প্রায় ছয় বছর পর রাজনৈতিক বক্তব্যে তারেক রহমানঃ ১/১১-এর দুর্যোগে তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রমাণ করেছেন দলকে ধরে রাখা যায়

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ২২ মে, ২০১৩, ০১:০৪:৪৮ রাত



বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশকে যারা ভালোবাসেন, দেশের মানুষকে যারা ভালোবাসেন, তারা কেউ এখন এই পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। যারা বিএনপিকে ভালোবাসেন, শুধু তাদেরই নয়, দেশকে যারা ভালোবাসেন, দেশের মানুষকে যারা ভালোবাসেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের প্রতি তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমান সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, দেশে যারা অবস্থান করছেন, তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

গতকাল লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির আঞ্চলিক শাখাগুলোর প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, রাতের আঁধারে মতিঝিলে বাতি নিভিয়ে হেফাজতে ইসলামের ওপর গুলি চালিয়ে সরকার এতগুলো লোক হত্যা করল। মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, তাই বলে এতগুলো লোককে এভাবে কেউ মেরে ফেলতে পারে না। এটা কোনো সভ্য দেশে চলতে পারে না। তারেক রহমান বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানুষের সভা-সমাবেশের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই। আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা যারা বলেন, বর্তমান এই পরিস্থিতি তুলে ধরার দায়িত্ব তাদের। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী নেতাকর্মীদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্বে এই কাজটি করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষিত ভালো মানুষ যাতে রাজনীতিতে এগিয়ে আসেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাও যেন দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন, সে জন্য তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশে এখন স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার নেই। সরকার আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছে। দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি আজ বন্ধ। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে।

তারেক রহমান তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সরকারের সময় যখন দলের ওপর দুর্যোগ নেমে এসেছিল, তখন নেতাদের অনেকেই আনুগত্য ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। তখন নেতাদের অনেকেই বিতর্কিত অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রমাণ করেছেন, তারা দলকে ধরে রাখতে সক্ষম। তৃণমূল নেতাকর্মীরাই তখন দলকে ধরে রাখতে এগিয়ে আসেন। দুর্যোগের সময় দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।

প্রায় ছয় বছর পর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রথম প্রকাশ্যে রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত হলেন এবং প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেন।

প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরাও ছিলেন আবেগে আপ্লুত। ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ে নির্যাতনে তারেক রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন চিকিত্সার পর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। তবে পুরোপুরি যে সুস্থ হননি, সেটা প্রমাণিত হয়েছে মঙ্গলবারও। কিছু সময় বক্তব্য দেয়ার পরই তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন এবং বলছিলেন, অসুস্থতার কারণে বেশি সময় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছেন না। নেতাকর্মীরা তখন তাকে বসে বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি সতর্কতার সঙ্গে দাঁড়িয়েই বক্তব্য দেন।

প্রিয় নেতাকে কাছে পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সীমা ছিল না। অনুষ্ঠানে প্রথমে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও তারেক রহমানের ত্বরিত সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে নেতাকর্মীরা জানান, তারেক রহমানের তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্তের কারণে তার ওপর আস্থা আরও বেড়ে গেছে।

যাদের ওপর অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ছিল, তারা কিছুটা সঙ্কুচিত ব্যবস্থা করেছিলেন। শুধু ৪০টি শহর ও স্থানীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থগিত আহ্বায়ক কমিটির ১১ জনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। আয়োজন ছিল শুধু আমন্ত্রিতদের জন্যই। তাদের মধ্যেও অনেকে যথাসময়ে দাওয়াত পাননি বলে পরবর্তীতে প্রকাশ্যে বক্তব্যে অভিযোগ করেছেন। এই দাওয়াত দেয়া নিয়ে গত ক’দিন থেকেই যুক্তরাজ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। কিন্তু বিএনপির যেসব নেতাকর্মী দাওয়াত পাননি, তারাও গুরুত্বপূর্ণ সভায় হাজির হন। নেতা আসবেন আর যাবেন না—এটা যেন হতেই পারে না।

বৈঠকস্থলে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না জেনেও নেতাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্বাগত জানাতে অনেকেই উপস্থিত হন। উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই তখন বৈঠকে প্রবেশ করতে চান। বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছিল একটি পাঁচতারকা হোটেলে। হোটেল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দিতে চায়নি। তারেক রহমান চেয়েছিলেন উপস্থিত সবাই যেন বৈঠকস্থলে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি সিদ্ধান্ত দেন এখানে বৈঠক করবেন না। উপস্থিত সবাইকে নিয়েই তিনি বৈঠক করতে চান। তিনি সিদ্ধান্ত জানান যে, কোনো অবস্থায়ই বৈঠক বাতিল করা যাবে না। অন্য কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টের হলরুম তাত্ক্ষণিক খুঁজে বের করার জন্য আয়োজকদের নির্দেশ দিলেন তারেক রহমান।

শুরু হয়ে গেল খোঁজাখুঁজি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশে আরেকটি রেস্টুরেন্টের হলরুম পাওয়া গেল। তারেক রহমান সবাইকে সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনিও সেখানে উপস্থিত হলেন। অর্থাত্ দাওয়াতের বাইরে যারা উপস্থিত হয়েছিলেন, তারাও সেখানে প্রবেশের সুযোগ পেলেন। সবাই প্রবেশ করতে পারছেন—এ খবর মুহূর্তেই লন্ডনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দাওয়াত না পাওয়ার বেদনা নিয়ে যারা ঘরে বসেছিলেন, তারাও সবাই ছুটে আসেন সেখানে। নেতাকে একনজর দেখবেন, সম্ভব হলে সালাম বিনিময় করবেন—এই লক্ষ্যে ছুটে আসেন নেতাকর্মীরা। তাদের কথা ছিল একটাই—প্রায় ৬ বছর পর নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে আসছেন আর তারা উপস্থিত থাকবেন না—এটা হতেই পারে না। তাই আনুষ্ঠানিক দাওয়াত না পেয়েও নেতার টানে ছুটে আসা।

তারেক রহমানও তাদের নিয়ে বৈঠক করে সঙ্গে সঙ্গেই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করলেন। প্রমাণ দিলেন দায়িত্বশীল নেতৃত্বের। চাইলে সবাইকে নিয়েই সমাবেশ করে মতামত নেয়া যায়—সেটা প্রমাণ করে দিলেন মুহূর্তের সিদ্ধান্তে। সঙ্কুচিত চিন্তা যে কার্যকর ফল বয়ে আনে না, সেটা প্রমাণ হলো গতকালের বৈঠকে। নেতা হবেন সাগরের মতো উদার—সেটাই প্রমাণ করে দিলেন তারেক রহমান। সাগর যেমন ছোট-বড় সব প্রাণীকে ধারণ করে নিজের অবস্থান পৃথিবীতে তার মতো করে প্রমাণ করছে, নেতাকেও কখনও কখনও সবাইকে ধারণ করে চলতে হয়—সেটাই প্রমাণ করলেন তারেক রহমান।

সূচনা বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মী সবাই একটি পরিবারের সদস্য। সুতরাং একই পরিবারভুক্ত কাউকে বাইরে রেখে বৈঠক হতে পারে না। তিনি এটাও বলেন, কেউ ব্যক্তিগতভাবে তার নিজস্ব লোক নন। বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মী তার কাছে সমান। সবারই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মী বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। সুতরাং সবার বক্তব্য শুনবেন তিনি। যুক্তরাজ্য বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সবার পরামর্শ চাইলেন। সবাই তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে দীর্ঘ বৈঠকে উপস্থিত থাকেন।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিতির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেই গতকাল লন্ডনের ওই সমাবেশ সফল হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত কারও উপস্থিতি নয়, নেতাকর্মী সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে সবার বক্তব্য শুনলেন। ১২০ জনের বেশি নেতাকর্মীর বক্তব্য শোনার পর তিনি সমাপনী বক্তব্য রাখলেন।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। তবে কোনো রাজনৈতিক সভায় অংশগ্রহণ করেননি। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিনের জানাজায়। এছাড়া তিনি প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের সমাবেশে উপস্থিত হননি।। গতকালই প্রথম হাজির হয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সামনে।

যুক্তরাজ্যে স্থবির হওয়া বিএনপির রাজনীতিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্য বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গত বছরের আগস্টে স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির কোনো কমিটি নেই। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে একটি কমিটি দেয়ার দাবি ছিল সবার। এজন্য তারেক রহমান স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য শুনলেন। তাদের কাছে থেকে পরামর্শ নিলেন।

কমিটি নিয়ে ১২০ জনের বেশি স্থানীয় নেতা বক্তব্য রেখেছেন। অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে অনেকেই যখন একে অপরের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখছিলেন, তখন সামনে উপস্থিত থাকা প্রতিপক্ষের কেউ কেউ হৈচৈ করে ওঠেন। তারেক রহমান সঙ্গে সঙ্গে তাদের থামিয়ে দিয়ে বলেন, তাকে বলতে দিন। আপনাদের কথাও এখানে দাঁড়িয়ে বলার সুযোগ পাবেন।

সমাপনী বক্তব্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির আগামী কমিটি সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যে বিভিন্ন পরামর্শ উঠে এসেছে। কেউ বলেছেন শিক্ষিত লোক দিয়ে কমিটি করতে হবে, কেউ বলেছেন সাবেক ছাত্রনেতাদের দিয়ে কমিটি করতে হবে; আবার কেউ বলেছেন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে। কিন্তু যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। নিজ নিজ এলাকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু আশানুরূপ নেতৃত্ব আমাদের সিনিয়ররা এতদিনেও বের করে আনতে সক্ষম হননি। সুতরাং ভালো-মন্দের মিশ্রণে কমিটি হতে পারে। ভবিষ্যতে ভালো মানুষরা যাতে রাজনীতিতে এগিয়ে আসেন, দেশের জন্য কাজ করতে উত্সাহিত হন, এজন্য তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। দলের সব স্তরের নেতাকর্মীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশে কোন ধরনের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চলছে—সেটা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই এ দায়িত্ব পালন করার সুযোগ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নিউহ্যাম বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম ও নিউহ্যাম বিএনপি নেতা ফেরদৌস আলম। অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধান করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহিদুর রহমান ও সাবেক আহ্বায়ক এমএ মালিকসহ ১২০ জন বক্তব্য রাখেন।

(সংগৃহীত পোস্ট) কেউ পড়ে উপকৃত হলে মন্তব্য করে আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন।

কৃতজ্ঞতা সিকা

বিষয়: বিবিধ

১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File