পনেরশ বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলা হাদিস আর বর্তমানে ঘটা তার কিছু নিদর্শন (পর্ব – ২)
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২৬:১০ সকাল
সেল ফোনের স্ক্রিনে ডেট্রয়েট থেকে আসা নাম্বারটা দেখেও বুঝতে পারছিলাম না যে ফোনটা কার হতে পারে | টিভিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিবেট দেখছিলাম | ধরি ধরবনা করতে করতে শেষে ফোনটা ধরেই ফেললাম | অন্য দিকের থেকে আমাকেই চাইছে কিন্তু গলাটা শুনে ঠিক চিনতে পারলাম না |আমি কখনই গল্প গুজবে খুব পটু নই | বরং ঘরকুনো হিসেবে আমার যথেষ্ঠ পরিচিতি আমার ছোটো বেলা থেকেই আছে | স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে আমার যে অনেক বনধু ছিল তাও নয় |তার মধ্যে অনেক দিন ধরে দেশের বাইরে | কলেজ ইউনিভার্সিটির অনেকের সাথেই অনেক দিন যোগাযোগ নেই | তাই প্রথম কিছুক্ষণ গলাটা শুনেও চিনতে পারছিলাম না কে হতে পারে | স্কুলের কেউ হিন্টটা পেয়েই বুঝলাম গলাটা বনধু -মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের আর তারপর বুয়েটের তুখোর ছাত্র মিথুনের |
অনেক অনেক দিন পর কথা হলো ওর সাথে | ঢাকা ইউনিভার্সিটি পরার সময় শেষ কথা হয়ে ছিল | স্কুলে পরার সময় আমরা একই এলাকায় থাকতাম | ওর আব্বা ছিলেন প্রায় আমাদের ফ্যামিলি ডাক্তারের মত | তাই বন্ধুদের মধ্যে ওর সাথে সম্পর্কটা ছিল খানিকটা অন্যরকম | এস এস সি পাশের পর আমি ঢাকা কলেজে পরেছি আর মিথুন নটরডেম কলেজে | ইউনিভার্সিটি পরার সময় ওরা প্রায়ই আসতো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে| ইউনিভার্সিটি শেষ করে আম কয়েক মাস চিটাগাঙ ইপিজেড (EPZ) - এ আর তারপর রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে প্রায় সাড়ে চার বছর পড়িয়েছি | সেজন্য পুরনো বন্ধুদের সাথে সব সময়ই অনেক যোগাযোগ রাখতে পারিনি | তাছাড়া এখনকার মত তখনতো সেলফোন, ইমেইল,ইন্টারটের এত প্রসার হয়নি তাই যোগাযোগ সব সময় সহজ ছিল না |যার জন্য অনেকের মতই মিথুনের সাথেও বাংলাদেশে থেকে চলে আসার আগে থেকেই যোগাযোগ অনেকটাই কমে গিয়েছিল | আমি আমেরিকায় আসার বেশ কয়েক বছর পর মিথুন কানাডায় আসে পড়াশোনার জন্য | কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে ওখানেই চাকুরী করে কয়েক বছর |যার জন্য ওর সাথে আর যোগাযোগ ছিল না |কিছু দিন আগে মিশিগানের ডেট্রয়েটে চাকুরী নিয়ে এসেছে | অনেক অনেক বছর পর কথা হলো ওর সাথে | অনেক কথা বলার পর আমার সব বন্ধুই আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা করে মিথুনও সেটাই করলো | কেন ফেস বুকে নেই ? ফেসবুকে থাকলেতো সবার সাথে যোগাযোগটা থাকে? আমি হাসি ওর কথায় | সত্যি কথাটা অবশ্য ওকে বলি না | এড়িয়ে যাই | বলতে ইচ্ছে হয় ভালো লাগে না ফেসবুকের আইডিয়াটা | মিথুনকে বলিনি আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমার ফেসবুক ইউজ না করার পেছনের কিছু ডিলিম্মা, কিছু উপলব্ধির কথা |
সামুরাহ ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন | তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই তাঁর সাহাবীদেরকে বলতেন, ‘‘তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছে কি?’’ সামুরাহ ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু (রাবী) বলেন, যার ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সে তাঁর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন সকালে বললেন, ‘‘গতরাত্রে আমার কাছে দুজন আগন্তুক এলো। তারা আমাকে উঠাল, আর বলল, ‘চলুন’ (নীচের প্যারাতে আমি হাদিসের প্রথম ঘটনাটা বাদ রেখে দ্বিতীয় ঘটনাটা বর্ণনা করছি |এই হাদিসে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র | তাই ইনশাআল্লাহ আমার আংশিক বর্ণনা হাদিসের মূল বিষয়ের বা এই হাদিসের মূল বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না বলে আমি আশা করি)|…
(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) আমরা চলতে লাগলাম, তারপর চিত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এর দ্বারা তার কশ থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। তারপর ঐ লোকটি শোয়া ব্যক্তির অপরদিকে যাচ্ছে এবং প্রথম দিকের সাথে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণই অপর দিকের সাথেও করছে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার প্রথম বারের মত আচরণ করছে। [তিনি বলেন,] আমি বললাম, ‘সুবহানাল্লাহ! এরা কারা?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
এই ঘটনা দেখার পর সেই দুই আগুন্তক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরো কয়েকটি জায়গায় নিয়ে গেলেন | প্রতিটি জায়গায়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নানান বিস্ময়কর ঘটনা দেখলেন | প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তাত্পর্য জানতে চাইলে সেই দুই আগুন্তক তা না বলে তাঁকে পরবর্তী ঘটনার দিকে নিয়ে গেলেন | সব শেষের ঘটনা দেখা শেষ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার ঘটনাগুলোর তাত্পর্য জানতে চাইলেন|
(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) আমি বললাম, ‘আমি রাতে অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেলাম, এগুলোর তারপর্য কি?’ তারা আমাকে বলল, ‘আচ্ছা আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি (আমি এখানে শুধু দ্বিতীয় যে ঘটনাটা আগে বর্ণনা করেছি সেটার যে তাত্পর্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন সেটুকুই বলছি ) |…
(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুই আগুন্তক বললেন) “আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তার কশ থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল। সে হল ঐ ব্যক্তি যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে” (রিয়াযুস স্বা-লিহীন,অধ্যায়ঃ ১৮/ নিষিদ্ধ বিষয়াবলী, পরিচ্ছদ ২৬০, হাদিস নম্বর ১৫৫৪, তাওহীদ পাবলিকেশন)|
আরেকটি বর্ণনায় আছে দুই আগুন্তক নিজেদের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি জিবরীল, আর ইনি মীকাঈল | দ্বিতীয় ঘটনার তাত্পর্য সম্পর্কে তাঁরা বললেন ‘‘আর যাকে আপনি তার নিজ কশ চিরতে দেখলেন, সে হল বড় মিথ্যুক; যে মিথ্যা কথা বলত, অতঃপর তা তার নিকট থেকে বর্ণনা করা হত। ফলে তা দিকচক্রবালে পৌঁছে যেত। অতএব এই আচরণ তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’’
এই হাদিসের বাংলা অনুবাদগুলো আমার সব সময়ই কঠিন লাগে | " চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে" বা " দিক চক্রবালে পৌঁছে যেত" এই কথাগুলো দিয়ে ঠিক কি বোঝায় তা আমার কাছে কখনই বাংলা অনুবাদ থেকে পরিস্কার হয়নি | চতুর্দিক বা 'দিকচক্রবাল' বলতে কি কারো বাসার আশে পাশের 'চতুর্দিক' বা খালি চোখে যতটুকু দেখা যায় অল্প ততটুকু সীমানাই 'দিকচক্রবাল' না অনেক দূর পর্যন্ত 'চতুর্দিক' এবং 'দিকচক্রবাল' তা কখনই আমর কাছে পরিস্কার হয়নি | আমি রিয়াযুস সালেহীনের কতগুলো ইংরেজি অনুবাদ দেখেছি দুই আগুন্তক হাদিসের এই ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যায় কি বোঝাতে চেয়েছেন তা ঠিকমত বোঝবার জন্য | তার একটি অনুবাদ (দ্বিতীয় যে ঘটনাটা আগে বর্ণনা করেছি সেটা আর তার যে তাত্পর্য দুই আগুন্তক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বর্ণনা করেছেন সেটুকু) নীচে কোটেশনের সাথে হূবুহূ তুলে দিলাম বাংলা অনুবাদের সাথে পার্থক্য বোঝাবার জন্য:
“…So we proceeded and came to a man lying in a prone position and another man standing over his head with an iron hook, and behold, he would put the hook in one side of the man's mouth and tear off that side of his face to the back (of the neck), and similarly tear his nose from front to back, and his eyes from front to back. Then he turned to the other side of the man's face and did just as he has done with the first side. He had hardly completed that (second) side when the first returned to its normal state. I said to my two companions, `Subhan -Allah! Who are these?' They said, `Proceed, proceed…
As for the man you came upon, whose sides of mouth, nostrils and eyes were torn off from front to back, he is the symbol of the man who goes out of his house in the morning and tells lies that are spread all over the world” (Islamhouse.com https://islamhouse.com/en/books/290639/).
আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবের সাথে কথা বলে আম নিশ্চিত হয়েছি যে ইংরেজি অনুবাদই এই হাদিসের মূল বক্তব্যের সাথে বেশি মানানসই|একদিন জুম্মার খুতবাতেও ঈমাম সাহেব ইংরেজি অনুবাদের অর্থই ব্যবহার করেছেন |
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় পনেরশ' বছর আগে যখন এই হাদিস বর্ণনা করেছেন তখন একজন মানুষের পক্ষে এমন মিথ্যে কথা বলা সম্ভব ছিল না যেটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে | কারণ সেই সময়ের দ্রুত যান্ত্রিক যানের তথা আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত মানুষের পক্ষে সহজ ছিল না |সর্বোপরি আধুনিক যোগাযোগ ও প্রযুক্তির অভাবে কোনো মানুষের একটা বার্তা ব্যাপক ভাবে দূর দুরান্তে অতিদ্রুত প্রচার করার বা পাঠানোর সুযোগও ছিল সীমিত ও কঠিন | আসলে রাসুলুল্লাহী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণনা আমার মতে সাহাবী বা তাবেইনদের সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল না | কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে পনেরশত বছর পর সেই হাদিস আমাদের সময়ের জন্য সাধাহরণ ভাবেই সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছে |
কিছু কিছু হাদিস ব্যাখ্যাকারী এই হাদীসের উক্ত মিথ্যেবাদীদের বিষয়ে বলেছেন এই মিথ্যাবাদীদের দলে তারা পড়তে পারে, যারা প্রচার মাধ্যমে; রেডিও, টিভি প্রভৃতিতে মিথ্যা বলে। কারণ তাদের মিথ্যা কথা দিকচক্রবালে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমার কাছে এই ব্যাখ্যা খানিকটা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে | কারণ আমরা যদি সীমিত অর্থে "দিকচক্রবাল" বা "চতুর্দিকে" কথাটা ধরি তাহলে এই কথাটা কিছুটা সত্যি হলেও হতে পারে | কিন্তু যদি এই "দিকচক্রবাল" বা "চতুর্দিকে" ধারনাটাকে ব্যাপক অর্থে নেই তবে এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট হয় না | কারণ রেডিও টিভির মধ্যে দিয়ে সীমিত ভাবে একটা মিথ্যে প্রচার করা যায় জাতীয়, ভাষাগত বা জিওগ্রাফিকাল লোকেশনের কারণে | কিন্তু খুব কম ভাষাতেই এই মিথ্যেকে আন্তর্জাতিকীকরণ করা যাবে | এছাড়াও সাধারণ মানুষ রেডিও বা টিভি ব্যবহার করে তাদের নিজের কথাটা, বিশ্বব্যাপী না হয় বাদই দিলাম, চারদিকে ছড়িয়ে দেবার কাজটাও এখনো সহজেই করতে পারেনা কোনো দেশেই বোধগম্য কারণেই | তাছাড়া মানুষকে সেই সব মিথ্যে আগে শুনতে রাজি থাকতে হবে মিথ্যে প্রচারের ক্ষেত্রে এমন একটা শর্তও আরোপ করতে হবে এই ব্যাখ্যা সত্যি বলে মানতে হলে | তা সীমিত বা ব্যাপক যে অর্থেই ধারণাগুলো নেই না কেন |
আমার মনে হয় রেডিও বা টিভি নয় বিশ্বব্যাপী দ্রুত মিথ্যে প্রচারের ক্ষেত্রে এই হাদিস এমন কোনো মাধ্যমের দাবি করে যা রেডিও টিভির চেয়ে বেশি সার্বজনীন হবে | সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন নিশ্চিত ভাবেই টিভি বা রেডিওর দর্শক-শ্রোতার সংখ্যার চেয়ে বেশি | ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে | ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী ২০১৫ সালে ছিল প্রায় হাফ বিলিয়ন | টুইটারের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান একইরকম |প্রতিমাসে টুইটারে ইউজাররা এক্টিভলি শুধু টুইট করে প্রায় ১ বিলিয়ন বার | সে তুলনায় আমেরিকায় ক্যাবল টিভি ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম এবং তাও আবার দ্রুত হারে কমছে | আমার ধারণা সারা পৃথিবীতেই চিত্রটা একই রকম হবে | এই বিচারে নিজস্ব বার্তা দ্রুত বিশ্বব্যাপী পাঠানোর সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম আমার মতে এখনকার সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম আর টুইটার| সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীরাই একটি মিথ্যেকে সচেতন বা অসচেতন ভাবে দ্রুত সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারে এমনকি ঘরের বাইরে থেকেও (যা ইংরেজি অনুবাদে বলা হয়েছে ) কোনো শর্তের অধীন না হয়েই | এখনতো সবাই ফেসবুক ব্যবহার করছে বেশি সেল ফোন বা ল্যাপটপ থেকে -ঘরের বাইরে থেকেই | আপনি নিজে কোনো মিথ্যে না পোস্ট করেও এই প্রক্রিয়ার ভাগিদার হয়ে যেতে পারেন শুধু মাত্র অন্যের কোনো মিথ্যে কমেন্ট আপনার ফেসবুকে ট্যাগ করে বা কোনো মিথ্যে স্টেটাস -এ কমেন্ট করে আরো হাজার মানুষের কাছে সেই মিথ্যেকে না জেনেই বিশ্বাসযোগ্য করতে | আপনি ফলো করেন মিলিয়ন ফলোয়ারধারী কোনো সেলিব্রেটিকে , রাজনৈতিক নেতা বা আন্তর্জাতিক কোনো খেলোয়ারকে- তাদের কোনো কমেন্টে যাচাই না করেই লাইক দিলেন বা তা আপনার ফেসবুকে ট্যাগ করলেন | আপনার কয়েকশ বন্ধুর আর তাদের ফেসবুক তাদের বন্ধুদের একাউন্ট লিংকগুলো হয়ে সেই ভুল বা মিথ্য়েটাই সারা পৃথিবীর আরো হাজার বা লক্ষ্য মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে নিমিষেই | কিছু ক্ষত্রে এই মিথ্যেটা হয়েও যেতে পারে বড় ধরনের কোনো মিথ্যে |যার জন্য আপনি কঠিন দোষের ভাগিদার হয়ে যেতে পারেন |
টেকনোলজি ব্যবহার নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই | আগ্রহেরও কোনো কমতি নেই | আমি যখন অনেক দিন আগে আমেরিকায় পড়তে আসি ইউনিভার্সিটিতে তখন আমার প্রথম অ্যাসিস্ট্যান্টশীপের কাজটাই ছিল মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের নামকরা প্রফেসর, ডঃ গ্রিফিনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ডেভেলপ করা |সেই তখন আমি যে ওয়েব ডেভেলপমেন্টে খুবই দক্ষ ছিলাম তাও না, কিন্তু ঘাবড়াই নি | খুবই আগ্রহের সাথেই সেই কাজটা করেছিলাম | তখনো ফেসবুক যুগ আসেনি | তাই সেই আগ্রহের কারণেই ডঃ গ্রিফিনের কাজ করতে যেয়ে আমার নিজের জন্যও একটা ওয়েব ডিজাইন করে ইউনিভার্সিটির সার্ভার ইউজ করে ইন্টারনেটে লাঞ্চ করে দিলাম | সে সময় কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির কিছু প্রফেসর, আমার প্রোগ্রামের বন্ধু, আমার বাংলাদেশী যে সব বন্ধু আমেরিকা আর ইউরোপের ইউনিভার্সিটিগুলোতে পরতো, দেশে আমার অল্প কিছু আত্মীয় স্বজনের সাথে আমার এই ওয়েব সাইট দিয়েই আমার এখনকার সোশাল মিডিয়ার কাজ চলত |মোনাঙ্গহিলা, ওহিও আর এলেঘানি রিভারের ত্রিসঙ্গমে আকাশছোয়া হাইরাইজ নিয়ে দাড়িয়ে থাকা পিট্সবার্গের অপরূপ ডাউনটাউন, পিটসবার্গের আঠার ইঞ্চি স্নো ফলের ছবি, সেই স্নোতে ভরা রাস্তায় আমি হাটছি, ফলের লাল নীল হাজার রঙ্গে রঙিন গাছ পালার ফটো এগুলো দেশের বন্ধুরা বা আত্মীয় স্বজনরা আমার মতই কখনো অবাক, কখনো মুগ্ধতা নিয়ে দেখে আমার কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করত | আমার মাস্টার্স প্রোগ্রাম শেষ করে আমি যখন পিএইচডির জন্য কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চলে আসি তারও দু'বছর পর পর্যন্ত আমার পারসনাল ওয়েব সাইটটা একটিভ ছিল তারপর ওয়েবসাইটটা বন্ধ হয়ে যায় |
যা হোক ফেসবুক তখনো আসেনি তাই তারপর থেকে সোশাল মিডিয়া বলতে আমরা এখন যা বুঝি সে রকম করে আর কিছু আর ছিল না |দু'হাজার চার সালে ফেসবুক লাঞ্চ করা হয় |তার অল্প পরেই যদিও আমিও একাউন্ট করলাম |পিএইচ্ ডি প্রোগ্রামের ছাত্র হিসেবে টুইটার একাউন্ট করতে হলো | পড়াশোনার অতি ব্যস্ততার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলো তেমন করে খুব ব্যবহার করা হয়নি কখনই | সোশ্যাল মিডিয়ার একটি মাত্র একাউন্টই আমি আমার নিজের জন্য ব্যবহার করি সেটা হলো লিন্কইড ইন | এটাও পুরোপুরি একাডেমিক কাজের জন্য | আমার এখনকার কলিগ, আমেরিকায় আমার প্রোগ্রামে পড়িয়েছেন যে সব ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, আমেরিকায় আমার সাথে পড়া পিএইচডির স্টুডেন্টরা যাদের বেশিরভাগই এখন আমেরিকায় বা ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিগুলোতে বা তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারী চাকুরী করছে আর আমার রিসার্চ ফিল্ডের সাথে জড়িত আমেরিকা ইউরোপের নানান ইউনিভার্সিটি, রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রিসার্চারদের সাথে যোগাগোগ রাখতেই আমার লিন্কইড ইন একাউন্ট ব্যবহার করতে হয় | আমার ফেসবুকের, টুইটারের একাউন্টগুলো যদিও এখনো আছে প্রায় নন ইউজড অবস্থায় | কিন্তু এই হাদিসটা পড়ার এবং বোঝার পর থেকেই ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করার ইচ্ছা আর হয় না | ব্যক্তিগত ইমেইলেও প্রায় কোনো কিছুই আমি গ্রূপে ফরওয়ার্ড করিনা পিওর ইনফরমেশন ছাড়া | আশাকরি আমরা যে যতটুকুই সোশ্যাল মিডিয়া,ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার যাই ব্যবহার করিনা কেন তাতে আমরা যেন সচেতন হই | যাতে আমরা জেনে বা না জেনে কোনো ভাবেই যেন মিথ্যে প্রচারের মাধ্যম হয়ে না যাই | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বপ্নে দেখা সেই অভিশপ্ত ব্যক্তির মত অন্তহীন শাস্তির মুখোমুখী আমাদের কাউকে যেন হতে না হয় | আল্লাহ আমাদের সবাইকেই দ্বীন দুনিয়ার ফিতনার থেকে, স্বপ্নে দেখা সেই অভিশপ্ত ব্যক্তির পরিণতির হাত থেকে রক্ষা করুন সেই দোয়াই করি |
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : একটি সকাল:আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ | হাদিসের কালেকশনগুলো খুবই কম্প্রিহেনসিভ | এগুলো পড়তে যেয়ে কত ভাবনা যে আসে মনে | সেরকমই কিছু ভাবনা থেকে এই লেখা | নিজের ভাবনাগুলো অন্যদের সাথেও শেয়ার করতে ইচ্ছে হলো | লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম | মনে হলো, যে কারণে লেখাটা শেয়ার করতে ইচ্ছে করেছিল তার উদ্দেশ্য পূরণ হলো | অনেক ধন্যবাদ নেবেন |
লিখার ভূমিকা, বর্ণনা, শেষ বক্তব্য এতো সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে করেছেন চোখ আটকে ছিলো প্রতিটি লাইনে! চমৎকার অনুভূতি এবং গঠনমূলক বিশ্লেষনের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
আমি ব্যক্তিগত ভাবে চেস্টা করি কনফার্ম না হয়ে কোনো সংবাদ বা ইস্যু লাইক বা শেয়ার না করতে! সোশাল মিডিয়াগুলোর উপকার, অপকার দুইটাই আছে , ভারসাম্য রাখতে জানা আসলেই যথেস্ট দক্ষতা এবং জ্ঞান এর প্রয়োজন!
আল্লাহ আমাদের সবাই কে সঠিক পথে রাখুন।
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন