হত্যায় রেকর্ড গড়লো মহাজোট সরকার !!! ****************************
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:১১:৫৬ রাত
একটি স্বাধীন দেশ। অথচ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হচ্ছে মানুষ হত্যা। পারিবারিক, ব্যাক্তিগত, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রসফায়ার, গুম ও রাজনৈতিক হত্যা হচ্ছে প্রচুর। কোনো গণতান্ত্রীক সরকারের আমলে এতো খুনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। তবুও আইনশৃঙ্খলা স্বভাবিক আছে বলে জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
গত ১১ এপ্রিল দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের কাজীরহাটে মসজিদের মাইকে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিলের ওপর হামলা হয়। হামলায় স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন দেড়শতাধিক। পুড়িয়ে দেয়া হয় মিছিলের সঙ্গে থাকা দুই শতাধিক মোটরসাইকেল, কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও জিপ।
এর আগে জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুলিতে পুলিশসহ নিহত হয়েছে প্রায় ২০০ এর অধিক মানুষ। এক সপ্তাহের মধ্যে এতো লোক হত্যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। অনেকেই এটিকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
একাধিক মানবধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত চার বছরে ১৩৮৪৯ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অপহৃত হয়েছেন ১৩৪৩, গুম হয়েছেন ১১৩ ও ক্রসফায়ারে মারা পড়েছে ৪৯৫ জন মানুষ। এ সময়কালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৭৭৫ জন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের কিছু দিন পরেই ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন সেনা কর্মকর্তা, জোয়ান ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। যা এ সরকারের আমলে ইতিহাসের কলঙ্কময় গণহত্যা।
২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল ঘটনাবহুল। এ সময়ে জনমনে নানা আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে যায়। একের পর এক গুম আর গুপ্তহত্যার ঘটতে থাকে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যা পূর্বে সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে ৭০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা ২৪ জন গুম, জেলহেফাজতে ৬৩ জনের মৃত্যু এবং বিএসএফ কর্তৃক ৩৮ জন বাংলাদেশীকে হত্যা হয়েছে।
এ সরকারের আমলে বেশ কয়েকজন সংবাদিক হত্যা হয়েছে। অসংখ্য সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। অনেককে মামলার জালে আটকে হয়রানি করা হয়েছে। শুধুমাত্র ২০১২ সালে আলোচিত ৪ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১৮ জন। হুমকি দেয়া হয়েছে ৫০ জনকে। হামলা হয়েছে ৬ জনের ওপর। অপমান করা হয়েছে ৪৩ জনকে। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হত্যা করে মাছরাঙা টেলিভিশনের নিউজ এডিটর সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার রিপোর্টার, সাগরের স্ত্রী মেহেরুন রুনিকে। যা নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হন সরকার। কিন্তু আজও কোনো অগ্রগতি হয়নি এ হত্যা মামলার।
মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চরম দৌরাত্ম্যের প্রকাশ ঘটতে শুরু করে। অন্যবছরের মতো ২০১২ সালে বিরোধীদের নেতাকর্মীদের ওপর তাদের নির্যাতন অব্যাহত ছিল। এ বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৯ জন নিহত ও ১৭ হাজার ১৬১ জন আহত হন। এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৩৮২টি ঘটনা ঘটে। দলটির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৩৭ জন নিহত ও ৪ হাজার ৩৩০ জন আহত হন। ২০১২ সালের শেষদিকে এসে দেশের রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে বিশ্বজিৎ দাস নামের একজন তরুণ সংঘর্ষের কারণে পালিয়ে আত্মরক্ষার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতারাই এ কাজে লিপ্ত ছিল।
এ সরকারের আমলে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পিস্তলের গুলিতে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম খুন, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে পুলিশের সামনেই পিটিয়ে হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংস ঘটনায় মেধাবী ছাত্র আবু বকর হত্যা, নরসিংদীর জনপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হত্যা, যশোরের জিকরগাছা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম হত্যা এবং আমিনবাজারে পুলিশের মদদে ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকা-।
এ সময় আরেক আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল নরসিংদী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হত্যাকাণ্ড। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনি নিহত হন। ১৪ ডিসেম্বর যশোর জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও ঝিকরগাছা উপজেলা সভাপতি নাজমুল ইসলাম ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে অপহৃত হন। পরদিন গাজীপুরের দক্ষিণ সালনা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর জুরাইন কমিশনার রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে কদমতলী শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও তার গাড়িচালক হারুন-উর রশিদকে। ১৪ জানুয়ারি ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ওরফে ফজলুকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৬ অক্টোবর রংপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা খাদ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ পারভেজ যাদুকে হাত-পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১ ডিসেম্বর ফার্মগেট থেকে অপহৃত হন জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর (উত্তর) কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ক্যান্টনমেন্ট থানার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক খান ওরফে দীপু। পরে ধামরাই থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
চার বছরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বেশ কিছু দিন আগে বলেছিলেন, জনসংখ্যার বিচারে পুলিশের রেকর্ড করা অপরাধের পরিসংখ্যানে কোন অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। বেশিরভাগ অপরাধের রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সার্বিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বেশি। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়ে দিতেও বাধ্য হয়েছেন। তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী উভয়ই সভা সেমিনার এবং সাংবাদিকদের সামনে বলে আসছেন দেশর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন