‘আল্লাহকে কেন আমরা দেখিনা’ আল কুরআনের ভাষ্য এবং "জু" (Zoo) হাইপোথিসিস
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৫৬:৫৭ রাত
আল্লাহকে আমরা দেখতে পাই না | কোনো মানুষই কখনো আল্লাহকে দেখেনি | সৃষ্টির পর থেকেই কত নবী রাসুল এলেন কেউই আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেনি | কেন আল্লাহকে আমরা দেখতে পাই না ? এর নানান ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে | থিওলজিকাল ব্যাখ্যা ছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে এই না দেখা কে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে | ইসলামিক স্কলাররা ধর্মীয় সুত্র থেকে আল্লাহকে না দেখার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন | ইসলামের মূল পাঁচটা ভিত্তির অন্যতম হলো বিশ্বাস | এই বিশ্বাসটা হলো গায়েবের প্রতি যার অন্তর্ভুক্ত হলো আল্লাহ, ফেরেস্তা, কিয়ামত, বেহেস্ত এবং দোজখ সহ সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় যা পবিত্র কুরানে এবং সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে | এই বিষয়গুলো না দেখে বিশ্বাস করা ঈমানেরই অংশ | একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফে যা বলা হয়েছে তাই যথেষ্ঠ কেন আমরা আল্লাহকে দেখতে পাই না বা দেখতে পারবনা কখনো |
তারপরেও এই লিখাটা লিখতে চাইছিলাম কারণ ইসলামে বিশ্বাসী নয় এমন অনেকের কাছেই এটা খুবই যুতসই একটি প্রশ্ন একজন আস্তিকের কাছে | যেহেতু এইসব লোক কোনো ধর্মীয় মতবাদের প্রতি বিশ্বাসী নয় তাই এরা এই প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিষয়েই বেশি আগ্রহী| সে কারণেই ধর্মীয় ব্যাখ্যার বাইরেও আল্লাহকে কেন দেখিনা এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়েই আজকের এই লেখা | এরকমই একটি তত্ত্ব হলো “জু” (zoo) হাইপোথিসিস | ম্যাসাচুসেটস ইনসটিটিউট অব টেকনোলজির বা এম আই টি-র (MIT) প্রফেসর জন এ. বল এই হাইপথেসিসের প্রস্তাবক | ১৯৭৩ সালে সাইন্টিফিক জার্নাল ইকারুসের (ICARUS) প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে প্রফেসর বল “জু” (zoo) হাইপথেসিস সংক্রান্ত তার মত প্রকাশ করেন | “জু” হাইপথেসিস ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে কেন আমরা বা উন্নত ভিনগ্রহবাসীদের দেখতে পাইনা | “জু” হাইপথেসিস সংক্রান্ত বর্ণনার আগে এ সংক্রান্ত একটি ছোটো ভূমিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি যাতে ভিনগ্রহবাসী এবং সৃষ্টিকর্তার মধ্যেকার সম্পর্কে আমাদের একটি সুস্পষ্ট ধারণা হতে পারে |
এখানে একটি কথা মনে রাখা দরকার তা হলো এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসী ধারনাটা ডিকশনারী অর্থের বাইরেও আরো ব্যাপক অর্থে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করে থাকেন | একটি সংজ্ঞা হিসেবে এলিয়েন বলতে বোঝায় এমন ভিনগ্রহবাসী যারা মানুষের সৃষ্টিকারী বা ঈশ্বর| এরা আমাদের বা অন্য গ্যালাক্সীর কোনো গ্রহের অধিবাসীও হতে পারে | ১৯৬৮ সালে সুইডিশ লেখক এরিক ভন দানিকেনের প্রথম বই Chariots of the Gods? Unsolved Mysteries of the Past এই ধারণাটিকে প্রথম বিস্তৃত ভিত্তি দেয় | সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণ, ধংসাবশেষ এবং এ'সম্পর্কিত ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দানিকেন এই সিদ্ধান্তে পৌছান যে পৃথিবীর মানুষ যে ইশ্বর বা গডের যে ধারণা মনে গড়ে তুলেছে তা কোনো ডিভাইন বা স্বর্গীয় বিষয় নয় | মানুষের সভ্যতার শুরুতে ভিন্গ্রহহের অধিবাসীরা এই পৃথিবীতে এসেছিল তাদের মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করতে দেখেই মানুষের মধ্যে ঈশ্বর, স্বর্গ প্রভৃতি ধারণা গড়ে উঠে দানিকেনের অনুসারী জর্জীয় সকোলোস (Giorgio A. Tsoukalos), ডেভিড চিলড্রেস (David Childress)সহ একদল প্রথাবিরোধী বিজ্ঞানী ঈশ্বর সংক্রান্ত দানিকেনের এই ধারনাকে আরো সম্প্রসারিত করে তোলেন | বিজ্ঞানীদের এই দলটি “এনসিয়েন্ট এস্ট্রনট থিউরী”(বাংলায় প্রাচীন নভোচর তত্ত্ব বলা যেতে পারে)নামের একটি বৈজ্ঞানিক ধারনার অবতারণা করেন যে পৃথিবীতে মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রানের সৃষ্টি করেছে ভিনগ্রহের অধিবাসীরা| যাহোক, প্রফেসর জন এ. বলের “জু” হাইপোথিসিস “এনসিয়েন্ট এস্ট্রনট থিউরী” দিয়ে প্রভাবিত বলে আমি মনে করি |
বর্তমান বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ধারণা এই যে ভিনগ্রহের উন্নত সভ্যতা (যারা মানুষের সৃষ্টিকারী বলে এনসিয়েন্ট এসট্রনট থিউরী) মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে নানা ভাবে | অনেকে বিজ্ঞানী ধারণা করেন যে ভিনগ্রহবাসীদের এই যোগাযোগ মানুষ ধরতে পারছেনা যথেষ্ঠ টেকনোলজিকাল উন্নতি না করতে পারার কারণে | এখানে এটা উল্লেখ করা হয়তো অপ্রাসংগিক হবে না যে এরকমই একটা চেষ্টা হিসেবে ১৯৭৭ সালে মহাশুন্যে প্রেরিত নাসার রকেট ভয়েজারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল “গোল্ডেন রেকর্ড” | এতে পৃথিবীকে প্রতিনিধিত্বকারী ১১৫টা ইমেজ এবং পৃথিবীর নানা ধরনের শব্দ যেমন বাতাসের, বজ্রপাতের,বিভিন্ন প্রাণীর ডাক, পাখির ডাক , তিমির ডাক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল | বিভিন্ন কালচারের এবং বিভিন্ন সময়ের গান এবং ৫৯ ভাষায় বলা স্বাগতম বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল | এছাড়া এতে আমেরিকার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং জাতি সংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের প্রিন্টেড ম্যাসেজও অন্তর্ভুক্ত ছিল ভিনগ্রহবাসীদের সাথে জেগাগোগ স্থাপনের লক্ষ্যে | কর্নেল ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত গণিতের প্রফেসর কার্ল সেগানের নেত্রাত্তাধীন একটি কমিটির মাধ্যমে নাসার জন্য এই সমস্ত আইটেম নির্বাচন করা হয়েছিল |
মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর (কিছু বৈজ্ঞানিকের কাছে ভিনগ্রহবাসী) সাথে যোগাযোগ প্রচেষ্টার এই ধারণার বিপরীতে প্রফেসর জন বল এন্টি থিসিস হিসেবে তার “জু” হাইপোথেসিস গড়ে তোলেন | তার মতে যে কোনো সভ্যতার টেকনোলজিকাল উন্নতি মাপার একটি পরিমাপ হলো তা পরিবেশকে কতটুকু প্রভাবিত করতে পারে তার সক্ষমতা | প্রফেসর বলের মতে আমাদের টেকনোলজিকাল উত্কর্ষের বর্তমান পর্যায়ে আমরা মুটামুটি প্রথিবীর সব প্রাণী- হাতি থেকে শুরু করে ভাইরাস পর্যন্ত সব কিছুকেই প্রভাবিত করতে পারি | কিন্তু আমরা বেশিরভাগ সময়ই আমাদের সক্ষমতার সবটুকুই পরিবেশে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করিনা | বেশিরভাগ সময়ই আমরা আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেমন "জু" বা চিড়িয়াখানা অথবা এর মতই "সাফারি" ধরনের স্থানগুলো যা বন্য প্রাণীর প্রাকৃতিক আবাসস্থল, তা অক্ষত রাখার চেষ্টা করি | একটি প্রকৃত বা পারফেক্ট “জু” বা চিড়িয়াখানা হলো সে জায়গা যেখানে বন্যপ্রাণী তার চিড়িয়াখানার রক্ষকদের সংস্পর্শে আসে না বা আসতে পারেনা (তাদের নাচারাল গ্রোথের পথে অন্তরায় বলে ) | প্রফেসর জন বলের মতে একই ভাবে ঈশ্বর বা আল্লাহকে (প্রফেসর বলের ভাষায় এলিয়েন ) আমরা যে দেখতে পাইনা তা এই ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় | কারণ ঈশ্বর বা আল্লাহ আমাদের সাক্ষাত দেন না কারণ তিনি ইচ্ছা করেই আমাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং আমাদের জন্য নির্মিত "জু" বা চিড়িয়া খানায় আমাদর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেবার উদ্দেশ্যে | “জু” হাইপথেসিস অনুযায়ী আমরা কখনই ঈশ্বর বা আল্লাহকে দেখতে পাবো না কারণ তিনি আমাদের দেখা দিতে চান না | এ প্রসংগে প্রফেসর বলের যুক্তি হলো বর্তমানে আমাদের হাতে থাকা তথ্য থেকে এটা ধারণা করা যায় যে আমাদের গ্যালাক্সি বা আশেপাশের যে গ্যালাক্সিগুলোতে পৃথিবীর মত উন্নত সভ্যতার উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই | এগুলোতে দুই ধরনের প্রাণ পওয়ার সম্ভাবনা আছে | প্রথমত: এমন প্রাথমিক প্রানের উপস্থিতি যা মিলিয়ন বছর আগের পৃথিবীতে বর্তমান ছিল অথবা এমন অতি উন্নত প্রানের সম্ভাবনাও আছে যা আমাদের পৃথিবীতে সম্ভবত মিলিয়ন বছর পরে দেখা যাবে |দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পৃথিবীর থেকে মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টির কারণে সে বা সেসব সভ্যতা এত উন্নত বা ভিন্ন ধরনের হবে যে মানুষের বর্তমানের উন্নতি বা টেকনোলজি দিয়ে তাদের সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বোধগম্য ধারণা করাও আমাদর জন্য অসম্ভব হবে | আমি প্রফেসর বলের মানুষের সৃষ্টি কর্তা হিসেবে "ভিনগ্রহবাসী" এই ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করলেও কেন আমরা আল্লাহকে (এলিয়েনদের) দেখিনা প্রফেসর বলের এই ব্যাখ্যাটা আমি অপরিবর্তিত ভাবেই বর্ণনা করলাম | কারণ এই ব্যাখ্যাটাই আজকের লেখার মূল বিষয় |
কিছুদিন আগে হিস্ট্রি চ্যানলে “এনসিয়েন্ট এলিয়েন” প্রোগ্রামটির একটি এপিসোড দেখছিলাম| হোস্ট জর্জীয় সকোলোসের আলোচনা থেকেই প্রথম আমি “জু” হাইপোথেসিসের কথা সম্পর্কে জানতে পারি | ইউনিভারসিটির ইন্টার লাইব্রেরী লোনে প্রফেসর বেলের ১৯৭৩- এ “ইকারুসে” প্রকাশিত আর্টিকেলটার একটা ইলেকট্রনিক ভার্শন পেয়ে খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়লাম | বলাই বাহুল্য পড়া শেষ করে আমি খুবই আশ্চর্য হলাম| আমার আশ্চর্য হবার কারনটা হলো প্রফেসর বলের ব্যাখ্যার সাথে আল্লাহকে কেন কোনো মানুষ দেখতে পাবে না এ ব্যাপারে ইসলামের ধারণার আশ্চর্য রকমের মিল দেখে | পবিত্র কুরআন আল্লাহকে কেন কোনো মানুষ দেখতে পাবে না এ ব্যাপারে যা বলছে তার সাথে প্রফেসর বলের বর্তমান ব্যাখ্যা বিস্ময়কর ভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ!
পবিত্র কুরানের অনেক আয়াতেই আল্লাহ মানু সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি সেটা বলেছেন | সুরা আল জারিয়াতে আল্লাহ খুব সুস্পষ্ট করেই বলেছেন "আর আমি মানুষ আর জ্বিনকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি" (৫১:৫৬) | সৃষ্টির পর আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য |পৃথিবীকে মানুষের আবাসস্থান করার প্রসংগে আল্লাহ সুরা বাক্কারাতে বলেছেন, “ তোমরা (পৃথিবীতে) নেমে যাও। … এবং তোমাদের জন্য রইলো পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য অবস্থান ও জীবিকা” (১:৩৬) | পৃথিবীতে মানুষের এই বসবাসের সময়কালও আল্লাহর ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত | যেমন সুরা আল আন-আমে আল্লাহ বলেছেন "তিনিই তোমাদেরকে মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্টকাল নির্ধারণ করেছেন। আর অপর নির্দিষ্টকাল আল্লাহর কাছে আছে" (৬:২)| পৃথিবীর এই নির্দিষ্ট সময়টুকু বা কালটুকু মানুষের জন্য একটি পরীক্ষা | আল্লাহ নানা ভাবে মানুষকে পরীক্ষা করবেন যে কোন মানুষের তাক্বওয়া বেশি বা কে তার ইবাদত করছে আর কে করছে না | সুরা আনকাবুতে এ'প্রসংগে বলা হয়েছে "মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না" (২৯:২)? এছাড়া সুরা কাহফে একই প্রসংগে বলা হয়েছে, "আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে" (১৮:৭) | এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্য মানুষের জন্য কোন বিষয়গুলো কল্যানকর আর কোন বিষয়গুলো ক্ষতিকারক সেগুলোও আল্লাহ বলে দিয়েছেন যুগে যুগে নবী ও রাসুল প্রেরণ করে আর তাঁদের উপর নাজিল করা আসমানী কিতাবের নির্দেশনার মধ্যে দিয়ে | যেমন সুরা বাকারাতে আল্লাহ বলেছেন "...অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে” (১:৩৮)।কুরআন শরীফের আরো অনেক জায়গাতেই আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্যই শুধু সৃষ্টি করেছেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের সব কাজকর্মের বিচার করা হবে এবং তার উপর ভিত্তি করে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেবার কথা বলা হয়েছে | প্রফেসর বলের “জু” এনালজিটার সাথে এই বর্ণনার মিল অনেকখানি |
একটা "জু" বা চিড়িয়াখানা বা সাফারিতে বন্য প্রানীকে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সুনির্দিষ্ট কারণে আবদ্ধ রাখা হয় | সেটা হতে পারে দর্শকদের সামনে প্রদর্শন, সংরক্ষণ, উন্নততর প্রজাতি সৃষ্টি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে | চিড়িয়াখানার কিউরেটর তার সহযোগীদের নিয়ে এইসব প্রানীদের দৃষ্টির সীমায় রাখেন তাদের ভালো মন্দ অবলোকন করতে | মানুষকেও তেমন আল্লাহ পরীক্ষা করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে দৃষ্টির সীমায় রেখেছেন | রাসুল এবং ঐশী বাণীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভালো-মন্দ এবং উন্নততর জীবন মিস্চিত করতে সাহায্য করছেন | আল্লাহ তাকে ভালোভাবে বুঝতে ও অনুধাবন করতে মানুষকে এই বিশ্ব ব্রম্মানডের সীমানায় চলাচলের ক্ষমতা দিয়ে প্রেরণ করেছেন | মানুষ ধীরে ধীরে তার চলাচলের সীমানা বর্ধিত করতে পরেছে টেকনোলজির উন্নতির মধ্যে দিয়ে | কিন্তু এই সীমানাও সীমিত বিগ ব্যঙ্গের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া বিশ্ব ব্রম্মানডের মধ্যেই | এর বাইরে যাবার ক্ষমতা মানুষের নেই | আল্লাহর সৃষ্ট প্রাণী হিসেবে তার সৃষ্টির সীমানার বাইরে যাবার কোনো ক্ষমতা মানুষের নেই | তার মানে চিড়িয়া খানার প্রাণীর মতই একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যেই মানুষ্ যাতায়াত করতে পারে তার বাইরে নয় | এই পৃথিবীকেই আমরা প্রফেসর বলের হাইপোথিসিস অনুসারে মানুষের জন্য আল্লাহর চিড়িয়াখানা বা পরীক্ষাগার হিসেবে চিন্তা করতে পারি |
এখন আমরা দেখি আল্লাহ বর্ণিত এই পরীক্ষাগারের সাথে মানুষের আল্লাহকে না দেখার সম্পর্কটি কোথায় | প্রফেসর বলের মতানুযায়ী চিড়িয়াখানার প্রাণী যেমন চিড়িয়াখানা র কিউরেটরকে দেখতে পায়না এখানেও সম্পর্কটা ঠিক তেমনি | আল্লাহ মানুষের জন্য এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডকে পরীক্ষাগার বা চিড়িয়াখানা বানিয়েছেন | কয়েকটি কারণেই মানুষ আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে না বা এই জাগতিক সময়ে কোনদিন পাবেও না | একটি কারণ হলো আল্লাহর ভুমিকাকে চিড়িয়াখানার সেই কিউরেটরের মত করে ভাবা যেত পারে এক্ষেত্রে | আল্লাহ চিড়িয়াখানার সেই কিউরেটরের মত যিনি প্রাণীগুলোকে একটি জায়গায় সংরক্ষণ করছেন বিশেষ উদ্দেশ্যে কিন্তু তিনি নিজে অবস্থান করছেন চিড়িয়াখানার বাইরে তাঁর নিজস্ব জায়গায় যেখানে কোনো প্রাণীর (মানুষের) যাবার অধিকার নেই | আর অবস্থানের স্থানগত পার্থক্যের কারণে তাই মানুষের পক্ষে তাঁকে দেখা সম্ভব হচ্ছে না | দ্বিতীয় আরেকটি কারণ হলো প্রাণী হিসেবে মানুষ উন্নত হলেও আল্লাহর অস্তিত্ব এতই ইউনিক যে আমরা ত়া অনুধাবন করতে পারিনা | যেমন চিড়িয়া খানার একটি ছোটো প্রাণীর তুলনায় মানুষ খুবই উন্নত প্রাণী |তাদের পক্ষে মানুষকে বোঝা দুঃসাধ্য | মানুষের তুলনায় আল্লাহর অস্তিত্ব তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি ইউনিক যা সম্পর্কে ধারণা করাও মানুষের পক্ষে অসম্ভব | এই কথাটিই আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরানে সূরা শূরাতে নিজের সম্পর্কে বলেছেন شَيْءٌ كَمِثْلِهِ لَيْسَ “কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়”।অর্থাৎ, তার আকৃতি কোনো সৃষ্টির মত নয় (সূরা শূরা : ১১) | সূরাআন-আমে আল্লাহতায়ালা নিজের সম্পর্কে তাই বলেছেন “কোনো দৃষ্টি তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পারেনা, তিনি দৃষ্টিকে আয়ত্ত করতে পারেন, তিনি সুক্ষদর্শী, জ্ঞানময়” (সূরা আল আন-আম, ৬:১০৩)| আল্লাহর অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে সত্যি | কিন্তু স্বল্প জ্ঞানের কারণে এই বর্ণনাগুলো থেকে আমরা ধারনাও করতে পারিনা আল্লাহর অস্তিত্ব কেমন | এটাই একটা কারণ যে কেন আমরা আল্লাহকে দেখিনা | ত্রিমাত্রিক বিশ্বের প্রাণী হিসেবে আমরা শুধু ত্রিমাত্রিক অস্তিত্বগুলোই দেখতে বা অনুভব করতে পারি এর বেশি অন্য কোনো মাত্র আমরা অনুভব করতে পারিনা | আর আল্লাহতো মাত্রার অনেক অনেক বাইরের অস্তিত্ব | তাঁকে তাই আমরা কখনই ত্রিমাত্রিক পৃথিবীর অনুভুতি দিয়ে দেখতে, বুঝতে বা ধারণা করতে পারব না | যে বিষয়টা প্রফেসর বল এলিয়েন সম্পর্কে বলেছেন মিলিয়ন বছর বেশি উন্নত কোনো প্রানীকে আমাদের বর্তমান টেকনোলজি দিয়ে দ্যাখা বা বোঝা অসম্ভব | এজন্যই আমরা আল্লাহকে কখনো দেখতে পাইনা এবং এই পৃথিবীতে কখনো দেখতে পাবোও না | সূরা আল আন-আমের ১০৩ নং আয়াতটি যখনি পড়ি তখনি আমি অভিভূত হই |এই আয়াতে আল্লাহযে যে শুধু নিজের অসাধারনত্বই প্রকাশ করেছেন তা নয় এই আয়াতের বিজ্ঞানময়তাও আমাকে অভিভূত করে | বিগ ব্যাং হয়েছে ধারণা করা হয় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে | সেখানে সম্প্রতি পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক জীবাশ্মর উপর ভিত্তি করে আধুনিক মানুষ বা হোমোসেপিয়ান্সের আবির্ভাবের সময় নির্ধারিত হয়েছে ৫০,০০০ থেকে ১০০০০০ বছর | আর আল্লাহতো বিগ ব্যাঙের আগে থেকেই আছেন এমনকি কোনো মাত্র সৃষ্টির আগে থেকেই | তাঁর অস্তিত্ব আমদের তুলনায় এতই উন্নত বা সুপিরিয়র যে ত্রিমাত্রিক বিশ্বের প্রাণী হিসেবে তাকে চোখ দিয়ে দেখা বা তার সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়া কোনো মানুষের বা প্রাণীর পক্ষেই সম্ভব নয় যতক্ষণ আল্লাহ সেটা না চান | এজন্যই আমরা তাঁকে দেখতে পারিনা | আল্লাহর অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে সত্যি | এটা আল্লাহর কোনো অস্তিত্ব নেই তাই আমরা তাঁকে দেখতে পাইনা সে জন্য নয় | সঙ্গত একটি বৈজ্ঞানিক কারণই আমরা আল্লাহকে দেখতে পারিনা আল্লাহ সুরা আল আন-আমে সেটাই সহজ ভাষায় আমাদের স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন তাঁকে না দেখার বিষয়ে | চৌদ্দশ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে নাজিল হওয়া ইসলামের ঐশী গ্রন্থে আল্লাহ তাঁকে না দেখার বিষয়ে যা বলেছেন আধুনিক বিজ্ঞানের নানা ধারনাই সেই বক্তব্য আজ সমর্থন করছে |
বিষয়: বিবিধ
২০৪২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহর অস্তিত্ব তার সৃস্টি থেকেই অনুভব করা যায়।
জাযাকাল্লাহ খাইর
মনোযোগ দিয়ে কোরআন পড়ে ও বিজ্ঞান বিষয়ে কিছু বই পড়ে আমার মনে হয়েছে শেষ মৌলিক কণা টা আবিষ্কার এবং পাঠ উদ্ধারের পর মানুষ মহাবিশ্বকে পুরুপুরি বুঝতে পারবে। লোহুমাহফুজের যে তথ্য ভান্ডারের কথা আল্লাহ বারবার উল্লেখ করেছেন তাহা সেই শেষ মৌলিক কণার ভিতরেই লিখে রেখেছেন মনে হয় । আল্লাহ এইদিকে ইংগিত করে বলেছেন, 'প্রতিটি বস্তর দ্বার খুলে দেওয়া হবে'যেমন আমারা কার্ক থকে আধান পর্যন্ত্য বুঝতে পারছি, 'শিগ্রিই মানুষকে নির্দশন দেখানো হবে মহা বিশ্বে ও তাদের নিজেদের মধ্য' এই আয়াতে বড় ধরনের তথ্য আছে -আল্লাহই সব ভাল জানেন।
-আয়াতগুলির নম্ভর মনে নেই ।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
এক কথায় অসাধারণ লিখেছেন! সবশেষে জু বা সাফারির যে মিলটা দেখালেন তা পড়ে আরো ভালো লাগলো!আশাকরি চমৎকার লিখাগুলো পড়ার আরো সুযোগ করে দিবেন!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন