- < নিশি > -

লিখেছেন লিখেছেন শাহজাদা ইয়ামেন ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৩৮:৩২ রাত

-বাবু আমি এখন একটু রাখি ? আমার এখন কথা বলতে ভাল লাগছে না ।

-না তা লাগবে কেন ? এখন আমিতো পুরনো হয়ে গেছি । এখন তো আর আমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগবে না ।

আমি নিশির কথা শুনে কিছুক্ষন থ হয়ে গেলাম । এইমেয়েটার মাথা কি খারাপ নাকি? কিসের ভিতর কি কথা বলছে ।

আমি বুঝি না এতো বড় একটা মেয়ের মাঝে মাঝে কি হয় ! আরে মাঝে মাঝে বলছি কেন এইমেয়ে তো সব সময়ই এমন করে ! মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই কিন্তু তখনই নিশির নিশ্পাপ চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে । তখন কিছুতেই নিশির উপর রাগ করে থাকা যায় না । ওর সব পাগলামো সব ছেলে মানুষী সহ্য হয়ে যায় ।

একবার ঠিক এমনই হয়েছিল । আমাকে ওর পাগলামোর কারনে খুব লজ্জায় পড়তে হল । রিক্সায় করে ওর সাথে যাচ্ছিলাম । পথের মধ্যে আমার এক বান্ধবীর সাথে দেখা । ক্লাসমেইট । রিক্সা থামিয়ে ওর সাথে কথা বললাম কিছুক্ষন ।

কেন বললাম !

তার একই কথা !

নিশি কেমন পাগলের মত আচরন করতে লাগলো । বলল

-তুমি কেন কথা বললে ঐ মেয়ের সাথে ? আমাকে ইগনোর করে কেন কথা বললে ?

-আরে ওর সাথে কথা বললাম তো কি হয়েছে ? আরতোমাকে ইগনোর করলাম কোথায় ?

-তাহলে তুমি কেন কথা বললে?

-আরে আশ্চর্য ! কথা বলেছিতো কি হয়েছে ?

-কি হয়েছে ? কি হয়েছে ?

নিশি এতো জোরে চিৎ‍কার করে উঠলো যে আসেপাশের মোটামুটি সবাই ই তাকিয়ে দেখলো আমরা কি করছি । আমারঅস্বস্তির সীমা থাকলো না ।

কিন্তু নিশির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । ওর চিৎ‍কার করেই চলেছে । আমি ওকে কয়েক বার শান্ত করার আমি রিক্সা থেকে নেমে হাটা দিলাম ।

মনে মনে বললাম এই অসুস্থ মেয়ের পাশে আর একটুও নয় ।

এই মেয়ের সাথে আর কোন সম্পর্ক নয় । রাতেনিশি কয়েকবার ফোন দিলেও আমি ধরলাম না । মোবাইল বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম ।

ওর উপর খুব রাগ লাগছিল । খুব বেশি রাগ ।

সম্পর্কের মধ্যে মান অভিমান থাকবেই । মানুষের উপর মানুষ রাগ করতেই পারে কিন্তু সেই রাগ করার তো একটা লজিক থাকা চাই । কিন্তু নিশির বেলায় এই লজিক ফলো করে না । কি সব লজিক বিহীন কারন নিয়ে চিৎ‍কার চেচামিচি শুরু করে । মেজাজটা ঠিক রাখা কষ্টকর হয়ে যায় ।

রাতে ফোন বন্ধ করে শুয়েছিলাম সকালবেলানিশি এসে হাজির । চোখ মুখের অবস্থা দেখে মনে হল সারারাত একটুও ঘুমাই নি । কান্নাকাটিও করেছে নিশ্চই ।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েহু হু হু করে কেঁদে দিল । আসলে যত রাগই হোক না কেন এমন করে কেউ যদি কান্না কাটি করে নিজেকে কি ধরে রাখা যায় । কাঁদতে কাঁদতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কান্নার বেগ যেন আরো বাড়ল ।

এই মেয়ের উপর কিভাবে রাগ করে থাকি !

প্রতিবারই ও অহেতুক ভাবে এমনটা করবে আমার মেজাজ খারাপ হবে আবার ওকে ক্ষমাও করে দিবো ।

আমাকে নিশিকে বলল

-আচ্ছা তুমি এমন কথা কেন বলছো?

-বলব না ? তাহলে তুমি কেন ফোন রেখে দিতে চাইছো ? আমাকে আর ভাল লাগে না তাই তো আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না । কালকেও তুমি এমনটা করেছ ।

-আরে বাবা আমি বললাম না যে আমি আজ সারা দিন সেমিনারে আছি । কাল ছিলাম । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত । এখন তুমি বল সারা দিন খাটা খাটনি করে কি রাত জেগে কথাবলতে ইচ্ছা করে !!

-আমি জানি না । আমি কিছু জানি না । আমার সাথে কথা বলে হবে । আজ সারাদিন তুমিএকটুও কথাও বলনি ।

-আরে আমি তো বিজি ছিলাম । কিভাবে বলবো ?

-আমি জানি না । আমি কিছু শুনতে চাই না । কিছু শুনতেচাই না ।

আমি ফোনের লাইন কেটে দিলাম । এই মেয়ের সাথে কথাবলে লাভ নাই । একবার যা বলতে তাথেকে কিছুতেই নামানো যাবে না । আর আমার পক্ষে এখন কথা বলা সম্ভব না কিছুতেই ।

আমি ফোন বন্ধ করে ঘুম দিলাম । ফোন খোলা থাকলে নিশি ফোন করতেই থাকবে !

ঘুমিয়েই পড়েছিলাম । ঘুম ভাঙ্গলো খুব সকালে । সকাল না বলে বলে ভোর বলাই ভাল । কারন এখনও খুব একটা আলো ফোটে নি । আমি আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মোবাইল হাতে নিলাম । এখনও বন্ধ।

আরে রাতে না বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম । নিশি কি ঘুমিয়েছে ?

মেয়েটা এমন পাগলামো করে । নিশ্চই ঘুমাইনি ।

আমি ফোন অন করটেই মেসেজের বৃষ্টি শুরু হল যেন ।

নিশির মেসেজ ।

সব গুলোতে কেবল একটা লাইন লেখা....

আমি তোমাকে অনেক মিস করছি!!

আমি তোমাকে অনেক মিস করছি!!

আমি তোমাকে অনেক মিস করছি!!

এই মেয়েটা আসলেই পাগল । একদম পাগল ।

আসলে কাল রাতে এতো ক্লান্ত ছিলাম কিছুতেই কথা বলার অবস্থায় ছিলাম । মেয়েটা নিশ্চই মন খারাপ করেছে । কান্না কাটিও নিশ্চই করেছে ।

কি করবো ?

এখন ফোন দিবো !!

আমি জানি একটু সরি বললেই ওমন ভাল হয়ে যাবে কিন্তু আরো বেশি কিছু কি করা যায় না?

যায় !!

আমি চট করে তৈরি হয়ে নিলাম। এতো সকালে কেউ বের হয় নি । সকালটা একদম নির্জন । কোথা থেকে যেন পাখির ডাক ভেসে আসছে!!

নিশি কি ঘুমিয়েছে ?

কে জানে ?

দুবার ফোন বাজতেই নিশি ফোন রিসিভ করল । কিন্তু কোন কথা বলল না । এর মানে হল ও রাগ করেছে । আমি বললাম

-রাগ করেছ?

-হুম !

-খুব বেশি ?

-হুম !

-কথা বলবা না?

-হুম !

আমি হেসে ফেললাম ।

-কথা বলবা ?

নিশি কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম

-তুমি মাঝে মাঝে এমন ছেলে মানুষি কর ।আমার দিকটাও তোমার তো দেখা উচিৎ !

-আর তুমি আমার দিকটা দেখবানা?

-আরে বাবা !! থাক বাদ দাও । দেখ বাইরে কি সুন্দর সকাল ।

-দেখবো না ।

-আরে ! আমি না দোষ করেছি । সকালতো আর কোনদোষ করেনি ।

নিশি কোন কথা বলল না ।

-আচ্ছা তোমার মন ভাল করে দিব? দিবো ?

-কিভাবে ?

-আচ্ছা শুনো , তুমি এখন তোমার জানলা দিয়ে যদি বাইরে তাকাও তাহলে তোমার মন ভাল হয়ে যাবে । আমি গেরান্টি দিচ্ছি ।

-আচ্ছা ?

-তাকিয়ে দেখ !

ঠিক তখনই নিশিকে জানলায় দেখা গেল । আমি হাত নাড়লাম।

-মন ভাল হয়েছে ?

নিশি কোন কথা না বলে জানলাথেকে সরে গেল দ্রুত ।

কি হল ?

রাগ কি বেশি করেছে?

এমন তো হবার কথা না?

ঠিক তার কিছু সময় পরই নিশিকে হলের গেটে দেখা গেল।

গেট থেকে বের হয়ে একদম এদিকেই এগিয়ে আসছে।এগিয়ে আসছে বলতে এদিকে দৌড়ে আসছে। আসতে আসতে একদম কাছে যখন চলে এল আমারমনে হল ও থামবে না।সিনেমায় যেমন নায়িকারা দৌড়ে এসে নায়কের বুকে ঝাপিয়েপড়ে নিশিরও তেমন কিছু করার প্লান।

ঠিক তাই ই করলো!

ভাগ্য ভাল যে সকাল বেলা । মানুষ জন কেউ নাই।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File