মিডিয়ার ইসলামফোবিয়া প্রচার নিয়ন্ত্রনহীন| এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন (গ্যাব্রিয়েল আরানার হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৭:৫০ সকাল
আইসিসের সাম্প্রতিক প্যারিস আক্রমনের পর থেকেই খুবই মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছিলাম | এই হামলাকে কেন্দ্রকরে আবার ইউরোপ আর আমেরিকা জুড়ে ইসলামফোবিয়া ছড়ানোর একটা বড় সুযোগ চলে এসেছে কিছু মানুষের কাছে | আইসিসের সাথে জড়িয়ে রাত-দিন আমেরিকার বেশিরভাগ মেইনস্ট্রিম টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে ইসলামের বিরুদ্ধে নানান প্রচারণা | বিশেষ করে এবার আমেরিকাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্যাম্পেইন বছর বলে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এবং রক্ষনশীল রিপাবলিকান নিউজ মিডিয়াতে স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম বিরোধিতা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি|এই চূড়ান্ত ইসলাম বিরোধী প্রচারনায় বিরক্ত হয়ে প্যারিস এটাকের পর থেকে গত ক'দিনে সবশুদ্ধ দুই/তিন ঘন্টাও মনে হয় নিউজ চ্যানেলগুলো দেখিনি|
অনলাইনে মার্কিন নিউজ পেপারগুলোও বেশি পরছি না | কারণ সেই একই | একই মিথ্যে প্রচারণা | আইসিসের কারণে সমস্ত মুসলিম ওয়ার্ল্ডকেই অভিযুক্ত করার প্রবণতা | বেশির ভাগ লেখাতেই কেমন করে আইসিস তৈরী হলো, মুসলিম হলেও আইসিস কেনই বা ইসলামিক দেশগুলোকেই আক্রমন করছে বা এসব দেশের জনগনকেই কেন আইসিসের আক্রমনে বেশি হতাহত হতে হচ্ছে এর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই | শুধুই স্টেরিও টাইপিং | এর মধ্যে গতকালই (১৮/১১/২০১৫)হটাত পড়লাম আমেরিকার বিখ্যাত অনলাইন নিউজ পোর্টাল হাফিংটন পোস্টে তাদের সিনিয়র মিডিয়া এডিটর গ্যাব্রিয়েল আরানার লেখা “Islamophobic Media Coverage Is Out Of Control. It Needs To Stop” নিবন্ধটি |আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে লেখাটি |আমি মুসলিম বলেই নয় | পুরো লেখাটি তথ্য, বিশ্লেষণ আর নিরপেক্ষ সাংবাদিক অনুসন্ধিত্সার অসাধারণ মিশ্রন |বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের এক বিড়াট দুঃ:সময়ে এটি মুসলিমদের সমর্থনে এক অসাধারণ লেখা|একজন আমেরিকান সাংবাদিক, যিনি ৯/১১ প্রতক্ষ্য করেছেন এবং তার পরবর্তী সময়ে মুসলিমদের সাথে আমেরিকার টানাপোড়েন সম্পর্কে সম্মন্ধেও সচেতন এবং যিনি নিজে মুসলিম নন তার থেকে হাফিংটন পোস্টের মত একটা বিখ্যাত নিউজ আউটলেটে এমন একটা নিরপেক্ষ লেখা সারা বিশ্বে মুসলিমদের প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা করতে সহায়ক হবে বলেই আমি মনে করি | সেজন্য বিডি টুডের পাঠকদের জন্য লেখাটার একটা শাব্দিক অনুবাদ করলাম | খুবই অল্প কিছু জায়গায় ব্রাকেটের ভেতর কিছু শব্দ যোগ করে দিলাম নিজে থেকে আরানার বক্তব্যগুলোকে আরো বেশি বোধগম্য করে তুলতে| এই http://www.huffingtonpost.com/entry/islamophobia-mainstream-media-paris-terrorist-attacks_564cb277e4b08c74b7339984 লিঙ্কটাতে ক্লিক করলেই হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত গ্যাব্রিয়েল আরানার মূল লেখাটা যে কেউ পড়তে পারবেন| নীচে মূল লেখাটার আমার করা অনুবাদ |
“Islamophobic Media Coverage Is Out Of Control. It Needs To Stop”
কখনো কখনো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হয়ত ঠিকই আছে বলা যেতে পারে | কিন্তু গত রোববারের সিএনএনের প্রচারে এটা ছিল না |
"এটা কেমন করে হতে পারে যে ফ্রান্সের মুসলিম কমিউনিটি কেউ জানলোনা যে এরা কি করতে চাচ্ছে? সিএনএন এনকর জন ভাউস ফ্রান্সের এন্টি ইসলামফোবিক প্রচারণাকর্মী ইয়াসির লাউতিকে এই প্রশ্নটা করেছিলেন |
লাউতি ভদ্রভাবে এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে বলেছেন স্বল্প সংখ্যক কিছু চরমপন্থীর কাজের কারণে এই ঘটনার জন্য পৃথিবীর ১.৬বিলিয়ন মুসলিমকে দায়ী করা যায় না |লাউতি আরো বলেছেন, স্যার, মুসলিম কমিউনিটি এই লোকদের সাথে কোনো ভাবেই জড়িত নয়, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার ছিল না | শুধু মুসলিম নামধারী কিছু ব্যক্তির গর্হিত কাজের সাথে আমরা নিজেদের জড়িত করতে পারিনা | এংকর ভাউজ তবুও খুঁচিয়ে কাঁদা খোড়ার চেষ্টা করতে থাকেন এই বলে যে, "এখনো মুসলিম কমুনিটি এই ব্যাপারে কাউকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়নি, কিন্তু আমরা অপেক্ষা করে দেখি তারা কি করে" |
সিএনএনের সব এন্করের ইন্টার নেটে "মুসলিমরা প্যারিস হামলাকে নিন্দা জানিয়েছেন” এই সম্পর্কে সার্চ দিলেই মুসলিম কমুনিটির গত শুক্রবারের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলাকে কঠোর সমালোচনার হাজারো উধাহরণ পেতেন যাদের মধ্যে সোশাল মিডিয়ার কাম্পেইং‘# নটইনমাইনেইম’(#notinmyname) অন্তর্ভুক্ত ছিল |
মিডিয়া লেখক 'ওয়াশিংটন পোস্টের' এরিক উইম্পলে এবং অনলাইন ম্যাগাজিন স্যালনের (SALON) জ্যাক মার্কিন্সন ভাউজের এই আশ্চর্যজনক অজ্ঞতাকে কঠোর ভাবে সমালোচনা করেছেন | কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই সাংবাদিকরা সাংবাদিকসুলভ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পেশাদারী এই নৈব্যক্তিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন |এটা শুধু ইসলামফোবিক ফক্স নিউজ চ্যানেল, যারা সন্ত্রাসী হামলা গুলোকে সম্বল করে মুসলিম বিরোধিতার ইন্ধন যোগায়, নয় তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করা অর্থহীন | এটা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, যখন ইসলামফোবিয়া প্রিন্ট নিউজ পেপারে এমনকি অনলাইনে পেছনে পরেছে, তখন টেলিভিশনেই এই ইসলামফোবিয়া বেশি প্রচার হচ্ছে |
কোনো ভুল নয়: যখন (টেলিভিশন) প্রযোজক ইসলাম কি একটি সন্ত্রাসী ধর্ম এই সংক্রান্ত আলোচনার একটি প্যানেলের চিন্তা করেন তখন তারা সাধারণত "কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না " বরং তারা (ইসলাম সম্পর্কে তাদের) সংকীর্ণ মানসিকতারই প্রতিসরণ ঘটান |হ্যা, আমেরিকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এই ধারণা পোষণ করেন | কিন্তু মিডিয়াতে আমাদের ভুমিকা হলো এইসব মিথগুলো উপরে ফেলা-তাদের গ্রহণযোগ্য করে তোলা নয় |সত্যিকার অর্থে, ভারসাম্যপূর্ণ বিতর্কের স্বার্থে উদারতা এবং সংকীর্ণতা চিন্তা-চেতনাকে একই ভাবে গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপনার চেষ্টা শুধু সংকীর্ণতা আর রেসিজমকেই উত্সাহিত করে |
মিডিয়ার ইসলামফোবিয়া সম্প্রচারের একটি নিশ্চিত পরিনতি আছে | যখন হঠাত কেউ কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটায় এবং সে বিষয়ে তথ্য অপর্যাপ্ত হয় তখন প্রথমেই প্রয়োজন ছাড়াই গুজব ছড়ায় |জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল মুসলিম-খ্রিস্টান আন্ত:সম্পর্ক সেন্টারের গবেষক নাথান লিয়েনের মতে "সাংবাদিকরা, বিশেষ করে টিভি সাংবাদিকরা স্কুপ ভালবাসেন" | তিনি আরো বলেন, " সেজন্য যা হয় তা হলো টিভি সংবাদিকদের অনেকেই প্রধান প্রশ্নগুলো করতে নিজেদের পরামর্শ, ধারণা, অনুমানগুলো জুড়ে দেন, যেমন উধাহরণ স্বরূপ বলা যায়: " এই হামলাগুলো
কি আল কায়েদা করেছে বলে মনে করেন?" এবং তার পরেই হঠাত (মূল ঘটনার থেকে বেশি) আল কায়েদাই আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করে ফেলে |
এভাবেই গত সোমবার এনবিসির "টুডে" শোটি ইসলামিক স্টেট গ্রুপ, যা সংক্ষেপে আইসিস নামেও পরিচিত, কিভাবে সম্ভাব্য প্লে স্টেশন ৪ ব্যবহার করে এই সন্ত্রাসী হামলা করে সে সম্পর্কে একটি হাস্যকর পর্ব প্রচারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় | এভাবেই কানাডিয়ান একজন শিখ যুবকের ইমেজ ফটোশপের কৌশলে পরিবর্তন করা ছবি স্পেনের অন্যতম সর্বোচ্চ বিক্রীত নিউজ পেপার “La Razón”-এর ফ্রন্ট পেইজে স্থান করে নেয় | একই ভাবে টাইম ম্যাগাজিনও ভুলভাবে রিপোর্ট করে যে উবার (একটি প্রাইভেট কার রেন্টাল কোম্পানি) নরমাল রেটের চেয়েও প্যাসেঞ্জারদের চারগুন বেশি ভাড়া চার্জ করে প্যারিস হামলা চলাকালীন সময়ে |
সন্ত্রাসের মত দুঃখজনক ঘটনায় যেখানে একটি উগ্রপন্থী মুসলিম গোষ্ঠী জড়িত সেখানে সাংবাদিকরা অবশম্ভাবীই একটি প্রশ্ন করবেন "কেন মুসলিমরা একে অভিযুক্ত করছে না ?" যেমন সিএনএনের এংকর ভাউজ করেছেন |
আমেরিকান-মুসলিম সম্পর্ক কেন্দ্রের নীতি নির্ধারণী পরিচালক কোরি সেইলর এ'সম্পর্কে বলেন "আমরা এখনো শুধুই আশাকরি যে মুসলিম সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন ঘটনাকে অভিযুক্ত করতে যেখানে আপনি অন্য গ্রুপগুলোকে একই ঘটনা অভিযুক্ত করতে আশা করেন না | যৌথ দ্বায়বদ্ধতা বলতে একটা ধারনা কিন্তু এখনো বর্তমান" | কোরি সেইলর আরো বলেন যে, “ মুসলমানরাই আইসিসের সর্বোচ্চ হতাহতের স্বীকার কিন্তু কোনভাবে আপনার মাথা থেকে এটা দূরকরা কষ্টকর যে মুসলিমরা এই বিভ্রান্ত আদর্শিক ধর্মীয় গ্রুপের বিরোধিতায় পুরোপুরি আন্তরিক নয়” |
সত্যি বলতে, কেয়ার (সেন্টার ফর আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন) অন্য আরো অসংখ্য মুসলিম সংগঠনের মতই সন্ত্রাসকে নিন্দা করেছে যখনি এটা ঘটেছে- কেয়ার এটা করেছে একশ বারের বেশি | ২০১৪ সালে এই সংগঠন আইসিসের উদ্দেশ্যে ১২০ জন মুসলিম স্কলারের স্বাক্ষরসহ একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করে যাতে সুনির্দিষ্ট ভাবে আইসিসের ধর্মীয় আদর্শকে সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করা হয় |
অধিকাংশ মুসলিম দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই আইসিস কে ঘৃনা করে ফক্স নিউজ চ্যানলের (আমেরিকান) পতাকা নাড়ানো (মুসলিম বিরোধী) দেশপ্রেমিকদের মতই একই হারে | আমেরিকার পিউ (PEW )রিসার্চ সেন্টারের ১১টি দেশের উপর চালানো একটি সাম্প্রতিক জরিপে, যাদের অধিকাংশেরই সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম, দেখা গিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠির বিষয়ে জোরালো নেতিবাচক মনোভাব | কোনো দেশেই শতকরা ১৫% ভাগের বেশি আইসিস সমর্থন পাওয়া যায়নি | এই হার আমেরিকার যে পরিমান মানুষ ইউএফও বিশ্বাস করে (২১%), অথবা ভ্যাকসিনই অটিজমের কারণ (২০%), বা উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট বিশ্ব পরিবেশের বর্তমান পরিবর্তন অবিশ্বাসী (৩৭%) তার চেয়েও অত্যন্ত স্বল্প | এইসব দেশের অধিকাংশ জনগনই আইসিসের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিমান আক্রমনকে জোরালো ভাবেই সমর্থন করে |
পৃথিবীর বহু সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মুসলিম সমাজগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্যই আছে যাতে অন্তর্ভুক্ত সৌদি আরব, আমেরিকার অন্যতম মিত্র যা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে মৌলবাদী মুসলিম সমাজ এবং অন্যদিকে স্যেকুলার প্রগতশীল মুসলিম দেশ তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া এবং বাংলাদেশ -যে দেশগুলোর সবকটিই মহিলা রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত করেছে | “একই ধরনের সংকীর্ণ মানসিকতা যা মুসলিম সমাজগুলোর মধ্যকার পার্থক্যগুলোকেই সমূলে ধ্বংশ করে দেয় যখন অন্ধ সাংবাদিকতা মুসলিমদের ইতিবাচক ভূমিকাগুলো অস্বীকার করে সংখ্যা লঘিষ্ঠ কোনো গোষ্ঠির নারকীয় কাজের জন্য শুধুi তাদের অভিযুক্ত করে |মুসলিমদের সব ইতিবাচক কাজই অস্বীকার করা হয় আর অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বাসের দাবিদ্বার সংখ্যা লঘিষ্ঠ কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে সহজেই মুসলিম সমাজের উধাহরণ হিসেবে চিন্হিত করা হয়”| সেইলর আরো বলেন ”আইসিসের উদ্দেশ্যে লেখা খোলা চিঠি ব্যাপকভাবে মিডিয়ায় উপেক্ষিত হয় | কিন্তু আফগানিস্থানের কোনো গুহা থেকে যদি কোনো ফ্যানাটিক একটি তরবারি ঘুরায়, আপনি নিশ্চিত ভাবেই তাকে কয়েকটা নিউজ সাইকেলে দেখতে পাবেন” |
মিডিয়ার সন্ত্রাসবাদ এবং অ-সন্ত্রাসবাদের মধ্যে, মুসলিম বিশ্বের আক্রমনকারী এবং হতাহতদের মধ্যে তাত্পর্যপূর্ণ সীমারেখা টানার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণেই আজ আমাদের সিরিয়ান শরণার্থী দেশে আশ্রয় দেয়া উচিত কিনা এমন একটি অস্বাভাবিক বিষয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে |প্যারিস আক্রমনের মূল ছয়জনের প্রায় সবাই বা বেশিরভাগই ইউরোপ জন্ম এবং বেড়ে ওঠা | কিন্তু তারপরেও একজন আত্মঘাতী আক্রমনকারীর পাশে পাওয়া একটি সিরিয়ান পাসপোর্ট পাবার কারণে আমাদর মূল আলোচনা ঘনীভূত হয়েছে আমরা কি দশ হাজার নিরীহ, ভুক্তভোগী শরণার্থীকে ফিরিয়ে দেব কিনা যাদের কেউ একজন সন্ত্রাসী হতে পারে এই আশংকা কেন্দ্র করে |
বিশ্বাসযোগ্য সুত্রগলো যাদের এ'বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান আছে তাদের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া প্রায়শই উপস্থিত করে এমন সব পন্ডিতদের যাদের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত কিন্তু স্বীয় মতামত অফুরন্ত, আর এমন আলোচনার প্লাটফর্ম যা প্রচার করে প্রশ্নসাপেক্ষ তথ্য |প্যাম গেলারের মত আন্টি মুসলিম একটিভিস্টকে তার রেসিস্ট বক্তব্য তার মত মিলিয়ন লোকের কাছে পৌছানোর সুযোগ দেবার পরিবর্তে, মিডিয়া কেন মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের (MPI) কাউকে সুযোগ দেয়না যারা মাইগ্রেশন পলিসি ইস্যুতে কথা বলার ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে অথরেটিটিভ পলিসি গ্রুপ?
এমপিআই-এর ২০১৫ সালের একটি রিপোর্ট অনুসারে "শরণার্থী সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম হচ্ছে সন্ত্রাসীদের জন্য পছন্দ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সম্ভাব্য একটি পথ যা ব্যবহার করে কেউ আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করতে পারে|এর কারনটা খুবই বোধগম্য যদি শরণার্থী প্রোগ্রাম সম্পর্কে খুব সীমিত ধারনাও আপনার থাকে: শরণার্থী স্টেটাস পেতে যে কোনো শরণার্থীকেই সরাসরি এফবিআই-এর সংস্পর্শে আসতে হয় এবং তাদের খুবই ব্যাপক, বহুস্তরব্যাপী নির্বাচনী পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যা বহুবছরব্যাপী একটি প্রক্রিয়া | কোনো প্রধান মিডিয়া নেটওয়ার্কই এমপিআইকে তাদের প্যানেল আলোচনায় কন্ট্রিবিউট করার জন্য কখনই আমন্ত্রণ করেনি| অজ্ঞতার প্রসার সবসময়ই দোষমুক্ত নয়|এ কারণেই আমেরিকার ২৯ জন রিপাবলিকান এবং ১ জন ডেমোক্রাট স্টেট গভর্নর কোনো সিরিয়ান শরণার্থী না নেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন, যদিও যে সংবিধানকে ভালবাসার আর মান্য করার শপথ তারা নিয়েছেন তা তাদের সেটা করার অনুমোদন দেয় না |
সিএনএন এংকর ডন লেমন যখন সন্মানিত একজন মুসলিম আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন তিনি আইসিস কে সমর্থন করেন কি না অথবা যখন নিউজ করপরেশনের নির্বাহী চ্যেয়ারম্যান (এবং আমেরিকার চরম রক্ষনশীল ফক্স নিউজ চ্যানেলেরও) কর্ণধার রুপার্ট মারডক সাজেশন দেন যে আমাদের প্রথমে সিরিয়ান খ্রিস্টান শরণার্থীদের (মুসলিমদের আগে) আমেরিকায় আসবার সুযোগ দেওয়া উচিত তখন সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো এতে সন্ত্রাসী তত্পরতার মিডিয়া কভারেজের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে কোনই নুতন উন্নতি পরিলিক্ষিত হয়না |এটা শুধু এমনি না যে সংবাদ কর্তৃপক্ষ নির্বোধের মত প্রশ্ন করে তার উত্তর বের করে নিয়ে আসছে|আমরাও আরো জানার ক্ষেত্রে আরো চৌকস, দক্ষতর এবং বেশি অবহিত হতে পারছিনা |যখন সন্ত্রাস আঘাত করে তখন মিথ্যা তথ্যের প্ররোচনার ক্যাম্পেইন নিজেকেই পুনরাবৃত্তি করে বারবার |
সাংবাদিক হিসেবে অধিকতর জানা এবং অধিকতর দক্ষতার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ |
বিষয়: বিবিধ
১৬২৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর প্রতারিত হওয়া কোন মানুষ - পুর্বপুরুষের, বাপ-দাদার কিংবা নিজের বোধ ও বিশ্বাস ছেড়ে - যতক্ষন না খোলামনে কোরান হাদীসের সাহায্য চাইবে - ততক্ষন এর সত্য উপলব্ধি করতে পারবেনা বলে আমি মনে করি।
জাজাক আল্লাহ খায়ের।
-
মন্তব্য করতে লগইন করুন