কি ছিল ১৯৭৫ এ? ক্যামন ছিল তখনকার আইন? কতটা মানানসই ছিল আমাদের সমাজের জন্য?

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তি পেতে চাই এই অসহায়ত্ব থেকে ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:০০:৫৯ রাত

সারসংক্ষেপঃ

জানুয়ারী ২৫, ১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল পরিবর্তন বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছিল। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হয়, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছিল।

১, একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে। অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।

সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব সেদিন ই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছিল), দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কারো কাছে জবাবদিহি করবেন না, অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না, প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।

৩, দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ

প্রেসিডেন্ট নিয়োগকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পরিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে নিয়গক্রিত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেনটে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।

৪, লোকাল গভর্নমেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।

৫, দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সংসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০

দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।

৬, জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখন আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না; তিনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,

---

“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

বিষয়: বিবিধ

১১০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File