বাংলাদেশ কি মৃত্যু উপত্যকা? গতকাল বুধবার সাভারের শত লাশ প্রশ্ন রেখে গেল!!
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:০১:১৫ সন্ধ্যা
ভবন ধসে মৃত্যু, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু, বি এস এফ এর গুলিতে মৃত্যু, সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারের মৃত্যু, চট্টগ্রামে গার্ডার ধসে ৭ জনের মৃত্যু !!যুদ্ধ নেই। মহামারী, বন্যা, মন্বন্তর নেই। প্রাকৃতিক আঘাতও নেই। তবু বাংলাদেশে অকাতরে মানুষ মরছে। রাজনৈতিক হিংসায় এবং অব্যবস্থাপনায়। গতকাল বুধবার সাভারের শত লাশ প্রশ্ন রেখে গেল: ‘বাংলাদেশ কি মৃত্যু উপত্যকা?’ রাজনৈতিক মৃত্যুর মতোই গার্মেন্ট শ্রমিক আর ভবন ধসে বহু মানুষের মৃত্যুর খবর এদেশে এখন স্বাভাবিক বিষয়। এই সাভারেই এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটেছে। কখনও এসব মৃত্যুর জন্য কাউকে দায় নিতে হয়েছে বলে জানা যায় নি। একটি হত্যাকাণ্ডের জন্য মামলায় অনেকের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন হয়েছে। শ’ শ’ মৃত্যুর জন্য উল্লেখযোগ্য শাস্তির কোন নজির এদেশে নেই। বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা এইসব গণমৃত্যুর কি জবাব দেবে আমরা জানি না। দায়িত্বশীলদের বিবেক কি বলবে, সেটাও জানি না। মানবাধিকার এইসব মৃতদের কি ফিরিয়ে দেবে, তা-ও আমাদের অজানা। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়ে বেঁচে থাকতে চায়, মরতে নয়। কিন্তু তাদেরকেই সর্বাগ্রে মরতে হচ্ছে। বিপদের ঝাপ্টা সবচেয়ে আগে তাদের ওপর দিয়েই যাচ্ছে। হরতালের আগে বা হরতালকালে বাধ্য হয়ে যে নিম্ন আয়ের মানুষ বাসে ওঠে বা পথে নামে, কঠিন আঘাত তাকেই সহ্য করতে হয়। ককটেল, আগুন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উদভ্রান্ত হয় এরাই। পুলিশের অ্যাকশন বা আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধের মুখেও তারাই সর্বাগ্রে আক্রান্ত হয়। মালিকদের বাঁচিয়ে দেয়া হলেও বাঁচতে পারে না শ্রমিক। নিহত ও আহতের তালিকা টুইটম্বুর হয় তাদেরকে দিয়েই। গতকাল সাভারেও একজন সংসদ সদস্য উদ্ধার করেন মালিককে। ভবন বিপজ্জনক হওয়ার পরেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের সেখানে প্রবেশে বাধ্য করা হয়। তারা যেতে চায় নি। কিন্তু অর্থলোলুপরা শ্রমিকের আহাজারিতে দয়া দেখায় নি। এমন বলপ্রয়োগের ঘটনা গতকাল ঘটেছে, অতীতে ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও কি ঘটতেই থাকবে? বাংলাদেশ কি নানা ধরনের মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হবে? দায় ও জবাবদিহিহীন মৃত্যুর প্রলম্বিত মিছিলের রক্তে প্রতিদিন পূর্ণ হতে থাকবে স্বদেশের সবুজ-শ্যামলিমা মৃত্তিকা? নাগরিক নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকারের চরম অবক্ষয় ও অবমাননার মধ্যে আর কত দিন ফেলে রাখা হবে জনমানুষকে? শত মৃত্যুর কশাঘাতেও যদি জাতির বিবেক, নেতৃত্ব ও কাণ্ডারিরা উপযুক্ত প্রতিবিধানের ব্যবস্থা না নেন, তাহলে কি আজকের ন্যায়বিচারের জন্য ভবিষ্যৎ ইতিহাসের কাছেই রেখে যেতে হবে বিচারের ভার?
বিষয়: বিবিধ
৯৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন