বাইবেল ভার্সেস কুরআন: পূর্ব নির্ধারিত মনোভাব এবং ইসলাম বিদ্বেষ সম্পর্কে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ১৭ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৫৯:৩৩ সকাল
গত বছর (২০১৫) সালের শেষ দিকে হলান্ডে কুরআন শরিফ এবং বাইবেলের বক্তব্য নিয়ে একটি আলোচিত গবেষণা (জরীপও বলা যায় ) হয় | এই গবেষনার উদ্দেশ্য ছিল ওয়েস্টার্ন দেশগুলির মানুষের ইসলাম সম্পর্কে জেনেরেলাইজড বা সাধারনিকৃত ধারণা পোষণ করা কিন্তু অন্য দিকে নিজস্ব ধর্ম খৃস্টান ধর্মের চরমপন্থাগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতা সম্পর্কে একটি ধারণা করা | গত বছর প্যারিসে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সন্ত্রাসী আক্রমন, শত মানুষের হত্যা এবং আরো অসংখ্য মানুষের হতাহত হবার ঘটনা পশ্চিমে আইসিস এবং ইসলামের সমর্ক সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে |এই সন্ত্রাসী ঘটনা ইসলামকে পশ্চিমে আরো কঠিন যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে ফেলে থেকে দিয়েছে | মুসলিমদের সম্পর্কে পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষের বিশেষ করে ইসলাম বিরোধিতাকারী মানুষদের অন্যতম একটি সমালোচনা হলো মুসলিমরা এমন একটি ধর্মের অনুসারী পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যার কোনো স্থান নেই |ইসলাম সম্পর্কে এই অব্যাহত ফিল্টারিং বা যাচাই বাছাই থেকে কিছু গবেষক ক্রিস্টিয়ানিটি এবং এর আইন কানুন এবং পশ্চিমা সংস্কৃতিতে তার প্রাসংগিকতা সম্পর্কে মানুষের মনোভাব জানার চেষ্টা করেন |
ভিডিওতে ধারণ করা এই গবেষণায় কিছু পথচারীকে রান্ডম ভাবে পথচারীদের মধ্যে থেকে বাছাই করা হয় | এই ভিডিও গবেষনার দুই প্রধান গবেষক সাশা হারল্যান্ড এবং আলেকজান্ডার স্পুর এই গবেষনার উদ্দেশ্যে নতুন কেনা একটি ওল্ড টেস্টামেন্টের উপর কুরআনের কভার লাগিয়ে দেন | ওল্ড টেস্টামেন্টের থেকে কিছু ভার্স চিহ্নিত করা হয় যেগুলো পশ্চিমা সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে পুরোপুরি ভাবে সাংঘর্ষিক |
তারপর ওল্ড টেস্টামেন্টের চিহ্নিত ভার্সগুলো পথচারীদের পরে শোনানো হয় আর কুরআনের (আসলে ওল্ড টেস্টামেন্টের ) সেই ভার্সগুলোর উপর তাদের মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া ভিডিও করা হয় | তাদের কাছে পুরো বিষয়টি এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে সবাই কুরআনের ভার্স শুনছে বলে বিশ্বাস করে | এই ভিডিও গবেষণার জন্য ধারনকৃত পুরো কথাবার্তাই ডাচ ভাষায় | আমি ইংরেজি সাব টাইটেলকে ভিত্তি করে এ'লেখাটা লিখলাম | আমার অনুবাদের দুর্বলতার কারণে শ্রোতাদের উত্তরের আসল ম্যাসেজগুলো যেন পাঠকদের বুঝতে অসুবিধা না হয় সেজন্য আমি ওল্ড টেস্টামেন্টের ব্যবহত ভার্সগুলোর ইংরেজি বর্ণনা তুলে দিলাম ব্রাকেটের মধ্যে | একই কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গবেষনার অন্তর্ভুক্ত শ্রোতাদের উত্তরের ইংরেজি অনুবাদের সাব টাইটেল গুলোও ব্রাকেটে দিয়ে দিলাম আমার বাংলা অনুবাদের সাথে তুলনার সুবিধার্থে |ওল্ড টেস্টামেন্টের নিম্নোক্ত ভার্স্গুলো শ্রোতাদের পরে শোনানো হয় :
ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে উধৃতি দেওয়া হয় যে একজন নারীর অবশ্যই মৌন থাকা (বাধ্যতা অর্থে) শিখতে হবে | এই বই অনুযায়ী একজন নারীকে সারা জীবনই অধীনস্থ থাকতে হবে (“A woman should learn in quietness and full submission... টিমোথি ২:১১) |তার পরের উদ্ধৃত ভার্স "আমি একজন নারীকে শিক্ষা দিতে কাউকে অনুমতি দেই না…তাকে অবশ্যই চুপ থাকতে হবে ("I do not allow a woman to teach…."/ I do not permit a woman to teach or to assume authority over a man; she must be quiet টিমোথি ২:১২).
যদি যুদ্ধরত দুজন পুরুষকে দেখে তাদের কোনো একজনের স্ত্রী তার স্বামীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে এবং যুদ্ধরত অন্য পুরুষের গুপ্তান্গে আঘাত করে তাকে কাবু করে তবে তোমরা সেই নারীর মাথা কেটে ফেলবে এবং কোনো দয়া দেখাবে না (“If two men are fighting and the wife of one of them comes to rescue her husband from his assailant, and she reaches out and seizes him by his private parts, you shall cut off her hand. Show her no pity”, Deuteronomy: 25:12).
হোমো সেক্সচুয়াল সকল পুরুষকে হত্যা করতে হবে ("If two men sleep with each other they will both have to be killed", Leviticus, 20:13)
যদি তোমরা আমার আদেশ অস্বীকার এবং আইন অমান্য কর তবে তোমরা তোমাদের নিজেদের ছেলেদের শরীরের মাংশ খাবে... এবং তোমাদের নিজেদের মেয়েদেরও” ("If you reject my commands and abhor my laws you will eat the flesh of your own sons... and the flesh of your own daughters")|
কুরআন ভার্স হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্টের ভার্স্গুলো শ্রোতাদের বলার পর এগুলো সম্পর্কে তাদের মনোভাব কি জানতে চাওয়া হলে এ প্রসংগে শ্রোতাদের প্রথম মন্তব্য হলো এইসব নিয়ম নীতি হাস্যকর | এ প্রসংগে এক মহিলা মন্তব্য করেন যে, আমার জানা ছিল না যে এই ধরনের বক্তব্যও কুরানে আছে | অন্য এক মহিলা মন্তব্য করেন যে, এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য যে কেমন করে একজন মানুষ এই সব বিশ্বাস করতে পারে |
ডিউটোরনমি ২৫:১২ এবং লেভিটিকাস ২০:১৩ ভার্স্গুলো শ্রোতাদের মধ্যে ক্রূদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে | এ প্রসংগে এক মহিলা মন্তব্য করেন যে, মানুষের হাত কেটে ফেলা ...আমি মনে করি তারা (মুসলিমরা) সে রকমই | তাছাড়া কেউ যদি এই বই পরে বড় হয় তাহলে নিশ্চিত ভাবেই এই বইয়ের বক্তব্যগুলো সেই মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করবে | একজন মহিলা মন্তব্য করেন, মনে হচ্ছে তারা (মুসলিমরা) আপনাকে দমন করতে চায়, এবং তারা যা বিশ্বাস করে তা অন্যকেও বিশ্বাস করতে বাধ্য করাতে চায় |
তাদের যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে এই বইয়ের সাথে তুলনামূলক ভাবে বাইবেলের মূল পার্থক্য কোথায় ? এর উত্তরে একজন শ্রোতা মন্তব্য করেন আমি মনে করি কুরআনের বক্তব্য খুব ধ্বংসাত্মক | বিশেষ করে মানুষের হাত কাটা সম্পর্কে |
অন্য একজন মহিলা মন্তব্য করেন, আমি মনে করি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাইবেলে ইতিবাচক বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত | এই কাহিনীগুলো বাইবেলে আরো ভিন্ন রকম ভাবে বলা হয়েছে বলে এক তরুণ মন্তব্য করেন | এই তরুণ আরো বলেন, বাইবেল এ সম্পর্কে অনেক বেশি নমনীয় এবং (প্রয়োগের দিক থেকে) অনেক শান্তিপূর্ণ |
কুরআন আর বাইবেলের পার্থক্য সম্পর্কে একজন মহিলা বক্তব্য সবচেয়ে বড় পার্থক্য এটাই যা আমরা এখন শুনলাম, তা হলো নারীদের ভুমিকা | পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তাদেরও (মুসলিমদের) এগুলো গ্রহণ করা উচিত (তাদের ধর্ম গ্রন্থে ) বলে একজন মহিলা মত প্রকাশ করেন |
আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মানুষই তাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করার আর কথা বলার স্বাধীনতাই বিশ্বাসী | আর সেই স্বাধীনতা সবসময়ই যেকোনো বিষয়ই ভিন্নভাবে অনুসরণে উত্সাহিত করে আমার ধারণা |লেভিটিকাস ২০:১৩ ভার্স্গুলোকে লক্ষ্য করেই এই মন্তব্য করা হয়েছে |
একজন মহিলা বলেন যে, এটা আমার কাছে খুবই অস্বস্তিকর যে কিছু মানুষ কিভাবে এখনো এইসব প্রাচীন গ্রন্থকে অপরিবর্তনীয় সত্যি (absolute truth ) হিসেবে বিশ্বাস করতে পারে |
এই সব মন্তব্যের পর গবেষক জিগ্গেস করেন যে তবে কি ভাবে আমরা এইসব গ্রন্থ থেকে মুক্তি পেতে পারি ? এর উত্তরে একজন মন্তব্য করেন যে এইসব গ্রন্থ অত্যন্ত প্রাচীন |এসম্পর্কে আমাদের কিছু করণীয় নেই |
তাদের যখন জানানো হয় যে এই ভার্স্গুলো সবই ওল্ড টেস্টামেন্টের থেকে বলা হয়েছে তখন তাদের সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় | বাইবেল ভার্সগুলো পবিত্র কুরআনের বক্তব্য মনে করে মতামত দেওয়া সম্পর্কে গবেষনার অন্তর্ভুক্ত একজনের মন্তব্য " এগুলো সবই হলো সংকীর্ণ মানসিকতা, ন্যারো মাইন্ডসেট, আমি সবসময় চেষ্টা করি সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করতে কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমি আসলে সংকীর্ণ মনোভাব পোষণকারিদেরই একজন হয়ে আছি ("It's all just prejudice really, I always try not to be prejudiced myself but apparently I already am")| এটা (মুসলিমদের প্রতি ) আমরা প্রতিদিনই অসচেতন ভাবে করে চলেছি |
শ্রোতাদের একজন মন্তব্য করেন যে এ সম্পর্কে (ইসলাম সম্পর্কে ন্যারো মাইন্ডসেট) মিডিয়ার একটা বড় ভুমিকা আছে | এই সুত্র ধরেই আরেকজন মন্তব্য করেন, এই সব বিষয়ে সচেতন ভাবে (মিডিয়া দিয়ে প্রভাবিত না হয়ে ) চিন্তা ভাবনা করা খুবই দরকারী এবং এক্ষেত্রে যৌক্তিক ভাবে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা করতে এবং নিজের সুবিধা অনুযায়ী উপসংহারে আসতে বিবেচনা প্রয়োগ করা দরকার |
ভার্স্গুলো ওল্ড টেস্টামেন্টের সেটা জানার পর একজন মহিলা মন্তব্য করেন, আমি অবশ্যই বাইবেলের কাহিনীগুলো জানি | আমি ছোটো বেলায় ক্রিস্টিয়ান স্কুলে পরেছি, কিন্তু আমার কোনো ধারনাই ছিলনা যে এই সব কথা বাইবেলে থাকতে পারে ("Of course I’ve heard Bible stories when I was young and I went to a Christian school, but I really had no idea this was in there")|
ইউটিউবে আপলোড করার পরপরই এই ভিডিওটি ৭.২৫ মিলিয়ন বার এবং ফেসবুকে ৩৭৫ হাজার বারেরও বেশি দেখা হয়েছে গত কয়েক মাসের অল্প সময়ের মধ্যেই | এই ভিডিও গবেষণায় ব্যবহত বাইবেলের উপরে বলা ভার্স্গুলো সম্পর্কে আমার কোনো বক্তব্য নেই | আমি ধর্মতাত্বিক নই | এই ভার্স্গুলোর পটভুমিকা আমার জানা নেই | এ ভার্সগুলোর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করার যোগ্যতাও আমার নেই | এই গবেষণাটা (বা জরিপ ) সম্পর্কে হাফিংটন পোস্টে পরবার পর থেকেই আর এই ভিডিওটা দেখার পর থেকেই কতগুলো জিনিস মাথা থেকে আর যাচ্ছে না |
ইসলাম নিয়ে পাশ্চাত্যের সমালোচনার অন্ত নেই | কারণে-অকারণে, সত্যি-মিথ্যা, শ্লীল-অশ্লীল সব ধরনের অভিযোগই করা হচ্ছে প্রতিদিন সেই সেপ্টেম্বর ১১-র পর থেকে গত এক দশক ধরেই| ওয়ান ইলেভেনের সময় আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র থাকা এবং সেই থেকে এখানে থাকার কারণেই তখন থেকে আমেরিকার (আমার মনে হয় ইউরোপও আর অন্যান্য নন মুসলিম দেশগুলোতেও) মানুষের ইসলাম নিয়ে মন মানসিকতা দেখার আর পরিবর্তনের সুযোগ আমার হয়েছে | তার উপর ইদানিং আইসিসের উত্থান আর এর সাথে জড়িয়ে যাওয়া পাশ্চাত্য রাজনীতি, ঘাত- প্রতিঘাত ইসলাম সম্পর্কে ক্ষুরধার, কিছু ক্ষেত্রে অন্যায় সমালোচনার বাড়িয়েছে বৈ কমায়নি মোটেই|
ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের নেতিবাচক প্রচারণা, ইসলামকে সহিংস হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টার বিরুদ্ধে ইসলামের মূল নীতিগুলো, ইসলামের মানবিকতা, সামাজিক সাম্য, ন্যায় বিচার, নারীর সামাজিক অধিকার রক্ষ্যা এসব বিষয়কে মূলনীতি হিসেবে প্রায় পনেরশ' বছর আগেই ইসলাম যে গুরত্ব দিয়েছে (যা আধুনিক পাশ্চাত্যের দেশগুলো এই মাত্র সেদিন থেকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে) তা জানানোর কাজটা আমরা মুসলিমরা বড় ভলেউমে কখনই খুব বেশি করে পারিনি নানা সীমাবদ্ধতার কারণেই | কিন্তু সারা বিশ্বের প্রচার প্রচারণা আর ষড়যন্ত্রের পরও আল্লাহ ইসলামের প্রসারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন | আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেছেন “তোমাদের কাছে যা ঘোষণা করা হচ্ছে তা বাস্তবায়িত হবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না” (৬ - ১৩৪) | আর এই প্রসারের কাজ যে আল্লাহর সহায়তা ছাড়া হবে না কুরআন শরীফে আল্লাহ তা প্রায় পনেরশ' বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছেন | আল্লাহ কুরআন শরীফে পরিস্কার ভাবেই বলেছেন "...আর সাহায্যতো আল্লাহর কাছ থেকেই আসে, নিশ্চই আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সুরা আনফাল :১০)| আল্লাহ কুরআন শরীফে আরো বলেছেন,"আল্লাহ সাহায্য করলে কেউ তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না; তিনি যদি সাহায্য না করেন, তবে কে আছে সাহায্য করার ?..." (সুরা আল ইমরান :১৬০)| এত অপপ্রচার, মিথ্যা প্রোপাগান্ডার মধ্যেও ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্য এখন অনেক সত্যিও জানতে পারছে| তাই এই ভিডিও গবেষনার কথাটা আমি যখনই ভাবি তখনই আমার অবাক লাগে | বিশেষ করে যেই দেশে এই ভিডিও গবেষণাটা হলো আর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল ত়া ভেবে আমি সত্যিই অবাক হই |
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ড বা হল্যান্ড হলো সবচেয়ে বেশি বা সবচেয়ে বেশি ইসলাম বিদ্বেষী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা |এর মানুষরা কিছুটা রেসিস্টও বলে আমার মনে হয় | বাংলাদেশের মানুষ খুবই ফুটবল পাগল তাই নেদারল্যান্ড সম্পর্কে ফুটবলের একটা উধাহরণ দেই | নেদারল্যান্ড ইউরোপ তো বটেই সারা বিশ্বই ফুটবলের একটি সুপার পাওয়ার | কিন্তু ১৯৭৪ সালের পর থেকেই নেদারল্যান্ড কখনো পুরো শক্তি নিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল রাউন্ডে খেলতে পারেনি এদের সাদা আর কালো প্লেয়ারদের মধ্যেকার বর্ণবৈষম্যের কারণে|এই নিয়ে অনেক কালো প্লেয়ার প্রকাশ্যে অভিযোগই করেছেন| ইসলাম সম্পর্কে এদের বিদ্বেষ আরোও চড়া | অনেকেরই মনে থাকতে পারে চার-পাঁচ বছর আগে নেদারল্যান্ডের ফার রাইট (চূড়ান্ত ইসলাম বিদ্বেষী) পার্লামেন্টারী রাজনৈতিক দলের অন্যতম নেতা Arnoud Van Doorn যিনি দলের প্রধান নেতা Geert Wilders এর সাথে যোগ দিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী "ফিতনা " নামের একটি ভিডিও বানিয়েছিলেন | এই ভিডিওতে অন্যায় ভাবে যে শুধু ইসলামকেই উপহাস করা হয়েছিল তাই নয় আল্লাহ আর তাঁর রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহী আলাইহিস সালামকেও কদর্য ভাবে আক্রমন করা হয় | এই ভিডিওটি বিশেষ ভাবে ইউরোপ জুড়ে বিক্রিরও ব্যবস্থা করেছিলেন Van Doorn এবং Geert Wilders | কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ইসলামের বিরুদ্ধে অক্লান্ত ঘৃনা ছড়ানো এই সেই ভিডিওটি বানানোর অল্প পরেই Van Doorn ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন | তার ছেলেও ইসলাম গ্রহণ করেন | পরে Van Doorn নেদারল্যান্ডে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করার ইচ্ছা করেন |ইদানিং নেদারল্যান্ডে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে অনেক জোরেশোরেই আলোচনা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে |
যাক যা বলছিলাম, পাশ্চাত্যে অনেক অনেক যোগ্য মুসলিম আছেন | অনেকে খুব পরিচিত তাদের নিজেদের কাজ দিয়েই | তারপর ও ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কষ্টই হচ্ছে | কিন্তু সাম্প্রতিক যে কয়েকটি ঘটনায় ইসলাম সম্পর্কে মানুষের চিন্তা ভাবনা আকস্মিক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে তার কোনটিই খুব স্বাভাবিক নয় | যেই ভিডিওটির আলোচনা দিয়ে আজকের লেখাটা শুরু করেছিলাম তার ব্যাপারটাই যদি ধরি, কোনো মুসলিম এই ভিডিওটির সাথে জড়িত নয় কিন্তু এটা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্র হয়ে গেছে পাশ্চাত্যের প্রধান ধর্মের সহিংস দিকগুলো সবার সামনে উন্মোচনের কারণেই | ইসলামের ব্যাপারে সহিষ্ণুতা এবং সমর্থনও দিন দিন এসব কারণে বাড়ছে অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও তা যত অল্প বা ধীরই হোক না কেন | আর ইসলাম সম্পর্কে এই সহিষ্ণুতা বাড়া আর সমর্থন বাড়ার কারণ হিসেবে কাজ করছে ইউরোপের অন্যতম ইসলমা বিদ্বেষী দেশ নেদারল্যান্ড ! আল্লাহ নিশ্চিত ভাবেই সবচেয়ে কৌশলী ! কুরআন শরীফে আল্লাহ প্রায় পনেরশ' বছর আগেই যা বলেছেন “তোমাদের কাছে যা ঘোষণা করা হচ্ছে তা বাস্তবায়িত হবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না” বা "...আর সাহায্যতো আল্লাহর কাছ থেকেই আসে, নিশ্চই আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সুরা আনফাল :১০) অথবা সুরা আল আল ইমরানের আয়াত ,"আল্লাহ সাহায্য করলে কেউ তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না; তিনি যদি সাহায্য না করেন, তবে কে আছে সাহায্য করার ?...(:১৬০)” তাই এখন ঘটছে ! যতবার আমি এই আয়াতগুলো মনে করি ততই বিস্মিত হই | পনেরশ' বছর আগে আরবের মরুভূমিতে নাজিল হওয়া এই ঐশ্বী গ্রন্থ এই আধুনিক যুগেও বারে বারে তার মেসেজগুলোকে সত্যি প্রমান করে যাচ্ছে | আমরাই বুঝি সেই মেসেজগুলো বুঝতে পারছি না |
আল্লাহ প্রায় পনেরশ' বছর আগেই কুরআন শরীফের সুরা মুহাম্মাদে প্রশ্ন করেছেন “আফালা ইয়াতাদাব্বারুনাল কুর আনা আম আলা কুলুবিন আক ফালুহা “-তবে তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? না তাদের অন্তরে তালা পড়ে গিয়েছে?” (৪৭ : ২৪) | ইসলাম বিদ্বেষীদের মত আমরা মুসলিমরাও মনে হয় সত্যিই এখনো কুরআন নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করছি না তাই আর মেসেজগুলোও এখনো বোধহয় আমরা ধরতে পারছি না | ইসলাম বিরোধী এই হট্টগোলেও এখন আর তত চিন্তা হয় না | ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের অব্যাহত নেতিবাচক প্রচারণা, বিদ্বেষের ছড়ানোর এই সংকটময় মুহূর্তে মুসলিম হিসেবে এখন আর তাই ভয় লাগে না | আল্লাহ নিশ্চই তার দ্বীনকে ভাবেই রক্ষ্যা করবেন তা আমরা এক বিলিয়ন মুসলিম সন্মিলিত ভাবে যতই ব্যর্থ হই না কেন | মুসলিম হিসেবে তাই এই সংকটময় সময়েও আমি গর্বিত, নো রিগ্রেট, নো রিগ্রেট এট অল |
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুরোটা পড়লাম আলহামদুলিল্লাহ!
পাশ্চাত্য সমাজ ব্যাবস্থা এখন ইসলাম বিরোধী সমস্ত কাজ কে শো করে ইসলামের বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সফল ও হচ্ছে। আমি মনে করি আমরা মুসলিমরা আমাদেরো এই বিদ্বেষ ছড়ানোর বিপক্ষে কিছু ভূমিকা রাখা দরকার।
পর এই উনাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো ঐ ভার্স গুলো কোরানের নয় বরং ওদের বাইবেলের ?
শুকরিয়া আপনাকে বাস্তবধর্মী বিষয়টা নিয়ে লিখার জন্য!
মন্তব্য করতে লগইন করুন