বিলেটেড হ্যাপী নিউ ইয়ার ২০১৬
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ০৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:২৯:৪৪ সকাল
আমাদের এখানে চলছে প্রচন্ড স্নো ফল | এবারে আমাদের এখানে সেলিব্রাসন হলো হোয়াইট নিউ ইয়ার ডে | টিভিতে মাত্রই কিছুদিন আগের, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি, স্পেস ফ্লাইটের ইতিহাসে যুগান্তকারী একটা টেকনোলজিকাল ব্রেকথ্রুটা হলো সেটার উপর একটা ফিচার দেখছিলাম | আমাজন ফাউন্ডার জেব বেজোসের স্পেস ক্র্যাফট কোম্পানি “ব্লু অরিজিনের” একটা স্পেস ক্র্যাফট ফ্লাইট শেষ করে বুস্টার রকেটসহ ৩,২৯,৮৩৯ ফিট বা চুয়ান্ন মাইলের খানিকটা বেশি উচ্চতায় মহাশুন্যে ভ্রমন করে নিরাপদেই পৃথিবীতে ফিরে এলো | বুস্টার রকেটসহ এই ফিরে আসাটা যুগান্তকারী এজন্য যে এর আগে রকেটগুলো স্পেস ক্র্যাফটগুলোকে মহাশুন্যে বহন করে নিয়ে মহাশুন্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত | ফ্লাইটে যাওয়া রকেটগুলো প্লেনের মত পৃথিবীতে ল্যান্ড করতে পারত না | জেব বিজোসের এই সাফল্যের পর আশা করা হচ্ছে তাড়াতাড়িই এই টেকনোলজিটা এডাপ্ট করা যাবে যাতে রকেটসহ স্পেস ক্র্যাফটগুলো পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে | রিইউজেবল রকেট স্পেস অভিযানের ক্ষেত্রে খুবই গুরত্বপূর্ণ কারণ এই টেকনোলজির কারণে মহাশূন্য অভিযানের ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস করার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন |
আকাশ জুড়ে সাদা গুরি গুরি স্নো নিঁচে ঝরে পরছে | তিনতলার ড্রইং রুমের বড় স্লাইডিং গ্লাস ডোরের ভেতর থেকে পাইন গাছের আড়ালে গুরি গুরি স্নো ঝরে ঝরে পরছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে | ঠিক তখনই টিভিতে দেখাচ্ছিলওয়েস্ট টেক্সাসের ল্যান্ডিং জোনে এসে নামছিল ব্লু অরিজিনের মহাশূন্য ফেরত রকেটটা | প্রচন্ড গতিতে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর দিকে নেমে আসা একটা রকেট গতি কমিয়ে পৃথিবীর মাটিতে ল্যান্ড করছে লাইভ এই ঘটনাটা টেলিভিশনে দেখে একই সাথে খুব ভালো লাগলো আবার খারাপও লাগলো | সেই কোন দূর উচু থেকে মেঘ হয়ে যাওয়া পানিগুলো ঝিরি ঝিরি করে স্নো হয়ে নিঃশব্দে ঝরে পরছে ম্যাপেল পাতার উপর | পাতাগুলো যেন পরম মমতায় জড়িয়ে নিচ্ছে গুরি গুরি ঝরে পরা স্নো কে এতটুকু না নড়েই | সেই ঝিরি ঝিরি স্নো পরা দেখতে দেখতে হঠাতই আমার মনে পরে গেল এই স্পেস অভিযানেরই আরেকটি ঘটনা | অনেক দিন আগে এরকমই একটি বিষন্ন দিনে দূর মহাশূন্য থেকে তার নিঃসঙ্গ একমাত্র নভোচরসহ এ’রকমই ধীর গতিতে পৃথিবীতে এসে ল্যান্ড করার কথা ছিল মানুষের পাঠানো একটি মহাশূন্যযানের | কিন্তু সেই মহাশূন্যযানটি সেভাবে এসে নামতে পারেনি পৃথিবীর বুকে | যার ফলাফল মহাশূন্য অভিযানের ইতিহাসেই অন্যতম এক বিয়োগান্ত ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে |
মহাশূন্য অভিযানের ইতিহাসে আজকের রাশিয়ার, তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন, ‘সয়ুজ’ ছিল দীর্ঘতম সময় ধরে মহাশুন্যে অভিযান পরিচালনায় ব্যবহত মহাশূন্যযান | ষাট দশকের শুরুতে তৈরী তিনজন নভোচারী বহন ক্ষমতা সম্পন্ন এই মহাশূন্য যানগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যাতে নভোচারী বা কসমোনাটদের (cosmonaut) বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে বিশেষ করে চাঁদে লান্ডিঙের ক্ষেত্রে| রাশিয়ার এই সয়ুজ মহাশূন্যযানগুলো ছিল আমেরিকার নাসার ‘ জেমিনি’, চাঁদে প্রথম নামা "এপোলো ১১" এ'ধরনেরই রকেট, মহাশূন্যযানগুলোর সমমানের | চাঁদে অভিযানে প্রয়োজনীয় সব কিছুই এই সয়ুজ করতে পারত দারুন দক্ষতার সাথে | শুধু পৃথিবীতে ফিরে সফল ল্যান্ডিঙ্গের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই এই মহাশূন্য যানগুলোর সমস্যা হত | অন্তত এর প্রথম মহাকাশ অভিযানে উত্ক্ষেপণের পর পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সময় এ’কথাটি নিদারুন ভাবে সত্যি হয়ে উঠেছিল |
সযুজের নিচের দিকের মডিউলগুলোকে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যেন এগুলো ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউল থেকে পৃথক হয়ে অল্প রিট্রফায়ার রকেটসহ আমাদের এটোমস্ফেয়ারে ফিরে আসবে | একটা বড় প্যারাসুট নিচের মডিউলটির অবতরণকে ধীর করবে, মাটিতে নামার ঠিক আগে রকেট ফায়ার করে একটা কুশন তৈরী করবে ভিতরের নভোচারীর ল্যান্ডিঙ্গের জন্য | সোভিয়েত ইউনিয়নের আগের ভস্টক বা ভশদ ফ্লাইটের, যেটাতে মেজর গ্যাগারিন প্রথম মহাশুন্যে ভ্রমন করেছিলেন, সাথে সযুজের মূল পার্থক্যটাই ছিল এটা যে সয়ুজই ছিল প্রথম মহাশূন্যযান যেটা নভোচর সহ পৃথিবীতে ফিরে এসে ল্যান্ড করতে পারত |
১৯৬৭ সালের ২০ এপ্রিলের সযুজের প্রথম ফ্লাইটের মূল এবং ব্যাকআপ পাইলট হিসেবে ভ্লাদিমির কমারোভের (Vladimir Komarov) এবং মেজর ইউরি গ্যাগারিনের (Yuri Gagarin), মহাশূন্যযানে করে পৃথিবী প্রদক্ষিনকারী প্রথম মানুষ, নাম ঘোষণা করা হয় | সযুজের প্রথম ফ্লাইট হিসেবে এটা ছিল একটি জটিল এবং ঝুকিপূর্ণ | ১৯৬৭ সালের ২৩শে এপ্রিল কে ভ্লাদিমির কমারোভের সয়ুজ উত্ক্ষেপণের প্রাথমিক তারিখ হিসেবে স্থির হয় | মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো স্থির করা হয় ভ্লাদিমির কমরভের পরের দিন তিন নভোচারী ভালেরি বাইকভস্কি (Valery Bykovsky), আলেক্সেই য়েলিসীভ (Aleksei Yeliseev) এবং য়েভগেনি খ্রুনোভকে (Yevgeny Khrunov) নিয়ে সয়ুজ ২ উত্ক্ষেপণের| পরিকল্পনা অনুযায়ী কমারোভ জটিলতর স্পেস ক্রাফটটি নিয়ে সয়ুজ ২এর সাথে মিলিত হবেন এবং মহাশুন্যে ডক করবেন | সয়ুজ ২ থেকে দুই জন নভোচারী স্পেস ওয়াক করে সয়ুজ ১যে যাবে এবং সেই রিস্ট্রাকচারড ক্রু নিয়েই সয়ুজ অরবিট থেকে ফিরে আসবে |
এই পরিকল্পনার মূল সমস্যাটি ছিল যে সেই সময়ের টেকনোলজির প্রেক্ষিতে এই পরিকল্পনাটি ছিল খুবই উচ্চাভিলাশী এবং এটা ছিল সযুজের সক্ষমতার বাইরে | অনেক ইঞ্জিনিয়ার এবং কসমোনাটই সযুজের সাফল্য সম্পর্কে সন্দিহান ছিল এবং তাদের অনেকেই এই লাঞ্চিং-এর জন্য সয়ুজ তৈরী নয় বলে মত প্রকাশ করেন | সযুজের নভোচরহীন ফ্লাইটগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ যে সব ত্রুটি এবং অসম্পূর্ণতা ধারা পড়ে তাতে নভোচরদের প্রাণহানির জোড়ালো আশংকা ছিল| যদিও অনেকেই আরো বেশি নভোচরহীন টেস্ট ফ্লাইটের মাধমে ত্রুটিগুলো চিন্হিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার কথা বলেন তবে সত্যিকার অর্থে কেউই সযুজের লাঞ্চিং পেছানোর দাবি করেননি |সোভিয়েত ইউনিয়নের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট এবং কমুনিস্ট পার্টির প্রধান লিওনিদ ব্রেজনেভ চেয়েছিলেন ১৯৬৭ সালের মে মাসের এক তারিখে, শ্রমিক সংহতি দিবসে, সযুজের উত্ক্ষেপণের দিন হোক | সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারুরই মতামত দেবার কোনো অবকাশ ছিল না |চিন্হিত ত্রুটিগুলির জন্য, যার সংখ্যা ছিল ২০৩টি, মূল পাইলট হিসেবে কমারোভের আশংকিত হবার যথেষ্ঠ কারণ ছিল | সয়ুজ প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়াররা জানতেন যে এটা তখন নভোচরসহ ফ্লাইটের জন্য তৈরী নয় | সযুজ উত্ক্ষেপণের স্কেজিউল যখন ঘনিয়ে আসছিল তখন উদ্বিগ্ন ইঞ্জিনিয়ার এবং কসমোনাটরা একটি দশ পাতার পিটিশন করেন কর্তিপক্ষের কাছে সব চিন্হিত ত্রুটিগুলি নির্দেশ করে এবং ফ্লাইট বাতিলের দাবি জানিয়ে |
এটা কখনো জানা যায়নি যে সেই রিপোর্টাটির কি হয়েছিল | কিন্তু ধারণা করা হয় যে এটা কখনই উপুযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছেনি | সোভিয়েত সিস্টেমে অপছন্দনীয় বিষয়ের বার্তাবাহক সবসময়ই ছিল উচ্চ কর্তিপক্ষের বিরাগভাজন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বার্তাবাহককেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হত | মেজর গ্যাগারিনের কেজিবি এসকর্ট এবং বন্ধু ভেনিয়ামিন রুসায়েভ এই রিপোর্ট কোনো উর্ধতনের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন, সেজন্য তাকে সবধরনের নভোচর এবং স্পেস প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের থেকে সবসময়ের জন্য বিরত রাখার আদেশ দেওয়া হয় |
সয়ুজ উত্ক্ষেপণের কদিন আগে রুসায়েভ একটি ডিনারে কমারোভ এবং তার স্ত্রীর সাথে ছিলেন | ডিনার শেষে কেজিবি অফিসারের রুমে ঢোকার আগে কমারোভ ডিনারে আগত অন্য গেস্টদের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বলেন তিনি নিশ্চিত যে এই ফ্লাইট শেষে তিনি আর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না | কেউ কেউ তাকে এই অভিযান থেকে সরে যাবার পরামর্শ দিলে তিনি উত্তরে বলেন তাহলে পলিটব্যুরো তাকে তার সারাজীবনের অর্জন এবং সামরিকবাহিনীতে অর্জিত সন্মান থেকেই বঞ্চিত করবে এবং তার পরিবর্তে মেজর গ্যাগারিনকে সয়ুজ ফ্লাইটে পাঠাবে | কমারোভ সবাইকেই বলেন যে তিনি গ্যাগারিনের মত একজন জাতীয় বীর এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে জেনে শুনে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারেন না |
সয়ুজ উত্ক্ষেপণের দিন সবার মধ্যেই চূড়ান্ত অঘটনের একটা অমঙ্গল অনুভুতি ছড়িয়ে গেল | বিশেষ করে গ্যাগারিনের অস্বাভাবিক আচরণ অনেককেই অবাক করে | কমারোভের সাথে তার লাঞ্চ প্যাডে যাবার কোনো কথা ছিল না কিন্তু তিনি কমারোভের হাত ধরে লাঞ্চ প্যাড পর্যন্ত গিয়েছিলেন | তিনি কমারোভের জন্য প্রেসার স্যুটের দাবি করেন | যদিও এটা বিশেষ কিছু নয় কিন্তু একটা ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশ জানের একজন নভোচরের জন্য এটা একটা অতিরিক্ত ডিফেন্স তৈরী করার ক্ষেত্রে দরকারী ছিল | কেউ কেউ এটাও বলেছেন যে মেজর গ্যাগারিন সেদিন নানা ভাবেই উত্ক্ষেপণের প্রোসিডিউরে বিঘ্ন ঘটাবার চেষ্টা করেন যাতে লাঞ্চিঙ বাতিল হয় |
সয়ুজ যখন অরবিটে প্রদক্ষিন করতে শুরু করে তখন দুটি সোলার প্যানেলের মাত্র একটি সক্রিয় হয় এবং ভারসাম্যহীন মহাকাশযান অর্ধেক শক্তিতে ত্রুটিপূর্ণভাবে সচল থাকার চেষ্টা করতে থাকে | এই অবস্থায় সয়ুজ ২র উত্ক্ষেপণের পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং এটা ক্রমশই পরিস্কার হয়ে আসে যে কমারোভকে যত তারাতারি সম্ভব পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনাই সবচেযে সেরা সিদ্ধান্ত | সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কামারভের সয়ুজ যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে পুন: আগমন করে তখন অবস্থা আরো খারাপ হয় | ত্রুটিপূর্ণ ভাবে চলমান মহাকাশযান তখন পুরোপুরি ভারসাম্যহীন হয়ে নিচে নামার পরিবর্তে চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করে | কমারোভের পক্ষে ঘুর্নিযমান মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে এর ফলশ্রুতিতে সয়ুজ ১কে আর তিনি আর ল্যান্ডিং পজিশনে নিয়ে যেতে পারেননি অর্থাৎ তার রকেটের নিচের মডিউলকে মাটির দিকে ঘুরাতে পারেননি | এর মানে হলো মাটিতে ল্যান্ডিঙ্গের সময় রকেটের নিচের দিক থেকে সজোরে মহাশূন্যমুখী বহির্গত যে বল/শক্তির সযুজকে উর্ধমুখী করে ধীরে ধীরে মাটিতে নামতে সাহায্য করার কথা সেই প্রক্রিয়াটি আর সক্রিয় করা কমারোভের পক্ষে সম্ভব হয়নি | এর ফল শ্রুতিতে কমারোভকে নিয়ে সয়ুজ ১ সোজাসুজি মাটিতে এসে আছড়ে পড়ে |
সয়ুজ ১ যখন দানবীয় গতিতে পৃথিবীর দিকে নেমে আসছিল তখন তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাউনসেল অফ মিনিস্টারসের চেয়ারমান আলেক্সসি কোসিগিন কাঁদতে কাঁদতে কসমোনাট কমারোভকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেন | কমারোভের স্ত্রীকে কমিউনিকেশন রুমে নিয়ে আসা হয় তারা একান্তে কিছুক্ষণ কথা বলেন | কমারোভ তার স্ত্রীকে প্রকৃত অবস্থার কথা বলেন এবং তারা পস্পরকে বিদায় জানান | অন্তিম মুহুর্তে কমারোভ হতাশায় চিত্কার করে উঠেন | রকেট থেকে শেষ কমিউনিকেশন হিসেবে তার রাগ আর হতাশ চিত্কারই রেকর্ডেড হয় |
সয়ুজ ১ ২.৮টন মিটেওরাইটের শক্তি নিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে | সয়ুজ ক্যাপসুলটি মাটির সাথে প্রায় মিশে যায় এই ভয়ঙ্কর শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আছড়ে পরার কারণে|সযুজের ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধারকৃত কমারোভের পুরে অঙ্গার হয়ে যাওয়া কালো দগ্ধ শারীরিক কিছু অংশ তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত করা হয় | একজন মানুষের শরীরের অংশ হিসেবে চিনতে পারার মত কমারোভের একটি মাত্র অংশই সেখানে প্রদর্শন করা হয়েছিল আর সেটা ছিল তার হিল বোন্ (গোড়ালির লম্বা হাড়টুকু) |
যাহোক, জেফ বিজসের “ব্লু অরিজিনের” স্পেস ক্রাফটের সফল ল্যান্ডিং দেখার ব্যাপারে যা বলছিলাম | আমি ভাবছিলাম ছোটো ছোটো কত ঘটনা, কত সাফল্য, কত দুর্ঘটনা, কত প্রাণহানি, অশ্রু জল ঝরিয়ে মহাশূন্য অভিযানের আজকের এই সাফল্য এলো | গত একটা বছর নিজের আর বাংলাদেশের জন্যও অনেক ঘটনা বহুল কাটল | নিজের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই | আল্লাহ আরো একটা বছর পার করার সুযোগ দিলেন | সেজন্য শুকরিয়া জানাই | দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাটার জন্য খুবই খারাপ লাগছে | এর প্রভাবটা দেশের অর্থ সামাজিক ক্ষেত্র সহ অন্য সব বিষয়েই পরেছে | দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর হয়ে গেল আমেরিকায় | এই আমেরিকায় থেকে দেখছি ডেমোক্রাট আর রিপাবলিকানদের মধ্যে যতই আদর্শিক পার্থক্য থাকুক না কেন, নির্বাচনী বছরগুলিতে এরা যত জঘন্য কাঁদা ছুরাছুড়িই করুক না কেন এর কোনো প্রভাব এরা ব্যবসায়িক বা শিক্ষ্যা ক্ষেত্রে পড়তে দিচ্ছে না | ওয়ান ইলেভেনের আফটারম্যাথ খুব কাছে থেকেই দেখার স্বাক্ষী হয়ে রইলাম | ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্থানে হামলা, আইসিস নিয়ে ঝামেলা এত কিছুর মধ্যেও এদের বিজনেস, শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা এরা হতে দেয়না | এত সমস্যার মধ্যেও আমেরিকা যে চলতে পারছে তার কারণ হলো দেশ চালাবার জন্য এরা কিছু কমন গ্রাউন্ড চিন্হিত করতে পেরেছে যা কোনো কারণেই এরা ব্যাহত করে না | আশা করি নুতন বছরে বর্তমান স্পেস অভিযানের মতই নিজেদের পেছনের ভুল ভ্রান্তিগুলো থেকে শিখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশটার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাফল্য পাবার উপায়গুলো খুঁজে পাবে আর দেশের সেই উন্নয়ন সব সময়ের জন্য টেকসই করতে কিছু কমন গ্রাউন্ড বের করতে পারবে | নিজেদের পার্থক্যগুলোকে শুধুই পার্থক্য হিসেবে দেখবে, এই পার্থক্যকের জন্য অন্যদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করবে না | নুতুন বছর দেশের জন্য শুভ হয়ে আসুক | বিডি ব্লগের সবাইকে নুতুন বছরের শুভেচ্ছা |
বিষয়: বিবিধ
১৪৩১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পৃথিবী ধ্বংসের আলামত পাওয়া গেলে লোকজন কি অন্যগ্রহে পাড়ি জমানো শুরু করবে ? ৪৫ বছর আগে যে একবার চাঁদে গেছে এর পরে আর কোন খবরই নেই , এতদিনে তো সেখানে বসবাস শুরু করে দেবার কথা ! এখন শুধু মহাকাশে ঘোরাঘুরি করাটাকেই বড় করে দেখানো হচ্ছে !
পিএইচডি করার পর এখন এস.এস.সি. পরীক্ষা কি কেউ দেয় ?
এসব টাকা উড়ানো ফালতু গবেষনা নিয়ে মানুষ যে কেন উল্লাস করে সেটা বুঝি না যেখানে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে দিনানিপাত করছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন