মুসলিমদের বিভক্তি চরমে ও আমাদের করণীয়।

লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৫৯:১৫ বিকাল

মুসলিমদের মধ্যে বর্তমানে তীব্র মতভেদ বিদ্যমান। মধ্যপ্রাচ্যে এই মতভেদ অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। ঐখানে অবশ্য আকীদাগত মতবাদের চেয়ে কূটনৈতিক মতবাদই বেশী প্রাধান্য পাচ্ছে। মতবাদের প্রথম স্তর হচ্ছে সুন্নী ও শিয়া। আমাদের উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে এই সমস্যা নেই, এখানে শিয়া সুন্নি নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। আবার আকীদাগত মতবাদও অনেক সময় কূটনীতির কাছে পর্যদুস্ত, যখন দেখি সৌদি আরব মিশরের মুরসীকে সমর্থন না করে সেনাপ্রধানকে সমর্থন করতেছে। যাই হোক আজ আকীদাগত বিষয় নিয়ে কিছু বলবোনা, কারণ এটি অনেক বড় বিষয়। আমাদের দেশে মুসলিমরা বিভক্ত অবশ্য শিয়া সুন্নী নিয়ে না, এখানে মুসলিমরা বিভক্ত জামায়াত, হেফাজত, ক্বওমি, হিযবুত তাহরীর, আর কিছু শাহাবাগী বিশ্বাসী মুসলিম। কেউ ড।জাকির নায়েকের পক্ষে আর কেউ বিপক্ষে, যাই হোক শুরুতেই বলি পৃথিবীতে বর্তমানে বিশুদ্ধ কেউই না, তবে আমরা বিশুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করি। কয়েকদিন ধরে ফেসবুক, ব্লগে শিয়া, সুন্নী, জাকির নায়িক নিয়ে লিখা দেখেই এই লিখাটার উদ্দেশ্য। যেই সঠিক হোক, আমাদের বিভক্ত করে রেখেছে ইস্রাইল আর আমেরিকা, যার মাধ্যমে তারা উপকৃ্ত হয়। আজ সূরা আল হুজুরাত পড়তে বসেছিলাম। আমি যখন কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করি, কোরআনে তার সমাধান বরাবরই পাই, যখনই কোরআন পড়ি। এই মূহুর্তে আমাদের কী করা উচিৎ। কিভাবে সিরিয়ার মুসলিম, মিশরের মুসলিম, ইরাকের মুসলিম তাদের পথ নির্দেশ পাবে, তারা যুদ্ধে কাদের সমর্থন করবে?????? আল্লাহ বলেছেন, “আর যদি মুমিনদের দুটি দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ের সাথে সন্ধি করে দিবে এবং ইনসাফ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ কায়েম কারীদের কে ভালোভাসেন”।–আল্ হুজুরাত ৯

এখন কথা হল আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনদের দুটি দল’। তাহলে মুমিন কারা????? আল হুজুরাতের ১৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “প্রকৃত মুমিনতো তারাই, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি, পরে কখনও সন্দেহ করেনি এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করেছে; তারাই সত্যবাদী লোক”।

তার মানে মুমিনের মূল দন্ড হল আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর ওপর বিশ্বাস। ছোট ছোট কিছু বিষয়ে বিভিন্ন মুসলিমের দ্বিমত থাকতেই পারে। যেগুলো কুরআন ও হাদীসে (সহিহ হাদীস) সরাসরি নেই, ঐসব বিষয়ে দ্বিমত মানে এই নয় যে আমার মতই ঠিক। মূল বিষয় এক হওয়াই জরুরী, আর তা হল, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং হযরত মুহাম্মদ সা; আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রাসূল।

ফেসবুক কিংবা ব্লগে অনেকে ড।জাকির নায়িক, ইরান, সৌদি-আরব, কিংবা আমাদের দেশের হেফাজত, জামায়াত এদের সম্পর্কে বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা উইকিপিডিয়ার রেফারেন্স দেয়, যেগুলো বেশীরভাগই এন্টি-মুসলিমদের দখলে। বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলদের সম্পর্কেও একই কথা। এক্ষেত্রে আল্লাহ বলেছেন, “ওহে যারা ঈমান এনেছ! যদি তোমাদের কাছে কোন ফাসেক ব্যক্তি কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা খুব পরীক্ষা করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশতঃ কোন কওমের ক্ষতি করে না ফেল এবং পরে নিজেদের কৃ্তকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে না হয়”। সূরা আল হুজুরাত ৬

তার মানে কোন ওয়েভসাইট, টেলিভিশন কিংবা লিংকের কত্থা শোনা মাত্রি বিশ্বাস না করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ফাসেকের সংবাদ শোনামাত্রই বিশ্বাস করা যাবেনা। তারা আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে খুবই পারদর্শী।

আর আমরা ফেসবুকে অনেকে ড।জাকির নায়েককে কাফির বলি, অনেকে আবার জামায়তকে কাফির বলে, অনেকে সৌদি-আরব কে কাফির বলে, কেউ মুরসীকে গালি দেয়, কেউ ইরানকে শিয়া বলে, কাফির বলে। এখন কথা হল, আমরা যখন এসব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলব আমাদের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে, আল্লাহ বলেছেন, “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের কোন পুরুষ যেন কোন পুরুষকে উপহাস না করে, কেননা তারা উপহাসকারীদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে; এবং কোন নারীও যেন অন্য কোন নারীকে উপহাস না কর, কেননা তারা উপহাসকারিণীদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যকে খোঁটা দিওনা এবং একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকোনা। ঈমান আনার পর ফাসিক নাম যুক্ত হওয়া অতি গর্হিত, আর যারা এরুপ কার্যাবলী থেকে নিবৃত্ত না হয় তারাই প্রকৃ্ত অনাচারী”। -আল হুজুরাত ১১

অবশেষে বলতে চাই আমি ফিলিস্তিনিকে ভালোবাসি, ভালোবাসি প্রত্যেক দেশের মুসলিমদের যদিও তারা বিভেদে লিপ্ত। আমি ইস্রাইল, আমেরিকাকে তাদের সন্ত্রাসি কর্মকান্ডের জন্য ধিক্কার জানাই।

“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের বন্ধুরুপে গ্রহন করনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে থেকে যে কেউ তাদের বন্ধু রুপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন হবে”। -সূরা আল মায়েদা ৫১

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File