ইসলামিক ব্যংকিং- সুদ না মুনাফা?
লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০৯:৫৬ রাত
ইসলামিক ব্যাংকিং প্রথা যে সব ব্যাংক মেনে চলে তারা কি সুদ দেয় না মুনাফা? আমার অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামিক ব্যাংকিং সম্পর্কে জানেনা। কিছু লোক না জেনেই ইসলামিক ব্যংকিং বিষয়ে কথা বলে থাকেন। এরুপ করা কখনো ঠিক না। কিছু না জানা থাকলে তা জানতে চেষ্টা করাটাই উচিত। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন,
‘ধ্বংস হোক ভিত্তিহীন উক্তিকারীরা’। সূরা আয-যারিয়াত(আয়াত-১০)।
হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর সময় এখন কার মতো জটিল ব্যংকিং ব্যবস্থা ছিলনা। আধুনিক ব্যাংকের আবির্ভাব ঘটে ১৪০১ সালে ব্যংক অব বার্সিলোনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তবে তখন ব্যবসা বানিজ্য ছিল। মোহাম্মদ সাঃ ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। মোহাম্মদ সাঃ ইসলামিক ব্যবসা বানিজ্য কিভাবে করা হবে তার মূলনীতি হাদিসে বলে দিয়েছেন, কোরানেও এ বিষয়ে বানী এসেছে।এর ওপর ভিত্তি করেই ইসলামিক ব্যবসায় বানিজ্য ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঘটিত।
ইসলাম শুধুমাত্র কোন আধ্যাত্মিক ধর্ম নয়। বরং এটি পূর্নাংগ জীবন বিধান।শুধুমাত্র ৫ বার নামায আদায় করাই ইসলাম নয়। আল্লাহ পাক বলেন,
‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করে ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে পছন্দ করে নিলাম’। (সূরা মায়েদা, আয়াত-৩)
তাই বলি ইসলাম সম্পুর্ণ জীবন বিধান, অর্থনীতি এর বাইরে নয়। আসুন সাধারন ব্যংকিং এর সাথে ইসলামিক ব্যাংকিং এর কিছু পার্থক্য দেখি, যা মুনাফা ও সুদ এর পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করবে।
ধরুন A একটি সাধারন ব্যংক। সে আমানতদার (ডিপোজিটর) থেকে টাকা জমা রাখে এবং একটি নির্দিষ্ট হারে ( ধরুন ৭%) সুদ দেয়। এভাবে A বিভিন্ন আমানতদার থেকে মোট ৮০০০০ টাকা জমা করল। B একজন শিল্পপতি। সে একটি নতুন ব্যবসায় করতে চায়। তার ১০০০০০ টাকা দরকার। কিন্তু তার কাছে আছে বিশ হাজার টাকা। এখন সে A এর কাছ থেকে বাকী ৮০০০০ টাকা নিল ১০% সুদ এর বিনিময়ে। ব্যংক A তার আমানতদার দের সুদ দিবে ৮০০০০*৭%=৫৬০০ টাকা এবং B তাকে সুদ দিবে ১০০০০০*১০%=১০০০০ টাকা। এখানে ব্যংকের লাভ ১০০০০-৫৬০০=৪৪০০ টাকা। এখন B যদি তার ব্যবসায়ে ৩০০০০ টাকা লাভ করে তাহলে ব্যাংক কে দিবে ১০০০০ টাকা, আবার ৪০০০০ টাকা লাভ করলেও দিবে ১০০০০ টাকা। ব্যাংকও গ্রাহককে দিবে ৫৬০০ টাকা।আবার এই লাভ শিল্পপতি ব্যক্তি পরোক্ষভাবে হস্তগত করেন। কারন তিনি তার ব্যবসায়ে ব্যাংকের সুদ খরচ হিসেবে দেখান, যা পন্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এবং সাধারন মানুষ (যারা ব্যংকে টাকা জমা রাখে) ঐ পন্য বেশি দাম দিয়ে কিনে নেন। শিল্পপতি B যদি দেউলিয়া(ব্যবসায়ে লাভ না হয়) হয়ে যায়, তবে সে শুধুমাত্র তার ২০০০০ টাকা লোকসান দিবে, কিন্তু সাধারণ মানুষের লোকসান হবে ৮০০০০ টাকা। কিন্তু লাভের সময় সাধারন গ্রাহক শুধু ৫৬০০ টাকা পাচ্ছে, কিন্তু লোকসান হলে ৮০০০০ টাকা। এভাবেই ধনীরা গরীবদের শোষন করছে, আর আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থা এই সুযোগ করে দিচ্ছে।
কিন্তু ইসলামিক ব্যংকিং ব্যবস্থা চলে লাভ লোকসানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। ইসলামিক ব্যংকগুলো শিল্পপ্তিকে আশি হাজার টাকা দিবে এই চুক্তিতে যে লাভ হলে লাভের লাভের ৫০% ব্যাংক পাবে এবং ৫০% শিল্পপতি পাবে, ক্ষতির ক্ষেত্রেও উভয়ই লোকসান বহন করবে, এখানে লাভ ক্ষতির অনুপাত চুক্তির সময় ব্যাংক ও শিল্পপতি নির্ধারণ করে নিবেন। ব্যবসায়ে যদি ত্রিশ হাজার টাকা লাভ করে তবে ব্যাংক পাবে ৩০০০০*৫০%=১৫০০০ টাকা এবং চল্লিশ হাজার টাকা লাভ হলে ব্যাংক পাবে ৪০০০০*৫০%=২০০০০ টাকা। ব্যাংক চুক্তি অনুযায়ী এই টাকা আবার গ্রাহক (ডিপোজিটর) দের প্রদান করে। তাই মুনাফা বেশি হলে ব্যাংক, শিল্পপতি এবং সাধারন গ্রাহক উভয়েরই মুনাফা বাড়ে, পক্ষান্তরে ব্যবসায়ে ক্ষতি হলে ব্যংক, শিল্পপতি এবং গ্রাহক সবারই নির্দিষ্ট হারে ক্ষতি হয়। ইসলামিক ব্যংকিং এর এই পদ্ধতিকে বলে মুশারাকা। এছাড়া মুদারাবা, মুরাবাহ ইত্যাদি পদ্ধতিতে এটি অর্থায়ন করে থাকে।
একটি ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে বলতে গেলে ২০০ পৃষ্টার বই লিখা লাগবে। তবে আমি এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় শুধু একটি উদাহরনের দ্বারা সুদ ও মুনাফা যে ভিন্ন তা বুঝাতে চেষ্টা করেছি। এখন আমাদের দেশের ইসলামিক ব্যাংকিং গুলো প্রকৃ্ত ইসলামিক ব্যংকিং সিস্টেম মেনে চলে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সুদ মুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং এর সাথে লেনদেন করা। অন্যথায় আল্লাহ বলেছেন,
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে (সূরা বাকারাহ-২৭৮)
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও’। (সূরা বাকারাহ-২৭৯)
পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহ বলেছেন ‘আল্লাহ ব্যবসায়কে করেছেন বৈধ, আর সুদকে হারাম’। সূরা বাকারাহ-২৭৫
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন