হাদিসের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৫:৩২:০১ সকাল

কুরআনের যে আয়াত নাজিলে আর যে হাদিস শুনে সাহাবীরা খুশি হলেন

“আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম” (৪:৬৯) ।

“তুমি তাদের সাথেই থাকবে যাদের তুমি ভালোবাসো” (বুখারী,ভলিউম ৫, বই ৫৭ , হাদিস নম্বর ৩৭)

এক.

ইসলাম তখনও মক্কা বিজয় করতে পারেনি | হেরা পর্বতের গুহার আঁধার এক রাতে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তি মক্কার দিগন্ত জুড়ে ইসলামের উজ্বল আলোর রশ্নি ছড়িয়ে পৃথিবীর আকাশ রাঙিয়ে তুলেছিল | সেদিনের মূর্তি পূজারী মক্কার মানুষেরা তাদের দিগন্তে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নবুয়তের আলোর ভাঁজে ভাঁজে সযত্নে সাজিয়ে রাখা তাওহীদের আলোচ্ছটা দেখেও তাকে মরুভূমির মরীচিকা বলে ভুল করেছে | তার সত্যিটাকে ঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি | উপরন্ত রাসূলুল্লাহর (সাঃ) তাওহীদের ডাককে ভুল বুঝে তারা তার বিরোধিতায় এক হয়ে উঠেছিল | ইসলামের নবী হজরত মহাম্মদ (সাঃ) মক্কার মানুষের বিরোধিতার মুখে অনুসারীদের নিয়ে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছেন কয়েক বছর আগেই | হজরত ইব্রাহিমের স্মৃতি ঘিরা মক্কার অধিবাসীরা তখনও তাওহীদের আলোর তট রেখা থেকে দূর অন্ধকারে দেবদেবী পূজায়রত |

মূর্তি পূজায় ডুবে থাকা সেদিনের মক্কায় তেমনি একটি উজ্বল সূর্যের ঝলোমলো আলোয় ভরা অন্ধকার দিনের শুরু হয়েছে | হারাম শরীফের অল্প দূরেই বাদ্য যন্ত্রে নাঁচ গানের সাথে প্রচন্ড আনন্দে, উৎসাহে মিছিল করে চলেছে মক্কাবাসী | মিছিলের সামনে হাত পায়ে শেকল বাঁধা এক তেজোদীপ্ত যুবক | বন্দী অবস্থায়ও তার মাঝে শংকার কোনো ভাব নেই | আশেপাশের উৎসাহী মক্কাবাসিদের মাঝে ধীর স্থির ভাবে হেটে চলেছে সে যুবক | বন্দী অবস্থায়ও তার মাথা মক্কার পাহাড়ের মতোই উঁচু | তার মুখে ফুটে উঠেছে শান্ত সমাহিত একটি ভাব | মক্কার মুশরিকদের কূটকৌশলে তাদের হাতে বন্দী হওয়া সেই তেজোদ্দীপ্ত যুবক ইসলামের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাঃ ) একান্ত সাহাবী খুবাইব ইবনে আদি ইব্ন আমের (রাঃ ) | মক্কার মূর্তি পূজক অধিবাসীদের আনন্দ মিছিলের সামনে থাকা খুবাইব ইবনে আমেরকে (রাঃ) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য |

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য নির্মিত মঞ্চে উঠানো হয়েছে খুবাইবকে (রাঃ) | মক্কাবাসী মুশরিকরদের থেকে বাছাই কর হয়েছে চৌকষ তীরন্দাজদের | লক্ষ্য খুয়াইবের (রাঃ) মৃত্যুকে যথাসম্ভব নারকীয় করে তোলা | চৌকষ তীরন্দাজরা তার শরীরের বাছাইকরা জায়গায় তীর ছুড়ছেন | সেই তীর বিদ্ধ হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে অপরিসীম যন্ত্রনা | মৃত্যু যন্ত্রনাও বুঝি এর চেয়ে সহনীয় | কেউ কেউ বর্শার ঘায়ে রক্তাক্ত করে তুলছে তরুণ খুবাইবের শরীর | তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, আপনার রাসূল (সাঃ) আপনার ওহী আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন | আমি আমার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের খবর আপনার রাসূলের কাছে পৌঁছুতে পারিনি, আপনি আমার পক্ষ থেকে তার কাছে আমার খবর পৌঁছে দিন | বর্শার ঘায়ে রক্তাক্ত খুবাইবের (রাঃ) সারা শরীর | তা দেখে মুশরিকদের এক নেতা তাকে লোভনীয় প্রস্তাব দিলো | হে খুবাইব, এখনো সময় আছে তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারো | তাদের সাথে আরাম আয়েশে দিন কাটাতে পারো | শুধু উঁচু স্বরে বলো যে, আহা আজ যদি আমার বদলে এই জায়গায় নবী মুহাম্মদ থাকতেন ! অজস্র রক্তক্ষরণে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হজরত খুবাইবের শরীরে সে কথা শুনে যেন আগুন ধরে গেলো | এতক্ষন একমনে আল্লাহর প্রার্থনারত ধীরস্থির, সৌম্য, শান্ত হজরত খুবাইব (রাঃ) তীব্র ঘৃণা নিয়ে তার অত্যাচারী মক্কার লোকজনের দিকে তাকালেন | কঠিন সুরে বললেন, আমার মুক্তির বিনিময়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পায়ে একটি ফুলের আঘাত লাগুক তাও আমার অপছন্দ | আমার মুক্তির বিনিময়ে রাসূলের (সাঃ) বিন্দু মাত্র কষ্টও আমি মানতে রাজি নই | আমার মৃত্যু আল্লাহর হাতে | তোমরা আমার মৃত্যুদন্ড যেমন করে ইচ্ছে কার্যকর করতে পারো ! চৌকষ তীরন্দাজরা ধনুক বাকিয়ে অপেক্ষায়, তীক্ষ বর্শা উঁচু করে সাক্ষাৎ যমদূতের মতো আরো কত নিষ্ঠূর মক্কাবাসী তাঁর প্রাণ সংহারে প্রস্তুত ! শুধু আদেশের প্রতীক্ষা | তবুও মৃত্যুর মুখোমুখী দাঁড়িয়ে থাকা একজন বন্দীর মুক্তি প্রত্যাখ্যান করতে পারে এমন নেতার জন্য যিনি নাকি আবার এই পৃথিবীর ধন-দৌলত আর বিত্ত-বৈভবের কোনো প্রতিশ্রুতি দেননা বরং ধনহীন, অভিজাত্যবিহীন সাধারণ জীবনের প্রতি উৎসাহিত করেন! যে নেতা প্রতিশ্রুত দেন শুধু নিরাকার কোন এক আল্লাহর যিনি নাকি পরকালে জান্নাত দান করবেন ! নেতার প্রতি খুয়াইবের (রাঃ) এমন নিঃশর্ত আনুগত্য আর অবিশ্বাস্য ভালোবাসা মক্কার মূর্তিপূজারী, রক্ত নেশায় উন্মত্ত অবিশ্বাসী মানুষদের মনেও দোলা দিয়ে গেলো | বিস্মিত মক্কাবাসীদের তৎকালীন নেতা আবু সুফিয়ান মুগ্ধ গলায় বলে উঠলো, মুহাম্মদের অনুসারীরা তাঁকে যেমন করে ভালোবাসে তেমন করে আর কেও তাদের নেতাকে এই মাটির পৃথিবীতে কখনো ভালোবাসেনি !

সেদিনের মূর্তিপূজারী উন্মত্ত মক্কাবাসীর নৃশংস অত্যাচারে অল্প পরেই আল্লাহর প্রতি একান্ত বিশ্বাস আর রাসূলুল্লাহর প্রতি বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে তাঁর একান্ত সাহাবী খুয়াইব ইবনে আমের (রাঃ) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন | হজরত খুবাইব যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন মক্কা থেকে অনেক দূরে মদিনায় মসজিদ উন নবীতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের সামনে বলে উঠলেন , তোমাদের দুই জনের প্রতি সালাম (হজরত খুয়াইবের সাথে আরেকজন সাহাবীরও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ) | তিনি সাহাবীদের খুয়াইব (রাঃ)-এর মৃত্যুর খবর দেন | হজরত খুয়াইবের (রাঃ) দোয়া আল্লাহ পূরণ করেন | ওহী দিয়ে তিনি তার রাসূলকে (সাঃ) খুয়াইব (রাঃ) -এর মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেন |সূরা বাকারায় আল্লাহ খুবাইব (রাঃ ) এবং তার অন্য সহযোগী যারা ইসলামের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রশংসা করেছেন " আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান" (২০৭) ।

দুই.

উহুদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে | শেষ দিকের সামান্য ভুলে অসামান্য ক্ষতি হয়ে গেছে মুসলিম বাহিনীর | মুসলিম বাহিনীর কৌশলের শিথিলতা লক্ষ্য করে মক্কা বাহিনীর সেনাপতি খালেদ বিন ওয়ালিদ পেছন দিক থেকে আক্রমণ করেছেন মুসলিমদের | দুদিক থেকে আক্রমণের লক্ষ্য শুধু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)| মুশরিকদের ভালোই জানা আছে শুধু মুহাম্মদকে (সাঃ) শেষ করতে পারলেই থামিয়ে দেওয়া যাবে ইসলামের অগ্রযাত্রা | রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বাঁচাতে সাহাবীরা মানব প্রাচীর গড়ে তুললেন | তবুও সেই দ্বিমুখী আক্রমণে দিশেহারা মুসলিম বাহিনীর অপরিসীম ক্ষতি হলো | রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) অক্ষত অবস্থায় বাঁচাবার চেষ্টা করতে যেয়ে একের পর এক সাহাবী অবলীলায় তাদের জীবন দিলেন | একসময় রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) গিরে রাখা নয়জন সঙ্গীর সাতজনই শহীদ হলেন | রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) রক্ষা করার মরণপণ যুদ্ধে তালহা ইবনে ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) নিজের শরীরে বরণ করলেন অসংখ্য তীরের আঘাত | শাহাদাত বরণ করলেন রাসূলুল্লাহর চাচা, সেই সময়ে ইসলামের অন্যতম সাহাবী, বীর যোদ্ধা হজরত হামজা (রাঃ) | প্রায় সত্তরজন সাহাবী উহুদের প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করলেন |রাসূলুল্লাহর (সাঃ) দুটো দাঁত শত্রূ পক্ষের আঘাতে ভেঙে গেলো | তিনি ভীষণভাবে আহত হলেন | এক পর্যায়ে রটে গেলো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওহুদের রণাঙ্গণে শাহাদাত বরণ করেছেন | মুসলিম বাহিনীর মধ্যে হাহাকার উঠলো রাসূলের শাহাদাতের সংবাদে | মদীনাতেও পৌঁছে গেলো সে কথা |

হাহাকার উঠলো মদিনার ঘরে ঘরে | দিনের শেষে মুসলিম বাহিনী মদিনায় ফিরে আসার পথে দেখতে পেলো রাস্তায় পাগলপারা হয়ে ছুটে আসছেন এক মহিলা | পাগলের মতো যাকে সামনে পাচ্ছেন তাকেই জিজ্ঞেস করছেন আল্লাহর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি জীবিত আছেন? যুদ্ধ ফেরত এক সাহাবী তাকে চিনতে পারলেন | তিনি জানেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জীবিত তাই তিনি মহিলাকে তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তার বাবার শাহাদাতের খবর দিলেন | মহিলা মনের কষ্ট বুখে চেপে ভাঙা গলায় আবার একই প্রশ্ন করলে সাহাবী তাকে তার ভাইয়ের শাহাদাতের খবর দিলেন | সে মহিলা আবার একই প্রশ্ন করলে সাহাবী তাঁকে তার স্বামীর শাহাদাতের খবর দিলেন | তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো কয়েক ফোটা | বুক ফাটা চিৎকার আর অন্তহীন কান্নার বন্যা সামলে তিনি তীব্র দৃষ্টিতে সাহাবীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমিতো আমার কোন পরম আত্মীয় মারা গেছেন সেই খবর শুনতে চাইনি | আমাকে বলুন আল্লাহর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কেমন আছেন ? বিস্মিত সাহাবী তার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষন, যেন সম্পূর্ণ অপরিচিত কাউকে দেখছেন তেমন ভাবে | তারপর বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ভালো আছেন | মুহূর্তেই মহিলার আশংকিত মুখ উজ্বল হয়ে উঠলো | সব যন্ত্রনা দূরে সরিয়ে হাসির রেখা ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোনায় | প্রশান্ত মুখে তিনি বলে উঠলেন, আলহামদুলিল্লাহ | আমার স্বামী, বাবা আর ভাইয়ের মৃত্যু তাহলে বৃথা যায় নি |

হাজার বছরেরও আগে তখনও ইসলাম রাষ্ট্র হিসেবে শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারেনি | বায়তুল মাল সৃষ্টি হয়নি, রাষ্ট্র থেকে সাহাবীদের অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করার কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি | সাহাবীরা দরিদ্র, বেশির ভাগ সাহাবীরই ঘরে একবেলার বেশি খাবার থাকতো না | বেশির ভাগ দিনই তাদের কাটতো সন্তান সন্ততিসহ পুরো পরিবার নিয়ে উপোস করে | সেরকম একটা সময়ে সাহাবীরা তাদের নিজের পরিবারের কথা ভুলে শুধুমাত্র রাসূলের (সাঃ) জীবন বাঁচাতে হাসতে হাসতে জীবন দিতে পারেন ! যেমন জীবন উৎসর্গ করেছিলেন হজরত খুযাইব (রাঃ)! রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) লক্ষ্য করে ছোড়া শত্রূর তীরের আঘাত থেকে বাঁচাতে মহাসন্তুষ্টির সাথে তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ)মানব ঢাল করে নিজের শরীরকে সহজেই বানাতে পারেন অসংখ্য তীরের লক্ষ্য | এমনকি একজন মহিলা তার স্বামী, বাবা আর ভাইয়ের মৃত্যুর পর যখন তার একবেলা খাবার জোটাবার সুযোগও চিন্তাতীত রকমের সংকীর্ণ হয়ে গেছে তেমন সময়ও রাসূলুল্লাহর প্রতি কি রকম নিঃশর্ত, অবিশ্বাস্য ভালোবাসা দেখাতে পারেন ! রাসূলুল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় সাহাবীরা এমনই নিবেদিত ছিলেন যে একজন নাম না জানা অখ্যাত মহিলা সাহাবীও তার পরম আত্মীয়দের মৃত্যুর বিনিময়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সুস্থ্যতা কামনা করতে পারেন | রাসূলের (সাঃ) জন্য সাহাবীদের এমন অবিশ্বাস্য ভালোবাসার গল্পে ভরা ইসলামের সোনালী দিনের পাতাগুলো |আল্লাহ তাই সব নবীর সাহাবীদের চেয়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ভালোবাসায় পাগলপারা সাহাবীদের এই দলকে সর্বশ্রেষ্ট উম্মত হিসেবে কুরআনে চিহ্নিত করেছেন |

তিন.

রাসূলুল্লাহর প্রতি সাহাবীদের এই নিঃশর্ত ভালোবাসার অন্তরালেও লুকোনো ছিল হৃদয়ের জমানো কান্না, অব্যক্ত যন্ত্রনা, আর সীমাহীন কষ্ট | সেটা রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) ভালোবাসার কষ্ট | রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জাহেলিয়াত যুগের ঘন অন্ধকার থেকে তৌহিদের পথে আসার জন্য সবাইকে ইসলামের ডাক দিয়েছিলেন | প্রথম যুগের সাহাবীরা মূর্তিপূজার আঁধার করা জীবনের মধ্যে থেকেও ইসলামের কল্যাণময় পথ আর তৌহিদের আলোর দ্যুতি ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন | সেই পথে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবার চেষ্টায় তাদের সামনেই ছিল চলন্ত কোরান -রাসূলুল্লাহ (সাঃ)| রাসূলুল্লাহকে (সাঃ)অনুসরণ করেই তারা তৌহিদের বাণী বুঝেছিলেন, ইসলামের পথ মানে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ চিনেছিলেন | রাসূলুল্লাহকে (সাঃ)অনুসরণ করে তারা যে জীবনের শুরু করেছিলেন তার প্রতিটি পদক্ষেপেই ছিল তাওহীদের আলো, জান্নাত পাবার প্রতিশ্রুতি | মদিনায় রাসূলের (সাঃ) সার্বক্ষণিক সাহচর্য, জান্নাত পাবার প্রতিশ্রুতির মধ্যেও রাসূলের ভালোবাসার কষ্ট তাদের কমেনি | তুষে ঢাকা ধ্বিকি ধ্বিকি আগুনের মতোই সেই ব্যাথার আগুন মাঝে মাঝেই দাবানল হয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতো সাহাবীদের অন্তর, সমস্ত অস্তিত্ব |

সাদ বিন জুবায়ের (রাঃ) বলেছেন, এক দিন আনসারদের এক লোক এলো আল্লাহর রাসূলের কাছে | তাকে খুবই মানসিক যন্ত্রনায় কাতর মনে হচ্ছিলো | আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে কেন এতো মন খারাপ, বিমর্ষ লাগছে ? সজল চোখে সেই আনসার ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল কিছুদিন ধরে একটি চিন্তা আমাকে মানসিক ভাবে খুবই কষ্ট দিচ্ছে | রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনা , কি সেই চিন্তা যার জন্য তুমি এতো কষ্ট পাচ্ছো ? উত্তর দিতে গিয়ে গলা ধরে এলো সেই আনসার ব্যক্তির | গভীর আবেগে তার গলার স্বর প্রায় রুদ্ধ | কান্না চাপতে চাপতে সজল গলায় সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল(সাঃ), আমরা দিন রাতে আপনার কাছে আসি | আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি আপনার উপদেশের আশায় | আপনার কাছে বসতে পারি | কিন্তু পরকালে আপনি থাকবেন নবী রাসূলদের সাথে | আমরাতো আপনার মতো আল্লাহর পেয়ারা বান্দা নই | পরকালে আমরা তবে কি আর কখনোই আপনাকে দেখতে পাবো না | এমনকি আমি যদি বেহেস্তেও যাই সেখানেও আপনার মান মর্যাদা হবে সবচেয়ে উঁচু | আমিতো আর আপনার কাছে যেতে পারবোনা | এমনকি আমার ভয় সেখানে আমি আপনাকে চোখেও দেখতে পারবোনা | আপনাকে দেখতে না পারলে বেহেস্তওতো আমার কাছে অসুখী জায়গা মনে হবে | সেই চিন্তাতেই আমার কদিন ধরে সবকিছু বিস্বাদ লাগছে | আমার কোনো কিছুই আর ভালো লাগছে না, আল্লাহর রাসূল | দয়ার নবী তার প্রিয় সাহাবীর কান্না ভেজা আকুতি শুনে নিরুত্তর থাকলেন |কোনো কথা বলতে পারলেন না | আল্লাহর নির্দেশ না পেলে এসম্পর্কে তার কিছু বলার নেই | কিছু কিছু বর্ণনায় এই সাহাবী হিসেবে রাসুলুল্লাহর (সা.) আযাদকৃত গোলাম হযরত সওবান (রাঃ) এর কথা বলা হয়েছে | হাশরের মাঠে এবং তার পরে রাসূলুল্লাহকে দেখতে না পাবার কষ্টের কথা মনে করে তাঁর চেহারা একদিন এতই বিমর্ষ হয়ে গিয়েছিল যে তিনি তাঁর সে বিষন্নতা আর লুকোতে পারলেন না । রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তাঁর এই বিষন্নতা লক্ষ্য করলেন তখন তিনি তাঁর কোন রোগ-শোক হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁর উত্তরে হযরত সওবান (রাঃ) তাঁর বিষন্নতার কারণ বললেন |

ইবনে কাসীর এ প্রসঙ্গে হজরত আয়িশার (রাঃ) বর্ণনাতে উল্লেখ করেছেন, একবার এক সাহাবী রাসূলুল্লাহর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল আপনি আমার কাছে আমার নিজের, নিজের পরিবার, সন্তান সন্ততির চেয়েও বেশি প্রিয় | অনেক সময় আমি যখন বাসায় থাকি তখন আমি আপনাকেই মনে করতে থাকি | আপনাকে নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতে পারিনা | কিন্তু আমি যখন আমার আর আপনার মৃত্যু সম্পর্কে ভাবি তখন আমার কষ্ট আরো বেড়ে যায় | আমি জানি বেহেস্তে আপনি নবী -রাসূলদের সাথে থাকবেন | আমার ভয় হয় আমি বেহেস্তে গেলেও আপনাকে আর দেখতে পারবো না | রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সাহাবীর কষ্ট দেখেও তাকে কোনো স্বান্তনা দিতে পারলেন না | পৃথিবী আর পরকালের মালিক আল্লাহ | হাশরের দিনে তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না | বেহেস্ত দোজখের মালিক আল্লাহ | তিনি যাকে ইচ্ছে বেহেস্তে যাকে ইচ্ছে জাহান্নামে স্থান দেবেন | তার কথার উপর অন্য কারো কথা থাকবে না | রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সাহাবীর অসীম কষ্ট অনুভব করেও তাই নিরুত্তর রইলেন |

চার.

আল্লাহ রাসূলের মনোকষ্ট তার রাসূলের প্রিয় সাহাবীদের এই অন্তরযন্ত্রণা দূর করে দিলেন | সূরা নিসার ঊনসত্তর নং আয়াতের বার্তা নিয়ে সাত আসমানের উপর থেকে মদিনায় নেমে এলেন হজরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) | রাসূলুল্লাহকে শোনালেন আল্লাহর বাণী “আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম” (৪:৬৯) " | রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আনসারী সেই সাহাবীর বাড়িতে ওহীর শুভ সংবাদ জানবার জন্য লোক পাঠালেন | এমন ওহী যেন আর কখনো রাসূলুল্লাহর কাছে আগে আর নাজিল হয়নি ! জান্নাতের প্রতিশ্রুতির মতোই বা কারো কারো কাছে তার চেয়েও মধুর প্রতিশ্রুতি মনে হলো আল্লাহর এই ঘোষণা ! সাহাবীরা খুবই আনন্দিত হলেন কুরআনের এই আয়াতে |

এই ঘটনার পর পরই আরেকটি ঘটনাও সাহাবীদের দুশ্চিন্তা, ভালোবাসার কষ্ট কমিয়ে দিলো অনেক অনেক | হজরত আনাস (রাঃ) সেই হাদিসের ঘটনা বলেছেন | একদিন এক বেদুইন এসে রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করলো, কখন সে সময় (কেয়ামত) আসবে? রাসূলুল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন সে সময়ের জন্য কি প্রস্তুত করেছো? উত্তরে বেদুইন উত্তরে বললো, হে আল্লাহর রাসূল আমি সেদিনের জন্য কোনো কিছুই বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করিনি শুধুমাত্র আল্লাহ আর তার রাসূলকে ভালোবাসা ছাড়া | এই উত্তর শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন “তুমি তাদের সাথেই থাকবে যাদের তুমি ভালোবাসো” (বুখারী, ভলিউম ৫, বই ৫৭ , হাদিস নম্বর ৩৭) | এই হাদিসের এইটুক বর্ণনার পর হজরত আনাস ( রাঃ) আরো বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মুখে এই কথা শুনে আমরা এর চেয়ে বেশি খুশি আর কখনো হইনি |

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মুখের সেই কথা দ্রুত ছড়িয়ে গেলো একজন দুজন করে সবার কাছে-সারা মদিনায় | সাহাবীরা একজন আরেকজনের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসলেন সেই আনন্দময়, শুভ সংবাদ | খুশির আতিশয্যে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন ! সবার মনের মধ্যেই আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেলো | মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে হিজরত করে আসার পর যেন অনেক দিন কোনো সূর্য উঠেনি এতো আনন্দ নিয়ে, এতো আনন্দের কোনো ঘটনা ঘটেনি মুহাজের সাহাবীদের জীবনে | মদিনার আনসাররাও এতো বড় প্রতিশ্রুতির খবরে ভীষণ খুশী | রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মুখের কোনো কথা শুনে যেন এতো আনন্দ আর কোনো দিন হয়নি সাহাবীদের! বুকের ভেতর জমানো কত দিনের, অব্যক্ত যন্ত্রণার আজ অবসান হয়েছে |

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ইন্তিকালের অনেক পরে সাহাবীদের যুগের শেষের দিকে যখন তাবেঈনরা হজরত আনাসকে (রাঃ) প্রশ্ন করতেন হে আল্লাহর রাসূলের (সাঃ ) সাহাবী, আমাদের বলুন রাসূলুল্লাহর (সাঃ)মুখে কোন কথা শুনে সাহাবীরা বেশি খুশি হয়েছিলেন | সারা মুখে স্বর্গীয় হাসি ফুটে উঠতো হজরত আনাস (রাঃ) চোখে মুখে | গভীর ভালোলাগা আর ভালোবাসার সাথে “তুমি তাদের সাথেই থাকবে যাদের তুমি ভালোবাসো” এই হাদিসের ঘটনার কথাই তিনি বলতেন তার কাছে রাসূলের কাহিনী শুনতে আসা তরুণ যুবকদের | তারপর গভীর তৃপ্তির সাথে নিশ্চিন্ত নির্ভরতায় রাসূলুল্লাহর (সাঃ) হাদিসের ভিত্তিতে একথাও বলতেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ ), আবুবকর আর ওমরকে ভালোবাসি আর সেজন্য আশাকরি আল্লাহ আমাকে হাশরের দিন তাদের সাথে পুনরুত্থিত করবেন যদিও আমি জানি, আমি তাদের মতো নেককার নই |

বিষয়: বিবিধ

৩১৪৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380378
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০২
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


হাদীসের আলোকে সুন্দর লিখাটি পড়ে অপূর্ব এক অনুভূতি অন্তরে অনুভূত হল। অতি মনোযোগ সহকারে লিখাটি পড়লাম। বরাবরের ন্যায় প্রাঞ্জল ভাষার সমাহারে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে মাশাআল্লাহ।


আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলা আমাদের অন্তরের নেক ইচ্ছে ও সুন্দর মনোবাসনা পূর্ণ করে আমাদের সকলকেই প্রিয়তম নবীজি (সাঃ) এর সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্য নসীব করুণ। আমীন।


কেননা আমরা আমাদের প্রিয়তম নবীজি (সাঃ) কে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসি।


খুব বেশী বেশী করে দোয়া করি আপনার জন্য। এরূপ লিখনী পড়ার আকাঙ্ক্ষায়!
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৩৬
314815
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আমিন,আপনার দোয়ায়| হ্যা, আমরাও যেন সাহাবীদের মতো করে রাসূলুল্লাহকে(সাঃ) ভালোবাসতে পারি|


সেই ছোট বেলায় -মনে হয় ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি,তখন আমি পড়েছিলাম গোলাম মুস্তফার লেখা রাসূলুল্লাহর জীবনী "বিশ্বনবী" | সে সময় সেটাই ছিল বাংলায় লেখা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবনীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য|অন্যান্য ভাষা থেকে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বিখ্যাত জীবনীগুলোর এখনকার মতো এতো বাংলা অনুবাদ তখন ছিল কিনা আমি শিওর না|এছাড়াও সেই স্কুলে থাকতেই সাহাবীদের উপর লেখা কিছু বই পড়ার সুযোগ হয়েছিল| তাছাড়া আমাদের স্কুলের টেক্সটবই গুলোতেও তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আর সাহাবীদের জীবনের ঘটনা নিয়ে অনেক লেখা থাকতো|মুগ্ধ হয়ে আমরা সেসব পড়তাম |সেই থেকেই আমার ইচ্ছে যে আমি যদি কখনো লিখতে পারি তখন রাসূল(সাঃ)আর তার সাহাবীদের জীবনের ঘটনাগুলো নিয়ে লিখবো| তখন আমার নিজের পড়ার সুযোগ ছিল সীমিত|এখন নানা কারণেই সেই সুযোগ আল্লাহর ইচ্ছেয় বেশি|তাই চেষ্টা করছি ইসলাম,হাদিস আর কুরআন নিয়ে লিখতে| স্কুল,কলেজ আর ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে আমি গল্প কবিতা লিখতাম|ইউনিভার্সিটির বছরগুলোতে নিজে কিছু পেপারের/ম্যাগাজিনের সাথেও জড়িয়ে ছিলাম অনেকদিন ফিচার রাইটার হিসেবে| এখন সে ধরণের লেখা আর লিখতে ইচ্ছে করে না|ইসলাম নিয়েই লিখতে ভালো লাগে|আর আপনারাও আশ্চর্য সেই দুর্বল লেখাগুলোও সময় নিয়ে পড়েন দিনের পরে দিন!সেটাই অনেক উৎসাহ দেয়| আপনাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার তাই কোনো শেষ নেই!সেই উৎসাহ নিয়েই এই লেখাগুলো এখন লিখছি|অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য আর মন্তব্যের জন্যও |
380388
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:১০
হতভাগা লিখেছেন : মাশা আল্লাহ ! সুন্দর লিখেছেন ।

মুসলিম বাহিনীর কৌশলের শিথিলতা লক্ষ্য করে মক্কা বাহিনীর সেনাপতি খালেদ বিন ওয়ালিদ পেছন দিক থেকে আক্রমণ করেছেন মুসলিমদের |


০ খালিদ বিন ওয়ালিদ কি কাফের ছিলেন ?
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:০৬
314814
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : হতভাগা:উহুদের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত খালেদ বিন ওয়ালিদ ইসলাম গ্রহণ করেন নি | তিনি মক্কা বিজয়ের কিছু আগে ইসলাম গ্রহণ করেন | আমার ধারণা সেটা উহুদ যুদ্ধের সাত/আট বছর পরে|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার আর মন্তব্যের জন্য |
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৮
314926
সত্যলিখন লিখেছেন : আপনি ভাগ্যবান যে হতভাগা এখন সুন্দর মন্তব্য করে ।
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৪৫
314929
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সত্যলিখন : হুম !
380410
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অত্যন্ত শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৫৪
314821
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আবার (জাস্ট কিডিং!)!প্রিয় ব্লগার রিদওয়ান কবির সবুজ, অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়া আর মন্তব্যের জন্য|
380453
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০২:৫৫
আফরা লিখেছেন : হাদিসে এসেছে, 'তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই। ' (বুখারি : হা. ১৪)

সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে মহান আল্লাহকে। আর আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ নিজেই একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, "বলে দাও, 'তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু'। " (সুরা আলে ইমরান : ৩১)

এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পোষণের জন্য মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণকে শর্ত করা হয়েছে। সুতরাং রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা যথেষ্ট নয়। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সব বস্তুর চেয়ে অধিক মহব্বত।

নবীপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামের জীবন। রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম মহানবী (সা.)-এর প্রতি যে ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা কেবল বিস্ময়করই নয়, নজিরবিহীনও। তাঁর একটু সান্নিধ্য-পরশ পাওয়ার জন্য তাঁরা সর্বদা অধীর আগ্রহী ও ব্যাকুল হয়ে থাকতেন। তাঁর ইশারায় তাঁরা মুহূর্তেই প্রাণ উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন। আমাদের উচিত সাহাবায়ে কেরামের মতো মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা ।

আমি সাহাবিদের মত আল্লাহ ও তার রাসুল (সাHappyকে । কিন্ত হয় না মনে হয় আমার ঈমান খুব দূর্বল ।।

ভাইয়া আমার জন্য একটু দোয়া করবেন প্লীজ !

ভাইয়া লিখাটা যদিও বড় কিন্ত মনোযোগ ধরে রাখার আকর্ষণ আছে তাই শেষ হবার পর মনে হচ্ছিল যদি লিখাটা আর একটু বড় হলে আর একটু জানতে পারতাম ।

অনেক অনেক জাজাকাল্লাহ ভাইয়া অত্যন্ত সুন্দর শিক্ষনীয় একটা লিখা উপহার দেওয়ার জন্য ।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:২৬
314896
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আফরা : অনেক সুন্দর মন্তব্যের জন্য একটা অনেক বড় ধন্যবাদ আপনার অবশ্যই পাওনা হয়েছে | সেই ধন্যবাদটা নিন | অনেকগুলো সুন্দর হাদিস আর কোরানের কথা বলেছেন মন্তব্যে | হ্যা, সাহাবীরা যেমন মোর রাসূলুল্লাহকে ভালো বাস্তেন তেমন করে যেন আমরাও পারি, আমার নিজের জন্য আর আপনাদের জন্য সে দোয়া আমি করি | আপনার জন্য আলাদা করেই আমি দোয়া করেছি | আমি জানি আমি আল্লাহর প্রিয় কোনো বান্দা নই | কিন্তু আমি জানি আল্লাহর উপর বিশ্বাস আমার অসীম | আল্লাহর রহমত আমি মুহূর্তের জন্য জন্যও ভুলিনা | সেই রহমত আমি সবসময় অনুভবও করি | আপনার জন্যও আল্লাহর সেই রহমতটুকু যেন ঘিরে থাকে সবসময় সেই দোয়া করছি | ভালো থাকুন | আপুর সাথে স্কাইপে, মেসেঞ্জারে বা ভাইবারে কথা হয়েছে ? আশাকরি ভালো ভাবে পৌঁছেছেন দেশে আর আপনারা সবাই ভালো আছেন |
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ১১:২৭
314930
আফরা লিখেছেন : জী ভাইয়া আপুরা ভালভাবে পৌঁছেছে । আলহামদুল্লিলাহ ! আমরা সবাই ভাল আছি । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
380545
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৯
সত্যলিখন লিখেছেন :
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৪৩
314928
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ভেরি নাইস |হাদিসটা আমার জানা ছিল না|লেখাটা পড়ার সাথে সাথে খুবই সুন্দর একটা হাদিস শোনাবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ নিন |

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File