নারী সমাবেশে গার্মেন্টকর্মী পাঠানোর শর্তে বিজিএমইএ ভবন রক্ষার প্রতিশ্রুতি হেফাজত ঠেকাতে সরকারি কৌশল.....!!!

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৩৪:১৩ রাত

হেফাজতে ইসলামকে প্রতিহত করতে এবার তৈরী পোশাক শিল্পমালিকদের শরণাপন্ন হয়েছে সরকার। অভিযোগ উঠেছে, আগামী ২৭ এপ্রিলের নারী মহাসমাবেশে চার লাখ কর্মী সরবরাহের শর্তে আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত বিজিএমইএ ভবন রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। হেফাজতের ১৩ দফার বিরুদ্ধে নারীদের ব্যাপক এ শোডাউনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর ওপর। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই বিজিএমইএ ভবন রক্ষা করা হবে।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির বিরুদ্ধে নারীসমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। আগামী ২৭ এপ্রিল প্রতিবাদী নারীসমাজ অথবা নারীমঞ্চের ব্যানারে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে পাল্টা এ মহাসমাবেশ। আগামী ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আগেই পাল্টা কর্মসূচি পালনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার মতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সাথে সমাবেশের উদ্যোক্তা নারীদের একটি মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচ লাখ নারীর এ মহাসমাবেশের লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পোশাক শ্রমিক ও এনজিওকর্মীদের প্রতি। এ জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নারী সমাবেশ সফল করার জন্য সপ্তাহের শেষের দিকে শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর কক্ষে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ সফল করতে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকের বিশেষ সহযোগিতা চাওয়া হয় ওই বৈঠক থেকে। চার লাখ কর্মী হাজির করার দায়িত্ব দেয়া হয় বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও বিকেএমইএ সভাপতি নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ওসমান পরিবারের সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানকে।

সূত্র মতে, ২৭ এপ্রিলের সমাবেশে নারীশ্রমিক সরবরাহের ওপর বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়টি নির্ভর করছে বলেও জানিয়ে দেয়া হয় দুই ব্যবসায়ী নেতাকে। পোশাকশিল্পে কর্মরত ৩৫ লাখ শ্রমিকের ৩০ লাখই নারীÑ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের বলা হয়, বিজিএমইএ-বিকেএমইএ নেতারা চাইলে ঢাকা শহর, এর আশপাশ, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে পাঁচ লাখ নারীশ্রমিক জড়ো করা তেমন কঠিন কিছু নয়। বিজিএমইএ ভবন ভাঙা ও পোশাকশিল্পের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার লক্ষ্যে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটিও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানিয়ে দেয়া হয় উদ্যোক্তা নেতাদের।

তবে বিজিএমইএ ভবন রক্ষায় সরকারের সাথে শ্রমিক সরবরাহের সমঝোতার কথা অস্বীকার করে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের দু’জন সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ভবন তৈরির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আইনগত দিক রক্ষা করেই বিজিএমইএ ভবন তৈরি করা হয়েছে। দেশের সম্ভাবনাময় তৈরী পোশাকশিল্পের স্বার্থে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এ ভবন রক্ষা করা হবে। এর সাথে নারী সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও গতকাল শুক্রবার দুপুরেও আদালতের রায় ও জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে দেয়ার দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেছে নাগরিক সংহতি।

গত মাসে প্রকাশিত ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, ওই ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটা শুধু হাতিরঝিল নয়, গোটা ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে। সুতরাং সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপরে ওপর নির্দেশ হলো, ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো: জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। যদিও বিবাদীদের আবেদনে এই রায় আপিল বিভাগের আদেশে স্থগিত রয়েছে।

নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফের সভাপতিত্বে গতকালের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মশিহউদ্দিন শাকের, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইনামুল হক, শিাবিদ প্রফেসর কামাল আতাউর রহমান, গবেষক শায়লা আহমেদ লোপা, সমাজকর্মী ইফমা হুসেন, মোহাম্মদ আলী হাজারী, মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তখনো নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের প থেকে এ প্রকল্পের মধ্যে আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনটি প্রকল্পের ল্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রকল্পের উদ্বোধনী বক্তব্যে ভবনের বিষয়ে কিছু না বললেও পরে প্রধানমন্ত্রীও এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। প্রকল্পটিকে তিনি হাতিরঝিলের ‘বিষফোঁড়া’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিষয়: বিবিধ

৯৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File