ডা. জাকির নায়েক ও তার জ্ঞানের পরিধি। তার জ্ঞানের পরিধি এতই বেশী যে, তাকে জ্ঞানের আধার বললেও ভুল হবে না। তার কর্মজীবনের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ১৪ মে, ২০১৩, ১১:৫২:৪৩ রাত



বর্তমান বিশ্বে যে কয়জন জ্ঞানী ব্যক্তি ও পণ্ডিত আছেন তাদের মধ্যে ডা. জাকির নায়েক অন্যতম। তার জ্ঞানের পরিধি এতই বেশী যে, তাকে জ্ঞানের আধার বললেও ভুল হবে না। তিনি ডাক্তারি পেশায় সবোর্চ্চ ডিগ্রী নেওয়ার পরও ধর্ম শাস্ত্রের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী পণ্ডিত হয়ে উঠেছেন। তিনি নিজেকে একজন বিভিন্ন ধর্মের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি একাধারে কুরআন, হাদিস, বাইবেল, বেদ, গীতা, সহ সকল ধর্ম গ্রন্থের উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। তিনি সকল ধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার করে আসছেন।

সভা, সেমিনার, বিতর্কের মাধ্যমে তিনি সবার মাঝে ইসলামকে একটি বিজয়ী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে চলেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত IRF এবং দুবাই ভিত্তিক Peach TV'র মাধ্যমে তিনি ইসলামের দাওয়াতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিতর্ক ও সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার সময় বক্তব্যের প্রমাণে তিনি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে অধ্যায় ও পৃষ্ঠা নম্বর দ্বারা রেফারেন্স দিয়ে থাকেন। যা তার অগাধ পান্ডিত্যের প্রমাণ দিয়ে থাকে। তার জ্ঞানের পরিধি এতই বিশাল যা, একমাত্র আল্লাহ তায়ালার রহমত ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। আসুন আমরা এই মহান ইসলাম প্রচারকের জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

জন্ম ও পরিচয়:

ডা. জাকির নায়েক ১৯৬৫ সালের ১৪ অক্টোবর ভারতের মুম্বাই শহরে সালাফি গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম ডা. জাকির আব্দুল করিম নায়েক। বাল্য জীবনে তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে কিশেনচাঁদ সিল্লোরাম কলেজে লেখাপড়া করেন। তিনি টোপিওয়ালা জাতীয় মেডিকেল কলেজ ও নায়ার হাসপাতাল থেকে মেডিসিন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। পরে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তার স্ত্রীর নাম ফারহাত নায়েক, যিনি IRF এর মহিলা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৭ সালে তিনি বিশিষ্ট ধর্ম গবেষক আহমেদ দিদাত এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং ধর্ম বিষয়ে তার গবেষণা দেখে অনুপ্রাণিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি দাওয়ার কাজ শুরু করেন এবং IRF (Islamic Research Foundation) নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি অলাভ জনক ধর্ম গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেখানে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সকল ধর্ম এবং ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহ নিয়ে গবেষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, গবেষণার মাধ্যমে ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে মানুষকে সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দেয়া এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের মুখ উন্মোচন করে ইসলামের সঠিক বানী সবার মাঝে পৌঁছে দেয়া। জাকির নায়েক তার লক্ষ সম্পর্কে বলেন, আমার লক্ষ হচ্ছে শিক্ষিত মুসলিম যুবকগনকে তাদের নিজস্ব ধর্ম সম্পর্কে সচেতন করা এবং ধর্ম সম্পর্কে তাদের পুরাতন ও ভুল ধারনা থেকে বাহিরে আনা। তিনি মনে করেন, ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় হামলার পর পাশ্চাত্য মিডিয়া বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে তা অপসারণ করা মুসলমানদেরই দায়িত্ব। এ ব্যাপারে তার লেখা বেশ কিছু নিবন্ধ ইসলামিক ভয়েস নামে অনেক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।

নৃতত্ত্ববিদ থমাস ব্লোম হেনসেন লিখেছেন, নায়েক তার নিজের পাণ্ডিত্য দিয়ে বিভিন্ন ভাষায় কুরআন ও হাদিস শিক্ষা লাভ করেছেন। তার এই ধর্ম প্রচারের শৈলী তাকে মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। তিনি সঠিক ধর্মের ঠিকানা মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে অন্যান্য ধর্মবেত্তাদের সাথে প্রকাশ্যে বিতর্কে অবতীর্ণ হন। ধর্ম নিয়ে তার এই বিতর্ক অনুষ্ঠান রেকর্ড করা হয় এবং তা সিডি, ডিভিডি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তার কথা প্রকৃত ভাবে রেকর্ড করা হয় ইংরেজিতে পরে এটি আরবি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত করে তার প্রতিষ্ঠিত পিস টিভির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়। তিনি যে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করেন তা হচ্ছে, ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞান, ইসলাম ও খ্রিষ্টান, ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এবং ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ডা. জাকির নায়েক ভারতের মুম্বাইতে আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলা হয়। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়। মোট কথা, তার এই প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে আরও অনেক জাকির নায়েক। যাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য মানুষের মাঝে প্রকৃত ইসলামকে পৌঁছে দেয়া। IRF এর পক্ষ থেকে ভারতে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে বিনা খরচে গরিব ও অসহায় মানুষদের চিকিৎসা প্রদান করা হবে।

বক্তৃতা ও বিতর্ক:

জাকির নায়েক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেছেন। ভারতের অসংখ্য জায়গা সহ তিনি এ পর্যন্ত আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি, মৌরতানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, গায়ানা, ত্রিনিদাদ, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, সহ বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। তার অন্যতম একটি আকর্ষণীয় বিতর্ক ছিল বিশিষ্ট খ্রিষ্টান পণ্ডিত উইলিয়াম ক্যাম্বেলের সাথে। ২০০০ সালের ১ এপ্রিলে তাদের এই বিতর্কটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিকাগোতে। এই বিতর্কের বিষয় ছিল “দ্য কুরআন এন্ড দ্য বাইবেল ইন দ্যা লাইট অব সায়েন্স”। এই বিতর্কে উইলিয়াম ক্যাম্বেল পরাজয় স্বীকার না করলেও তিনি জাকির নায়েকের সামনে দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। হাজার হাজার শ্রোতার সামনে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ২১ জানুয়ারি ২০০৬ সালে জাকির নায়েক ভারতের বেঙ্গালুরুতে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সম্মুখে হিন্দুদের জনপ্রিয় ধর্মীয় গুরু শ্রী শ্রী রবি শংকরের সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হন। যার বিষয় ছিল “হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে প্রভুর ধারনা”। জাকির নায়েক এই বিতর্কে ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অত্যন্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করলে শ্রী শ্রী রবি শংকর লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমানের সামনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে রবি শংকর অনেক হিন্দু ব্যক্তিরও সমালোচনার মুখে পড়েন। ভারতের জনপ্রিয় সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল এনডিটিভির “ওয়াক দ্য টক” নামক অনুষ্ঠানে জাকির নায়েকের সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয় যেখানে উপস্থাপক ছিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক শেখর গুপ্ত। অনুষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ৮ ও ৯ মার্চ সম্প্রচার করা হয়। জাকির নায়েকের গত বছর চীনের ধর্মীয় নেতা দালাইলামার সাথে বিতর্কের কথা থাকলেও পরে দালাইলামা বিতর্ক থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেন। জাকির নায়েক বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তার সাথে বিতর্কে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তসলিমা নাসরিন জাকির নায়েকের সাথে বিতর্ক করতে শেষ পর্যন্ত সাহসে কুলিয়ে ওঠেননি। জাকির নায়েক এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১৩০০ মতো পাবলিক সেমিনারে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বিভিন্ন সাক্ষাতকার ও বক্তৃতা বিশ্বের ২০০টির মতো টিভি ও রেডিও চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে এবং নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। মুসলিমদের পাশাপাশি তিনি অমুসলিমদের কাছেও সমান জনপ্রিয়। তার সেমিনারে অংশ নিয়ে এবং তার বক্তব্য শুনে শত শত অমুসলমান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

তিনি উন্মুক্ত ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তার বক্তব্যের পর তিনি অমুসলমানও মুসলমানদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। তিনি যখন যুক্তি উপস্থাপন করে থাকেন তখন আল কুরআন, হাদিস, বাইবেল, বেদ সহ বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের পৃষ্ঠা ও অধ্যায়ের নাম সহ রেফারেন্স দিয়ে থাকেন।

জাকির নায়েক বলেছেন, ইসলামের বিরুদ্ধে চরম অপপ্রচার চালানোর পরও সেপ্টেম্বর ২০০১ থেকে জুলাই ২০০২ এর মধ্যে ৩৪০০০ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে সত্য ও যুক্তির ধর্ম এবং মহাগ্রন্থ আল কুরআনেই রয়েছে ১০০০ এর বেশী বৈজ্ঞানিক যুক্তি। যা পশ্চিমারা পরিবর্তন করে কুরআনের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করছে। জাকির নায়েক আল কুরআনের সত্যতা সম্পর্কে যুক্তি প্রদান করতে গিয়ে অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর যুক্তিকে কুরআন দ্বারা মিথ্যা প্রতীয়মান করেছেন। তিনি এমনভাবে প্রমাণ প্রদান করেন যে, সেখানে বিজ্ঞানের যুক্তি আল কুরআনের সামনে অসাড় হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে লাক্ষৌর এক ইসলামিক পণ্ডিত জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে বলেন, জাকির নায়েক ওসামা বিন লাদেনের সমর্থক এবং তার মতবাদ অনৈসলামিক। ২০১১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে জাকির নায়েক ভারত থেকে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ গ্রহণ করেন।

শান্তি সম্মেলন:

IRF ও পিস টিভির পক্ষ থেকে ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস হতে প্রতি বছর মুম্বাই সিয়নের সুমাইয়া মিলনায়তনে ১০ দিন ব্যাপী শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। উক্ত সম্মেলনে জাকির নায়েক সহ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ২০ জন ইসলামিক পণ্ডিত ভাষণ প্রদান করে থাকেন। এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের কয়েক লক্ষ মুসলমান ও অমুসলমান অংশ গ্রহণ করে থাকে। এই সম্মেলনে অনেক অমুসলমান ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের এমনই এক শান্তি সম্মেলনে তিনি শিয়া ও সুন্নি মতাদর্শীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। তার ভাষণে তিনি ইয়াজিদের নামের পরে ‘রদি আল্লাহু আনহু’ বাক্যটির উচ্চারণ করলে সম্মেলন স্থলে সুন্নিরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তবে তিনি তার বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, কারবালার যুদ্ধ ছিল ইসলামের একটি খারাপ চিত্র তবে এটি ছিল একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ।

অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েলস ভ্রমণ:

২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে “ইসলামিক ইনফরমেশন এন্ড সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক অব অস্ট্রেলেশিয়া” শীর্ষক সেমিনারে জাকির নায়েক অংশ গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে যুক্তি তুলে ধরেন যে, ইসলামই সবচেয়ে বেশী নারীদের সমতা প্রদান করেছে। তিনি আরও বলেন, পাশ্চাত্য পোশাকই নারীদের বেশী করে ধর্ষণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সম্মেলনে তার কথাকে মুসলমান ও অমুসলমান সহ অনেক মানুষ স্বাগত জানালেও সুশী দাস নামক অমুসলমান এক মহিলা মন্তব্য করেন, ‘জাকির নায়েক ইসলামের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বানী প্রচার করে সবার কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। জাকির নায়েকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাকির সবার থেকে বিচ্ছিন্ন একটি আত্মা এবং সে পরিপূর্ণ কুসংস্কারে প্রতিপালিত’। ২০০৬ সালের আগস্টে জাকির নায়েক যখন বিতর্কের জন্য কার্ডিফে আসেন তখন সেখানের শ্রোতারা তাকে মহান ব্যক্তি হিসেবে স্বাগত জানান কিন্তু ওয়ালসের এমপি ডেভিড ডেভিস বলেন এই বিতর্ক বাতিল করা হবে কারণ, মানুষের সামনে জাকির নায়েকের সাথে বিতর্ক করা সম্ভব নয় কারণ, সে একজন পাপী ব্যক্তি এবং মানুষদের মধ্যে ঘৃণা ছড়াই। পরিশেষে সেখানে জাকির নায়েকের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুসলিম কাউন্সিল অব ওয়ালসের সেক্রেটারি সেলিম কেদাই ডেভিসের মন্তব্যের সাথে অসম্মতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন তার বিতর্ককে বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি কারণ, মানুষ জানে যে, তিনি অন্যতম একজন প্রসিদ্ধ বিতার্কিক এবং তিনি যা বলেন সঠিক বলেন। তিনি বিশ্বের প্রধান ধর্ম সমূহের মাঝে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তারপরও ডেভিসকে ভবিষ্যতে ব্যক্তিগতভাবে কোন সম্মেলনে জাকির নায়েকের সাথে বিতর্ক করার জন্য আহবান করা হয়েছিল। পরে তাদের মধ্যে কার্ডিফে সম্মেলন হয়েছিল এবং ডেভিস জাকিরের উপর সন্তুষ্ট ছিল।

ব্রিটেন ও কানাডা থেকে বহিষ্কার:

ইংল্যান্ডে তার নাগরিকত্ব থাকলেও জুন ২০১০ সাল থেকে ইংল্যান্ড ও কানাডায় জাকির নায়েকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। লন্ডন ও শেফিল্ডে তার বক্তব্যের আয়োজন করা হলে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র সচিব তেরেসা মে তাকে ব্রিটেন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তেরেসা মে তার বহিষ্কারের আদেশে বলেন, ডা. নায়েকের বক্তব্য এবং তার আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। নায়েক বলেন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজনৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। নায়েকের আইনজীবী বলেন তেরেসার সিদ্ধান্ত ছিল অবৈধ ও সম্পূর্ণ অমানবিক। জাকির নায়েক সচিবের আদেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেজ্ঞ করেন, সুপ্রিম কোর্ট তার রিটটি খারিজ করে দেন ৫ নভেম্বর ২০১০ তারিখে। মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস জাকির নায়েককে আমন্ত্রণ জানালে কানাডা প্রবেশেও তাকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

ধর্মত্যাগীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি:

জাকির নায়েক বলেছেন, কেউ যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে যেতে চাই তবে সে স্বাধীন ভাবে যেতে পারে, তবে কেউ ইসলামে থেকে বা ইসলামে নতুন প্রবেশ করে যদি আল কুরআন, হাদীস বা ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নেয় তবে ইসলামী আইন অনুযায়ী তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

জৈব বিবর্তনে দৃষ্টিভঙ্গি:

জৈব বিবর্তন সম্পর্কে জাকির নায়েক বলেন, বিজ্ঞানীদের ধারনা অনুমান নির্ভর। কিন্তু আল কুরআনে জৈব বিবর্তন সম্পর্কে যে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা সত্য ও সঠিক। তিনি তার বক্তব্যের উপর আল কুরআন, বাইবেল, বেদ ও অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থ থেকে অকাট্য প্রমাণ প্রদান করেছেন।

সন্ত্রাসবাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি:

জাকির নায়েক বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদকে দারুণভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে বলেন আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং তার সাথে আমার কোনদিন সাক্ষাত হয়নি। তবে কোন মুসলমান রাষ্ট্র যদি ইসলামের শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয় আর তিনি যদি মুসলমানদের সাহায্য করতে ইসলামের শত্রুদের আক্রমণ করে থাকেন তবে আমি তাকে সমর্থন করি। তিনি বলেন বিন লাদেন যদি সন্ত্রাসী হয়ে থাকেন তবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হচ্ছে আমেরিকা। তিনি বলেন ইসলামের কথা বললে যদি সন্ত্রাসী হতে হয় তবে সকল মুসলিমকে সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। তিনি টাইমসের সাথে সাক্ষাতকারে বলেন, আমি সর্বদা সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করি, কারণ আল কুরআনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে “যদি তুমি একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করো তবে তুমি সমগ্র মানবতাকে হত্যা করলে”। ২০১০ সালে তিনি বলেন, বর্তমানে সকল মুসলমানকেই সন্ত্রাসী বলা হয় কিন্তু সন্ত্রাসীর সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদেরই সন্ত্রাসী বলা হয় যারা বিনা দোষে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। ইসলামের কথা বললে বা ইসলামকে বিশ্বব্যাপী বিজয়ী করতে গেলে যদি সন্ত্রাসী হতে হয় তবে সকল মুসলমানকে সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। তবে একথা ঠিক ইসলামকে বিজয়ী করতে গিয়ে একজন সাধারণ মানুষকেও কষ্ট দেওয়া যাবে না। ৩১ জুলাই ২০০৮ তারিখে পিস টিভিতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জাকির নায়েক ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা সম্পর্কে বলেন, টুইন টাওয়ারে হামলা সম্পর্কে একটি গোপন তথ্য রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে জর্জ ডব্লিউ বুশ নিজেই হামলা করেছিল। আমেরিকার এই হামলার পিছনে কারণ ছিল ব্শ্বি মুসলমানদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং মুসলিম রাষ্ট্র সমূহে হামলা করে তাদের সম্পদকে করায়ত্ত করা।

তার লেখা:

২০০৭ সালে সৌদি আরবের দার-উস-সালাম পাবলিকেশন্স জাকির আব্দুল করিম নায়েকের দুটি বই প্রকাশনা করে। যার নাম ছিল, “দি কনসেপ্ট অব গড ইন মেজর রিলেজিউন” এবং “দি কুরআন এন্ড মর্ডান সায়েন্স: কম্প্যাটিবল অর ইনকমপেটিবল”।

পরিশেষ:

দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ ১০০ ক্ষমতাশালী ব্যক্তির তালিকায় জাকির নায়েক ৮৯ তম স্থান লাভ করেন। ২০০৯ সালের সংস্করণে তার অবস্থান ছিল ৮২ তম। প্রভীন স্বামীর মতে জাকির নায়েক সম্ভবত ভারতের সালাফি ভাবাদর্শের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। সঞ্চিব বাট্ট বলেন, ইসলামের সত্যতা প্রকাশে তিনি অনন্য ব্যক্তি তবে তিনি অন্য ধর্মের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। জাকির নায়েক বিশ্বব্যাপী ইসলামের দাওয়াত প্রদান করে চলেছেন। তার স্বপ্ন একদিন ইসলাম আবার মোহাম্মদ (সাঃ) এর সময়ের মতো বিশ্বব্যাপী বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলামের দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তারপরও তিনি সাহসের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার অভিযান। বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি তার পথ রুদ্ধ করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে যাচ্ছে। এমনকি মুসলমান নাম ধারী অনেক মুরতাদ তার বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রু, মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, পাপী ইত্যাদি কুৎসা রটাচ্ছে। তবে প্রকৃত মুসলমানরা যদি তার সাথে থাকে তবে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দয়ায় হয়তো একদিন তিনি তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন।

(বিভিন্নভাবে সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

৩৫৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File