১৩ দফা ও প্রথম আলো
লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:২৭:৪৯ বিকাল
২১ ই এপ্রিল, আজ প্রথম আলোতে ‘একুশে শতকে এ দাবি সমর্থন যোগ্য নয়’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার জবাব দেয়া হয়েছে। তবে ‘জবাব’ গুলো আমার কাছে অনেকটাই হাস্যকর মনে হয়েছে। এখানে কোন যুক্তি না দিয়ে চরম ভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে। শুরুতেই লিখা হয়েছে, ‘এক ধর্মের রাষ্ট্র নির্মানের চেষ্টা, ইতিহাস বলে, অতীতে কেবল সমস্যাই পয়দা করেছে।‘ কোন ইতিহাস বলে, যে ইসলামিক রাষ্ট্র নির্মানের ফলে সমস্যা ফায়দা হয়েছে? সত্য কথা হচ্ছে অতীত বলে, যে সব মুসলিম দেশ নিজের দেশ কী ইসলামিক হবে না পুজিবাদী হবে, না সমাজতান্ত্রিক হবে, এসব নিয়ে দ্বিধাদন্দে ছিল এবং আছে, সে সব দেশেই সমস্যা হয়েছে। উদাহরনঃ পাকিস্তান। অন্যদিকে ইরান কিংবা সৌদী আরব যারা ইসলামিক সিস্টেমে দেশ চালাচ্ছে তাদের সমস্যা হচ্চেনা। বরং ইতিহাস বলে আরবে পূর্বে সীমাহীন অরাজকতা ছিল। পরে ইসলামিক রাষ্ট্রই এর সমাধান দিয়েছে। যাই হোক সম্পাদকীয়টিতে যেসব যুক্তি দেয়া হয়েছে, তার প্রত্যেকটির জবাবই দেয়া যায়। তবে পোস্টটি ছোট রাখার জন্য আমি দু’তিনটি যুক্তি তুলে ধরছি।
হেফাজতের প্রথম দফার বিপরীতে বলা হয়েছে, বিশেষ একটি ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষনা নাকি অন্য ধর্মকে ছোট করবে, আর এটি নাকি মুক্তিযুদ্ধের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রথম কথা হল আমাদের রাষ্ট্র ভাষা তো বাংলা, তাই বলে যারা অবাঙ্গালী তারা কি তাদের ভাষা বিসর্জন দিয়েছে? রাষ্ট্র ভাষা বাংলা যদি অন্য ভাষাকে অপমানিত না করে, তবে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হলে কেন অন্য ধর্ম গুলোকে অপমানিত করা হবে তা আমার বুঝে আসেনা। আর ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হলে সেটি মুক্তিযুদ্ধের সাথে সাংঘর্ষিক কে বলল? আমাদের সংবিধানের যে ‘ধর্মনিরেপেক্ষতা’ তা যুদ্ধের আগে তৈরী করা না, এটি বাহাত্তরে তৈরী করা। ছেষট্টির ছয় দফা তেও তো ধর্ম নিরেপেক্ষতা ছিলনা।
জবাবে আরো বলা হয়েছে, কোরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন বাতিল করলে ব্যাংকিং আইন, কোম্পানী আইন, হিন্দু আইন এগুলোর কি হবে? আমি বুঝিনা, যারা এই সম্পাদকীয় লিখেছে, তারা কতটুকু চিন্তা করে কথাগুলো লিখেছেন। ব্যাংকিং আইন পরিবর্তন করা হবে, সুদ বাদ দিতে হবে। মালেশিয়ায় তো সুদ মুক্ত অর্থনীতি এখন জনপ্রিয়, আমেরিকায়ও পুজিবাদীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। কোম্পানী আইনের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য। হিন্দু কিংবা অমুসলিম দের জন্য যেসব আইন তা তাদের ধর্মের অনুযায়ী থাকবে। কারন কুরআনের আইন শুধু মুত্তাকীদের জন্য (সূরা বাকারাহ, আয়াত ২ দেখুন)।
হেফাজতের দফা তিন এর জবাবে বলা হয়েছে, ‘কোন নেতা (শাহাবাগের) নিজেকে ঘোষনা করেননি যে তিনি নাস্তিক”। এটি ডাহা মিথ্যা কথা। থাবা বাবা ব্লগার এক্টিভিস্টদের একজন যারা শাহাবাগের মূল দায়িত্বে ছিল। সে নিজেকে শুধু নাস্তিক না, আরো বেশী কিছু দাবী করেছে, বললেও ভুল হবেনা। যারা তার ব্লগ পড়েছেন, তারা এ বিষয়ে ভালো করেই জানেন। আরও বলা হল ‘বিচ্ছিন্নভাবে কেউ তার ব্লগে ইসলাম সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য লিখে থাকলে সে অপরাধের বিচার অবশ্যি হতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ব্লগারদের সবাই সেই একক ব্যাক্তির অপকর্মের জন্য দায়ী হবে”। সবাই দায়ী হবে কেন? হেফাজতের তো দাবী ছিল যেসব ব্লগার মহানবী সাঃ ও ইসলামকে কটাক্ষ্য করেছে তাদের বিচার করার জন্য। সম্পাদকীয়তে শেষের দিকে বলা হয়েছে, “সরকার ব্লগার দের কারারুদ্ধ করে হঠকারিতার পরিচয় দিচ্ছে”। কী সুন্দর কথা, একদিকে এরাই বলতেছে যারা এসব করতেছে তাদের বিচার করলে সমস্যা নাই, অন্যদিকে বলতেছে সরকার হঠাকারিতার পরিচয় দিচ্ছে! ১০ নাম্বার দফার জবাবে বলা হয়েছে, ‘এই বাংলা অঞ্চলে ধর্মান্তরকরন ঐতিহাসিকভাবে কখনোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিলনা”। তার মানে এরা বর্তমানে জোর করে ধর্মান্তরকরন সমর্থন করে? উল্লেখ্য হেফাজতের কথা ছিল, চট্টগ্রামে মিশনারিগুলোর ধর্মান্তরকনের অপততপরতা বন্ধ করা।
এখন সরকারের উচিত তের দফার জন্য গনভোট দেয়া, গনভোটে যদি বেশীরভাগ মানুষ চায় তাহলে তেরদফাই কার্যকর হবে, অন্যথায় হবেনা। সরকার কি গনভোট দিবে? সেটাই এখন প্রশ্ন।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন