মোহাম্মদ আলী : আমেরিকায় মুসলিমদের মুখ ও প্রতিচ্ছবি
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ০৫ জুন, ২০১৬, ০৯:৫২:০১ সকাল
এশার নামাজ পরে বাসায় আসতে আসতে রাত সাড়ে এগারটার বেজে গেল | বাসায় এসে টিভির নিউজ চ্যানেলতা অন করে একটু বসেছি | গত দুই দিন অনেক ঘটনা বহুল কেটেছে আমেরিকায় ইলেকশন নিয়ে |শোবার আগে আজকের নিউজগুলো শেষ বারের মতো একটু দেখব ভেবেছি |এমএসএনবিসি (MSNBC)-র রাচেল মেডোর The Rachel Maddow Show তে সপ্তাহের নিউজ রিভিউ দেখছিলাম | হঠাই ব্রেকিং নিউজের এনাউন্সমেন্টটা দেখে একটা অমঙ্গলের আশংকাই প্রথমে মনে এলো | কেন জানি মনেই হলো মোহাম্মদ আলীর ব্যাপারেই হয়ত নিউজটা হবে | একদিন আগেই ক্রিটিকাল মেডিকেল কন্ডিশনের জন্য আলী হসপিটালে ভর্তি হয়েছে | তারপর থেকেই কোনো ভালো নিউজ আর আসছিল না আলীর স্বাস্থ্য নিয়ে | আমার আশংকা সত্যি করে এমএসএনবিসি খ্যাতিমান হোস্ট ব্রায়ান উইলিয়ামস মন খারাপ করা নিউজটা বললেন “ইট'স এ ভেরি স্যাড মোমেন্ট ফর অল অফ আস | বক্সিং লিজেন্ড মোহাম্মদ আলী হ্যাজ পাসড ..."| এমএসএনবিসি তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান The Rachel Maddow Show বন্ধ করে আলীর উপর নিউজ প্রচার করা শুরু করলো | যা আমি এতদিনের আমেরিকায় থাকা অবস্থায় কখনো দেখিনি | কনজারভেটিভ নিউজ চ্যানেল ফক্সও তাদের প্রোগ্রামের মধ্যেই আলীর উপর দীর্ঘ আলোচনা করলো | সিএনএনও তাই | রাত বারোটায় আলীর মৃত্যুর খবরটা প্রচার করার পর থেকেই মেইন নিউজ মিডিয়াগুলো আলীকে নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু করে মুটামুটি পরের দিন দুপুর পর্যন্ত আলীর উপর একনাগারে নিউজ প্রচার করলো | রাত বারোটায় হাফিংটন পোস্ট তাদের হোম পেজে আলী মারা গেছে সেই খবর বড় করে পোস্ট করে গারো কালো কালিতে "দা গ্রেটেস্ট " শিরোনাম দিয়ে | আমি নিয়মিত হাফিংটন পোস্ট পড়ি| সাধারণত এই সময় তারা হেডলাইন নিউজগুলো করে না সেটাই দেখে আসছি | রাত একটার দিকে সিএনএন অনলাইনের লাল রঙের বড় হেড লাইনটা "দা গ্রেটেস্ট ইস গন" পড়তে যেয়ে চোখ মুছলাম |কোনো দিন কাছে থেকে দেখিনি | শুধুই বইয়ে পড়েছি | শুধুই শুনেছি | যতটুকু দেখা তাতো শুধু টিভিতেই তবুও এমন একটা মানুষের জন্য কি যে মন খারাপ হলো |
মাইক টাইসন টুইট করেছে "ঈশ্বর এসেছেন তার চাম্পিয়ন হতে ..." (God came for his champion)| নাগরিক অধিকারের নেতা রেভারেন্ড জেসি জ্যাকসন মার্কিন কালোদের উন্নয়নে তার অবদান মনে রেখে টুইটে লিখেছেন চাম্পিয়নরা সবসময়ই অন্যদের কাধে সওয়ার হয় |কিন্তু যখন আলী চ্যাম্পিয়ন হলো তখন আমরাই তার কাধে সওয়ার হয়েছিলাম (When champions win, they ride on the people's shoulders.When Muhammad Ali won, WE rode on HIS shoulders) | সাত ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা অল টাইম মার্কিন বাস্কেটবল গ্রেট করিম আব্ব্দুল জব্বার আলী সম্পর্কে তার হৃদয়গ্রাহী এক লেখার শিরোনাম দিয়েছেন আলীর ছায়ায় দাড়িয়ে আমি নিজেকে যত লম্বা ভেবেছি সেভাবে আর কখনো নিজেকে ভাবতে পারিনি (I Never Felt Taller Than When Standing in Muhammad Ali's Shadow) | কে তার বিদায়ে ভারাক্রান্ত হয়ে টুইট করছে না আজ -প্রেসিডেন্ট ওবামা থেকে ব্রিটিশ প্রাইমিনিস্টার, খেলোয়ার থেকে অভিনেতা অভিনেত্রী, সাংবাদিক, চলচিত্র পরিচালক,বিজ্ঞানী কেও আর বাদ নেই | এমনকি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কারণে অকারণে ঘৃনা উগরে দেওয়া রিপাবলিকান পার্টির নমিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বভাব বিরুদ্ধ টুইটে আলী সম্পর্কে লিখেছেন A truly great champion and a wonderful guy. He will be missed by all! প্রায় চল্লিশ বছর আগে অবসর নেওয়া একজন ক্রীড়াবিদের জন্য নিউজ মিডিয়ার এই রকম কভারেজ আশ্চর্য রকম ব্যতিক্রমী | আমেরিকান সমাজে, আসলে পুরো বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের অন্দোলনে, আলীর অবদানটা যে কত গভীর আমেরিকান নিউজ মিডিয়ার এই প্রতিক্রিয়াটা না দেখলে বোঝা যেত না |
আমি যখন স্কুলে পড়ি ক্লাস ফোরে আমার বড় ভাইয়া তখন কিনেছিলেন আলীর উপর দুইটা বই -"মোহাম্মদ আলী এবং মুষ্টিযুদ্ধের দশ মহারথী" এবং "যুগশ্রেষ্ট মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী" | ক্লাস ফোরে পরা আমি হাতের সামনে যা পাই তাই পড়ি | সেই বইটার দুটোও তাই খুবই ছোটো বেলায় পড়া হয়ে গেল | তখন থেকেই মোহাম্মদ আলী আমাদের হিরো | গত বছরই আমার বড় ভাইয়া এসেছিলেন আমেরিকায় কাজে | আমাদের বাসায় এসে তিন দিন থাকবেন | তখনি কথা হলো ওকে নিয়ে আমরা যাব কেনটাকির লুইসভিলে মোহাম্মদ আলী সেন্টার দেখতে | ওহিও নদীর তীরে ডাউন টাউন লুইসভিলে খুবই চমত্কার আধুনিক নক্সায় বানানো মোহাম্মদ আলী সেন্টার দেখতে যেয়ে আমরা খুবই আলোড়িত হলাম | আলীর ফাইটের অনেক মেমরিবিলিয়া | যে সব ফাইটের কথা শুধুই বইয়ে পড়েছি, টিভিতে দেখেছি সেগুলোর মেমরিবিলিয়াগুলো চোখের সামনে দেখতে পেয়ে কেমন যে লাগলো !
একজন বক্সার হয়েও আলী কিভাবে আমেরিকান, আসলে পশ্চিমা সমাজকে কেমন করে এত প্রভাবিত করতে পারলেন ? সোশ্যাল মিডিয়া তৈরী হবার প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে যখন টিভিও বেশির ভাগ মানুষের বাসায় ঢুকেনি সেই সময় একজন কালো আফ্রিকান আমেরিকানের পরিচয় পেড়িয়ে, অলিম্পিকের গোল্ড মেডেল গলায় ঝুলিয়েও যার সাদাদের সাথে এক রেষ্টুরেন্টে খাবার অধিকার ছিল না, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অধিকার আদায়ের নেতা হিসেবে পরিচিত হতে যে কি পরিমান ট্যালেন্ট লাগে সেটা অনুভব করাও আজ অসম্ভব | সেই অসম্ভবটাই আলী করে দেখিয়েছেন | সবচেয়ে আশ্চর্য লুইসভিলের সাদাদের রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে ঘাড়ে ধাক্কা খাওয়া সেই কিশোর কালো ছেলেটার সারা পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের সবচেয়ে ভরসার মুখ হিসেবে পরিচিত হতে কিন্তু কোনো আন্দোলন করতে হয় নি | সে রাজনৈতিক নেতা ছিল না | তার কোনো সেনা বা কর্মী বাহিনী ছিল না | কিন্তু শুধু মাত্র নিজের ধর্ম বিশ্বাসটা আকড়ে ধরেই সেই ছেলেটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়ে হয়ে ওঠেন "দা গ্রেটেস্ট "-বক্সিং রিংয়ের ভিতরে ও বাইরেও |
কালো মানুষের উপর সাদাদের অসাম্য মূলক আচরণ, আমেরিকান সমাজে কালো সাদাদের বিভাজন আর সে বিষয়ে আমেরিকান চার্চের নীরবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই আলী ইসলামের গ্রহণ করেন | তার পিতৃ প্রদত্ত ক্যাসিয়াস ক্লে নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখেন মুহাম্মদ আলী | ইসলামের সাম্যময় নীতিমালার মধ্যেই আলী পেয়েছিলেন শত বছর ব্যাপী আমেরিকান সমাজের গেথে যাওয়া কালো সাদা বিভাজন ভেঙ্গে দেবার মূল মন্ত্র | ইসলামের উপর প্রগার আস্থা আর ভালবাসার জন্য আলীকে অনেক মূল্য দিতে হয় কিন্তু তবুও তাকে তার ধর্ম বিশ্বাস থেকে তাকে টলানো যায়নি | তার কাছের লোকেরা একসময় সরে গেছে, তার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময় অনেকে সাথে থাকেনি কিন্তু আল্লাহর প্রতি, ইসলামের প্রতি তার বিশ্বাস কখনো কমেনি | আলী, ইসলাম আর মুষ্টিযুদ্ধের দ্বন্দ আর ইসলামের পক্ষ্যে আলীর একক লড়াইয়ের কিছু ঘটনা বলছি |
১৯৬৪ সালের ২৫ সে ফেব্রুয়ারী আলীর তখনকার বক্সিং চ্যাম্পিয়ন সনি লিসটনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার পর নিজেকে মুসলিম হিসেবে ঘোষণা দেবার পর থেকেই সব সময় অবস্থা ছিল আলীর ভীষণ প্রতিকুল | আমেরিকান চার্চ বা কন্জারভেটিভ খ্রীষ্টান গোষ্ঠী যারা কখনো খেলা নিয়ে মাথা ঘামায় নি তারাও আলীর বিরুদ্ধে ভিশন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে | সেই ১৮৮০ থেকে মুষ্টিযুদ্ধের যে চ্যাম্পিয়নশিপ খ্রীষ্টান ছাড়া অন্যের মাথায় উঠেনি তাতে এসে ভাগ বসিয়েছে এক মুসলিম ! এটা তদের ধারণারও বাইরে | যা সহ্য করা ছিল অসহনীয় | যার জন্য আলীই হলো আধুনিক সময়ের প্রথম ক্রীড়াবিদ যার নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে খেলার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় আর ধর্মীয় প্রতিপক্ষের সাথেও যুদ্ধ করতে হয়েছিল | সেই কঠিন যুদ্ধে তার নিজের স্বজাতির অনেকেও তাকে ছেড়ে যায় ভিন্ন ধর্মের -ইসলামের অনুসারী বলে | আধুনিক খেলাধুলায় সেই প্রথম মনে হয় ধর্ম ঢুকে পরে |আলীর থেকে বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব আবার খ্রীষ্টানদের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে এক সময়ের জেল খাটা দাগী আসামী সনি লিসটন হয়ে উঠেন আমেরিকান খ্রীষ্টান সমাজের প্রধান ভরসা | সেই খ্রীষ্টান সমাজের মধ্যে আমেরিকান সাদা কালো সব রংয়ের মানুষী এসে যোগ দেয় | লিসটনের সাথে দ্বিতীয় ফাইটে প্রথম রাউন্ডে এক মিনিটের কম সময়ে আলীর বিখ্যাত "ফ্যান্টম পাঞ্চে" রিংয়ে লুটিয়ে পরা লিস্টনের পরাজয় যেন সেদিনের পুরো ক্রিস্টান সমাজের পরাজয় হয়েই দেখা দেয় |
লিস্টনের পরাজয়ের পর শত বছরের বক্সিং খেতাব মুসলিম মোহাম্মদ আলীর থেকে ফিরে পাওয়ার আশায় খ্রীষ্টান প্রধান আমেরিকান সমাজ যেই কালো বক্সারটির উপর তখন ভরসা করে সে হলো সনি লিস্টনের কাছে চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব হারানো ফ্লয়েড প্যাটারসন | এই সময় ইসলাম গ্রহণ নিয়ে আলীর উপর আমেরিকান সমাজের মনোভাব বোঝা যাবে হলিউডের বিখ্যাত নায়ক গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার ফ্লয়েড প্যাটারসনের পক্ষ্যে এসে দাড়াবার ঘটনায় | আমেরিকান সমাজ আলীর বিষয়ে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে যে ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার মত হলিউড নায়কও লিবারেল ভিউ ছেড়ে এসে যোগদেন খ্রীষ্টান ডামাগগ্দের সাথে | নও মুসলিম বক্সিং চ্যাম্পিয়ন আলীকে আমেরিকান সমাজ দেখতে শুরু করে অন্যদেশী হিসেবে | আলীর সাথে ফাইটের আগে প্যাটারসন বলেন যে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একজন মুসলিমের ইমেজ বক্সিং এবং জাতির জন্য লজ্জ্বা জনক |প্যাটারসন ঘোষণা দেন আমি বক্সিংয়ের চ্যাম্পীয়ন্শিপকে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনবো (“The image of a Black Muslim as the world heavyweight champion disgraces the sport and the nation…Patterson says “he’s gonna bring the title back to America” ) | প্যাটারসন এমনকি আলীকে তার নতুন নামে না ডেকে পুরনো ক্যাসিয়াস ক্লে হিসেবেই অভিহিত করতে থাকেন | আলী এর উত্তরে কঠিন ভাষায় বলেন আমাকে আমার মুসলিম নামে না ডাকার জন্য আমি তাকে রিংয়ে কঠিন শাস্তি দেব | প্যাটার্সনকে বারো রাউন্ডে টেকনিকাল নক আউটে হারাবার আগে আলী প্রতিটা রাউন্ডেই প্রতিটা কঠিন পাঞ্চের পরই জিজ্ঞেস করতে থাকেন "What's my name? What's my name?"|আলীর এই আচরনকে সেসময়ের অনেক ক্রীড়া সাংবাদিকই সমালোচনা করেন | কিন্তু কেউ এই ন্যায্য প্রশ্নটি কখনই তোলেননি যে ধর্ম পরিবর্তন করে আলী যখন সবাইকেই তাকে তার নতুন নামে ডাকার জন্য অনুরোধ করেন তখন প্যাটারসনের "ক্যাসিয়াস ক্লে" হিসেবে তাঁকে ডাকাটা কতটা শোভনীয় ছিল |
প্যাটারসনকে হারাবার পর আলী একের পর এক সব প্রতিদ্বন্দ্বিকে, সব প্রধান চ্যালেন্জারকেই রিংয়ে হারান | সেই সাথে আলীর অপ্রতিরোধ্য জয়কে রিংয়ের বাইরে হারাবার চক্রান্তও হতে থাকে | ১৯৬৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হবার মাত্র চার বছর পর আলী যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান সেনাবাহিনীর রিজার্ভ হিসেবে যেতে অস্বীকার করেন তখন আলীকে রিংয়ের বাইরে হারাবার অব্যর্থ সুযোগটি সে সময়ের এন্টি মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি পেয়ে যায় | চার প্যারার ছোটো যে বিবৃতি দিয়ে আলী ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেন তার তিন প্যারায় তিনি ইসলামের নীতি, মূল্যবোধ, আর আল্লাহর আইন কানুনের কথা উল্লেখ করে বলেন "আমি জানিনা কেন তারা আমাকে দশ হাজার মাইল দুরে ভিয়েতনামিজদের উপর বম্ব ফেলার জন্য পাঠাতে চায় ...| যে নিরীহ মানুষগুলো নিজেদের ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা, সাম্যের দাবিতে লড়ছে তাদের পরাজিত করার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহত হয়ে আমি আমার ধর্ম, জনগণ, কিম্বা নিজের গায়ে অসন্মানের কালিমা লাগাতে চাইনা... | আমার নিজের দেশের বা আল্লাহর আইন মানতে হবে | আমার বিশ্বাসের পক্ষে দাড়াবার জন্য আমার কোনো কিছু হারাবার নেই | তাই আমি জেলে যেতে প্রস্তুত "|
(Why should they ask me to put on a uniform and go ten thousand miles from home and drop bombs and bullets on brown people in Vietnam…I will not disgrace my religion, my people or myself by becoming a tool to enslave those who are fighting for their own justice, freedom and equality… But I either have to obey the laws of the land or the laws of Allah. I have nothing to lose by standing up for my beliefs. So I’ll go to jail. We’ve been in jail for four hundred years.”)
ভিয়েতনাম যুদ্ধে না অস্বীকার করার জন্য আলীর চরম মুল্য দিতে হয় | টেক্সাসের হিউস্টনের একটি কোর্ট তাকে দোষী করে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয় | কেড়ে নেওয়া হয় তার বক্সিং হেভীওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেল |আলী তার বক্সিং ক্যারিয়ারের প্রাইম টাইমের তিন বছর বক্সিং করার সুযোগ পান নি | বক্সিং চ্যাম্পিয়নের বিপুল খ্যাতি, বক্সিং থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করার যে সুযোগ ছিল সেটা তার ধর্ম বিশ্বাসের জন্য আলী অনায়াসে ত্যাগ করেন |সিভিল রাইট মুভমেন্ট একটিভিস্ট প্রয়াত স্টকলি কারমাইকেল ২০০৮ সালে প্রকাশিত A People’s History Of Sports In The United States বইয়ে আলীর ভিয়েতনাম যুদ্ধে না যাবার সিদ্ধান্ত এবং তার জন্য আলীকে যে মুল্য দিতে হয় সেটা নিয়ে চমত্কার একটি মন্তব্য করেছেন|তিনি বলেন : যত মানুষ ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলীর ঝুকির মাত্রাই ছিল সবচেয়ে বেশি | অনেকই যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করে | তাদের কেউ কেউ জেলেও যায় | কিন্তু তাদের কারোরই যুদ্ধে না যাবার সিদ্ধান্তের ঝুকি এত বড় ছিল না যা আলীর বেলায় ছিল | কিন্ত সত্যিকার অর্থে তার আসল শ্রেষ্ঠত্ব এটাই যে তার বিরুদ্ধে এত অন্যায় অবিচার করা সত্ত্বেও সেগুলো তাকে আরো মহত্তর, আরো মানবিক করে তুলেছিল (“Of all the people who opposed the war in Vietnam, I think that Muhammad Ali risked the most. Lots of people refused to go. Some went to jail. But no one risk as much from their decision not to go to war in Vietnam as much as Muhammad Ali. And his real greatness can be seen in the fact that, despite all that was done to him, he became even greater and more humane.”)| আমেরিকার তত্কালীন প্রশাসন ও তার সমর্থকরা (যাদের একটা বিরাট অংশ ছিল রক্ষনশীল এবং ইসলাম বিরোধী ) অবস্থাটা এতই প্রতিকুল করে তুলেছিল যে আলীর সমর্থনে কথা বলার অভিযোগে বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক জেরি আইজেনবার্গকে (Jerry Izenberg) বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয় |এছাড়া শত শত হেট মেল পাঠানো হয় তার ঠিকানায় | এসময় আলী আফ্রিকান আমেরিকান গোষ্ঠির থেকেও তেমন সমর্থন পাননি | দুইশত বছর ধরে আমেরিকার সংবিধানে প্রদত্ত ব্যক্তির ধর্মীয় ও কথা বলার মৌলিক স্বাধীনতার অধিকারকে অস্বীকার করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করায় রেড স্মিথ ( Red Smith) এবং জিম মারের (Jim Murray) মত বিখ্যাত ক্রীড়া লেখকও আলীকে "পাঙ্ক" (Punk) এবং “সাদা মানুষদের বোঝা” বলে উপহাস করেন |
আজকের বৃটেনের বিখ্যাত ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে একটি খবর ছাপা হয়েছে মোহাম্মদ আলীর উপর | ২০০২ সালে হলিউড বিখ্যাত হলিউড ওয়াক অফ ফেমে তার নামে সন্মান সূচক একটি স্টার (STAR) খোদাই করার ঘোষণা দেয় | কিন্তু তার স্টারটি রাস্তায় না খোদাই করে পাশের দেওয়ালে খোদাই করা হয় | আলীই হচ্ছেন বিশ্বের একমাত্র হলিউড ওয়াক অফ ফেম পারসন যার স্টারটি সেই পথে না স্থাপন না করে পাশের দেওয়ালে খোদাই করা হয়েছে | আলী এসম্পর্কে বলেন আমার নামের মধ্যে প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-এর নাম আছে | আমি আমার খ্যাতির জন্য মানুষকে তাঁর নামের উপর দিয়ে হাটা চলা করার সুযোগ দিতে পারি না |
আমরা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক | আমাদের রাজনীতিকরা তবুও ক্ষমতার লোভে সীমান্তের বাইরে ইসলাম বিক্রি করেও ক্ষমতা আকড়ে থাকতে চান | ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক নীতিমালা তৈরী করে কাউকে না কাউকে খুশি করার চেষ্টা করেন অহরহই | পশ্চিমের বড় শক্তিগুলোকে পাশে পেতে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষাদ্গার করতেও আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের কোনো অসুবিধা হয় না | কিন্তু একজন নও মুসলিম হয়েও ইসলামের মূল নীতিগুলো ঠিক ভাবেই আত্মস্থ করেন মোহাম্মদ আলী | নিজের চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট হারাবার আশংকা, পাঁচ বছরের কারাদন্ডের ভয়ও তাকে নিজের ধর্ম বিশ্বাসের পক্ষে দাড়াবার পথে অন্তরায় হতে পারে নি |এ'জন্যই আলী আধুনিক পশ্চিমের সেরা মুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন | ইসলামের বিরুদ্ধে উগ্র সন্ত্রাসবাদীতার যে অভিযোগ পশ্চিমের রক্ষনশীল গোষ্ঠীটি অহরহই করছে তার বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে এখনো মুসলিমদের সেরা বিজ্ঞাপন মোহাম্মদ আলীর জীবন | একটা ধর্মকে বৈরী ভূমিতে তিনি একক ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি তার প্রগার ভালবাসা দিয়েই | পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (PBS) যা পিবিএস নামেই বিখ্যাত তাদের অনলাইন পোর্টালে "মুসলিম ইন আমেরিকা" সেকশনে সঠিক ভাবেই মন্তব্য করেছে “Over the years, the nation gained public prominence due to famous members like Malcolm X and Muhammad Ali.” প্রজাপতির মতো নেঁচে নেঁচে রিংয়ে কেউ আর উড়বে না, মৌমাছির মতো আর হুল ফোটাবেনা রিংয়ের ভেতরে বা বাইরে | তবুও অনেকের কাছেই আলী সব সময় হয়ে থাকবেন "দ্য গ্রেটেস্ট" (মুসলিম হয়ে যাবার পর এই টাইটেল শুনে আলী অবশ্য বলতেন "নট মি, আল্লাহ ইজ দ্য গ্রেটেস্ট") | গুডবাই চ্যাম্প !
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৬ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যাপারটা একটু কৌতুহলের আমার জন্য একারণে যে , উনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে না গিয়ে আমেরিকানদের চক্ষুশূল হয়েছেন , তার উপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ব্যাপারটা আরও জটিল করে তুলেছেন । তারও উপর উনি ছিলেন একজন নিগ্রো ।
তবুও তার কীর্তির জন্য লোকজন তাকে সমীহ করতো । তার ইসলাম গ্রহণ নিয়ে হয়ত সেরকম জটিলতা পাকিয়ে রাখে নি তার জীবদ্দশায় ।
এখন এটা দেখার পালা তার মৃত্যুর পর তাকে তারা কিভাবে ট্রিট করে ? তার আগের ধর্ম খৃষ্টানরীতিতে ( নিউ টেস্টামেন্ট) শেষকৃত্য করে নাকি তার প্রাণের ধর্ম ইসলামীরীতিতে দাফন করে ।
ইসলামী রীতিতে দাফনের চেয়ে খৃষ্টানদের রীতিতে দাফন করা বেশী ফ্যাশনেবল কি না ( কোট-টাই পরিয়ে কবরস্থ করা হয় , সবাই কোট-টাই পড়া থাকে । মহিলারা কালস্কার্ট ও হ্যাট পড়ে সেখানে গিয়ে শোক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়), আর ফ্যাশনেবল আমেরিকানরা কি চাইবে এরকম একটা ফ্যাশনকে বর্জন করতে ?
অনেক কিছু জানলাম। শুকরিয়া।
প্রজাপতির মতো আর কেউ উড়বে না, মৌমাছির মতো কেউ হুল ফোটাবেনা রিংয়েরভেতরে বা বাইরে | তবুও অনেকের কাছেই আলী সবসময় হয়ে থাকবে "দ্য গ্রেটেস্ট" হয়ে | মুসলিম হয়ে যাবার পর এই টাইটেল শুনে আলী অবশ্য বলত "নট মি আল্লাহ ইজ দ্য গ্রেটেস্ট" | গুডবাই চ্যাম্প ! খুবই ভালো লাগলো । শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন