পৃথিবীর ভূতাত্বিক গঠন ও জনবসতি, আধুনিক বিজ্ঞান এবং একটা বিস্ময়কর হাদিস

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২২ মে, ২০১৬, ০৩:৪২:৩৬ রাত

আমার আগের লেখাটাতেই ইসলামের প্রসার সম্পর্কে রাসুল্লুলাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা হাদিসের উল্লেখ করেছিলাম | এই হাদিসটা আমি অনেক দিন ধরেই জানি | গত বেশ কয়েক বছর আমেরিকায় নিজে থাকার কারণে টুইন টাওয়ার ধ্বংশ, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ ঘোষণা, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা আর ইউরোপীয় দেশগুলির হামলা, এর কারণ হিসেবে উঠে আসা নানান রাজনৈতিক ঝামেলা আর তার ফলাফল হিসেবে ইসলামের প্রবল বিরোধিতার একটা প্ল্যাটফর্ম খুব ভালো ভাবেই পশ্চিমে তৈরী হওয়া কাছে থেকেই দেখতে পাচ্ছি | আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই এতসব ঘটনার পরও পশ্চিমে ইসলামের প্রসার কিন্তু থামছে না | আমেরিকায় চার্চের পর চার্চ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর সেই বন্ধ হওয়া চার্চগুলো কিনা হচ্ছে পশ্চিমের সবচে অপছন্দের ধর্ম বিশ্বাসীদের প্রতিদিনের প্রার্থনার মসজিদে ! প্যারিস আর বেলজিয়াম হামলার অল্প পরেই লন্ডনের মেয়র হিসেবে সাদিক খানের নির্বাচিত হবার মত আশ্চর্য ঘটনাও এখন ঘটছে | এই সব ঘটনাই আমি এই হাদিসের সাথে সম্পর্কিত করে এতদিন দেখছি | আমার লেখাটার জন্য এই হাদিসটা আর প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আরো কিছু হাদিসের রেফারেন্স খুজছি তখন হঠাতই কতগুলো চিন্তা মাথায় ঢুকলো এই হাদিস নিয়ে যে বিষয়গুলো এই হাদিস সম্পর্কে আগে কখনো ভাবিনি বা হাদিসটাকে এই দৃষ্টিকোন থেকে কখনো চিন্তাও করিনি |

মুসলিম হিসেবে সহীহ হাদিসগুলো আমরা আমরা আমল করার চেষ্টা করি | এই হাদিসগুলো দ্বীনের ব্যাপার আমাদের প্রতি নির্দেশনা | হাদিসের কনটেন্ট সম্পর্কে ভাবলে অবাক হতে হয় | পনেরশ বছর আগে বলা হাদিসে কি নেই ! এই হাদিসগুলোর কোনটিতে দ্বীন পালন, সামাজিক, রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে থেকে শুরু করে ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কাজগুলো কেমন করে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পালন করতে হবে সে সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে | অনেক ক্ষেত্রেই এই হাদিসগুলোকে দ্বীন পালনের শুধুই নির্দেশনা, অনেকক্ষেত্রেই হাদিস কুরআনের কোনো বক্তব্যের ব্যাখ্যা | এর বাইরে কিছু হাদিস আছে যেগুলোতে নানা রকম তথ্যও আছে | এ'রকম কিছু হাদিসে বিজ্ঞান, পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিষয় সম্পর্কিত তথ্যও আছে | ইসলামিক স্কলাররা হাদিসের গ্রন্থগুলোতে সংকলন করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজার হাজার হাদিস যাচাই বাছাই করেছে এবং এগুলোকে সহীহ বা জয়ীফ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন | এমন অনেক হাদিস আছে মূল ভাবের দিকথেকে যেগুলো খুবই মহত ও প্রায় শত শত বছর ধরে হাদিস হিসেবে প্রচলিত সেরকম বহু হাদিসও ইসলামিক স্কলাররা বাতিল করেছেন প্রয়োজনীয় সনদ না থাকার কারণে বা এমনকি মাত্র একজন রাবীর ক্ষেত্রে উদভূত সমস্যার কারণে | তাই সহীহ হাদিসগুলো সম্পর্কে আজ নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় এগুলোর উৎস রাসুল্লুলাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম | আমাকে অবাক বিস্ময়ে অভিভূত করা এরকমই সহীহ একটি হাদিস নিয়েই আমার আজকের এই লেখা |

আবূ রাবী আল আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে।…” (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৯৪, অধ্যায়ঃ ৫৪/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী) (এটা একটা বড় হাদিসের অংশ | আমি প্রথম অংশটুকু শুধু উল্লেখ করলাম আমার লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক বলে )|

এই আপাত সাধারণ হাদিসটা সম্পর্কে আমি যখন ভাবি তখনই আমার বিস্ময়ের মাত্রাটা সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে | আমরা বিশ্বাস করি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সব কাজে ও কথায়ই আল্লাহর নির্দেশনা প্রাপ্ত তাই তাঁর কথাতে বা বাণীতে ভুল নেই | পনেরশ' বছর আগে বলা এই হাদিসটাতে সাধারণ ভবিষ্যতবাণীর সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক গঠন আর মানুষের জনবসতি সম্পর্কে এমন অসাধারণ কিছু তথ্য লুকিয়ে আছে যে ভাবনাতে এলেই বিষয়টা প্রায় অসম্ভব মনে হয় |

একটু সুস্থির ভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায় এই হাদিসে পৃথিবী ও এর জনবসতি সম্পর্কে যে তথ্য লুকিয়ে আছে যা হাজার বছর আগে কোনো মানুষের পক্ষেই বলা সম্ভব নয় আল্লাহর প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া | আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এমন নির্ভুলভাবে হাদিসের কথাগুলো বলা কোনো মানুষের পক্ষে বলতে পারা অসম্ভবই নয় অবাস্তব কল্পনাও | এই হাদিসে ভবিষ্যত সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য লুকিয়ে আছে যা হাজার বছর পরের পৃথিবীতে সত্যি হবে বা হাজার বছর পরের পৃথিবীর মানুষ জানবে | এখানেই রাসুলুল্লাহর বাণী যে আল্লাহর পক্ষ্যে থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে বলা সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে না | ব্যাপারটা আরো ক্লিয়ার করার জন্য বলি যে হাদিস্গুলোতে নানান ধরনের তথ্য আছে আর যে ভবিষ্যত আসবে শত বা হাজার বছর পরে সে সম্পর্কে আল্লাহর সহায়তা না থাকলে ভুল তথ্য থাকার সম্ভাবনা স্বাভাবিক ভাবেই থাকত, সত্যি বলতে কি তাতে ভুল থাকতই | এই ভুলের একটা উধাহরণ দেই এখনকার ব্যবহত বাইবেল থেকে |

মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহর প্রেরিত সব কিতাবের নির্ভুলতার বিষয়ে | কিন্তু আমরা এটাও বিশ্বাস করি আহলে কিতাবের ইসলাম পূর্ব জাতিগুলোর উপর প্রেরিত আল্লাহর কিতাবগুলো নানান কারণে আর অবিকৃত নেই | নানা সংযোজন আর বিয়োজনের কারণে এগুলোতে অনেক ভুল ভ্রান্তি ঢুকে গেছে যা আল্লাহর প্রেরিত কোনো কিতাবে থাকতে পারে না | যেমন হিব্রূ বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত একটি বই হলো জব (JOB) এখানে পৃথিবী সম্পর্কে বলা হয়েছে “For he looketh to the ends of the earth, and seeth under the whole heaven” (Job, 28:24) | বাংলা অনুবাদ করলে বলতে হবে, তিনি (প্রভু বা যিশু স্বর্গ বা কোনো সুউচ্চ কোনো স্থান থেকে ) পৃথিবীর শেষ প্রান্তে তাকালেন এবং স্বর্গের নিম্নস্থিত (পৃথিবীর) সবকিছুই দেখলেন | জবের (২৮:২৪) এই বাক্যটাতে খুবই বড় একটি ভুল আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত তথ্যের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক | এখানে বলা হচ্ছে যে প্রভু বা যিশু স্বর্গের ('হেভেন' বলতে পৃথিবীর উপরস্থিত মহাশুন্যের যে কোনো স্থান বলেও কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে ) থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালেন এবং পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত সব (এক দৃষ্টিতেই ) দেখলেন | এই কথা সত্যি হলে পৃথিবীর আকার হতে হবে ফ্লাট | পৃথিবী গোলাকার | তাই উপর থেকে কখনই পুরো পৃথিবী একদৃষ্টিতে দেখ্যা যাবে না | বড়জোর অর্ধেক দেখা যেতে পারে, পুরো পৃথিবী দেখতে পারা অসম্ভব | মানুষের সংযোজন বিয়োজনের কারণেই বাইবেলে এই সব মানবীয় ভুলগুলো এখনও আছে | কারণ হাজার বছর আগে যারা এই সংযোজন বা বিয়োজন করে যিশুকে আরো মহিমান্বিত করতে চেয়েছেন তারা যেহেতু কখনো মহাশুন্যে যাননি তাই তাদের ধারণাই ছিলনা যে পৃথিবী গোলাকৃতি হতে পারে এবং মহাশূন্যের কোনো এক জায়গা থেকে পুরো পৃথিবী একসাথে দেখতে পাওয়া অসম্ভব | তাই তারা যিশু কে মহিমান্বিত করতে যেয়ে তার প্রসঙ্গে এরকম একটা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক তথ্যগত ভুল বিষয় যোগ করতে পেরেছেন |

এগুলোর বিপরীতে কুরানে কোনো ভুল নেই এমন কি যে সব হাদিসে প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোও নির্ভুল | যেমন একটু আগেই উল্লেখ করা সাওবান (রাঃ) থেকে আবূ রাবী আল আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) –এর হাদিসটাকেই উধাহরণ হিসেবে ধরা যায় | এই হাদিসটা প্যারাফ্রেজিং করে বললে বলতে হয় যে প্রায় পনেরশ' বছর আগেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে এমন একটা সময় আসবে যখন ইসলাম পৃথিবীর পূর্ব আর পশ্চিমের সব জায়গায়ই পৌছে যাবে | এই হাদিসে পৃথিবীর প্রাকৃতিক গঠন এবং পৃথিবীর জনবসতি (যেখানে ধর্ম প্রচার করা যায়) সম্পর্কে দুটি বিস্ময়কর তথ্য লুকিয়ে আছে | যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লামের প্রায় হাজার বছর পর মানুষ জানতে পেরেছে | এখানে ইসলামের প্রসারের বক্তব্যে পূর্ব পশ্চিমের কথা বলাটা বা উল্লেখ করাটা আর উত্তর - দক্ষিন কথা না বলাটা বর্তমানের আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দিক থেকে বিস্ময়কর |আসুন আমরা দেখি কেন এই বক্তব্য বিস্ময়কর এবং কেন আল্লাহ প্রদত্ত ঐশী জ্ঞান ছাড়া এমন কথা বলা অসম্ভব |

প্রথমত: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লামের সময় পৃথিবীর পশ্চিমের যাকে এখন আমরা ওয়েস্টার্ন হেমস্ফিয়ার বলি একটা বড় অংশ আবিস্কারই হয় নি | তখনকার মানুষের কাছে পশ্চিমের আজকের আমেরিকা ছিল অনাবিস্কৃত এবং অপরিচিত | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী ওয়ালাইহী ওয়াসাল্লামের সময়ের প্রায় একহাজার বছর পর আমেরিকা আবিস্কার করে আধুনিক মানুষ | দক্ষিন আমেরিকা সম্পর্কেও সেসময়ের আরবদের না জানারই কথা | বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় আরব উপদ্বীপের থেকে চিন্তা করলে উত্তর দক্ষিনের কথা বলাটাই ছিল স্বাভাবিক | কারণ তখন আরবের লোকেরা আফ্রিকা সম্পর্কে অবগত ছিল | নবুয়তের প্রথম পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ তাঁর সাহাবীদের কোরেশদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেতে আফ্রিকার আবিসিনিয়া (বর্তমানের ইথিওপিয়া) পাঠিয়ে ছিলেন | তাছাড়া "জু" রা দু'হাজার বছরেরও বেশি আগে আফ্রিকায় গিয়েছিল বলে জানা যায় | আফ্রিকায় সবচেয়ে প্রাচীন জু সিনেগগের যে প্রত্নতাত্বিক ধ্বংসাবশেষের প্রমান পাওয়া যায় তা দুহাজার বছরের বেশি পুরনো | "জু"রা যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম সাময়িক আরবেও ছিল তাই তাদের থেকেও আরবরা আফ্রিকা সম্পর্কে অবহিত ছিল | আরব উপদ্বীপ থেকে পশ্চিমে একদার ফ্যারাওদের স্মৃতি ঘেরা ইজিপ্ট আর ধু ধু বালির সাহারা মরুভূমির সীমানা পেরিয়ে মাত্র কয়েকশ মাইল পর আটলান্টিকের তীরে মৌরিতানিয়ার বালুকা বেলায় আফ্রিকার ভুখন্ডের থেমে যাওয়া সীমানা, বা নাজ্জাসির আবিসিনিয়া(বর্তমান ইথিওপিয়া ) পেড়িয়ে আরো দক্ষিনে আফ্রিকার বিস্তীর্ণ সীমানা সম্পর্কে আরবদের অজানা ছিল না | লোহিত সাগরের পশ্চিমে আরব উপদ্বীপ থেকে মৌরিতানিয়ার আটলান্টিকের তীর ছুঁয়ে আর আরো অনেক দক্ষিন পূর্বে ভারত মহাসাগরের তীর ঘেষা সেই আফ্রিকা আজও একই ভাবে দাড়িয়ে |

আরবেরা উত্তরের কায়সারের (সিজার) রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কেও অবহিত ছিল | সুরা রুমে আল্লাহ রোমান সাম্রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছেন | (ইসলাম গ্রহনের পূর্বে) আবু সুফিয়ানের রাসুল্লুলাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত সংক্রান্ত বিষয়ে রোমান সিজার হিরাক্লিযাসের সাথে কথোপকথন ইতিহাসে উল্লেখিত আছে |রোমানদের শৌর্য বীর্য আর বিক্রম আর পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে তাদের সংঘর্ষের কারণে আরব উপদ্বীপের দূর উত্তরের রোম কেন্দ্রিক এই সাম্রাজ্যের ব্যাপক ক্ষমতা আর ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তাদের সুবিশাল রাজ্য সম্পর্কে আরবদের সুস্পষ্ট ধারণা ছিল | তাছাড়া তখনকার" শ্যাম" অঞ্চলের সাথে ঘনিষ্ঠ ব্যবসা বানিজ্যের কারণে আরবরা উত্তরের বিসতৃত রোমান সাম্রাজ্যের কথা জানত |রাসুল্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও নবুয়ত প্রাপ্তির আগে শ্যামে ব্যবসার জন্য গিয়েছিলেন | তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লামের হাদিসে ইসলাম বক্তব্যে তাই উত্তর দক্ষিনে প্রসারের কথা বলাটাই বেশি সঙ্গত ছিল |

দ্বিতীয়ত: এই হাদিসের অন্য বিস্ময়কর বিষয়টি হলো উত্তর এবং দক্ষিনের সর্বত্রই ইসলাম বিস্তৃত হবার সম্ভাবনা না বলা সম্পর্কিত | এই হাদিসে ইসলামের প্রসার বিষয়ে পূর্ব পশ্চিমের সাথে যদি উত্তর দক্ষিনের কথাও বলা হত তবে বাইবেলে বলা ভুলটির মতই এই হাদিসেও বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক একটি ভুল জায়গা পেত | আমরা জানি যে পৃথিবীর পূর্ব আর পশ্চিমে বিসতৃত একটি কাল্পনিক রেখা চিন্তা করা হয়েছে যা ইকুয়েটর বা বাংলায় নিরক্ষ রেখা নামে পরিচিত | এছাড়া পৃথিবীর উত্তর দক্ষিনে বিসতৃত আরেকটি কাল্পনিক রেখা চিন্তা করা হয়েছে যা মেরিডিয়ান বা কঠিন বাংলায় দ্রাঘিমা রেখা নামে পরিচিত | নিরক্ষ রেখা পৃথিবীকে উত্তর দক্ষিনে আর মেরিডিয়ান পৃথিবীকে পূর্ব পশ্চিমে দুই ভাগে ভাগ করেছে | পৃথিবীর ভু ভাগগুলোর প্রাকৃতিক অবস্থানগুলো সুস্পষ্ট ভাবে পিন পয়েন্ট করার জন্য এই রেখা দুটির প্রয়োজনীয়তা অনেক | আমরা পৃথিবীর ম্যাপটা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে হাদিসের দ্বিতীয় বিস্ময়কর তথ্যতা আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে আসবে সহজেই |

নিচের ম্যাপের দিকে আমরা যদি মেরিডিয়ান বা দ্রাঘিমা রেখার উত্তর আর দক্ষিনে তাকাই তবে আমরা দেখব নর্থ আর সাউথ পোল জুড়ে রয়েছে বরফে ঢাকা বিশাল এন্টার্টিকা মহাদেশ | চির তুষার ঢাকা এন্টার্টিকা মহাদেশের বিসতৃত ভুখন্ডে মানুষের বসবাস এখনো খুবই সীমিত | আর রাসুলুল্লাহর সময়ে এই সংখ্যা ছিল আরো কম কারণ সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা এখনকার তুলনায় তখন ছিল আরো অনেক অনেক কম | নর্থ আর সাউথ পোলের সর্বত্র ইসলাম প্রসারের সুযোগ পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় পনেরশ বছর আগেও সাধারণ ভাবেই ছিল না এখনো নেই | উত্তর আর দক্ষিনে মানব বসতিগুলোতে ইসলাম যতই ছড়িয়ে যাক তা নর্থ আর সাউথ পোলের সব জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারবে না খুবই কম সংখ্যক মানুষের জন বসতির কারণেই | এই সত্যিটাই হাজার বছর আগের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদিসটাতে বলেছেন |

কিন্তু অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী সাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কালে মানুষে অগোচরে থাকা পশ্চিমের বড় একটা অংশ আজকের নর্থ আমেরিকা -আমেরিকা, কানাডা আর মেক্সিকো, পৃথিবীর অন্যতম জনবসতি | বিশ্ব বানিজ্য, রাজনীতি, আর সামরিক শক্তির অন্যতম কেন্দ্র আজকের এই পশ্চিমের এই অংশ | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর ইসলাম ছড়িয়ে গেছে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ সহ পুরো পৃথিবীতেই | এখনো এই সব অঞ্চলে ইসলামের প্রসার চলছে হাজার বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে | কিন্তু সেই সব সম্ভাবনা তখনও ছিল কারণ আরবদের সাথে এই সব অঞ্চলের বানিজ্যিক যোগাযোগ তখন থেকেই ছিল | কিন্তু আরবদের পরিচিত সেই সব অঞ্চলের কথা না বলে মানুষের তত্কালীন জ্ঞানের বাইরে অবস্থানকারী পশ্চিমের ভুখন্ড যা সম্পর্কে তাঁর হাজার বছর পর মানুষ প্রথম ধারণা পাবে সেই রকম অঞ্চলে ইসলাম ছড়িয়ে যাবে এমন নিখুত ভবিষ্যত বাণী আল্লাহ প্রদত্ত ঐশী জ্ঞান ছাড়া অসম্ভব | হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের এরকম ঐশী জ্ঞানের প্রমান আরো অনেক ছড়িয়ে আছে | পরে অন্য কোনো লেখায় না হয় সেগুলো নিয়ে আবার লিখব |





বিষয়: বিবিধ

১৯১২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369782
২২ মে ২০১৬ সকাল ০৫:০৭
পললব লিখেছেন : ভালো লাগল। ধন্যবাদ
২২ মে ২০১৬ সকাল ০৫:৩৮
306860
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : পল্লব : আপনিও লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিন |
369786
২২ মে ২০১৬ সকাল ০৭:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : দারুন সত্যটাই বিশ্লেষন করেছেন। ধন্যবাদ।
২২ মে ২০১৬ সকাল ০৯:৫৬
306868
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : শেখের পোলা:ব্লগে ঢুকার আর মন্তব্য করার সমস্যাগুলো এখন আর আপনার হচ্ছে না বুঝতে পেরে ভলো লাগছে | অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য |
369832
২২ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় পরিশ্রমি পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২২ মে ২০১৬ রাত ১০:৫৮
306913
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ:অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পরে মন্তব্যের জন্য|
369842
২২ মে ২০১৬ রাত ১০:২৭
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : ভালো লাগল,, ধন্যবাদ।
২২ মে ২০১৬ রাত ১১:০৪
306914
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ক্রুসেড বিজেতা:মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ| লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে লেখাটার উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে |

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File