আমেরিকার দিনগুলি-২

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ০৫ মে, ২০১৬, ১০:৫৮:৪১ রাত

আমেরিকায় যখন প্রথম এলাম আমার পোর্ট অফ এন্ট্রি ছিল নিউ ইয়র্কের জে এফ কে (JFK) এয়ার পোর্ট | জানুয়ারির এক শীতের রাত | রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমার প্লেন এসে ল্যান্ড করেছে জে এফ কে এয়ার পোর্টে | শীতে আটটা - নয়টাকেই মনে হয় গভীর রাত | জে এফ কে (JFK) এয়ার পোর্টে নেমে সেটা মনে হলো না | প্লেন থেকে নেমে লাগেজ চেক করে সরাসরি আসতে হলো ইমিগ্রেশনে| এত বড়, এত মানুষ কিন্তু খুবই পরিস্কার ছিমছাম সুন্দর এয়ার পোর্ট | আসবার পথে ব্রাসেলস এয়ার পোর্টে প্লেন থেমে ছিল প্রায় দেড় ঘন্টার মত | ব্রাসেলস এয়ার পোর্টে নেমে ঘুরে দেখেছি | ব্রাসেলস এয়ার পোর্ট খুবই সুন্দর কিন্তু এত ব্যস্ত নয় , অনন্ত সেদিন ছিল না | নিউ ইয়র্কের জে এফ কে (JFK) এয়ার পোর্টকেও সেই একই রকম সুন্দর লাগলো | আমার কাছে কত ডলার আছে নগদ, কোনো এক্সট্রিমিস্ট গ্রূপের সাথে জড়িত কিনা, বাংলাদেশ থেকে কোনো খাবার এনেছি কি না এই ধরনের হাজারটা ফর্মাল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইমিগ্রেশন পেরুতে রাত প্রায় আটটা বেজে গেল |

ইমিগ্রেশন পেরিয়ে কমন এরিয়ায় এসে আমিতো অবাক | এই স্নো, মাইনাস তাপমাত্রাকে পুরোপুরি কাঁচকলা দেখিয়ে পুরো নিউইয়র্কের আমার সব সব কাজিনই উপস্থিত ! বড় খালার মেয়ে দোলা আপার সাথে এসেছেন তার বর লং আইল্যান্ড থেকে | কুইন্সে থাকে আমার সেজো খালার মেয়ে রুনি | সেও তার বরকে সাথে নিয়ে এসেছে আমাকে এয়ার পোর্ট থেকে আমাকে ওর নিয়ে যাবে বলে | সেই কথাই হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে আসার সময় | আমার আরেক খালার ছেলে নাভিদ এসেছে তার আমেরিকান বউ নোরাকে সাথে নিয়ে | নোরা পি এইচ ডি করছে ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কে| আমি আমার খ্যাতি উপভোগ করছি আর তখন দোলা আপা আর রুনি দেখি আমি কার বাসায় যাব সেটা সেটেল করার চেষ্টা করছে |রুনি বলার চেষ্টা করছে ঢাকা ছাড়ার আগেই কথা হয়েছে আমি এয়ার পোর্ট থেকে ওর বাসায় যাব | দোলা আপার যুক্তি কাজিনদের মধ্যে উনিই সিনিয়র তাই উনার রাইটই বেশি আমাকে সাথে করে তার বাসায় নিয়ে যাবার |যাহোক ব্রিফ আর্গুমেন্টের মধ্যে দিয়ে এই কম্প্রমাইজ হলো যে আমি দোলা আপার বাসায়ই যাব রাতে | সকালে রুনি আমাকে লং আইল্যান্ড থেকে নিয়ে আসবে ওর বাসায় | সারা দিন ওর বাসায় থেকে সন্ধ্যে বেলায় নাভিদ আমাকে ম্যানহাটনে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে ড্রপ করবে | আমি রাতের গ্রে হাউন্ড বাসে করে চারশত মাইল দুরে পিটসবার্গে যাব |পরের দিনের মধ্যেই আমাকে ইউনিভার্সিটিতে রিপোর্ট করতে হবে | সেদিন থেকেই আমার ক্লাস শুরু হবে |

আমি শ্রান্ত ক্লান্ত শরীরে দোলা আপার গাড়িতে উঠে বসেছি | টুক টাক কথা হচ্ছে আমাদর মধ্যে | জে এফ কে থেকে ঘন্টা খানেক ড্রাইভ করার পর প্রায় ষাট শততুর মাইল দুরে লং আইল্যান্ডে এসে পৌছুলাম | দোলা'পা বাসায় ঢুকেই ডিনার সার্ভ করেছেন | ক্লান্তিতে খেতে ইচ্ছে করছে না | কোনো রকমে একটু খেয়েই হাত ধুয়ে ফেললাম | দোলা'পা বাংলাদেশের গল্প করবে বলে আমাকে জাগিয়ে রাখতে গরম কফি নিয়ে এসেছে | প্রায় ত্রিশ ঘন্টার জার্নির পর আমি আর চোখ খুলে রাখতে পারছি না | বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পরলাম |

শীতের বড় রাত | সেটাও কেমন করে যেন একঘুমে পার হয়ে গেল | টেরও পেলাম না | সকালে উঠতে উঠতেই বেলা বাজলো দশটা | উঠেই আমার প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর ডক্টর হ্যারি ফাউল্ককে ইমেইল করেছি যে আমি এসে পৌছেছি নিউইয়র্ক | উনি জানতে চেয়েছেন,নিউ ইয়র্ক থেকে আমি কি পিট্স বার্গে কি প্লেন যাব নাকি ? তাহলে উনি নিজেই আমাকে পিট্সবার্গ এয়ার পোর্টে আনতে যাবেন | আমার জন্য স্কুলের গেস্ট হাউজে উনি রুম রিজার্ভ করে রেখেছেন | আমি বিনে ভাড়ায় সপ্তাহ খানেক থাকতে পারব হাউজিং কনফার্ম না হওয়া পর্যন্ত | আমেরিকানদের যে জিনিসগুলো দেখে আমি অবাক হই এটা তার মধ্যে একটা | লার্নিং প্রসেসটাকে এরা আমাদের মত ভয়াবহ করে তুলেনি |ষ্টুডেন্ট আর টিচারদের মধ্যে সম্পর্কটাকে এরা সহজ করে রেখেছে | টিচারদের কাছে ষ্টুডেন্টদের এক্সেস এমন যে এদের মধ্যে কোনো ভয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি | থাঙ্কস জানিয়ে আমি বলেছি যে আমি গ্রে হাউন্ডে করে যাব | বাস স্টেশন থেকে সরাসরি যাব আমার পরিচিত একজনের বাসায় ওখান থেকেই আমার হাউজিং খুজবো | ইমেইল কমিউনিকেশন গুলো শেষ করেছি যত দ্রুত সম্ভব | তার কিছুক্ষণ পরই রুনির বর এলো আমাকে নিতে | যেতে হবে কুইন্স | ওখান থেকেই বিকেলে রওনা হতে হবে পিট্সবার্গ | একঘন্টার জার্নি শেষ করে রুনির বাসায় এসে পৌছুলাম | রোজার সময় তাই দিনের বেলা খাবারের ঝামেলা নেই | রুনি কুইন্সের আসে পাশে ঘুরিয়ে দেখালো | বাসায় ফিরে গল্পে গল্পেই বিকেল | রাত দশটায় আমার বাস রওনা হবে ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে |

বিকেলে নাভিদ এসেছে নোরাকে সাথে নিয়ে আমাকে নিতে |সময়ের বেশ খানিকটা আগেই | আমেরিকার সামরিক বিজ্ঞানের চরম উন্নতির একটা কারণ তখনি আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়েই অনুভব করলাম | কেন এরা মিসাইল, ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্রগুলো এত সহজেই বানিয়ে ফেলে সেই কারনটা অনেকটাই আমার কাছে পরিস্কার হয়ে এলো | রুনির বাসার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসেছি | গাড়িতে উঠব | হালকা জমাট বাধা একটা স্নোর স্তর | ভেবেছি আমার জুতোর চাপেই ভেঙ্গে যাবে | ওটার উপরে পা দিতেই পিছলে পপাত ধ্বরণী তল | পরে জেনেছি স্বচ্ছ বলে স্নোগুলোর নাম হয়েছে গ্লাস আইস | বেশির ভাগ সময়ই মানুষ খেয়াল করেনা বলে অর উপর পা দিয়েই অঘটনগুলো ঘটে | হাইওয়ে গুলোতেও অহরহই শীতে দুর্ঘটনা ঘটে দূর কাছ থেকেও গ্লাস আইস না বোঝার কারণে | স্বচ্ছতার কারণে পীচঢালা পথের উপর গ্লাস আইস থাকলেও তার ভিতর দিয়ে রাস্তা দ্যাখায় পিচের মতই কালো | বোঝা যায়না এর অস্তিত্ব যা অনেক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে যায় | শীতে হাটতে গিয়ে এর উপর পা দিয়ে পিছলে পরে হাত পা ভাঙ্গার ঘটনা এখানে অহরহই ঘটে | বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশীরা এর স্বীকার | হাতে নাতে প্রমান পেলাম তাই পরিসংখ্যানের সাথে দ্বিমত করার কোনো কারণ দেখলাম না |এই যে দৃশ্যত কোনো কারণ ছাড়াই মানুষ ধুমধাম করে পরছে আর হাত পা ভাংছে,আমি শিওর যে এই অভিজ্ঞতাগুলোই এদের শিখিয়েছে সামনা সামনি যুদ্ধ না করেই কেমন করে দূর থেকে কোনো ক্ষেপনাস্র দিয়ে বা ড্রোন এটাক করে সব কিছু ভেঙ্গে চুরে ফেলা যায় |

কুইন্স থেকে হার্ডসন রিভারের উপর ব্রিজ দিয়ে ম্যান হাটনে ঢুকছি | নীচে নদী | ওপারে ম্যানহাটন | সারা পৃথিবীর ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল |হাতে কিছু সময় ছিল তাই ম্যান হাটনের আশেপাশটা ঘুরছি | দুরে দেখা যাচ্ছে শত তলা উঁচু ক্রাইসলার বিল্ডিং|শেষ বিকেলে ক্রাইসলার বিল্ডিঙ্গের উপর জ্বলে উঠেছে নীল আলো | অপূর্ব দেখাচ্ছে | টুইন টাওয়ার | ইউএন বিল্ডিং| নাভিদ দেখালো এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং | সেই ছোটো বেলা থেকে শোনা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং নিজের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি ! ব্রূকলিন ব্রিজের আশেপাশে কোথা দিয়ে যাবার সময় হঠাতই চোখে পড়ল দুরে মাথার উপর হাতে ধরা মশাল নিয়ে একা দাড়িয়ে থাকা লেডি লিবার্টি -স্টাচু অব লিবার্টি | সেই দুইশত বছর ধরে আটলান্টিক আর হাডসনের সঙ্গমে ছোটো লিবার্টি আইল্যান্ডে দাড়িয়ে মার শরীর আর প্রেমিকার মুখের আদলে গড়া ফ্রেদেরিক আগস্টা বার্থলডির স্টাচু অব লিবার্টি কত রাতের ঘন কালো আঁধার, কত শীতের স্নো মোড়া দিন, কত স্নো স্টর্ম, টর্নেডো উপেক্ষা করে তার মশাল জ্বেলে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছে নিউ ওয়ার্ল্ড আমেরিকায় ! সূর্যের আলো স্টাচু অব লিবার্টির মশালের কোথাও রিফলেকটেড হয়ে চারদিকে দ্যুতি ছড়াচ্ছে | মনে হচ্ছে পুরনো কোনো লাইট হাউজের আলোর মত মশালটাও বুঝি জ্বলছে কোনো পথহারা নাবিককে পথ দেখাতে | দেশ থেকে অর্ধেক পৃথিবী দুরে পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এক নগরীর স্কাই স্ক্রাপারের পাশ দিয়ে যেতে যেতে লেডি লিবার্টির মাথার উপরে তোলা হাতের দিকে তাকিয়ে আমারও ভাবতে ভালো লাগলো যেন হালকা আঁধারের এই শেষ বিকেলে মশাল জ্বেলে লেডি লিবার্টি উন্নয়নশীল একটি ছোটো দেশের থেকে আসা এই আমাকেও মনে হয় স্বাগত জানাচ্ছে এসময়ের নতুন পৃথিবী -আমেরিকায় !

গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে যেতে হবে | হার্ডসন রিভারের নিচের একটা টানেলে ঢুকছি | ধীরে ধীরে শেষ বিকেলের আলো মুছে যাচ্ছে | দুই লেনের টানেল | প্রায় হাফ মাইল লম্বা | এক টানেল দিয়ে ম্যানহাটনে আসতে হবে আরেকটা টানেল দিয়ে ম্যানহাটন থেকে বেরিয়ে যাবার | এরকম আরো অনেকগুলো টানেলই আছে হার্ডসন রিভারের নিঁচে | এছাড়াও ম্যানহাটনে আসা যাবার জন্য আছে নদীর উপর অনেকগুলো ব্রিজ | ছোটোই একটা আইল্যান্ড ! কিন্তু এর গুরুত্বের কথা চিন্তা করেই প্রায় একশত বছর আগে থেকেই এটাকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছে এরা |কয়েকশ গুন বেশি জনসংখ্যা আর যানবাহন নিয়েও তাই একশত বছর পরেও ম্যানহাটন আজ সারা বিশ্বের ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল হয়েই আছে |ডাইভিং সিট্ থেকে নাভিদ বলছে এই টানেল বানানো হয়েছে উনিশশ' ত্রিশ সালের দিকে | কথাটা কানে যেতেই মনের ভিতরটা খচ খচ করে উঠলো কি জানি কোন না জানা ব্যথায় |

মাত্র কদিন আগে পিছে ফেলে আসা আমাদের দেশের কথা মনে হয়ে খুবই কষ্ট লাগলো | আমাদের বাংলাদেশ ! সেই ব্রিটিশদের সময় বঙ্গ ভঙ্গ হবার কথা আমরা বলি | আমরা হরদম দোষ চাপাই ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল নীতির বিরুদ্ধে যে তারা মুসলমানদের সাথে হিন্দুদের ধর্মীয় দাঙ্গা লাগিয়ে এদেশ শাসন করতে চেয়েছে আর সেজন্য আমাদের দেশের কোনো উন্নতি হয়নি | বঙ্গভঙ্গ না হবার কারণের জন্য আমরা অমুসলিম রাজনৈতিক নেতা বা বুদ্ধিজীবিদের দোষ দেই এই বলে যে তাদের সক্রিয় বিরোধিতার জন্যই এটা রদ হয়েছে আর যেটা মুসলমানদের উন্নতির গতিরোধ করেছে! এইসব অভিযোগের অনেক কিছুই হয়তো তিক্ত কঠিন সত্যি কিন্তু সবকিছুর পরেওতো আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেলাম একাত্তর সালে ! তার পরেই বা আমরা নিজেদের উন্নতির জন্য কি করলাম ! স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত আর উন্নত শহর হিসেবে আমরা তৈরী করতে পারতাম না একাত্তরের সালের পরেই? উনিশশ' ত্রিশ সালের দিকে যখন এই আন্ডার ওয়াটার টানেলগুলো তৈরী হয় তার কিছুদিন আগে আঠারশ' আশি নব্বুই সালের কথা ভাবি আমি ! তখন ঢাকা নিউইয়র্কের মতই একটি শহর ছিল | আঠারশ' আশি -নব্বুই সালের নিউ ইয়র্কের মতই ছিল পুরনো ঢাকার আহসান মঞ্জিল,কার্জন হল, লালবাগের কেল্লা আর এর আশে পাশের এলাকার উন্নত স্থাপনা আর অবকাঠামো| বরং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম কলোনি ভারতের সবচেয়ে উন্নত প্রদেশ বাংলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবার কারণে ঢাকার গুরুত্ব তখনকার নিউ ইয়র্কের চেয়ে বেশি বই কম ছিল না | শুধু মাত্র সুযোগ্য নেতৃত্ব, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার মত দক্ষ লোকজন তৈরী , আর তাদের যথাযথ নিয়োগ এইসব কাজগুলো ঠিক মত করার কারণেই আজ নিউইয়র্ক আর ম্যানহাটন এখন সারা পৃথিবীর ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল | আর আমরা এদেশের চেয়েও পুরনো সভ্যতার অধিকারী হয়েও, মুঘল আর ব্রিটিশদের মত দুটি সফল শাসন ব্যবস্থার অধীনে থেকেও শুধু মাত্র অযোগ্য নেতৃত্ব, দলবাজি, দলীয় লোকদের যোগ্যতার চেয়েও বেশি মূল্যায়নের আর পদায়নের কারণে আজ অবনতির কোন স্তরে গিয়ে পৌছেছি | এর থেকে আদৌ কোনো দিন উঠে আসতে পারব কিনা কে জানে! ঘিঞ্জি গলির আমার প্রিয় রাজধানী শহর আজ পৃথিবীর বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে প্রথম দুটির একটি | ঢাকার বাতাসে প্রাণ হরণকারী কেমিকাল, ডাস্ট পার্টিকলের উপস্থিতি শতকরা হারের দিক থেকে পৃথিবীর যেকোনো রাজধানী শহরের চেয়ে বেশি! শব্দ দূষণের দিক থেকেও প্রিয় শহর ঢাকা এখন টেক্কা দিয়েছে পৃথিবীর সব রাজধানী শহরকে | আমাদের রাজধানী শহরে মাননীয় সাংসদদের সুরম্য আবাসস্থলের কয়েক মাইলের মধ্যেই গড়ে উঠেছে বস্তির পর বস্তি যেখানে মানুষের বসবাসের নুন্যতম সুযোগ সুবিধা ছাড়াই বসবাস করছে লাখ মানুষ | স্বাধীনতার ছিচল্লিশ বছর পর এই দুঃখ কোথায় রাখি!

সূর্য হেলে পরেছে পশ্চিম আকাশে | আবির রঙে রাঙা পুরো পশ্চিমের আকাশ | সে আবির রঙে রাঙ্গা হয়ে গেছে হার্ডসন রিভার আর আটলান্টিক মহাসাগরের পানিও | জ্বলে উঠেছে আকাশ ছোয়া হাইরাইজ গুলোতে নানান রঙের লাইট | কিছু কিছু হাইরাইজের ঝলমলে রঙিন লাইটগুলো মনে হচ্ছে যেন আকাশ থেকে ম্যানহাটনের খুব কাছে নেমে এসেছে যেন কোনো ঝিকমিকি জ্বলতে থাকা কোনো নক্ষত্র ! উপরে আবির রঙে আঁকা আকাশ আর নীচে হার্ডসন নদী আর আটলান্টিকের সঙ্গমে স্বপ্নের মত আলোকজ্বল ম্যানহাটন আর তার হাই রাইজ্গুলো আকাশ ফুরে মাথা তুলবার গর্বিত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আমার সামনেই | আমি শেষ বারের মত সেদিকে আরেকবার চাইলাম | ম্যানহাটনের বর্ণিল আলোতেও মনে হয় মনের আঁধার এতটুকু কাটল না | নিজের দেশটাকে নিজেদের মত করে সাজাতে না পারার অক্ষম একরাশ বেদনা মনে পুরে আমি গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের দিকে তাকালাম | আর কিছুক্ষণ পরেই আমার বাস ছাড়বে পিট্সবার্গের দিকে | সে বাসের টিকেট করতে হবে | গাড়ির থেকে বাই বলছে নোরা | নাভিদ গাড়ির দরজা খুলে দাড়িয়ে | আমি ধীর গতিতে পা বাড়ালাম গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের দিকে |

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৬ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368102
০৬ মে ২০১৬ রাত ১২:২৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : এক্সচেললেনট ,
০৬ মে ২০১৬ রাত ০২:১৮
305486
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : মনসুর আহামেদ:অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য|
368104
০৬ মে ২০১৬ রাত ০১:১৪
আফরা লিখেছেন : আমেরিকার দিনগুলি পড়ে খুব ভাল লাগল সব চেয়ে বেশি ভাল লাগল আমেরিকার সাথে ঢাকার তুলনাটুকু ।

আশে পাশের অনেক দেশ ও অনেক উন্নত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের হবে না ভাইয়া ঐ বল্লেন না ভাইয়া শুধু মাত্র অযোগ্য নেতৃত্ব, দলবাজি, দলীয় লোকদের যোগ্যতার চেয়েও বেশি মূল্যায়নের আর পদায়নের কারণে ।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
০৬ মে ২০১৬ রাত ০২:৩৭
305489
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আফরা:ঐটুকু বলার জন্যই এই লেখাটা |আমেরিকার ঝলমলে শহরগুলো,বিড়াট বিড়াট স্কাই স্ক্রাপার,এত অর্থ বিত্ত এই কোনো কিছুই আমাকে কষ্ট দেয় না|কষ্ট লাগে যখন ভাবি দেড়শ বছর আগে এরা কোথায় ছিল আর আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন এরা কোথায় পৌছেছে আর আমদের দেশটা কোথায় পরে রইলো|এই যন্ত্রনাটা আর কমে না এতোদিন এদেশে আছি!সেই যন্ত্রণা থেকেই লেখাটা|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য|
368113
০৬ মে ২০১৬ রাত ০৩:১৯
awlad লিখেছেন : ধন্যবাদ
০৬ মে ২০১৬ রাত ০৩:২৮
305500
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : awlad:আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য|
368116
০৬ মে ২০১৬ রাত ০৩:৩৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুপ্রিয় ভাই।

প্রবাসে জৌলুসপূর্ণ পরিবেশের মাঝেও জন্মভূমির জন্য আপনার প্রাণের আকুতি ভীষণ ভালো লাগলো।

সুন্দর লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৬ মে ২০১৬ সকাল ০৬:১০
305515
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সন্ধাতারা:আমি খুবইসাধাহরণ একজন মানুষ|আমেরিকার ঝলমলে শহরগুলো, বিড়াট বিড়াট স্কাই স্ক্রাপার,এত অর্থ বিত্ত এই কোনো কিছুই আমাকে কষ্ট দেয় না|কষ্ট লাগে যখন ভাবি দেড়শ বছর আগে এরা কোথায় ছিল আর আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন এরা কোথায় পৌছেছে আর আমদের দেশটা কোথায় পরে রইলো|এই যন্ত্রনাটা আর কমে না এতোদিন এদেশে আছি!সেই যন্ত্রণা থেকেই লেখাটা|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য| সন্ধাতারা : আমি খুবই সাধাহরণ একজন মানুষ | আমেরিকার ঝলমলে শহরগুলো,বিড়াট বিড়াট স্কাই স্ক্রাপার,এত অর্থ বিত্ত এই কোনো কিছুই আমাকে কষ্ট দেয় না|কষ্ট লাগে যখন ভাবি দেড়শ বছর আগে এরা কোথায় ছিল আর আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন এরা কোথায় পৌছেছে আর আমদের দেশটা কোথায় পরে রইলো|এই যন্ত্রনাটা আর কমে না এতোদিন এদেশে আছি!সেই যন্ত্রণা থেকেই লেখাটা|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য|
০৬ মে ২০১৬ সকাল ০৬:১০
305516
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সন্ধাতারা:আমি খুবইসাধাহরণ একজন মানুষ|আমেরিকার ঝলমলে শহরগুলো, বিড়াট বিড়াট স্কাই স্ক্রাপার,এত অর্থ বিত্ত এই কোনো কিছুই আমাকে কষ্ট দেয় না|কষ্ট লাগে যখন ভাবি দেড়শ বছর আগে এরা কোথায় ছিল আর আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন এরা কোথায় পৌছেছে আর আমদের দেশটা কোথায় পরে রইলো|এই যন্ত্রনাটা আর কমে না এতোদিন এদেশে আছি!সেই যন্ত্রণা থেকেই লেখাটা|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য| সন্ধাতারা : আমি খুবই সাধাহরণ একজন মানুষ | আমেরিকার ঝলমলে শহরগুলো,বিড়াট বিড়াট স্কাই স্ক্রাপার,এত অর্থ বিত্ত এই কোনো কিছুই আমাকে কষ্ট দেয় না|কষ্ট লাগে যখন ভাবি দেড়শ বছর আগে এরা কোথায় ছিল আর আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন এরা কোথায় পৌছেছে আর আমদের দেশটা কোথায় পরে রইলো|এই যন্ত্রনাটা আর কমে না এতোদিন এদেশে আছি!সেই যন্ত্রণা থেকেই লেখাটা|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য|
368118
০৬ মে ২০১৬ রাত ০৩:৪১
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক দারুন লাগল। কিছু সত্য উঠে এসেছে। আমরা যেসব কারনে পিছিয়ে গেছি তা চমৎকারভাবে বলেছেন। বিভ্রান্ত জাতি উন্নতি করেনা। গরীব তো পৃথিবীর বহু স্থানই ছিলো কিন্তু তারা সামনে গেছে.....
০৬ মে ২০১৬ সকাল ০৬:১২
305517
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : দ্য স্লেভ:অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য আর সুন্দর মন্তব্যের জন্য|
368119
০৬ মে ২০১৬ রাত ০৪:৩৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
ভ্রমণ কাহিনী পড়তে বেশ ভালো লাগে, আপনারটা লিখাটাও অনেক চমৎকার হয়েছে।

পিছল খাওয়ার উদাহরণটা আমারিকার সাথে একেবারে মিলে গেছে !
আসলেই উন্নত দেশগুলোর আধুনিকতা আর প্রযুক্তির ব্যবহার দেখলে নিজেদের দেশের কথা ভেবে অনেক মন খারাপ হয়!

পরের পর্বের প্রতীক্ষায় ..।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
০৬ মে ২০১৬ সকাল ০৬:১৯
305518
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সাদিয়া মুকিম:অনেক ধন্যবাদ|যদি অভিজ্ঞতাটা খুব সাম্প্রতিক হয়ে থাকে তবে অনেক সমবেদনা রইলো| কংক্রিটে পিছলে পড়ার সেই ব্যথা আমার গায়ে মিসাইল লাগার চিরস্থায়ী ব্যথার মতই আমাকে অনেকদিন জ্বালিয়েছে|
368142
০৬ মে ২০১৬ সকাল ০৭:৫৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কষ্ট লাগে এরা কোথায় ছিল আর আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন এরা কোথায় আর আমদের দেশটা কোথায়.,? ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৬ মে ২০১৬ সকাল ০৮:০৪
305521
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : কুয়েত থেকে:আমি খুবই সাধাহরণ একজন মানুষ|আমেরিকার ঝলমলে শহরগুলো,বিড়াট বিড়াট স্কাই স্ক্রাপার,এত অর্থ বিত্ত এই কোনো কিছুই আমাকে কষ্ট দেয় না|কষ্ট লাগে যখন ভাবি দেড়শ বছর আগে এরা আর আমরা প্রায় কাছাকাছিই ছিলাম আর এখন কি সাত সমুদ্দর আর তের নদীর পার্থক্য!এই যন্ত্রনাটা আর কমে না এতোদিন এদেশে আছি!সেই যন্ত্রণা থেকেই লেখাটা|অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য|
368225
০৬ মে ২০১৬ রাত ১১:১২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক নিয়ে আমার মনে হয় আমরা শিক্ষক কে অতি শ্রদ্ধা করতে করতে মানুষের উর্ধ স্তরে তুলে দিই বলে আমাদের মধ্যে শিক্ষার বদলে অন্ধ অনুকরন ই সৃষ্টি হয়।
০৭ মে ২০১৬ সকাল ০৬:৩২
305615
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ:অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য| আশাকরি আপনার শরীর এখন ভালই আছে | দোয়া করছি সুস্থ্য থাকুন| হার্ট বড় হওয়া লাগবে না ছোটোই থাকুক|তাতে যদি কেউ কনজুস বলে ক্ষতি নেই,পুষিয়ে দিন তা বেশি লিখে লিখে |

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File