অনিশ্চিত গন্তব্যে দেশ; সুনিশ্চিত গন্তব্যে অরাজকতা!

লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৪৩:৫২ দুপুর

আমাদের দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হল। সৃষ্টি কর্তাই ভালো জানে তাঁকে কী জন্য গ্রেপ্তার করা হল। শুনলাম তিনটি মামলা আছে। মামলা না থাকলেও আমি অবাক হবোনা, যে দেশে পুলিশ শুধুমাত্র সন্দেহের বশে যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে (৫৪ দ্বারা), সে দেশে গ্রেপ্তারের কারন জানতে চাওয়া চরম বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হল, এটা নাকি জিজ্ঞাসা বাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এক পুলিশ বিবিসি বাংলাকে বলল। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের কথা নাই বললাম, আপনাকে গরম পানিতে চেপে ধরলে কিংবা কারেন্টের শক দিলেই যদি কেউ সত্য কথা বলে দিত, তাহলে আর আদালতের দরকার থাকতোনা, রিমান্ডেই বিচার হয়ে যেত। রিমান্ডের ‘ডিমের’ কথা আর বললাম না, যারা জানেননা তারা জেনে নেবেন। বিবিসিকে এক বিশিষ্ট নাগরিক বলল, সাংবাদিকতায় আপনাকে ‘ইথিকস’ মেনে চলতে হবে। কোথায় ছিল সেই ইথিকস, যখন নাদিয়া শারমিন সাংবাদিকতার ‘ড্রেস কোড’ বাদ দিয়ে হেফাজতের লংমার্চে গিয়েছে, তখন তো কেউ বলেনি, ওতো ‘ড্রেস কোড’ মান্য করে নাই। ‘ড্রেস কোড’ মানে আপনি যেই স্থানে যাবেন, ঐ স্থানের পরিবেশ অনুযায়ী ড্রেস পরবেন। এখানে উল্লেখ্য, অঞ্জেলিনা জোলির আফগানিস্তানে স্কুল গড়েছেন নারী শিক্ষার জন্য, তিনি যখন আফগানিস্তান আসেন তখন মাথায় কাপড় দিয়েই আসেন, আফগান দের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যই তিনি তা করেন, যদিও তার কোন বাধ্যবাদকতা বা কোড নেই। অথচ আমাদের প্রগতিশীল(!) সাংবাদিক লংমার্চে গিয়েছেন নিজের শরীর দেখাতে। কিন্তু ঐ দিনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ বৈশাখী টেলিভিশনের দু’জন সাংবাদিক পিটিয়েছে, তা না প্রচার করে আমাদের হলুদ মিডিয়া প্রচার করল লংমার্চী নারী নির্যাতন হচ্ছে। আর লংমার্চে যখন মিলিয়ন জনতার সমাবেশ সেখান নাদিয়া শারমিন খবরে বলতেছিল সেখানে মাত্র পাচ হাজার লোকের সমাবেশ তখন কী সাধারন মানুষ আঙ্গুল চুষবে। এরপর হেফাজতে ইসলাম এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিল। আর একদল প্রকাশ করতে লাগল হেফাজত নারী শিক্ষার বিরোধী, গতকাল প্রথম আলোয় আমাদের বিশিষ্ট! আইন মন্ত্রী একথা বলেছেন। তাঁকে বলি হেফাজত নারী শিক্ষা বাতিল করতে বলে নাই, ইসলাম বিরোধী নারী শিক্ষা বাতিল করতে বলেছে। কিন্তু হলুদ মিডিয়া ‘ইসলাম বিরোধি’ কথাটা সুন্দর ভাবে উঠিয়ে দিল। তাদের বলি বাংলাদেশ যদি ইসলামিক রাষ্ট্রও হয় তাহলেও তো নারী নীতি লাগবে, কারন কোরানেই তো নারী নীতি আছে তবে তা পাশ্চাত্যের মতো সমকামীতা কিংবা অবাধ যৌনচারনকে বৌধতা দেয়নি, এজন্যেই এদেশের এক মহলের সমস্যা। আর আমদের শিক্ষামন্ত্রী ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ে দেবদাবীর নামে জবাই করা পশুর মাংস খাওয়া হালাল বলে রায় দিয়েছেন, আরে ভাই ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইতো হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ শিক্ষার্থীরা পড়বেনা। তাদের জন্য তাদের ধর্মীয় বই আছে, তাহলে এই বাক্য ইসলাম শিক্ষায় কেন এসেছে?

যারা বাক স্বাধীনতার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলেন, তারা এখন নিশ্চুপ, তারা এখন ইথিকস এর কথা বলতেছে। অথচ মোহাম্মদ সাঃ এর বিরুদ্ধে নাস্তিকরা যখন কটুক্তি করল, চার’পাচ জন ব্লগার ধরা হল তখন এরাই কিছু ব্লগ সাইট অফ করে দিল নাস্তিকদের মুক্তির প্রতিবাদে আর তারাই রোকেয়া হল থেকে জোর করে ছাত্রী ধরে এনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে তাদের দাড় করিয়ে হেফাজতের বিচার চাইল। সেদিন, রোকেয়া হলের ছাত্রীদের সকাল থেকে বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করে হল ছাত্রীলীগ নেতারা, এরপর রাজু ভাষ্কর্য। আমার কথা বিশ্বাস না হলে রোকেয়া হলের ফার্স্ট কিংবা জুনিয়র কোন ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করে বিষয় টা জানতে পারবেন। ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে শাহাবাগেও এরকম অনেককে আনা হয়েছিল, জোর করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছিল।

মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার হলেন, ভালোই হল, গত চার মাস উনি তার কার্যালয়ে মূলত অবরুদ্ধ ছিলেন, এখন স্থানান্তর ঘটল। তিনি নাকি রাষ্ট্রদোহ অপরাধ করেছেন। কিছু লোক ক্ষমতা পাওয়ার পর নিজেদেরকেই রাষ্ট্র ভাবতে শুরু করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তারা রাষ্ট্রদোহের কথা বলেন, রাষ্ট্রকে তারা নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। আর কিছু লোক (আইন মন্ত্রীর মত) শুধু সংবিধান সংবিধান বলতে থাকেন। গণতান্ত্রিক দেশে, সংবিধানের জন্য মানুষ আসেনি, মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান। এই সংবিধান অপরিবর্তনশীল না, পরিবর্তনশীল। ৭২ এর সংবিধান ৭৫ এর মধ্যেই দুই বার পরিবর্তিত হয়েছিল, এরপর তো আরো অসংখ্যবার হয়েছে।

দেশ স্বাধীন হয়েছে কেন? শুধু কি যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য? তাহলে তো সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষে আমাদের আবার পাকিস্তানের সাথে একীভূত হতে হবে।

মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই।

বিষয়: রাজনীতি

১০০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File