আমেরিকার শহরে আমাদের ইসলামিক স্কুল

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ১৬ মে, ২০১৬, ০৬:২২:৫৯ সকাল

গত কিছু দিন অনেক ঘটনা ঘটল | নানা কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে ইসলাম আবার হয়ে উঠলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু | এর মধ্যে লন্ডনের মেয়র হিসেবে সাদিক খানের নির্বাচিত হওয়া খুবই উল্লেখযোগ্য খবর হিসেবে মার্কিন নিউজ মিডিয়ায় জায়গা করে নিয়েছে | বিশেষ করে আমেরিকার রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেনশিয়াল নমিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পক্ষ্যে মত প্রকাশ করায় তা বৃটেনের রাজধানী শহরের মেয়রের ব্যাপারে কতটুকু প্রযোজ্য হবে সেটা নিয়েই আলোচনা হয় বেশি | সাদিক খানের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুটা রক্ষনাত্মক ভঙ্গিতে বলেছেন তার ব্যাপারটা এক্সেপশন হিসেবে দেখা যেতে পারে | যদিও সাদিক খান উত্তরে নো থাঙ্কস জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে আমেরিকা না যাবার ব্যাপারেই মত প্রকাশ করেছেন | এছাড়া কয়েক সপ্তাহ আগে বেলজিয়ামের বিচারমন্ত্রীর একটা মন্তব্যও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে | বেলজিয়ামের বিচারমন্ত্রী কোয়েন গীনস দাবি করেছেন, ইউরোপে খুব শীঘ্রই সংখ্যার দিক দিয়ে ধর্মপরায়ণ খিস্টানদেরকে ছাড়িয়ে যাবে ধর্মপরায়ণ মুসলিমরা। এর কারণ হিসেবে মিস্টার গীনস বলেন এর কারণ এটা নয় যে, ইউরোপে খুব বেশি মুসলিম রয়েছে। এর কারণ হলো খ্রিস্টানরা সাধারণত কম ধর্মপরায়ণ। এ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নেতারা বেশ চিন্তিত। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ন্যায়বিচার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির এক সভায় মিস্টার গীনস আরো বলেন ‘ইউরোপ এই বাস্তবতা বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটাই বাস্তবতা।’ ইসলাম সম্পর্কে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নেতাদের দুর্ভাবনা কাটাতে বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রী জান জামবোন পার্লামেন্ট গত মাসে ব্রাসেলসে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলার পর এক শুনানিতে বলেন ‘সবচেয়ে বাজে কাজ হবে মুসলিমদেরকে শত্রু মনে করা। তাদেরকে শত্রু মনে করলে, আমাদের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না’।ইসলাম নিয়ে নানা পজিটিভ খবরের মধ্যেও আমাদের শহরের ইসলামিক স্কুলটাই আজ সবচেয়ে খুশির কারণ হয়ে উঠেছে |

আমাদের ছোটো শহরের যে মসজিদটা আছে -সেটা শুধু মসজিদই নয় একটা ইসলামিক সেন্টারও | এর মানে হলো মসজিদটা কেন্দ্র করেই আরো কিছু কাজ এখানে হয় | আমেরিকার অনেক শহরের মতই আমাদের এখানেও মসজিদকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় কাজের সাথে আরো কিছু সামাজিক কাজও হয় | আমেরিকার অনেক শহরেই বিশেষ করে ছোটো শহর গুলোতে মসজিদের ভুমিকা মুসলিম কমুনিটির উপর অনেক বেশি ব্যাপক | মসজিদের সাথে মুসলিম কমুনিটির সম্পর্কও অনেক সক্রিয় আমাদের দেশের মত শুধুই নামাজের মধ্যে সীমিত না | আমাদের মসজিদটাতে নামাজের জন্য ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা রূম আছে | মসজিদে নামাজের এই দুটি মূল রূম ছাড়াও আছে একটা বড় সোশ্যাল রুম |মসজিদে বাইরের ভিজিটরদের সাথে ইসলাম ও অন্যন্য ধর্ম সম্পর্কিত আলোচনাগুলো এখানেই হয় | প্রয়োজনে এখানে প্রায় আশি নব্বুই জনের বসার আয়োজন করা যায় | ছোটো কিন্তু খুবই রিচ একটা লাইব্রেরিও আছে |

এছাড়াও একটা উইক এন্ড ইসলামিক স্কুল আমাদের এই মসজিদটাকে কেন্দ্র করে মসজিদ বিল্ডিংটাতেই চলছে | মসজিদের বিল্ডিংটাতেই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রুমগুলো ছাড়াও আরো প্রায় দশটা রূম আছে | এই রূমগুলোতেই উইক এন্ড ইসলামিক স্কুলের ক্লাস হয় | এইরুম গুলোর আকার মাঝারি থেকে বড় | প্রতিটি রুমেই দেওয়ালে এটাচড হোয়াইট বোর্ড আছে ক্লাসের জন্য | প্রতিটি ক্লাসেই দশ থেকে পনের জন করে ছাত্র ছাত্রী আছে | এই আরবি ক্লাসগুলোও রেগুলার স্কুলের মতই গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ১২ পর্যন্ত | এখানে কুরআন, হাদিস, নামাজ, ইসলামিক হিস্ট্রি এগুলো শেখানো হয় | কমিউনিটির সদস্যরাই এই উইক এন্ড্ ইসলামিক স্কুলের শিক্ষকতার দায়িত্বগুলো পালন করেন | তাদের অনেকেই প্রফেশনালি ফিজিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার | যেমন জর্ডানিয়ান ইমিগ্রান্ট ডক্টর মারওয়ান | আমাদের শহরের সবচেয়ে বড় হসপিটালটার সাথে যুক্ত ফিজিশিয়ান | কোরানে হাফেজ | ইসলামিক পড়াশোনা জানা মানুষ | রবিবারের অবসরে ইসলামিক স্কুলে পড়ান | আছেন তারেক জামিল | কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন | মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার | হাফেজ নন কিন্তু কুরআন শরীফের প্রথম পাঁচ পারা, ত্রিশ পারা, অন্যান্য আরো কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সুরা (সুরা কাহফ, সুরা ইয়াসিন, সুরা রহমান, সুরা মূলক) সহ আরো কত সুরা যে মুখস্থ ! ইসলামিক স্কুলের সাথে শুরু থেকেই জড়িত | আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেব মাশাল্লাহ খুবই ইয়াং আর এনার্জেটিক মানুষ | কোরানে হাফেজ | কম্পিউটার সাইন্সের ব্যাক গ্রাউনড | ইসলাম সংক্রান্ত পড়াশোনা মাশাল্লাহ অনেক | উনি স্কুলে ক্লাস নেন | আমাদর স্কুলের এখনকার প্রিন্সিপাল হিসেবে যিনি দায়িত্বে আছেন উনি একজন বায়োকেমিস্ট |এখানকারই একটা নামকরা ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির রিসার্চ ডিভিশনের হেড | এর আগে যিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন উনিও ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার |এছাড়া এখানে প্রফেশনালি খুবই কয়ালিফায়েড কিছু মহিলা ইসলামিক স্কুলে পড়াবার কাজ করছেন |

যাহোক ছোটো পরিসরে এই ইসলামিক স্কুলের কাজ ভালই চলছিল | এখানে এই ইসলামিক স্কুলগুলোর খুব ইম্পর্টান্ট এজন্য যে এখানে ছেলে মেয়েরা সপ্তাহে প্রায় চল্লিশ ঘন্টা বা তার বেশি স্কুলে থাকে | যেই স্কুলগুলো চলে পাশ্চাত্যের ভাব ধারায় | স্কুলে যে সমাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে ও নিয়মগুলোর সাথে এই মুসলিম ছেলে মেয়েদের প্রতিদিনই সময় কাটাতে হয় সেগুলো ইসলামিক মূল্যবোধের থেকে ভিন্নই নয় অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক | একটা উধাহরণ দেই, আমার ছেলে মেয়ের সাথে আমার তাদের স্কুলের নানা একটিভিটিজ নিয়ে সবসময়ই কথা হয় | ইদানিং আমেরিকায় গে রাইট নিয়ে খুব আলোচনা চলছে | বিশেষ করে নর্থ ক্যারোলিনা, আলাবামা আর আরো কয়েকটি স্টেটে কিছু এন্টি গে পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশনের কারণে এ নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে | এছাড়া আরো বড় প্রভাবক হিসেবে ইলেকশন ইয়ারের হট টক বা রাজনীতিতো আছেই | এরা প্রতিদিন সাত ঘন্টা স্কুলে থাকে | মাঝে মাঝে এক্সট্রা কারিকুলার থাকলে আট নয় ঘন্টাও থাকে স্কুলে | মার্কিন সমাজের চিন্তা, ধ্যান ধারণা এদের প্রভাবিত করে সহজেই | বাসায় আমি যাই বলি না কেন আমার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবিত হবার সুযোগ থাকে স্কুলের সাত ঘন্টায় যা ঘটে তা দিয়ে | তাছাড়া স্কুলের টিচারদের অপিনিয়ন দিয়েও এরা প্রভাবিত হয়ে যায় |

নর্থের স্টেট হিসেবে আমাদের স্টেটটা লিবারাল | এখানকার মানুষজনও মানসিকতায় অনেক বেশি লিবারাল সাউথের স্টেটগুলো থেকে (আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি এটা )| আমার ছেলে মেয়ের স্কুলেও তাই লিবারেল টিচারই বেশি | আমরা ইমিগ্রান্টরা বেশিরভাগ সময়ই রাজনৈতিক ইস্যুতে লিবারেলদের সাথেই বেশি মিল খুঁজে পাই | যেমন এরা ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে কনসারভেটিভ রিপাবলিকানদের মত এত ইমিগ্রান্ট বিরোধী নয় | ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে সাধারনভাবে এরা খুবই সহনশীল | এই যে ইসলাম নিয়ে আমেরিকায় এত ঘটনা ঘটছে সেই ৯/১১ এর পর থেকেই সব ক্ষেত্রেই কিন্তু এই লিবারেলরাই সবসময় মুসলিমদের সাথে থেকেছে | এইত মাত্র কয়েক মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন মুসলিমদের বিশেষ করে সিরীয় শরণার্থীদের আমেরিকায় প্রবেশের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলেন সেটা হট কেকের মত গ্রহণযোগ্য হলো কনজারভেটিভ রিপাবলিকানদের কাছে | কয়েকটি স্টেটের গভর্নরই সে সময় (অল্প কিছুটা আগে পরে ) সিরীয় শরণার্থীদের তাদের স্টেটে নিতে অস্বিকার করেছেন | সেই চরম মুসলিম বিরোধী আবহাওয়ায় যে লোকটি মুসলমানদের পক্ষে একাই এগিয়ে এলেন তিনি হলেন মাইকেল মুর | চূড়ান্ত লিবারেল মিশিগানের এক ফিল্ম ডাইরেক্টর| মিশিগানের গভর্নরের সিরীয় শরণার্থী না নেবার ঘোষণার বিপরীতে তিনি ঘোষণা দিলেন তার ছোট বাড়ির প্রতিটা রুমে তিনি সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে চান | শুধুমাত্র একদল মানুষের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য একটি ধর্মের সবাইকেই অভিযুক্ত করা যায় না এই কথা বলে মুসলিমদের পক্ষে সরব হওয়া মাইকেল মুর সবসময়ই আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে একজন | পিএইচডি প্রোগ্রামে পাবলিক পলিসি ক্লাসের অংশ হিসেবেই মাইকেল মুরের “রজার এন্ড মি” ডকুমেন্টারীটা নিয়ে কিছু কাজ করতে হয়েছিল |পলিসি ফর্মুলেশন, সমাজে সেই পলিসি কেমন করে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে তার একটি অনবদ্য বর্ণনা এই ডকুমেন্টারি | মিশিগানের অনেকগুলো অটো (CAR) প্ল্যান্ট বন্ধ করে মেক্সিকোতে সড়িয়ে নেবার জেনারেল মটর্সের প্রফিট মেকিং পলিসি কেমন করে কয়েক হাজার মানুষের বেকারত্ব সৃষ্টি করে রাতারাতি ফ্লিন্টের মত সচ্ছল একটি শহরকে প্রায় মৃত একটি শহরে পরিনত করেছিল তাই ছিল মাইকেল মুরের সেই ডকুমেন্টারির মূল বিষয় | জেনারেল মোটর্সের সি ই ও (CEO) রজার স্মিথের সাথে নেয়া সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে তৈরী করা এই ডকুমেন্টারিটা একাডেমিক কারণেই আমার খুব প্রিয় | সেই থেকে আমি মাইকেল মুরের খুবই ভক্ত |

রাজনৈতিক ইস্যুতে বেশির ভাগ সময় একমত হলেও সামাজিক ইস্যুতে অনেকসময়ই এদের সাথে একমত হবার কোনো সুযোগ থাকে না | ডেমোক্রেটিক পার্টি, মাইকেল মুরের মত লিবারেল একটিভিস্টদের মতামতের সাথে এই গে বা ইদানিংকার আরো অনেক সামাজিক ইস্যুতেই আমার একটা বিরাট পার্থক্য আছে | গতকাল আমার মেয়ে আর ছেলের আর্ট ক্লাসে ডিজনির কার্টুনে বা সিনেমাতে একটা মেন ক্যারেকটার গে হলে কেমন হবে এটা নিয়ে আর সেই সাথে গে পপুলেশনের ইকোয়াল রাইট আলোচনা হয়েছে | স্কুলের পর বাসায় লাঞ্চ করার পর ভাই বোনের সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে | আমি পুরো আলোচনায় নিরাসক্তি দেখিয়ে নিজের কাজ করছি কোনো মন্তব্য না করেই | অনেকক্ষণ পর তাদের আলোচনায় যোগাযোগ দিতে হলো | এই গে ইস্যুতে আমার ছেলে মেয়ে আমার পজিশন নিয়ে খুবই পাজল্ড | ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সমর্থক হয়েও হয়েও গে রাইটের বিরুদ্ধে কেমন করে আমার মতামত কনজারভেটিভ রিপাবলিকানদের মত একই হতে পারে ? তাদের নানান প্রশ্ন মনে| গে রাইট মেনে নিতে মুসলিমদের অসুবিধা কোথায় ? তারাতো আর ব্যাঙ্ক রবারি করছে না, বা কাউকে কিল করছে না? তারাও তো হিউমান | তাদের কনসটিটিউশনাল রাইট থাকবে না কেন ? এখানকার চার্চের প্যাস্টররাতো গে দের ব্যাপারে লিবারাল | কিছুদিন আগে পোপওতো গে দের ব্যাপারে ডিসকৃমিনেশন না করার কথা বলেছে |মুসলিমরা কেন এত রিজিড? মুসলিমরা কেন খ্রীষ্টানদের মত গে রাইটের ব্যাপারে ফ্লেক্সিবল হতে পারছে না?

গে রাইটের ব্যাপারটা আমাদের রিলিজিয়নে এটা প্রহিবিটেড | অথবা এটা রিলিজিয়াস ল এন্ড এভরি বডি হ্যাজ টু ফলো ইট উইথআউট এক্সসেপশন | বা এ'সম্পর্কে আমাদের ডিভাইন বুকে যা আছে তার বাইরে কিছু বলার কোনো স্কোপ কারো নেই | শুধু এই কথা বলে এদের গে রাইটের বিষয়ে ইসলামের অবস্থান বোঝানো খুবই কঠিন | এরা জাস্টিস আর ইনজাস্টিসটাকে দেখছে কনস্টিটিউশনাল রাইটের আলোকে, যেটা এখানকার কনটেক্সটে এদের স্কুলে শেখানো হয় | কনস্টিটিউশনাল রাইট এখানে ইন্ডিভিজুয়ালকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে সেটা ধর্মীয় আইন কানুন দিয়ে কেমন করে পানিশেবল হয় এটা আমার স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে মেয়েকে বোঝাতে অনেক সময়ই খুব বেগ পেতে হয় | এ'নিয়ে গতকাল প্রায় ঘন্টা খানেক আলোচনার পর আমার আর্গুমেন্ট শুনে আমার ছেলে বলেছে এজন্যই মুসলিমদের এখানে সবাই হেট করে !

যাহোক আমেরিকার ছোটো আর স্কুল পড়ুয়া মুসলিম ছেলে মেয়েদের বড় হয়ে ওঠার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলতে যেয়ে অনেক কথা বললাম | এখন ফিরে আসি আমাদের ইসলামিক স্কুলের কথায়, যা নিয়ে আজকের লেখা | বাংলাদেশে বা যেকোনো মুসলিম প্রধান দেশে ইসলামিক স্কুলের গুরুত্বটা বোঝা খুব কষ্টকর | যেহেতু এইসব দেশের সমাজিক সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয় তাই বাসা বাড়ির মত স্কুলে কলেজেও ছেলে মেয়েরা ইসলামিক মূল্যবোধ, রীতিনীতির সাথে সহজেই পরিচিত হতে পারে | যা পশ্চিমা যে কোনো দেশের কনটেক্সটে খুবই অসম্ভব একটা বিষয় | এখানে তাই উইক এন্ড ইসলামিক স্কুলগুলোই ভরসা ছোটো ছেলে মেয়েদের ইসলামিক রীতি নীতির সাথে পরিচিত করে তুলতে |

আমাদের ছোটো শহরের ছোটো একটা ইসলামিক স্কুল দিয়েই এতদিন চলছিল | কিন্তু গত কয়েক বছরে মুসলিমের সংখ্যা এখানে বেশ বেড়েছে | তাই আমাদের ইসলামিক স্কুলের পরিসরটা একটু বাড়িয়ে ইসলামিক কারিকুলারের সাথে প্রয়োজনীয় আর্টস আর সাইন্স কারিকুলার সংযুক্ত করে ভবিষ্যতে পাবলিক স্কুলের ধাঁচে এই ইসলামিক স্কুলকে ফার্স্ট টু টুয়েল্ভ গ্রেড পর্যন্ত করা যায় কিনা এটা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়েছিল | এখানে বলে রাখি আমেরিকার অন্যান্য শহরের মত আমাদের শহরেও ক্রিস্টান মিডিল আর হাই স্কুল আছে | হাইস্কুল শেষ করে এই ছেলেমেয়েরা যেকোনো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে | কারণ ক্রিস্টান স্কুলগুলোতে ছেলে মেয়েদের রিলিজিয়াস কারিকুলারের সাথে লিবারেল স্কুলের কারিকুলারও যেমন সাইন্স আর আর্টসের সাবজেক্টগুলোও পড়তে হয় |কিন্তু নতুন একটা স্কুল ফ্যাসিলিটি কেনা এখানে খুবই ব্যয় সাপেক্ষ | মিলিয়ন ডলারের ব্যাপার | এই শহরের ছোটো মুসলিম কমিউনিটির পক্ষ্যে সে টাকাটা ম্যানেজ করা আর আলাদা একটা স্কুল ফ্যাসিলিটি আর মসজিদ কমপ্লেক্স বছর ধরে রান করানো সম্ভব কিনা এটা নিয়েই গত কয়েক মাস ধরে খুবই আলোচনা হচ্ছিল |

কিন্তু হঠাত করেই কিছু ঘটনা ঘটল এখানে | একটা চার্চ ক্লোজ হয়ে গেছে আমাদের শহরে| আমাদের কাউন্টি সেই চার্চ বিক্রি করবে | প্রায় তিরিশটা রুমেঁর মত আছে | চার্চটার নিজস্ব একটা পার্কিং আছে | বেশ বড়ই | সেখানে স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সহজেই পার্ক করা যাবে | চার্চের বিল্ডিঙ্গের পাশেই আরো জায়গা আছে | যেখানে একটা প্লে গ্রাউন্ড বানানো যাবে স্কুলের ছোটো ছোটো বাচ্চা দের জন্য | যেটার অভাব আমাদের এখনকার মসজিদ কমপ্লেক্সে খুবই আছে |এই চার্চ ফ্যাসিলিটি এখনি ইউজেবল | শুধু স্কুল হিসেবে ব্যবহার করতে হলে কিছু সিকুরিটি মেজার যেমন স্প্রিন্কলার সিস্টেমটা মানে হঠাত আগুন ধরলে রুমগুলোতে অটোমেটিক যেন পানি ছিটানোর ব্যবস্থা একটিভ হতে পারে সেটা ঠিক করতে হবে | আর ছোটো খাটো কিছু জিনিস ঠিক করতে হবে | একটা চার্চ বা কমার্শিয়াল এনটিটি অপারেট করার চেয়ে স্কুল অপারেট করার ব্যাপারে কন্ডিশনালিটি এখানে বেশি আর কঠিনও |

এই চার্চটার দাম প্রায় চার লাখ ডলার |তাছাড়া স্কুল হিসেবে অপারেট করতে গেলে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে তার জন্য লাগবে প্রায় আরো দু লাখ ডলার | সব মিলিয়ে হাফ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি লাগবে | বাংলাদেশের টাকায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কিছু বেশি | দেড় মাস আগে প্রথম এই চার্চটা সেলের জন্য কাউন্টি লিস্টিঙে আসার পর এটা ইসলামিক স্কুলের জন্য কেনার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রথম কথা হয় মসজিদে | ছয় সপ্তাহের মধ্যে এটা কেনার জন্য বিড করতে হবে | সেজন্য চার লাখ ডলার বাজেট ঠিক করে মুটামুটি একটা অসাধ্য সাধনের চেষ্টা শুরু হলো | দুই তিন দিনের নোটিশে ডাকা প্রথম দিনের ফান্ড রেইজিং মিটিঙেই প্রায় আশি হাজার ডলারের প্রমিজ পাওয়া গেল | এটা অনেক টাকা কিন্তু লক্ষ্য তখনও অনেক দূর | জুম্মার নামাজে এটার কথা বলা হলো পর পর কয়েক সপ্তাহ | পুরোপুরিই প্রায় ইন্টারনাল ফান্ড রেইজিং | আল্লাহর রহমতে চার লক্ষ ডলার উঠেগেলো এক মাসেই | সেলের বিডটাতে চার্চটা কেনা হলো গত সপ্তাহে |

ইসলামিক স্কুলের নতুন ফ্যাসিলিটিটা কেনার পর থেকে খুবই ভালো লাগছে | আমেরিকায় আসার পর থেকে বিশেষ করে ৯/১১ -এর পর থেকে ইসলাম নিয়ে কত ঘটনাইতো ঘটল | ৯/১১ -এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ইসলাম বিরোধীতা নিজের চোখেই দেখেছি আর এখনো দেখছি | এইত কয়েক সপ্তাহ আগে এক মুসলিম ফ্যামিলিকে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো কারণ প্লেনে তাদের সাথে প্যাসেঞ্জাররা নিরাপদ বোধ করেনি বলে | আরেক মুসলিম ছেলে কে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো কারণ সে ফোনে তার ফ্যামিলির কারো সাথে কথা বলার সময় ইনশাল্লাহ বলেছিল কিছুর উত্তরে | সেই এরাবিক শব্দকেই তার পাশের যাত্রী সন্ত্রাসবাদীদের সাংকেতিক ভাষা মনে করে কমপ্লেন করে এটেন্ডেন্টকে এবং যথারীতি তাকে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় | টিভিতে কিছু ক্রিস্টিয়ান চ্যানেল আমি মাঝে মাঝে দেখি | এগুলোতে টেলি এভানজেলিস্টরা কি বলে সেগুলো জানতে | ইসলাম সম্পর্কে এদের সীমাহীন নেতিবাচক মনোভাব দেখে অবাক হতে হয় !

ফ্রি ওয়ার্ল্ডের তীর্থস্থান আমেরিকা সবার জন্য উদার হলেও মুসলিমদের জন্য এখনো উদার হয়ে উঠতে পারেনি | একটা রাইট উইং গ্রূপ ক্লান্তিহীন ভাবে ইসলামের বিরিধিতা করেই চলেছে | বিন্দু মাত্র সুযোগ পেলেই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লেগে পরছে লাগামহীন ভাবেই | ইসলামের প্রতি এই অবিরাম বিরোধিতার মধ্যেও ইসলাম কিন্তু আমেরিকায় বেড়েই চলেছে | এর জন্য সশস্র কোনো বিপ্লবের বা মিথ্যে প্রপাগন্ডার প্রয়োজন কিন্তু দরকার পরছে না | ২০০০ সালের ১২০৯টি থেকে ৯/১১ -এর ঘটনার পরেও ২০১১ সালের মধ্যে আমেরিকায় মসজিদ সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ২১০৬ টি | এই সংখ্যা এখন আরো বেশি | দক্ষিনে টেক্সাস থেকে শুরু করে উত্তরে মার্কিন মেইন ল্যান্ড পেরিয়ে বরফ ঢাকা আলাস্কাতেও এখন মসজিদ আছে | ৯/১১ এর কেন্দ্র নিউ ইয়র্কে সেই ঘটনার একদশকের মধ্যেই মসজিদের সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ২৫৭টি | টেক্সাসের মত রক্ষনশীল স্টেটেও মসজিদের সংখ্যা ১৬৬টি ছিল পাঁচ বছর আগেই | এখন এই সংখ্যা নিশ্চিত ভাবেই এই স্টেটগুলিতে আরো বেশি | বছরে গড়ে এখানে প্রায় আট হাজার চার্চ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে মসজিদের সংখ্যা | আমি প্রথম আমেরিকার যে শহরে এসে ছিলাম বাংলাদেশ থেকে সেখানেও একটি চার্চ কিনে সেটাকে মসজিদে পরিবর্তন করা হয়েছিল | এখানকার ছোটো শহরতাতেও ইসলামিক স্কুলের জন্য কেনা হলো চার্চ | এ'দেশে ইসলাম কিন্তু ধীরে ধীরে বিজয়ীই হচ্ছে |

আমরা এখন ফান্ড রেইজিং করছি ইসলামিক স্কুলটার প্রয়োজনীয় রেনভেসনের দু লাখ ডলারের জন্য | সেটা নিয়ে আমি খুব ভাবছিনা | ইনশাল্লাহ আমি জানি এটাও যোগার হয়ে যাবে | আমি ভাবছি একটা হাদিসের কথা | আবূ রাবী আল আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে।…” (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৯৪, অধ্যায়ঃ ৫৪/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী) (এটা একটা বড় হাদিস | আমি শুধু প্রথম অংশটুকু উল্লেখ করলাম আমার লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক বলে )| অর্থাৎ হাদিসটা প্যারাফ্রেজিং করে বললে বলতে হয় যে প্রায় পনেরশ' বছর আগেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনএমন একটা সময় আসবে যখন ইসলাম পৃথিবীর পূর্ব আর পশ্চিমের সব জায়গায়ই পৌছে যাবে | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রায় পনেরশ' বছর আগে বলা সেই কথাটা সত্যি হবার ব্যাপারটাই ঘটছে এখন সেটাই বুঝি আমরা দেখছি | সেই প্রায় হাজার বছর আগে স্পেন হারাবার পর থেকে ইউরোপ আর পশ্চিমে মুসলিমদের যে অগ্রযাত্রা থেমে গিয়েছিল | তা মনে হয় ৯/১১ -এর পর আবার শুরু হয়েছে | এই প্রথম ওয়েস্টার্ন হোমস্ফেয়ারে লন্ডনের মত প্রধান একটা শহরে একজন মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন (প্যারিস আর বেল্জিম এটাকের অল্প পরেই সাদিক খানের এই নির্বাচন খুবই বড় একটা ঘটনা বলে আমি মনে করি), ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের পার্লামেন্টে ইসলামের প্রসার আর ইউরোপিয়ান সমাজে ইসলামের ইন্টিগ্রেশনের বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তাও পশ্চিমে ইসলামের সীমানা বিস্তারে সহায়ক হবে বলেই আমার ধারণা | চার্চগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার ছোটো ছোটো শহরে গড়ে ওঠা মসজিদ বা সেগুলো সক্রিয় রাখার চেষ্টাগুলো আমি খুব কাছে থেকেই কয়েকবার দেখেছি | ইউরোপ আর আমেরিকার চার্চগুলো পরিবর্তিত হয়ে মসজিদে পরিনত হচ্ছে ধীরে কিন্তু একটা নিশ্চিত গতিতে|

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কার দুই পরাশক্তি রোমান আর পারসিক সাম্রাজ্য ধ্বংশ হয়ে গেছে বহু আগেই | তার সমসাময়িক কোনো শক্তিও আজ আর নেই | কিন্তু সেই রোমান আর পারসিক সম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধ করা ইসলাম এখনো টিকে আছে আর কট্টর রাইট উইঙ্গের বিরোধিতা, রাজনৈতিক বিরোধিতা, চার্চগুলোর অবিরাম প্রপাগন্ডা সব পেরিয়ে ইসলাম পূর্ব ছাড়িয়ে পশ্চিমেও আমেরিকায় আর ইউরোপে হাদিসের কথা মতই ছড়িয়ে পরছে |

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369206
১৬ মে ২০১৬ সকাল ০৮:২৫
হতভাগা লিখেছেন : সাদিক সাহেব কি লন্ডন শহরকে মক্কা মদিনার মত বানিয়ে ফেলবেন ? একের পর এক মাসজিদ নির্মাণ হতে থাকবে ? সেখানকার মহিলারা কি আধুনিক পোশাক ফেলে বোরকা , হিজাব পড়া শুরু করবে ?

মুসলমান তথা ইসলামকে সাইজ করার জন্য নিজেদের হাতকে ক্লিন রেখে এরা মুসলমান নামধারী কাউকে সামনে নিয়ে আসে । ওর কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করে ।

ওবামা আসাতে মুসলিম বিশ্ব খুশী হয়েছিল । ওবামা কি মুসলমানদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে ? এপিজে আবুল কালামকেও প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে ইন্ডিয়া - মুসলমানদের কি চাকরি পাওয়া বেড়ে গেছে ?

ইসলামকে যারা ঘৃনা করে , মুসলমানদেরকে যারা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয় করাতে চায় তাদের দেশে আপনারা যে এসব দাওয়াতে কাজ করছেন এটা নিশ্চয়ই তারা অবজার্ভেসনে রেখেছে । যদি এরা মনে করে যে ব্যাপারটা লিমিট ছেড়ে যাচ্ছে তখন বোমা হামলার ফুটেজ ধরিয়ে দেবে।

ইউরোপ আমেরিকায় ইমিগ্রেন্ট মুসলমান যতই আসুক না কেন , যতই মুসলমানদের প্রজনন হার বাড়ুক না কেন - ক্ষমতা কি তাদের হাতে ? বা যারা সাদিক-ওবামার মত ক্ষমতায় যায় তারা কি আসলেই তার দেশ / স্টেটে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে স্টাবলিশ করার মানসিকতা নিয়ে আসে , এরকম কোন কাজ শুরু করে গদিতে বসেই ?

ক্ষমতার শুরুতে ওবামা মরক্কোর বিশ্ব বিদ্যালয়ে এসে কাহিনী শুনিয়ে ছিলেন , পরে সাইজ হয়ে তাল সামলিয়ে চলছেন, ওভারস্মার্ট হয়ে গেছেন ।

মুসলমানদের সংখ্যা এসব দেশে যতই বাড়ুক না কেন , ক্ষমতার চাবি ইহুদী-খৃষ্টানদের হাতেই । সেখানে ১ কোটি মুসলমানের বিপরীতে যদি ১০ জন ইহুদী রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে তাহলে কি মুসলমানদের কি কিছু করার ক্ষমতা আছে ?

বিদেশে আমাদের যারা কাজ করে তাদের বস থাকে ঐ দেশের লোকেরা (ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই)। সংখ্যায় বেশী বলে কি আপনারা যারা প্রবাসী বস বা সেই দেশের প্রশাসনের উপর ফাঁপড়বাজি করতে পারবেন ?

১৬ মে ২০১৬ সকাল ০৮:৪৪
306417
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : হতভাগা: আপনি যা বলেছেন তার সবই সত্যি| দ্বিমত করার সুযোগ নেই কোনই| আমার লেখাটাতে আমি কিন্তু অন্য একটা কথাই বেশি বলতে চেয়েছি | সেটা হলো যে, ইউরোপ আর আমেরিকায় ইসলাম বিস্তারের একটা সূচনা হয়েছে ৯/১১ -এর পর থেকে | এটা আমেরিকা বা ইউরোপের কোনো দেশের বা কোনো ইসলামিক দেশের পৃষ্ঠপোষকতায়ও হচ্ছে না | এটা হচ্ছে আমেরিকায় যে মুসলিমরা থাকেন তাদের চেষ্টাতেই | মুসলিমরা স্পেন হারাবার পর কিন্তু ইউরোপ আবার যেতে প্রায় হাজার বছর লেগে গেল | এখনো আমেরিকায় মুসলিমদের সংখ্যা শতকরা তিন ভাগেরও কম | তারপরও মুসলিমদের নিয়ে আলোচনা কিন্তু কম নেই এখানে | আমেরিকার বড় ও প্রধান সব শহরেই কিন্তু এখন মসজিদ আছে | সময় লাগবে হয়ত আরো অনেকটা | কিন্তু গত এক হাজার বছর যে ব্যাপারটা শুরু করা যায়নি সেটা ভালো ভাবেই পশ্চিমে শুরু হয়েছে বলে আমি মনে করি | সেটাই বলতে চেয়েছিলাম লেখায় | অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য |
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
306426
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : হ্যা, আপনার মতামতের সবি ঠিক আছে। তারপরও খুশী হবার মতন নিউজ হলো; আগের চেয়েও আমারা বিশ্বাসিদের ভালই গ্রো হচ্ছে, অবিশ্বাসিদের দেশে। র্চাচ কিনে মসজিদে রূপান্তর করা। বাংলাদেশে মসজিদ কিনে র্চাচে রূপান্তর করবার কথা ভাবা যায়? প্রয়োজনে মসজিদ শতবছর অনবাদি পড়ে থাকবে। এইসবের সাথে কম্পেয়ার করলে। আমদের অবশ্যই অবশ্যই খুশী হবার মতন অনেক কিছু ওখানে ঘটছে।
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
306438
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সায়িদ মাহমুদ: হ্যা,ঠিকই বলেছেন|এটাই খুশির খবর যে ইসলাম ছড়িয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের আমেরিকায় আর ইউরোপ | আমি অধৈর্য্য হতে চাইনা এখনই| অধৈর্য্য হবার মত কিছু এখনই ঘটেনি| এই বিস্তার একটু স্লো হয়ত তবে খুবই স্টেডি|অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য|
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৬
306442
হতভাগা লিখেছেন : এসব যতটা না খুশী হবার মত নিউজ তার চেয়ে বেশী শংকার । দিন কয়েক পর যখন প্যারিস / ব্রাসেলসের মত হামলা চালিয়ে ফাঁসিয়ে দেবে তখন কি করবেন ? তাছাড়া KKK এর মত সংগঠন তো ওদের আছেই ।

টেনশন ম্যান - পুরাই অস্থির সময় যায় তখন , তাই না ? এয়ারপোর্টে কাহিনী , রাস্তায় গালি খাওয়া , হামলা .....।

দেশটা যেহেতু তাদের , তাই ক্ষমতার রাশ সবসসময়ই তাদের হাতে । এখানে ১ জনের বিপরীতে আপনারা ১০ লক্ষ জন কিছুই করতে পারবেন না ।

দেশ ছেড়ে আপনারা এখানে এসেছেন বেটার জীবন যাপন করতে । উনাদের লিমিটের বাইরে কোন একটিভিটি করলে বের করে দেবার থ্রেট আসবে না ?

দেশে ফিরে কি করবেন ?
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৯:০৬
306530
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : হতভাগা: আবার বলছি আপনি যা বলছেন তার সাথে ঠিক এই মুহুর্তে দ্বিমত করার সুযোগ খুব বেশি নেই | কিন্তু আমেরিকায় তো শুধু ইমিগ্রান্ট মুসলিমরাই থাকে না | আমেরিকান হোয়াইট যারা ইসলামে কনভার্ট হয়েছে, আফ্রিকান আমেরিকান যারা কয়েকশ বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছে, একটা দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম যারা ইমিগ্রান্ট বাবা-মার ছেলে-মেয়ে কিন্তু যাদের জন্ম এবং বড় হওয়া এই আমেরিকায় এবং আমেরিকারই যারা নাগরিক তারা সবাই মিলেই থাকে|এরাই ইসলাম রক্ষায় অনেক বেশি ভোকাল| এরা ইসলাম পালনকে তাদের নিজেদের নাগরিক অধিকার ভাবে| যা থেকে কিছুতেই পেছাবে না| এরাই আমেরিকায় ইসলামকে ধরে রাখবে এবং প্রসারে ভুমিকা রাখবে | যেই প্রসারতা শুরু হয়েছে | আমার একার বা একটি মুসলিম গ্রূপ যারা এখনো আমেরিকান সিটিজেন নয় তাদের আমেরিকা থেকে চলে আসা না আসা দিয়ে মুসলিমদের ব্যাপারটা দেখলে মনে হয় সেটা ঠিক হবে না |
369215
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১০:৩৭
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : আপনার টপিক, র্বণনার ভাষা অত্যান্ত সাবলিল এবং ভাল লেগেছে। আমার মনে হচ্ছে এই ব্লগে আরেকজন সু-লেখক Happy পেয়ে গেলাম।
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৫
306441
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সায়িদ মাহমুদ:খুবই লজ্জ্বা পেলাম আপনার মন্তব্যে| আমি খুবই সাধারণ মানুষ| অসাধারণ করে কিছু লিখতে পারিনা|এই ব্লগে অনেক সু ব্লগার আছেন|তাদের লেখাও অসাধারণ রকম ভালো|তাদের লেখা আপনি নিশ্চই পড়েন| তারপরও আমার লেখা পড়ে যে আপনার ভালো লেগেছে সেটা জেনে খুবই খুশী হয়েছি|অনেক ধন্যবাদ নেবেন |
369338
১৬ মে ২০১৬ রাত ১১:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি দেখেছি ইউরোপ বা আমেরিকায় সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মানুষই আমাদের দেশের অনেক তথাকথিত আলেম এর থেকে বেশি জ্ঞান রাখেন ইসলাম বিষয়ে। আমাদের দেশে একজন কুরআনে হাফিজ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব বিষয়। অার ইসলামি শিক্ষার বিষয়টিতো এখন বিপদজনক হয়ে দাড়িয়েছে। দুয়া করি সেন্টার ও স্কুল সাফল্য লাভ করুক।
১৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৬
306600
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ:অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য|জ্বী,এখানে এমন বেশ কিছু মানুষকেই আমি চিনি যারা সেকুলার পড়াশোনাতেও খুবই উচ্চ শিক্ষিত (ফিজিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার বা পিএইচডি হোল্ডার) আবার কুরানে হাফিজ|খুব ভালো লাগে এদের সাথে কথা বলতে|ভালো থাকবেন |
369352
১৭ মে ২০১৬ রাত ০৩:৪৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

আপনাদের মসজিদের কথা জেনে খুব ভালো লাগলো। আলহামদুলিল্লাহ।

পোস্ট পড়ে লম্বা মন্তব্য করতে ইচ্ছে হচ্ছে তথাপি পারছি না!

আল্লাহ আপনাদের কবুল করে নিন, ইসলামের পথে অটুট রাখুন। আমীন।
১৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৬
306602
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সাদিয়া মুকিম:ওয়া আলাইকুমুস সালাম|বিদেশে আপনার ব্যস্ততাটা বুঝতে পারছি| অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও বড় লেখাটা পরার জন্য অনেক ধন্যবাদ|ফ্যামিলির সবার জন্য শুভেচ্ছা রইলো|
369364
১৭ মে ২০১৬ সকাল ০৬:০৮
awlad লিখেছেন : Jazak Allah Khayr .very inspiring post.Alhamdulallah in my area we have very good and active Islamic center of Hawthorne ca,Have a School up to 8th greed .lot of social activities.Dawah and Islami Education program.Every Muslim should join with there local center and support them.I am a active member of my center.
১৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
306603
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : Awald: thanks a lot for your kind comment. Alhamdulillah, glad to hear about your active participation in Islamic Center of your community. May Allah help you and associates to keep it up.

369365
১৭ মে ২০১৬ সকাল ০৬:২৬
awlad লিখেছেন :

Here is some regular weekly activities of our center(Masjid)
১৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪০
306604
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : Awlad: masallah,your masjid runs a very diverse Islamic activities and programs. Who are the teachers of your weekend Islamic school?May Allah help you guys to continue it. Thank you for sharing Islamic activity info with us.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File