পাশের রুমে একটা শব্দ হল। ছোট ভাইকে বললাম গিয়ে দেখে আয় কী হল?? সে এসে জবাব দিল। “একটা শব্দ। তারপর সব কিছু লন্ডভন্ড”। শব্দটা কোত্থেকে আসল?? এর উত্তর কী নাস্তিকদের কাছে আছে??
তাহলে যুক্তির খাতিরে আপনাকে ধরেই নিতে হবে, স্রষ্টা বলে একজন কেউ আছে, যার কোন স্রষ্টা নেই।
আচ্ছা, মানুষের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় কেনো ও কীভাবে ইভল্ভ করলো? ডিএনএ বৃদ্ধির সাথে ইন্দ্রিয় বৃদ্ধির সম্পর্কই বা কী?
জীবজগতের দিকে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টি দিলে তাদের শারীরিক গঠনের মধ্যে একটা সমরূপতা লক্ষ্য করা যায়। সবকিছুই অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির কারসাজি হলে দীর্ঘদিন ধরে এই সমরূপতা বজায় থাকার কথা না। কিছু কিছু প্রাণীর লেজের মাথায় এক গোছা কেশ কেনো ও কীভাবে ইভল্ভ (!) করলো, যেখানে অন্যান্য প্রাণীদের নেই! পশু-পাখিদের শিং ও জিহবা কেনো ও কীভাবে ইভল্ভ করলো। হাতির লম্বা শুঁড় কেনো ও কীভাবে ইভল্ভ (!) করলো। একই পশু-পাখির গায়ে একাধিক রং-ই বা কেনো ও কীভাবে ইভল্ভ (!) করলো। প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্মের পর ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তাদের গতি-প্রকৃতি, জীবন-যাপন প্রণালী, ও বুদ্ধিমত্তার দিকে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টি দিলেও মনে হবে যেনো তারা কোনো স্বজ্ঞাত শক্তি দ্বারা পরিচালিত এবং কোনো-না-কোনো ভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত। এগুলোকে শুধুই অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির কারসাজি বলে বিশ্বাস করাটাই আসলে অন্ধ বিশ্বাস।
প্রায় প্রত্যেকটি জাতির মধ্যে নারীদের তুলনায় পুরুষরা উচ্চতায় বেশী এবং সেই সাথে বেশী শক্তিশালী ও সাহসী। এমনকি বেশী উচ্চতার নারীরাও পুরুষদের তুলনায় কম শক্তিশালী ও সাহসী হয়। বিষয়টাকে পূর্ব নির্ধারিত মনে হয় না? বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এ বিষয়ে কী বলে? নাস্তিকদের অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতিও নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করে নাকি!
সব কিছুর পিছনেই ফ্যাক্ট (কারণ) থাকতে হবে?? নাস্তিকরা আকষ্মিকতায় বিশ্বাস করেনা, একমাত্র বিগ ব্যাং থিউরি ছাড়া!!! আমরা আস্তিকরাও আকষ্মিকতায় বিশ্বাস করিনা, একমাত্র আল্লাহর অস্তিত্ব সৃষ্টির আকষ্মিকতা ছাড়া!!
আরেকটি যুক্তি- ধরুন
(ক) স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ সৃষ্টি হয়ে ন্যাচারাল বস্তু দিয়ে কম্পুটার ও রোবটের মতো কিছু মেশিন বানিয়েছে;
(খ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্রষ্টা সৃষ্টি হয়ে মানুষ-সহ বিলিয়ন বিলিয়ন মেশিন সৃষ্টি করেছে।
‘ক’ যদি সত্য হয় তাহলে ‘খ’ সত্য হবে না কেনো? নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী সৃষ্টি হয়ে যদি কিছু করতে পারে, তাহলে একই যুক্তি অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্রষ্টা সৃষ্টি হয়ে মানুষের চেয়ে অ-নে-ক বেশী কিছু করতে পারবে না কেনো?
পৃথিবীতে আস্তিকদের সংখ্যা বেশী না নাস্তিকদের?? নাস্তিকদের সংখ্যা ১ কিংবা ২ পারসেন্ট। তাই স্রষ্টার অস্তিত্ব যে আছে, এটা প্রমাণ করার দায়িত্ব আস্তিকদের নয়, বরং স্রষ্টার অস্তিত্ব যে নেই এটা প্রমাণ করার দায়িত্ব নাস্তিকদের। উদাহরণ বলা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন চাকরি করে। এখন ৫ জন চাকরি ছেড়ে দিল। এখন বাকী ৯৫ জন কি ৫ জনের কাছে জবাবদিহি করবে, কেন তারা চাকরি করছে?? নাকি ঐ ৫ জনই চাকরি ছেড়ে দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিবে?? উত্তরঃ যারা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, তারা কারণ দেখাতে হবে। তাই প্রমাণ করতে হবে নাস্তিকদেরই যে স্রষ্টা নেই।
রজার পেনরোজ (হকিং এর সহকারী ছিল) এর মতে, সবতস্ফূর্ত ভাবে মহাবিশ্ব গঠনের সম্ভাবনা হচ্ছে ১০ এর ওপর ১০,১২৩ টি শূন্য দিলে যত হয় তার ১ ভাগ। তাই ভাবুন। মৃত্যুর পর যদি কিছু নাও থাকে, তাহলেও আস্তিকরা বেঁচে যাবে, নাস্তিকরাও। আর যদি থাকে?? তখন নাস্তিকদের কী অবস্থা হবে?? সো, দুই দিক থেকেই আস্তিকরা নিরাপদ। ত্রিমাত্রিক জিনিসের পক্ষে যেমন চতুর্মাত্রিক দেখা সম্ভব নয় (মোঃ জাফর ইকবালের মতে)। তেমনি মানুষের পক্ষে কীভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব সরাসরি দেখা সম্ভব?? আমরা যা কিছু দেখিনা, তাই কী মিথ্যা??
“পেঁচা দিনের আলো দেখেনা, তার কাছ থেকে দিনের আলো লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আচ্ছা আমাদের কাছ থেকে কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে??”-হূমায়ুন আহমেদ
বিঃদ্রঃ লেখাটি সংশয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে লিখা। নাস্তিকদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। বস্তুতঃ আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি, আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায়। আমরা বিশ্বাস করি বিজ্ঞান দিয়ে স্রষ্টাকে খোঁজা আর রোবটের পক্ষে মানুষকে নিয়ে গবেষণা একই কথা, বরং আরো বোকামী। আল্লাহ বলেছেন, “তিনি জানেন যা কিছু তাদের সামনে ও যা কিছু তাদের পশ্চাতে আছেঃ কিন্তু তারা তাদের জ্ঞানে তাঁকে আয়ত্ত করতে পারেনা”।–সূরা ত্বাহা ১১০ ।
বিষয়: বিবিধ
১২২০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নবম দশম শ্রেনী হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের হাতে - এ জাতীয় লিখাগুলো - কোন না কোন উপায়ে দায়িত্ব সম্পন্ন প্রতিটি মানুষের পৌছানো উচিত।
আমাদের দেশের সাধারন মানুষেরা যাদের কাছ হতে শিক্ষা পায় - তাদের হাতে গোছানো প্রাকটিক্যাল যুক্তি যেমন কম - ঠিক তেমনি আলোচনার উপলক্ষ ও ইচ্ছা ও ক্ষেত্র ও কম।
আপনার এ লিখা পড়ার সময় আমার মনে হল - এ জাতীয় লিখা গুলো কাওমী মাদ্রাসা হতে শুরু করে আলীয়া হয়ে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচারদের কাছে পৌছাতে পারলে - হয়তো আগামীতে নাস্তিক কিংবা সংশয়বাদীর প্রোডাকশানের সংখ্যা বাংলাদেশে কমবে।
ধন্যবাদ।
মাশা-আল্লাহ ভাই,আপনার জন্য অনতর থেকে দুআ রৈলো। আল্লাহ আপনার মংগল করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন