কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির ইন্টার ন্যাশনাল ষ্টুডেন্ট উইকে “বাংলাদেশ ডে”

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৫:৪৮:২৬ সকাল

চিটাগাঙে পতেঙ্গার সাগর বেলায় খুশিতে কাটানো ছেলে বেলার সব পেয়েছির দিনগুলিতে আমাদের স্কুলের ইংরেজির টিচার ছিলেন মালেক স্যার | কোমল কঠিনে মেশানো ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব বলতে যে কথাটার ব্যবহার বাংলা ভাষায় আছে সেটা মালেক স্যারকে দেখে খুব ছোটো বেলায়ই আমি শিখে যাই | স্যার বেশ রসিক ছিলেন | হাসি ঠাট্টা করতেন মাঝে মাঝেই আমাদের সাথে | আমাদের খুব আদরও করতেন | কিন্তু ক্লাসে বাড়ির কাজ বা ক্লাসের পড়া আদায়ের ক্ষেত্রে ছিলেন খুবই কঠিন | স্যারের শাস্তি ছিল ভয়ানক | টিচার'স রুমের লকারে তার একটা বেত থাকত | খুব রেগে গেলে সেই বেতের বাড়ি দিয়ে তিনি আমাদের শাসন করতে একেবারেই দ্বিধা করতেন না | স্কুলে স্যারের এই তীব্র শাসনের একটা নাম আমাদের সিনিয়রদের থেকে প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল "মালেইক্কার গরু ফিডা"বলে|

একদিনের কথা বলি | ইংরেজি ক্লাসে আমাদের বাড়ির কাজ ছিল কিছু ইংরেজি শব্দের (আমাদের গ্রামার বইয়ের পুরো একপাতা) প্রেজ্ন্ট, পাস্ট আর পাস্ট পার্টিসিপল ফর্মগুলো শেখা | স্যারের নির্দেশনা ছিল শব্দগুলোর অর্থসহ মুখস্থ করতে হবে কারণ এগুলোর থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে | যাহোক সেদিন যথারীতি স্যার ক্লাসে এসেছেন | ইংরেজি গ্রামার ক্লাস | সেই পড়া ধরছেন স্যার এক এক করে | আমাদের ক্লাসের ছাত্র ছিল বাবুল হোসেন| চিকন চাকন আর আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা | সবাইকে হাসতে পারত সাংঘাতিক | ছাত্র মাঝামাঝি মানের |বাবুলকে স্যার পড়া জিজ্ঞেস করেছেন | কোনো একটা শব্দের প্রেজেন্ট ফর্মটার স্পেলিং জানতে চেয়েছেন | বাবুলতো সেটা পারে না | স্যার শপাং শপাং দুটো বেতের বাড়ি পিঠে দিতেই সে বলল, স্যার এই বানানটা শিখতে হবে কেন ? এটাতো প্রশ্নেই থাকবে | পাস্টটেন্স আর পাস্টপারটিসেপল জান্লেইত হয় | শুনেতো স্যার আরো রেগেছেন | পিঠে আরো কয়টা দুমাদুম বেত চালিয়ে ক্ষ্যান্ত হলেন |

স্যারকে আমরা রাগতে দেখেছি কিন্তু সেদিন তার রাগের সাথে তাকে কিছুটা আপসেটও মনে হলো | কিছুক্ষণ নিজের চেয়ারে বসে থেকে উঠলেন | বাকি ক্লাসের অন্য কাউকে আর পড়া জিজ্ঞেস করলেন না | খুবই ধীরে ধীরে খানিকটা আবেগী গলায় আমাদের বললেন পড়াশোনা করতে হবে জানার জন্য | অন্যের উপর নির্ভর করলে চলবে না | শব্দের প্রেজেন্ট ফর্মগুলোর স্পেলিং জানতে হবে নিজের ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা বাড়াতে | আমরা বর্তমানে বাস করি | অতীতে থাকিনা, ভবিষ্যতে বেঁচে থাকব কিনা কে জানে |তাই বর্তমানকে গুরুত্ব দিতেই হবে | প্রশ্নে থাকবে বলে না শিখলে চলবে না | অন্য প্রশ্ন উত্তর দিতেওতো ওগুলো জানতে হবে | স্যারের আবেগটা সেই ছোটো ক্লাসেও আমাদের ছুয়ে গেল | সেই থেকে স্পেলিং-এর ব্যাপারে আমার মনোভাব খুবই রক্ষনশীল | নতুন শব্দের স্পেলিং শিখতে আর মনে রাখার চেষ্টা করি সবসময়ই |কোনো কারণে স্কুলের পরীক্ষায় দু'একটা স্পেলিং ভুল হলেও কি যে খারাপ লাগত ! এত দিন পার হলো এখনো সেই অভ্যেসটা সেই ছোটো বেলার মতই আছে | অনেক দিনই ছিল | কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসে সেই অভ্যেসটা মনে হয় হঠাতই বদলে গেল | স্পেলিং-এ ভুল হলেও ভালো লাগছে! আমি কি অল্প দিনেই বদলে গেলাম উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি ছোটো দেশ বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী আর ক্ষমতাশীল দেশে এসে!

পৃথিবীর অন্যতম সেরা রিসার্চ ইন্সটিটিউশন যার জগৎজোড়া খ্যাতি স্পেশালটি আবার কম্পিউটার টেকনোলজিতে আর যেটা কিনা আমার নিজেরই স্কুল তাতে পড়তে এসেছি কম্পিউটারে দক্ষতা বলতে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অফিসের এর সফট ওয়ারগুলো (ওয়ার্ড আর এক্সেলই বেশি, পাওয়ার পয়েন্ট খুব কম কারণ দেশে বেশি ব্যাহার করত হত না ), আর কিছু ইন্টারনেট ইউটিলিটি ব্যবহার করতে পারি | বাই দ্যা ওয়ে, আমি বেশ কিছু বছর আগের কথা বলছি |

বাংলাদেশে স্কুলে আর কলেজেতো বটেই এমনকি ইউনিভার্সিটিতেও আমরা হাতে লিখেই এসাইন-মেন্টগুলো বা পরীক্ষা দিতাম | বাংলাদেশে আমার দীর্ঘ ছাত্র আর চাকুরী জীবন মিলিয়ে আমি দুইবার মাত্র কম্পিউটারে দুটি পরীক্ষা দিয়েছি আমেরিকায় ইউনিভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য সে দুটো পরীক্ষা হলো "TOEFL"আর "GRE"| এছাড়া অনার্স আর মাস্টার্সের আমার দুটো থিসিস কম্পিউটারে কম্পোজ করা ছিল |ইউনিভার্সিটিতে পরার সময় আমার কোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছিল না নিজের | আমার এই কম্পিউটার জ্ঞান নিয়ে এসেছি বিদেশে পড়তে | এখানে এসে দেখি সব কাজ করতে হবে কম্পিউটারে | হোম ওয়ার্ক থেকে শুরু করে ক্লাসের মিডটার্ম, সেমিস্টার ফাইনাল সব | প্রথম সেমিস্টারেই একটা কম্পিউটার ক্লাস নেবার কথা ছিল | নেই নি | পরের সেমিস্টারে নেব ভেবেছি | নানান সফটওয়ারে ডাউন লোডেড ল্যাবের কম্পিউটারগুলো | দেশে ইন্টারমিডিয়েট থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটা ক্লাসেই আমার স্ট্যাটিসটিক্স ছিল| কত কষ্ট করে যে ক্যালকুলেটর চেপে চেপে সেই স্ট্যাটিসটিক্সগুলো করতে হত! ইন্টারমিডিয়েটের সময় স্ট্যাটিসটিক্স (পরিসংখ্যান) পরীক্ষার কথা মনে আছে | স্ট্যাটিসটিক্স পরীক্ষায় আমরা ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবো সেটাই ঢাকা কলেজ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল | কিন্তু পরীক্ষার হলে আমাদের থেকে সব ক্যালকুলেটর নিয়ে নেওয়া হলো |ক্যালকুলেটর ছাড়াই স্ট্যাটিসটিক্স পরীক্ষা দিতে হবে ! কি যে অবস্থা আমাদের সবার ! এখানে দেখি সেই সব স্ট্যাটিসটিক্স করার জন্যও সফটওয়ার !

ক্লাস না থাকার সময়গুলোর বেশির ভাগ সময়ই কাটে কম্পিউটারে ল্যাবে কম্পিউটারের কি বোর্ডের বাটন টিপতে টিপতে | কম্পিউটারে টাইপের স্পিড আমার তখনও খুব বেশি না |আমার ক্লাসের কিছু ছেলে মেয়ের টাইপিং স্পিড দেখে অবাক হতে হয় | জানি ওদের মত কখনই স্পীডি হওয়া যাবে না টাইপিং -এ তবুও আমি দিন রাত চেষ্টা করে যাই | কিছু দিনের মধ্যেই আমার টাইপিং-এর স্পীডে উন্নতি হলো ভালই | উইকে অন্তত তিনটে পেপার/হোমওয়ার্ক সাবমিট করতে হয় কম্পিউটার টাইপড পেইজে | চার পাচ পাতার উইকলি পেপারগুলো দ্রুতই টাইপ করতে পারি খুব বেশি ভুল না করেই | এই টাইপিং করতে যেয়েই এলিমেন্টারি স্কুলে মালেক স্যারের শেখানো শিক্ষাটা ভুলে গেলাম | বানানগুলো শুদ্ধ করে স্পেল করা শিখতে হবে | কিছু ভুলে মন খারাপ হয়না আর | কোনো কোনো সময় ইচ্ছে করেই বানানে ভুল করি আর ভুলটির দিকে তাকিয়ে থাকি |

জানুয়ারির তুষার ঢাকা এক সকালে প্রথম কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটিতে আমার মাস্টার্স প্রোগ্রামের প্রথম সেমেস্টারটা শুরু হয়েছিল | দেখতে দেখতে প্রথম সেমিস্টারের অর্ধেক সময় কখন যে পেড়িয়ে গেছে টেরও পাইনি | একদিন হঠাত ইনবক্সে দেখি ইন্টারন্যাশনাল ষ্টুডেন্ট এডভাইজার এমি মায়ার্স আমাকে ইমেইল করেছে | ইমেইলের বিষয় উইন্টার সেমেস্টার শেষ হবার পর পরই সামার ফেস্টিভাল হবে ইউনিভার্সিতে | তখন একটা ইন্টারন্যাশনাল ষ্ট্যুডেন্ট উইকের আয়োজন করা হবে | ইউনিভার্সিটির সব দেশের ষ্টুডেন্টরাই তাদের নিজ নিজ দেশকে রিপ্রেজ্ন্ট করতে পারবে সেই ফেস্টিভালে | কার্নেগী মেলনে ওই সময়ে যেহেতু আমিই একমাত্র বাংলাদেশী গ্রাজুয়েট ষ্টুডেন্ট তাই ইন্টারন্যাশনাল ষ্টুডেন্ট অফিস চায় আমি যেন বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করি সেই ফেস্টিভালে | থার্টি মিনিটের একটি নির্ধারিত স্লটে বাংলাদেশের কালচার, ইতিহাস এগুলো নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন করতে হবে | ইন্টারন্যাশনাল ষ্ট্যুডেন্ট উইকের সেই স্লটটার নাম হবে “বাংলাদেশ ডে” | আমি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করবো কিনা সেটা জানাতে হবে ASAP |

ইমেইলটা পেয়ে ভাবছি কি করবো? পরামর্শ করার জন্য একমাত্র মানুষ হলো তাপস, এ'বছরের জানুয়ারিতে ইন্তিকাল করা বাংলাদেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ডক্টর মাহবুব হোসেনের ছেলে | তাপস আমার এক সেমিস্টার আগে আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে এসেছে কার্নেগীতে | কম্পিউটার সাইন্সের চৌকস ছাত্র | তাপস আর আমি দুজনে কথা বলে ইন্টারন্যাশনাল ষ্টুডেন্ট এডভাইজারকে ইমেইলে জানিয়ে দিলাম আমরা ইন্টারন্যাশনাল উইকে প্রেজেন্টেশনটা করবো | বাংলাদেশের একটা পতাকা আমার কাছে আছে | আমি আমেরিকা যাবার সময় কিছু হ্যান্ড ক্রাফ্টেড জিনিস নিয়ে গিয়েছিলাম | আড়ংয়ের থেকে কেনা একটা পেতলের রিকশা, একটা কাঠের বৈঠাসহ দেশী নৌকা, নারকেলের খোলের মধ্যে বানানো বাংলাদেশের একটা গ্রামের মিনিয়েচার রিপ্লিকা | এসব আইটেমগুলো ডিসপ্লের জন্য থাকবে | আমার আর তাপস দুজনের কাছেই কিছু বাংলাদেশের বই -পুস্তক আছে বাংলা আর ইংরেজিতে লেখা সেগুলোও ডিসপ্লেতে থাকবে বলে ঠিক হলো | এছাড়া আমরা দুজন ঠিক করেছি কতগুলো ব্রশিওর বানাবো বাংলাদেশ রিলেটেড জরুরি ইনফরমেশনগুলো দিয়ে দিয়ে | সেই ব্রশিওর ইন্টারন্যাশনাল উইক ফেস্টিভালে বাংলাদেশ ডে প্রেজেন্টেশনে আসা গেস্টদের দেওয়া হবে | এছাড়াও আরো কিছু বোর্ড আর পোস্টার বানাবো সেই কথা ঠিক হলো |

যাহোক, সেমিস্টার শেষ করেই তাপস আর আমি দুজনই লাগলাম ব্রশিওরগুলো বানাতে | তাপস বড় হয়েছে অনেকটাই ফিলিপাইনে | ওর আব্বা ডক্টর মাহবুব হোসেন অনেক বছর ফিলিপাইনে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ডাইরেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছে বলে তাপস আর ওর দু'বোনের একটা বড় সময় কেটেছে ফিলিপাইনে | তাপস আমাকেই তাই বাংলাদেশ ডে প্রেজেন্টেশন প্রজেক্টের ডাইরেক্টর জেনারেল স্বীকার করে পুরো দায়িত্ব দিয়েছে ব্রশিওর তৈরী করার | আমি মাইক্রোসফট উইন্ডোজের ওয়ার্ড ভার্সনে বাংলাদেশ রিলেটেড ইনফরমেশনগুলো একসাথে করে ব্রশিয়রের একটা ড্রাফট করার চেষ্টা করছি | টাইপিংটা তখন বেশ ভালো হয়েছে | স্পিড বেড়েছে আর খুব বেশি ভুল হয় না |

কম্পিউটার ল্যাবের যে পিসিটাতে কাজ করি আমি তার কী বোর্ডটাতে মনে হয় কোনো সমস্যা আছে (অত আগে তখন শিওর ছিলাম না ) আলতো করে " N" প্রেস করলে N টাইপ হয় না | BANGLADESH লিখতে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে BAGLADESH ! বানানে ভুল হবার সাথে সাথেই লাল রঙে আন্ডার লাইন হয়ে যাচ্ছে আমার ভুলটা | সাদা স্ক্রিনে লাল রঙে আন্ডার লাইন হয়ে যাওয়া "BAGLADESH" কথাটা যেন জ্বল জ্বল করতে থাকে সন্ধ্যা আকাশের তারার উজ্বলতা নিয়ে ! মনে হয় বলতে থাকে বাংলাদেশ নামটা ছোটো দেশ হলেও তাকে অগ্রায্য করা যাবে না | তার সঠিক নামে, সঠিক পরিচয়েই তাকে ডাকতে হবে | উনিশশ' একাত্তুর সালের নয় মাসে একটা রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে | বাংলাদেশের সবুজ মাঠ-প্রান্তরের বিশাল একটা অংশ স্বাধীনতা দাবিতে উত্তাল মুক্তিযোদ্ধাদের লাল রক্তে রাঙা | উনিশশ' একাত্তুর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সারা পৃথিবীর বুকে লাল আল্পনায় গেঁথে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের নাম ! সেই নাম আর পরিবর্তন করা যাবে না | সেই নামের কোনো ভুল বানান, উচ্চারণ করা যাবে না | কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটিতে আসার আগে কম্পিউটারে এত কাজ করার সুযোগ কখনো হয় নি | নিজের তখন কম্পিউটার ছিল না | তাই কম্পিউটার টেকনোলজি তার অযুত টেরাবাইট মেমরি ঘেটে বাংলাদেশের সঠিক নামটা খুঁজে বের করে ভুল গুলো ধরিয়ে দিচ্ছে ভাবতেই ভালো লাগে |

বাংলাদেশের মত ছোট্ট উন্নয়নশীল একটা দেশ থেকে আমি এসেছি আমেরিকার মত বিশ্বের সম্মৃদ্ধতম দেশে | দেশে ফেলে আসা ঢাকা বা রাজশাহী ইউনিভার্সিটি টেকনোলজির দিক থেকে কার্নেগী মেলনের চেয়ে কত শত বছর পিছিয়ে আছে, আমি নিজে আমার সাথে একই প্রোগ্রামে পড়া, একই সাথে ক্লাস করা সামান্থা, লরেন্স, মনিকা বা অন্যান্যদের চেয়ে প্রয়োজনীয় স্ট্যাটিসটিকাল সফটওয়ার ব্যবহারে কত হাজার বছর পিছিয়ে পরে রয়েছি এগুলো আর মনে থাকে না বাংলাদেশের স্পেলিংটা ভুল করে | ঝিরি ঝিরি একটা অবিচ্ছিন্ন ভালো লাগায় এত না পাবার মাঝেও মনটা ভালো হয়ে যায় | মালেক স্যার আর নেই | অনেক দিন আগে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরবার পথে রাস্তা পেরুবার সময় দ্রুতগামী ট্রাকের নীচে পিষ্ঠ হয়ে মারা গেছেন | বানান ভুল করে স্যারের কথাও আর মনে হয় না | আমি আবার ইচ্ছে করে Bangladesh লিখতে গিয়ে লিখি Bagladesh ! লাল রঙে আন্ডার লাইন হয়ে যাওয়া সেই ভুলটাও যেন আমার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসতে থাকে |

ইন্টারন্যাশনাল উইকের প্রেজেন্টেশনটা শেষ হয়েছে | সুন্দর হয়েছে আমার আর তাপসের "বাংলাদেশ ডে" -এর প্রেজেন্টেশন প্রোগ্রাম | স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব থেকে করা মাল্টি কালার ব্রশিওরগুলোও খুবই সুন্দর হয়েছে | বাংলাদেশের উপর দশ পনের মিনিটের একটা ছোটো ইনফরমেটিভ সেশন করতে হলো | আমিই প্রেজেন্টেশনে কথা বললাম | আমাদের প্রেজেন্টেশনের শেষে একটা কোশ্চেন-আনসার পর্বের মতো হয়ে গেলো |গেস্টদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো | একাত্তুরের স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গও এলো সেখানে | আমার প্রেজেন্টেশনের সময় তাপস ব্রশিওরগুলো গেস্টদের ডিস্ট্রিবিউট করলো | দেখি ইন্টারন্যাশনাল ষ্টুডেন্ট এডভাইজার এমি মায়ার্সও এসেছেন | বসেছেন একবারে সামনের রোতে |প্রোগ্রাম শেষ হবার পর বললেন সুন্দর হয়েছে প্রেজেন্টেশন |ব্রশিওরটার কথাও বললেন সুন্দর হয়েছে| শেষ পাতার একটা টাইপো ধরিয়ে দিলেন BAGLADESH ! মালেক স্যার বেঁচে থাকলে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার ছাত্রের এই রকম চরম ভুল দেখলে সেই বেতটা দিয়ে আজো আমাকে মারতে আসতেন কিনা আমি জানিনা | কিন্তু এমি ভুল ধরিয়ে দেবার পরও আমি মন খারাপ করলাম না | বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে, আমি এ নিয়ে কখনো কোনো ভুল করিনা | কম্পিউটারের কোনো হৃদয় নেই, কিন্তু সেও জানে পৃথিবীর মাটিতে চির দিনের মত গেঁথে দেওয়া সবুজ লালে আঁকা বাংলাদেশের সঠিক নাম | আমি নিশ্চিত জানি ব্রোশিওর টাইপের এই ভুলটাও কম্পিউটারে তার নির্বাক কণ্ঠে আমাকে জানিয়েছিল রক্ত লালে হাইলাইট করে | তখন কম্পিউটারে নবিশ আমিই হয়তো তাড়াহুড়োর মধ্যে তা খেয়াল করতে পারিনি | সে কথা মনে করে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে আমার মুখে | এমি অবাক হলো কিনা তার ভ্রূক্ষেপ না করে তাকে থাঙ্কস বলে আমি বাসার দিকে পা বাড়ালাম |



বিষয়: বিবিধ

২০১১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380723
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:০৮
স্বপন২ লিখেছেন : চমৎকার লেখা।হৃদয় ছুঁয়ে যায়।এখানে যারা
বাংলাদেশ থেকে এসেছে।অধিকাংশ লিবারেল
মাইন্ডে-ড। আপনি ব্যাতিক্রম। আপনার ওখানে এখন বরফে আছন্ন। সাউথে চলে আসেন। সাউথেও ভাল বিশ্ব বিদ্যালয়ে রয়েছে। যেমন Georgia Institute of
Technology. হুমায়ূন আহমেদের কন্যা, আমেরিকায় যখন আসে,তখন লিবারেল ছিল।
মুসলিম সিসটারদের দাওয়াতে হিজাবী হয়ে যায়। http://www.northsouth.edu/faculty-members/seas/ece-fm/nva.html


১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:১০
315043
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার আর মন্তব্যের জন্য | আপনি জর্জিয়ায় থাকেন নাকি ? আমি গিয়েছি আটলান্টায় বেড়াতে | আটলান্টা আমার ভালো লেগেছে | ওখানেতো এখন অনেক বাংলাদেশী আছে |
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:২৩
315045
স্বপন২ লিখেছেন : Yes, sir
380733
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৪৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অত্যন্ত চমৎকার ও শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার হাতের লিখা খুব খারাপ। এই জন্য ছাত্র জীবনে কখনও ভাল রেজাল্ট করতে পারিনি! কিন্তু এখন অনেক পাতা লিখি পেশাগত ও শখের জন্য। আর স্পেলিং নিয়ে আমরা যে পরিশ্রম করেছি সেটাও এখন কম মানুষ ই করে। তবুও কেন শিশুদের কাঁধে ব্যাগের বোঝা বাড়ছে বুঝিনা। এই ছোট্ট দেশ টাকে আরো ভাল করে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করুন এই কামনা করছি।
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:২০
315044
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার আর মন্তব্যের জন্য|চেষ্টা করি সব জায়গায় বলতে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি | ছেলে মেয়েদেরও বলি যখন দরকার হবে তখন যেন বলে কান্ট্রি অব অরিজিন বাংলাদেশ|আমাকে ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র হিসেবে দেখেই অনেকে বাংলাদেশ নামে যে একটা দেশ আছে সেটা প্রথম জেনেছে |আমি নিজেই এই কথা শুনেছি ইউনিভার্সিটিতে |চেষ্টা করি আমার পরিচয় থেকে যেন বাংলাদেশ কেমন সে ধারণা পায় সবাই |সেই ধারণা ভালো হোক সে চেষ্টা করি সব সময় সাধ্যমতো |
380739
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৩০
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


আপনার লিখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লাম। শৈশবস্মৃতি, শিক্ষক, সহপাঠীসহ ছোট্ট বেলার মিষ্টি মধুর বিষয়গুলো আজকের প্রেক্ষাপটে ভাবনার বিষয়।


বর্তমানে শিক্ষকতা বিষয়টি আদর্শচ্যুত হয়ে নিকৃষ্ট একটি স্তরে নেমে এসেছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।


বানান ভুল! বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।


সর্বোপরি বাংদেশকে উপস্থাপনের আনন্দটুকু অনেক উপভোগ্য ও আনন্দদায়ক নিঃসন্দেহে।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৫:৩৬
315047
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সন্ধাতারা:অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ার আর মন্তব্যের জন্য |বিদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে খুশির খুব বেশি কিছু ঘটনা | অল্প সল্প খুশির যা ঘটে তা আমরাই আবার নিজেরাই ভেঙেচুরে ফেলি |যেমন গ্রামীণ নিয়ে একটা খুব পজিটিভ ইমেজ আমাদের হয়েছিল বিদেশে | আমার পিএইচডি থিসিস সুপারভাইজার একবার আমাকে ইউনিভার্সিটির ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টের (এটা আমার ডিপার্টমেন্ট নয়)খুবই বিখ্যাত এক প্রফেসরের কাছে পাঠিয়েছেন তার অফার করা ডেপলাপমেন্ট ইকোনমিক্সের একটা ক্লাস নেবার জন্য |সেই প্রফেসর আমাকে প্রথম কথাই জিজ্ঞেস করলেন তুমি ডক্টর ইউনূসের দেশের মানুষ ! আমাকে বলো গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে! আজ কোথায় সেই গ্রামীণ ব্যাংক!

আমি যে ঘটনার কথা বলেছি সেটা বেশ কয়েক বছর আগের |সবার ঘরে ঘরেই তখনও কম্পিউটার নেই(বাংলাদেশের কথা বলছি)|আমাদের সব নিউজ পেপারের অনলাইন সংস্করণ নেই| আমি মাত্রই আমেরিকা গিয়েছি |অল্প স্বল্প কম্পিউটারের অভিজ্ঞতা নিয়ে |

তখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আসেনি | অনলাইন শপিং তখন জমজমাট হয়নি |সেল ফোন সবার হাতে হাতে নেই | সার্চ ইঞ্জিনগুলো আরো সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে |বিদেশে অনেকেই বাংলাদেশকে চিনেওনা | কম্পিউটারের ব্যবহারের ব্যাপারটা এতো ব্যাপক ছিল না |সেরকম একটা সময়ে বাংলাদেশ নামের ভুল কম্পিউটার বারবার ধরিয়ে দিচ্ছে | সেই অনুভুতিটা অন্যরকম ছিল | সেই রকম একটা সময়ের কথা,আর আমার অনুভূতির কথাই বলতে চেয়েছি লেখায়, আর কিছু নয়|

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File