অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:০৫:২৪ রাত
২৯ এপ্রিলের সমাবেশ থেকে বিএনপির সিরিজ কর্মসূচি ঘোষণা অন্যদিকে নির্দলীয় সরকার নিয়েও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ
সরকার পতনের এক দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অসহযোগ আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আন্দোলনের রূপরেখা নিয়েও কাজ শুরু করেছে দলটি। আন্দোলনের চূড়ান্ত এই পর্বের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষ্যে আগামী মে মাসব্যাপী দেশজুড়ে সিরিজ কর্মসূচি দেয়া হবে। কর্মসূচি ঘোষণার জন্য চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় বড় ধরনের জনসমাবেশ করার প্রস্তুতি চলছে। ২৯ এপ্রিলকে সমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ ধরে সবকিছু এগোচ্ছে। তারিখ দু'একদিন এদিক-সেদিক হলেও ওই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
সরকার পতনের আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার দাবি আদায়েও কাজ করবে বিএনপি। দাবিকে আরও সুস্পষ্ট করতে নির্দলীয় সরকারের একটি রূপরেখা তৈরির বিষয় নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, রূপরেখা তৈরির লক্ষ্যে ১৮ দলের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি জোটের বাইরে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে বিএনপি। সবার মতামত গ্রহণ করার পর নির্দলীয় সরকারের একটি রূপরেখা জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হতে পারে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাবন্দী জ্যেষ্ঠ নেতাদের মুক্তির পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা এবং নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু হবে।
এসব বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার ইত্তেফাককে বলেন, চলতি মাসের শেষদিকে একটি বড় সমাবেশ আয়োজন নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। তবে সমাবেশ ২৯ এপ্রিল নাকি অন্য কোনো তারিখে হবে—তা চূড়ান্ত হয়নি। সমাবেশ থেকে হরতাল-অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচিও আসতে পারে। অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, 'একটি পর্যায়ে আমাদের এই আন্দোলনে যেতেই হবে। তবে কখন থেকে এই আন্দোলন শুরু হবে তা নির্ভর করবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর।'নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্ভাব্য সংলাপ বা আলোচনার বিষয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, সরকারের বাইরে যেসব দল রয়েছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই নির্দলীয় সরকারের পক্ষে। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একাধিক শরিকও মনে করে নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। যা তারা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এসব দলের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে না, তা বলা যাবে না। সামনে হয়তো সবার সঙ্গে আলোচনা করে দাবিকৃত নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থাকে আরো সুস্পষ্ট করা হবে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছেন-নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের তাগিদ দেয়া হলেও সরকার এতে আন্তরিক নয়। সংলাপের কথা বলে কৌশলে সময়ক্ষেপণ করার মাধ্যমে বরং সরকার নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, যাতে করে আগামী মেয়াদেও সরকারে থাকা সম্ভব হয়।
সরকার সংলাপের উদ্যোগ নেবে না—এমনটি ধরে নিয়েই অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপিসহ ১৮ দল। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা রেখে আন্দোলনকে অসহযোগের দ্বারপ্রান্তে নেয়ার লক্ষ্যেই চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় সমাবেশ থেকে মাসব্যাপী সিরিজ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিরোধী দলীয় নেতা। সমাবেশ থেকে অবরোধ, ঘেরাও ও হরতালের মত কর্মসূচি ছাড়াও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গণসংযোগ, মানববন্ধন, গণঅনশন ও বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।
আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, সরকার দেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেখানে এখন আন্দোলনে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। অবরোধ, ঘেরাও, হরতাল ছাড়াও আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। যা এক সময় অসহযোগ আন্দোলনের রূপ হবে। তিনি বলেন, বিরোধী দলের সামনে এখন সরকারের পতন ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগের বিষয়ে জানা গেছে, ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ছাড়াও ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ.স.ম রবের জেএসডি ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। এছাড়া এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গেও আলোচনার ভিত্তিতে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার একটি রূপরেখা প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এম কে আনোয়ার বলেন, 'আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট, এ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। সরকারকে প্রহসনের কোনো নির্বাচন করতেও দেয়া হবে না। এজন্য জাতীয়তাবাদী সকল শক্তিকে এক করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেবে বিএনপি।
বিষয়: রাজনীতি
১০০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন