বিডিআর ধংস করার নেপথ্যে মূল কারন অনুসন্ধানঃ ভারত ও আমাদের দেশের বর্তমান সরকার!!! এর বিচার এবং অপরাধী সনাক্ত করাটা কি এতই কঠিন সরকারের কাছে???

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:১৬:৫৯ বিকাল

২০০১ সালের এপ্রিল মাসে সিলেটের পাদুয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের বিডিআর ভারতীয় BSFকে পরাজিত করে ২৩০ একর ভূমি পূর্নদখল করেছিলো। একই সময়ে কুড়িগ্রামের রৌমারীর যুদ্ধেও ভারতীয় পক্ষে অনেক হতাহত হয়। বিডিআর প্রধান জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কেবল পাদুয়ার যুদ্ধে ভারতের ১৫০জন বিএসএফ নিহত হয়েছিলো, যদিও ভারতীয়রা অফিসিয়ালী স্বীকার করে কম। তখনকার দ্য ট্রিবিউন, দ্য হিন্দু, বিবিসি বিভিন্ন রকম নিউজ পরিবেশন করে। তবে সঠিক হিসাব হচ্ছে, ১২৮টি মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকেই BSF কে হস্তান্তর করা হয় এবং অবশিষ্ট ২২টি লাশ পরবর্তীতে ঢাকা থেকে হস্তান্তর করা হয়, যা ইটিভির সুপন রায়ের পরিবেশনায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাভাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে টেলিফোনে দুঃখ প্রকাশ করে ‘sorry’ বলেন, সরিয়ে দেন বিডিআর ডিজিকে। কিন্তু সংসদের উত্তেজনা প্রশমনে তখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জসবন্ত সিং ভারতীয় লোকসভায় বাংলাদেশের প্রতি হুমকি উচ্চারন করেছিলেন, “বাংলাদেশকে এর পরিনাম ভোগ করতে হবে।” ঐ ঘটনার ৯ বছর পরে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে ভারতীয় কমান্ডোরা ঢুকে ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যাকরে বিডিআর অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটায়।

বিডিআর ধংস করার নেপথ্যে মূল আরো দু’টি কারন কাজ করেছে। তা হলো, বাংলাদেশের বিডিআর পরিচালিত হয় সেনাবাহিনী দ্বারা, এর ট্রেনিং ও কমান্ড পুরোটাই সামরিক বাহিনীর সমান। এ বাহিনীটিকে আধা-সামরিক বাহিনী বলা হলেও শৌয্য বীয্যে এরা ভারতের বিএসএফের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কারন বিএসএফ হচ্ছে সিভিল বাহিনী, অনেকটা আমাদের পুলিশ আনসারের মত। সীমান্তে কোনো সংঘর্ষ হলে বিএসএফ সব সময় বিডিআরের কাছে হারত। ভারতের জন্য এটা খুবই অবমাননাকর ছিল। তাছাড়া, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যেসব শর্তে সমর্থন ও সাহায্য করে তার অন্যতম এতটি শর্ত ছিল, Frontier Guards will be disbanded. কেননা ৪০০০ কিলো মিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিডিআরের সমান দক্ষতার বাহিনী পোষা ভারতের জন্য বিরাট খরচের বিষয়। সব হিসাব নিকেশ করে ভারত সিদ্ধান্ত নেয় বিডিআর ধংস করার। আর সে কারনে সময় বেছে নেয়া হয় বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠনের পর পর। অন্যদিকে ব্যাপক সংখ্যক সেনা অফিসার হত্যা করা হলে সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙ্গে দেয়া যাবে, যা পরবর্তীতে বাহিনীটির ওপর প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হবে। এই গেলো মূল কারন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের। এখন দেখে নাই এর পিছনে কারা ছিল, , , , , , ,

পিলখানা হত্যাকান্ডঃ আওয়ামী দালালদের অংশগ্রহনের প্রমাণ আপনাদের কারো মনে কি এখনো বিন্দু মাত্র সন্দেহ আছে যে পিলখানার সেই নৃশংস হত্যাকান্ডে ভারতীয় মদদ ছিল কিনা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের প্রত্যক্ষ হাত ছিল কিনা। তাহলে এই লেখাটি সম্পূর্ন পড়ুন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়কদের শনাক্ত করা কোনো দুরূহ ব্যাপার ছিল না। বাংলাদেশ ও এর সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ কে এবং কারা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের অস্তিত্ববিরোধী, এ হত্যাকান্ডের বেনিফিশিয়ারি কে, কারা এ ঘটনার সাথে সাথেই অতিমাত্রায় তৎপরতা দেখিয়েছে ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওই অপশক্তিকে শনাক্তকরণ দুরূহ নয়। ক্ষমতাসীন সরকারের বক্তব্য হলো- সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিরোধী দলের অভিযোগ- প্রতিবেশী দেশের মিত্রদের সহযোগিতায় সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করতে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতীয় সৈন্য পাঠিয়ে এ দেশকে ছায়ারাষ্ট্রে পরিণত করতে এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। অন্যদিকে ভারত এ ঘটনার পরপরই আইএসআইকে দায়ী করেছে। সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকারের কিছু মন্ত্রী এবং ভারতীয় সাহায্যপুষ্ট সংবাদমাধ্যম ভারতের অভিযোগের অনুকূলে তথ্য প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছু প্রশ্ন যার জবাব আজও পাওয়া যায় নি।

(১) কেন এবং কার নির্দেশে ২০ ঘণ্টার জন্য পিলখানা বিডিআর ক্যাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হলো? আর সেই ঘনকৃষ্ণ অন্ধকারের সুযোগ নিয়েই দুষ্কৃতকারীরা সমস্ত অপকর্ম করলো এবং পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলো?

(২) শেখ হাসিনার ভাষণের সাথে সাথেই সমগ্র পিলখানা বিডিআর ক্যাম্প কেন কর্ডন করা হলো না? প্রায় ১০ হাজার বিডিআর সদস্যকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হলো কেন?

(৩) ছাই রঙের অস্ত্র বোঝাই ট্রাকের কথা বলা হয়েছে। সেটি কার? কিভাবে সেটি ভেতরে ঢুকলো?

(৪) ৫ নং গেটকে সম্পূর্ণ অরক্ষেত রাখা হয়েছিল কেন?

(৫) হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার জন্যই বিডিআরে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে- ভারতের এই আশংকার ভিত্তি কি?

(৬) শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হতে পারে, এমন আশংকায় আসামের একটি বিমান ঘাঁটিতে মুহূর্তের নোটিশে উড্ডয়নের জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো কেন?

(৭) ডি এ ডি তৌহিদের নেতৃত্বে যে ১৪ জন বিডিআর সদস্য শেখ হাসিনার সাথে দেনদরবার করতে গিয়েছিলো, তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ১২ জন গেলো কোথায়?এদের নামে থানায় এজাহার করা হয়নি কেন? এখন তারা কোথায়?

(৮) সম্মেলন শুরুর ৩ দিন আগে বিডিআর এর অস্ত্রাগার থেকে ৫টা অস্ত্র খোয়া যায়। ভিভিআইপি প্রোটোকল অনুযায়ী কোন অবস্থাতেই সেখানে (অস্ত্র খোয়া যাওয়া স্থানে) ভিভিআইপি কে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল কিভাবে?

(৯) বলা হয়েছে বিডিআর জওয়ানরা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করেছে। কিন্তু ভিভিআইপি প্রোটোকল অনুযায়ী যখন কোন ভিভিআইপি এইসব জায়গায় যায় তখন শুধুমাত্র তার ব্যাক্তিগত গার্ডদের কাছে ফায়ার করার মত অস্ত্র থাকে, বাকি অস্ত্রের disable করে রাখা হয়। তাহলে বিডিআর এর অস্ত্রাগারে ফায়ার করার মত অস্ত্র আসল কোথা থেকে?

(১০) ভারতের NDTV 24 -এ সকাল ১০:৪৫ এ স্ক্রলে এবং পরে সংবাদে বলা হয়েছে পিলখানায় মেজর জেনারেল শাকিল সহ ৫০ এর বেশি অফিসার মারা গেছেন। অথচ আমরা শাকিলের মারা যাবার খবর পেয়েছি তার পরের দিন, আর তখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি অফিসার মারা যায়নি। ভারতীয়রা এটা আগে জানলো কিভাবে? তবে এর কিছু প্রশ্নের জবাব আমরা ধীরে ধীরে পেতে শুরু করেছি।

এতে সরকারের কিছু করার ছিল না! তাহলে তারা কি সরকারের সাহায্য ছাড়াই মিশন শেষ করে আবার নিরাপদে ফিরে গেল? এখন যেমন তত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার বিভিন্ন আওয়ামী নেতাদের দূর্নীতির স্বীকারোক্তি বেরিয়ে আসছে, তেমনি এদের আরেকবার থেরাপী দিলেই এই মেধাবী অফিসারদের হত্যার নেপথ্যের সব সংবাদ বেরিয়ে আসবে। অবশ্য বাংলাদেশে অবস্থা বেগতিক দেখলে এরা সেই ভারতেই পালিয়ে যায়। শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেকেই আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার, কিন্তু তাই বলে ভারতের একটি ট্রেইন্ড জঙ্গী গ্রুপের সহায়তায় এভাবে নৃশংস হত্যাকান্ড চালানো কোন ভাবেই মানতে পারি না। তথ্যগুলো ছড়িয়ে দিয়ে নিজ দেশের স্বার্থ বিসর্জনকারী ভারত দালালদের মুখোশ উন্মোচন করে দিন। নারকীয় এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করুন। আমরা এগুলোর রহস্য জানতে চাই।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File