বনু কুরাইজার ঘটনা, বিচার, গনিমত বন্টন এবং এ'প্রসঙ্গে আমার লিখায় বিডি টুডে ব্লগের এক সহব্লগারের মন্তব্য প্রসঙ্গে কিছু বক্তব্য
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ০২ আগস্ট, ২০১৫, ০২:০৮:৪০ দুপুর
আমার গত লিখায় “পনেরশ বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলা হাদিস আর বর্তমানে ঘটা তার কিছু নিদর্শন -পর্ব – ১” বিডি টুডে ব্লগের আমাদের এক সহব্লগারের মন্তব্য আজকের এই লিখার উদ্দেশ্য|আমার লিখাটা প্রধানত ছিল বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে গৃহযুদ্ধ এবং পরস্পরিক যুদ্ধ বিগ্রহে মুসলমানদের হাতে মুসলমানদের হত্যা সংক্রান্ত বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহু ওয়াসাল্লামের হাদিসের বক্তব্য নিয়ে| আরব বিশ্বের মুসলমানদের এই ভাতৃঘাতি যুদ্ধ এবং হত্যা সম্পর্কে আমি হাদিস থেকে মন্তব্য করেছিলাম যে মুসলমানদের একে অন্যকে হত্যা থেকেতো বটেই রাসুলুল্লাহ এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুসৈন্যদেরও অনর্থক হত্যা করতে নিরুত্সাহিত করেছেন | আমার মনে হয়েছে আমাদের সহ ব্লগার খানিকটা অপ্রাসংগিকভাবে খন্দক যুদ্ধের বিষয় টেনে এনে বনু কুরায়জার বিচার এবং তাদের গোত্রের লোকদের মৃত্যুদন্ড নিয়ে আমার লিখায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আলাইহু ওয়াসাল্লাম এবং ইসলামের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন| আমি প্রতিমন্তব্যে বলেছি যে বনু কুরায়জার বিষয়টি আসলে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে মিলিয়ে ফেললে চলবে না ওটা ছিল মুসলমানদের সাথে তাদের পারস্পরিক মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গ বিষয়ে |কিন্তু তবুও সহ ব্লগার একই বিষয় আবারও টেনে এনে আরো কিছু মন্তব্য করেছেন|আমাদের এই সহব্লগারের মন্তব্যে যুক্তিগ্রায্য সমালোচনার চেয়েও ইসলামের প্রতি অন্যায় সমালোচনাই বেশি|কিছু ক্ষেত্রে তার মন্তব্য আমার কাছে অযৈক্তিক রকমের কঠিন আর বিদ্বেষপূর্ণও মনে হয়েছে| কিছু ক্ষেত্রে তার মন্তব্য সত্যি ঘটনার সবটুকু না বলেই রাসুলুল্লাহ্কে বনু কুরায়জার ঘটনায় অভিযুক্ত করার চেষ্টা করেছেন|নিজের কিছু একাডেমিক এবং ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে সেই মন্তব্য নিয়ে খুব বেশি ভাবনার সময় পাইনি |সামার সেমেস্টারের শেষ হলো এরমধ্যেই |তাই কিছুটা সময় পেয়ে যখন মন্তব্যের উত্তর দেবার সময় পেলাম তখন দেখি উত্তরটা বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে| তাই আলাদা একটা লেখা হিসেবেই উত্তরটা দিচ্ছি|
মহানবীর মদিনা জীবনে খন্দক যুদ্ধের অল্প পরেই মদিনার ইহুদি গোত্র বনু কুরাইজার বিরুদ্ধে গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আলাইহু ওয়াসাল্লামের এবং তার সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুত্সা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর একটা প্রবণতা ইদানিং অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে | বিশেষ করে ইদানিং বাংলাদেশের ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে এই ব্যাপারটা খুবই প্রকট| বনু কুরাইজার ঘটনার সুস্পষ্ট অনেক বর্ণনাই বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া যায় | ইসলামী সুত্রগুলো খুবই বিশদ ভাবে এই ঘটনা বর্ণনা করেছে এর তাত্পর্য যথাযথ ভাবে অনুধাবন করেছে বলে | আজকের লেখায় আমি সেগুলো নিয়ে খুব বেশি বলবোনা |কিছু নিরপেক্ষ সুত্র বনু কুরাইজার ঘটনাটা কিভাবে দেখছে বা বর্ণনা করছে সেটাই পাঠকদের জানানোই আমার আজকের এই লিখার উদ্দেশ্য |
আমেরিকার বিখ্যাত ও খুবই রেসপেকটেড অর্গানাইজেশন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বা সংক্ষেপে পিবিএস যা টিভি প্রোগ্রাম প্রভাইড করা এবং আরো অন্যান্য শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত বনু কুরায়জার ঘটনা তারা কিভাবে দেখছে বা মূল্যায়ন করেছে সেটাই আমি আজকের লেখায় তুলে ধরতে চাই| পিবিএস তাদের ওয়েব সাইটে এই ঘটনা সম্পর্কে তাদের ভাষ্য প্রকাশ করেছে | মুসলিম নয় এমন একটি পক্ষ নৈব্যক্তিক ভাবে বনু কুরাইজার ঘটনাটা কেমন করে মূল্যায়ন করে সেটা দেখানোই এই লিখার উদ্দেশ্য| কিন্তু লিখার শুরুতেই পিবিএস সম্পর্কে একটা ছোটো বর্ণনা দিতে চাই |যাতে এই সংগঠন সম্পর্কে যারা অপরিচিত তারা একটা ধারণা পেতে পারেন |
পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (পিবিএস ) হলো একটি আমেরিকান পাবলিক ব্রডকাস্টার এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম ডিসট্রিব্রিউটার | পিবিএস একটা ননপ্রফিট অর্গানাইজেশন এবং আমেরিকান পাবলিক টেলিভিশনগুলোর সবচেয়ে প্রমিনেন্ট প্রোগ্রাম প্রভাইডার | আমেরিকার অন্যতম ট্রাস্টটেড নাশনাল ইনসটিটিউশন হলো এই পিবিএস | পঞ্চাশটা স্টেট জুড়ে প্রায় তিনশত পঞ্চাশটা টিভি স্টেশন এই পিবিএসের মেম্বার | টিভি প্রোগ্রাম প্রোভাইড করা ছাড়াও পিবিএস নানরকম শিক্ষামূলক বিষয় প্রচারের সাথেও জড়িত তাদের টিভি প্রোগ্রাম এবং তাদের ওয়েব পোরটালের মাধ্যমে | পিবিএসের অনলাইন পোর্টালের জন্য তৈরী করা ওয়েব ভিডিওগুলোর জন্য পৃথিবীর যেকোনো সংগঠনের চেয়েই বেশি "2013 Webby অ্যাওয়ার্ডস" জিতেছিল | শিশু কিশোরদের জন্য তাদের "পিবিএস কিডস" (pbsKids.org) এখন আমেরিকার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শিক্ষামূলক ভিডিও নির্মাতা | সকালে গাড়ি চালিয়ে অফিসে যেতে যেতে রেডিও অন করে আমেরিকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি নিয়ে পিবিএসের গঠনমূলক রেডিও প্রোগ্রামগুলো শোনেনা এমন শিক্ষিত মার্কিন খুবই কম |পিবিএস পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টিবোর্ড দিয়ে | এর কোনো সদস্যই মুসলিম নয় |এই পিবিএস তাদের ওয়েব পোর্টালে মুহাম্মদ : লিগেসি অফ এ প্রফেট অংশে মুহাম্মদ এবং মদিনার ইহুদি শিরোনাম অংশে বনু কুরায়জার ঘটনা সম্পর্কে তাদের যে ভাষ্য প্রকাশ করেছে আমি নীচে শুধু সেই অংশটুকুর(ওয়েব পোর্টালের ৫-১২ প্যারাগ্রাফ) একটি শাব্দিক অনুবাদ করলাম |আমার অনুবাদের মূল লিঙ্কটাও দিয়ে দিলাম | কেউ যদি পিবিএসের মূল লিখাটা পড়তে চান মূল লিঙ্কে http://www.pbs.org/muhammad/ma_jews.shtml গেলেই পাবেন |
“মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহী আলাইহু ওয়াসাল্লাম) এর উদ্যোগে (চেষ্টায়ও পড়তে পারেন) মদিনার প্যাগান (মূর্তিপূজক), মুসলিম এবং ইহুদিরা একে অন্যকে রক্ষার চুক্তি করে, যদিও এই নতুন সামাজিক বিধান অনুসরণ করা সহজ ছিলনা | কিছু সংখ্যক মূর্তিপূজক ব্যক্তি এবং মদিনাবাসী ধর্মান্তরিত নব্য মুসলিম এই চুক্তিগুলোকে বিভিন্ন ভাবে অকার্যকর করার চেষ্টা করে, এবং কিছু ইহুদি গোত্র পুরনো মৈত্রী চুক্তির বিপদজনক অকার্যকরিকরণ নিজেদের জন্য উদ্বেগজনক হিসেবে মনে করে| পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত তিনবার মদিনার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে উদ্বিগ্ন ইহুদি নেতৃবৃন্দ তাদের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যকার আকাঙ্খিত ক্ষমতার ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অনেক সময় রক্তাক্ত উপায় অবলম্বন করেও মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহী আলাইহু ওয়াসাল্লাম)এর বিরোধিতার চেষ্টা করে|
অধিকাংশ সুত্রানুসারে, এই গোত্রগুলোর কিছু ব্যক্তি অন্তত দুইবার তাঁর প্রাণ সংহারের এবং একবার বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করে| এর মধ্যে দুটি গোত্রকে-বনু নাদির এবং বনু কায়নুকা, চূড়ান্ত ভাবে মদিনা থেকে বহিস্কার করা হয় মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গের করে নব্য বিকাশমান মুসলিম জাতিকে বিপদগ্রস্থ করার অভিযোগে |
এই বিপদ ছিল কঠিন |এই সময় মক্কাবাসীরা সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধমে সক্রিয় ভাবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহী আলাইহু ওয়া সাল্লাম) কে উত্খাতের চেষ্টা করছিল, দুইবার তারা বড়সর সৈন্য বাহিনী মদিনা প্রেরণ করে | এরমধ্যে মদিনার অল্প দুরে প্রথমবার উহুদের যুদ্ধে একবার মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহী আলাইহু ওয়া সাল্লাম) অল্পের জন্য রক্ষা পান | মক্কাবাসীদের মদিনা বিজয়ের দ্বিতীয় সামরিক প্রচেষ্টায়, যা খন্দকের যুদ্ধ নামে পরিচিত, তারা উত্তর-প্রশ্চিম আরব থেকে মিত্রদের যুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত করে যাদের মধ্যে মদিনা থেকে বিতারিত দুটি ইহুদি গোত্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল | এর বাইরে তারা তখনও মদিনার অভ্যন্তরে বসবাসরত সর্ববৃহত ইহুদি গোত্র -বনু কুরায়জার সমর্থন লাভের জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করে | মদিনার দক্ষিনে বনু কুরাইজার বসবাসরত গুরুত্বপূর্ণ ভৈগলিক এলাকা দিয়ে মক্কাবাসীদের অভিযান মুহাম্মদ সাল্লাহী আলাইহু ওয়াসাল্লামের বাহিনীকে দুই দিক দিয়ে আক্রমনের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক ছিল |
বনু কুরাইজা প্রথমে মক্কাবাসীদের পক্ষ্যে যোগদানে দ্বিধান্নিত থাকলেও যখন মক্কাবাসীদের বিশাল সৈন্য বাহিনী অগমন করে তখন তারা সাহায্যে সম্মত হয় |
অবরোধ শুরুহলে বনু কুরাইজা উদ্বিগ্ন অবস্থায় ঘটনার পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছিল | বনু কুরায়জার মুসলমানদের পরাজিত করার অভিপ্রায় জেনে এবং মুসলমানদের জন্য এটা কি ভয়ঙ্কর পরিনতি সৃষ্টি করতে পারে অনুধাবন করে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুটনৈতিক প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে বনু কুরাইজাকে নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা শুরু করেন | এ'ব্যপারে সামান্যই অগ্রগতি অর্জিত হয় | অবরোধের তৃতীয় সপ্তাহে বনু কুরাইজা মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে তাদের প্রস্তুতির সংকেত প্রদান করে, যদিও তারা মক্কাবাসীদের কাছে কিছু পনবন্দী ( হস্টেজ) দাবি করে এটা নিশ্চিত করতে যে মক্কাবাসীরা যেন তাদের একাকী মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখোমুখি ফেলে পরিত্যাগ না করে | যাহোক, ঠিক তাদের এই আশংকাটাই ঘটে | ক্লান্ত অবসাদগ্রস্থ মক্কাবাসীরা বনু কুরায়জাকে কোনো পণবন্দী দিতে অস্বীকার করে | এর অল্প পরেই, শীত ও বৃষ্টিতে কাবু মক্কার সৈন্যবাহিনী হাল ছেড়ে, বনু কুরায়জার জন্য দু:সহ অপমান আর ভয়ংকর ভবিষ্যত পরিনতি অপেক্ষমান রেখে, মক্কার দিকে গৃহযাত্রা করে |
মুসলিম বাহিনী এবার পঁচিশ দিনব্যাপী বনু কুরায়জার দুর্গগুলোর অবরোধ শুরু করে | অবশেষে দু'পক্ষই সালিশে সম্মত হয় |বনু কুরায়জার পাক্তন মিত্র আরব সর্দার সাদ ইবনে মুয়াজ (রাদিয়াল্লাহু আনহু ), যিনি তখন মুসলিম হয়েছিলেন, বিচারক হিসেবে নির্বাচিত হন | যুদ্ধে অল্প কয়েকজন আহতদের একজন সাদ(রাদিয়াল্লাহু আনহু ) তখন যুদ্ধের ক্ষতর জন্য মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন | যদি পূর্বেকার গোত্র সম্পর্ক কার্যকর থাকত তবে সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু ) নিশ্চিত ভাবে বনু কুরায়জাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে পারতেন | তাঁর সহযোগী অন্যান্য গোত্রীয় সর্দাররা তাদের প্রাক্তন এই মিত্রদের ক্ষমা করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করে, কিন্তু তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন |তাঁর দৃষ্টিতে বনু কুরাইজার আচরণ নতুন সামাজিক বিধিবিধানের উপর আক্রমনের সামিল এবং তারা তারা মদিনা রক্ষায় তাদের চুক্তিকে সন্মান করতে ব্যর্থ | তিনি বনু কুরায়জার সকল পুরুষকে হত্যার আদেশ দেন |মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দেয়া রায়ে একমত হন, পরের দিন মুসলিম সুত্র অনুযায়ী ৭০০ বনু কুরায়জার পুরুষের মৃতুদন্ড কার্যকর করা হয় | যদিও সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নিজের বিবেচনা অনুযায়ী বিচারের রায় দেন তবে তার রায় ডিউটেরণমি ২০:১২-১৪ ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল ( আমি এখানে ডিউটেরণমি ২০:১২-১৪ ধারার এ’সংক্রান্ত ভাষ্যটা শুধু নিজে থেকে যোগ করে দিলাম বাংলা অনুবাদ সহ | যাতে বুঝতে সহজ হয় সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু ) বিচারটা ইহুদিদের ধর্মীয় বিধানের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ ছিল কিনা ):
“12 If they refuse to make peace and they engage you in battle, lay siege to that city.
13 When the LORD your God delivers it into your hand, put to the sword all the men in it.
14 As for the women, the children, the livestock and everything else in the city, you may take these as plunder for yourselves. And you may use the plunder the LORD your God gives you from your enemies”.
"১২- তারা যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে অস্বীকার করে এবং আপনার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তাদের শহর অবরোধ করুন | ১৩- যখন আপনার প্রভু আপনার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেন তখন তাদের সকল লোকের উপর তরবারি উত্তোলন করুন | ১৪- তাদের নারী, শিশু, গবাদি পশু এবং শহরের অন্য সবকিছু আপনি গনিমত হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন | গনিমত হিসেবে আপনার প্রভু শত্রুদের থেকে যা আপনাকে দিয়েছেন তা আপনি ভোগও/ব্যবহারও করতে পারেন"|
বনু কুরাইজা পর্বের আলোচক বেশির ভাগ স্কলারই এই মর্মে একমত যে এক্ষেত্রে দুইপক্ষের কেউই তাদের আচরণে সপ্তম শতাব্দীর আরব সমাজের প্রচলিত সাধারণ সম্পর্কের বাইরে কিছুই করেনি | মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রবর্তিত নুতন সামাজিক বিধানকে অনেকেই বহু বছর ব্যাপী বিরাজিত গোত্র সম্পর্কের প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করে | বনু কুরায়জার জন্য প্রচলিত ব্যবস্থার অবসান বহুমুখী হুমকি হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল | একই সময় মুসলিমরা সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিন্ন হয়ে যাবার হুমকির মুখোমুখী ছিল এবং তাদের জন্য মদিনাবাসী সকল গোত্রগুলোর কাছে, যারা ভবিষ্যতে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, একটি বার্তা পৌছে দেওয়া দরকার ছিল | এটি ভাবা খুবই অসঙ্গত যে একই অবস্থায় কোনো একটি গ্রুপ ভিন্ন ধরনের কোনো আচরণ করত |
তবুও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহী আলাইহু ওয়াসাল্লাম আরবের মরুভূমির বিতর্কিত গোত্র সম্পর্ক দিয়ে ইহুদি ধর্মীয় মেসেজকে গুলিয়ে ফেলেননি | কুরআনের আয়াত যা মুসলমানদের সতর্ক করেছিল ইহুদিদের সাথে জোট তৈরী করতে তা এই সুনির্দিষ্ট যুদ্ধের ঘটনার ভিত্তিতেই অবতীর্ণ হয়েছিল | “আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের”(৫:৪৪)” ।
পিবিএসের অনুবাদ অংশটুকুর এখানেই শেষ | আমি পিবিএসের ভাষ্যের কিছু বিষয় নিয়ে কতগুলো কথা বলা প্রয়োজন বলে মনে করি | পিবিএস বনু কুরায়জার ঘটনা বর্ণনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে যে, “বনু কুরাইজা পর্বের আলোচক বেশির ভাগ স্কলারই এই মর্মে একমত যে এক্ষেত্রে দুইপক্ষের কেউই তাদের আচরণে সপ্তম শতাব্দীর আরব সমাজের প্রচলিত সাধারণ সম্পর্কের বাইরে কিছুই করেনি” | আমাদের সহব্লগার এবং ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন বাংলাদেশের আরো অনেক ব্লগারের লেখাতেই একটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে যখনি ইসলামে কোনো বিষয় নিয়ে এরা আলোচনা করেন, যেমন বনু কুরাইজার ঘটনা, তখন হাজার বছর আগে ঘটা বিষয়গুলোকে এরা মাপার চেষ্টা করেন এখনকার পৃথিবীর প্রচলিত মূল্যবোধের আলোকে | যেমন আমাদের সহব্লগার করেছেন| ৭০০- ৮০০ জন মানুষের মৃত্যুদন্ড এবং তাদের পরিবার পরিজনদের মুসলমানদের মধ্যে দাস-দাসী হিসেবে বন্টনকে পনেরশত বছর পরের মূল্যবোধ অনুযায়ী অমানবিক মনে হতেই পারে| কিন্তু এটাও ভাবতে হবে যে বনু কুরায়জার ষড়যন্ত্র যদি সফল হত তবে কুরাইশদের হাতে তার থেকেও অনেক বেশি মুসলমান নিহত হতে পারত| মদিনার ইহুদি গোত্রগুলোর মধ্যে বনু কুরায়জার লোক সংখ্যা ছিল বেশি এবং মুসলমানদের ক্ষতিকরার ক্ষমতাও ছিল অনেক বেশি | বনু কুরাইজার আবাস্স্থানের কৌশলগত কারণেই, যা পিবিএসের বর্ণনাতেও উল্লেখ করা হয়েছে, এরা সেই সময় মুসলমানদের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি হুমকি ছিল|এছাড়া এটাও মনে রাখতে হবে বনু কুরাইজা ঘটনার আগে মদিনাবাসী দুটো ইহুদি গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণে রাসুলুল্লাহ মদিনা থেকে বহিস্কার করেছিলেন তাদের পরিবারসহ অন্যকোন কঠিন শাস্তি না দিয়েই| তাদের কিছু সম্পত্তিও নিয়ে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল| কিন্তু এই দুটো গোত্রই খন্দকের যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদের বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযানে শরিক হয়েছিল| অস্তিত্বের কারণে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিজেদেরই বাস্তবায়ন করতে হয়েছিল তখনকার আর্থ সামাজিক রীতিনীতির ভিত্তিতেই|তাই পনেরশ বছর পরে এটা যতই কঠিন বিচার হোক না কেন বনু কুরায়জার পুরো ঘটনা তখনকার পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করতে হবে |কোনো ভাবেই পনেরশত বছর পরের মূল্যবোধের ভিত্তিতে নয়|
বনু কুরাইজা ঘটনায় একজন মাত্র মহিলাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল | সহব্লগার তার বর্ণনার কোনো সুত্র তিনি উল্লেখ না করে সেই মহিলার মৃত্যুদন্ডকে অনেক মানবিক রূপ দিয়ে চেয়েছেন | কিন্তু এ'প্রসংগে সত্যিটা, ইবনে হিশামের বর্ণনা অনুসারে, হলো তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল বনু কুরাইজা অভিযানে সাহাবী খাল্লাদ ইবনে সুয়াইদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে হত্যার কারণে |এই ঘটনায় প্রাপ্ত শত্রুসম্পত্তি বা গনিমত বন্টনের বিষয়েও সহব্লগার খুবই আপত্তিকর ভাষায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আক্রমন করেছেন| কিন্তু ইবনে হিশামের বর্ণনা অনুসারে এই প্রথম গনিমত বন্টনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম (পড়তে হবে কুরআনের নির্দেশ) অনুসরণ করা হয় | পরবর্তিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনিমত বন্টনে এই নিয়মই অনুসরণ করেন |
রায়হানা বিনতে আমর ইবনে খুনায়্ফাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সম্পর্কে সহব্লগারের মন্তব্যগুলো অত্যন্ত আপত্তিকর | সহব্লগার তার বর্ণনার কোনো সুত্র উল্লেখ করেননি | তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেছে নিয়েছিলেন নিজের জন্য | তার ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে অন্য কোনো বর্ণনা ইবনে হিশাম দেননি | কিন্তু ইবনে হিশাম উল্লেখ করেছেন যে রায়হানা বিনতে আমর ইবনে খুনায়্ফা রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিলেন | রাসুলুল্লাহ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পর্দা করতে অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করেন | রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে খুবই মর্মাহত হন কিন্তু তাকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেননি বরং তাকে এড়িয়েই চলতেন | পরে অবশ্য রায়হানা বিনতে আমর ইবনে খুনায়্ফা ইসলাম গ্রহণ করেন | এর বাইরে এসম্পর্কে ইবনে হিশামের কোনো বর্ণনা আর নেই |
আরবে সেই সময়ে দাস বেচা কেনা হতো |‘অতঃপর নবী বানু কুরাইজার কিছুসংখ্যক বন্দী নারীসহ সা’দ বিন জায়েদ আল-আনসারীকে নাজদ’এ পাঠান। আনসারী ঘোড়া ও অস্ত্রের বিনিময়ে তাদেরকে বিক্রি করে দেন।পনেরশত বছর আগের পতভুমিতে এই বর্ণনায় সহব্লগার অসুবিধা কোথায় দেখলেন আমি বুঝতে পারলামনা | শাক দিয়ে মাছ মনে হয় আমি ঢাকছি না | আমি শুধু বলতে চাইছি পনেরশত আগের ঘটনা বর্তমান সময়ের মূল্যবোধ দিয়ে মাপাটা ভুল |
সহ ব্লগারের আরো একটি মন্তব্য “দেখুন আল্লা, রাসুল…এগুলো হচ্ছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়। সুতরাং সবাই আল্লা/রাসুল কে তোষামদ করবে কেন! একটি দেশে ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ, ভিন্ন দর্শন, ভিন্ন ধর্মের লোক থাকবেই। সেখানে আল্লা/রাসুলের বিরুদ্ধে কথ বলা যাবে না, এটা হতে পারে না। তা ছাড়া, আল্লা/রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা নয়। দেশ আল্লা/রাসুলের না, দেশ সবার, দেশ জনগনের” এবং “ আজকের গ্লোবাল সভ্যতার এই যুগে আল্লা/রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বল্লেই- "তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে.....।" এই বর্বর চিন্তা আল্লা/নবী পূজারী ধর্মান্ধা ছাড়া আর কে ভাবতে পারে?????” সম্পর্কে আমি একমত । সূরা মুমতাহিনার আয়াতে আল্লাহ স্বয়ং এটা উল্লেখ করেছেন “যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে ও তাদের প্রতি ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না “(৮) | আল্লাহকে অস্বীকার করা আর আর তার বিরোধিতা করে মুসলমানদের হত্যা করা বা ধংসের ষড়যন্ত্র করা এক বিষয় নয় | এই মন্তব্যে সহব্লগার যে আয়াতের উল্লেখ করেছেন তাতো শুধু বনু কুরাইজার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে | এটাতো সকল অবিশ্বাসকারীর জন্য প্রযোজ্য নয় | পিবিএসের মদিনার ইহুদি সংক্রান্ত ওই একই বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে "Some individual Medinan Jews, including at least one rabbi, became Muslims. But generally, the Jews of Medina remained true to their faith"| রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকেই বাধ্য করেননি ইসলাম গ্রহণে |আল্লাহ রাসুলের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্রও ধরেননি যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মুসলমানদের আক্রমন করেছে বা তাদের ধংসের ষড়যন্ত্র করেছে |
বিষয়: বিবিধ
৪০০৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পবিত্র কুরআন থেকেঃ
"কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ।" (সূরা আহজাব, আয়াত-২৬)
এই আয়াতে বলা হয়েছে 'একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ' - অর্থাৎ সকল পুরুষকে হত্যা নয়।
বুখারী ও মুসলিমে সাদ (রা)- এর উক্তি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে, "আমি আদেশ করিতেছি যুদ্ধে লিপ্ত পুরুষদিগকে নিহত করা হউক।"
(তথ্য সুত্রঃ 'মোস্তফা চরিত' - আকরাম খাঁ, পৃষ্ঠা - ৭১৪, ৪র্থ সংস্করণ)।
"পরের দিন মুসলিম সুত্র অনুযায়ী ৭০০ বনু কুরায়জার পুরুষের মৃতুদন্ড কার্যকর করা হয় |" -এই ৭০০ সংখ্যাটিও ঠিক নয়।
ইবন-আসাক, বিশিষ্ট মোহাদ্দেস ও ইতিহাসবেত্তা বানু কুরাইযার ঘটনা সম্পর্কে নিম্নলিখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেনঃ
"অতঃপর হযরত (সা) তাদের তিন শত পুরুষকে নিহত করলেন এবং অবশিষ্ট লোকদের বললেন – তোমরা সিরিয়া প্রদেশে চলে যাও, অবশ্য তোমাদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখবো। অতঃপর হযরত তাদের সিরিয়া প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন।" (কান্জুল-উম্মান)
তাদেরকে সিরিয়ায় পাঠানোর কারণ, তখন সিরিয়া ছিল ইহুদী জাতির প্রধান কেন্দ্র।
বিস্তারিত এখানেঃ বানু কুরাইযা প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচারের জবাবে…
রায়হানার গল্পটি ভিত্তিহীনঃ রিজাল শাস্ত্রের ঈমাম হাফিজ-ইবন্-মান্দার বলেছেন, "হযরত (সা) বানি- কোরেজার রায়হানাকে বন্দী করার পর মুক্ত করিয়া দিলে, রায়হানা স্বীয় পরিজনের নিকটে চলিয়া গেল। ('মোস্তফা চরিত' - আকরাম খাঁ, পৃষ্ঠা - ৭১৬, ৪র্থ সংস্করণ)।
তথ্যবহুল লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ইহুদী গবেষকের যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যাতে গবেষকের মতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তের সংখ্যা ৫০ জনেরও কম। হাদীসে এরও সমর্থন আছে। কারণ বন্দীগনকে উসামা-ইবন-যাইদের ঘরে আবদ্ধ রাখা হয়েছিল। সে সময় আরববাসীর ঘরকে কুটীর বা পর্ণকুটির বলা যায়। এরকম ঘরে ৭০০ বন্দী নিশ্চয় আবদ্ধ রাখা যায় না। (কাঞ্জুল-উম্মান)। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
বনু কুরাইজার ই নিযুক্ত হয়ে সাদ(রাঃ) ই্হুদি আইনের ভিত্তিতেই রায় দিয়েছিলেন।
ডকুমেন্টরী রয়েছে। এটাও PBS প্রচার করছে।
পরিশেষে জর্জিয়ায় থাকেন কিনা। আমিও রেডিও
ও টিভি (পিবিএস) দুটোই শুনি এবং দেখি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন