পনেরশ বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলা হাদিস আর বর্তমানে ঘটা তার কিছু নিদর্শন (পর্ব – ১)
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২৮ জুলাই, ২০১৫, ০১:২০:০৫ দুপুর
অনেক আগে আমি যখন প্রথম আমেরিকায় আসি তখন থেকেই সি এন এন আর ফক্স নিউজ চ্যানেল এই দুটো টিভি চ্যানেল আমি নিয়মিতই দেখতাম নিউজের জন্য | অতি ডানপন্থী রিপাবলিকান আর কট্টর ইসরাইল পন্থী বলে বেশ অনেক বছর হলো ফক্স নিউজ চ্যানেল দেখা বাদ দিয়েছি | মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে সি এন এনকেই মুটামুটি একটু নিরপেক্ষ মনে হত | তাছাড়া পিএইচডি প্রোগ্রামের ছাত্র হিসেবে লিডারশিপ কোর্সের একটা সেমেস্টার পেপার আমি লিখেছিলাম সিএনএনের ওনার টেড টারনারের এর লিডারশিপ নিয়ে | কোর্সের রিকয়ারমেন্ট হিসেবেই পেপারটা একাডেমিক জার্নালে পাবলিশেবল ফরমেটে করতে হয়েছিল | পরের সামারেই সেই সেমেস্টার পেপারটা সংক্ষিপ্ত আর্টিকেল আকারে পাবলিশডও হয়েছিল আমেরিকা থেকে প্রকাশিত একটা একাডেমিক জার্নালে| টেড টার্নার সম্পর্কে ব্যক্তিগত রিসার্চ থেকে তার ফিলোসফি, চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে জানার পর থেকে সি এন এনের ব্যাপারে আমার দুর্বলতা একটু বেড়েছিল বই কমেনি | সেই সিএনএনও দ্যাখাও কমিয়ে দিয়েছি গত আরব বসন্ত শুরু হবার সময় থেকে | এটা যত না সিএনএনের খবর প্রকাশের পক্ষপাতিত্তের জন্য তার চেয়েও বেশি মুসলিম দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে শুরু করা গৃহযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবার লাইভ খবরগুলো দেখে সহ্য করতে না পারার কারণে| কোন আরব দেশ এই গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচলো ইরান, ইরাক, সিরিয়া, জর্দান, মিশর, লিবিয়া ? এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে ইরাক ও তার আশপাশ জুড়ে আই এস এসের রক্তক্ষয়ী উত্পাত | মসজিদের পার্কিঙে দিনে বা রাত্রিতে পাঁচ -ছয় ইঞ্চি স্নো ফলের মধ্যেও সিরিয়া বা জর্ডানের উদ্বাস্তুদের জন্য বাক্স ভর্তি করে যখন রিলিফগুলো গাড়িতে উঠিয়েছি সে সব দেশে পাঠাতে তখন তীব্র শীতে যত না কাবু হয়েছি তার চেয়েও শতগুণ বেশি কাবু হয়েছি সারা পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের চূড়ান্ত শোচনীয় অবস্থার কথা ভেবে|এই খারাপ লাগাটা আরো বেশি এজন্য যে এই গৃহ যুদ্ধগুলিতে যে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারা গেল, বন্দী হয়ে অত্যাচারিত হলো বা এখনো হচ্ছে তাদের বেশির ভাগী মুসলমান আর তাদের এই মৃত্যু আর অত্যাচারও হচ্ছে মুসলমানদের দ্বারাই | এই খারাপ লাগার সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের কথাও মনে হয় | পনেরশত বছরেরও আগে বলা কথাগুলো কেমন করে সত্যি হয়ে যাচ্ছে এখন -সভ্ভতার এই চূড়ায় থাকা আমাদেরই সময়ে |
আবূ রাবী আল আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহমতুল্লাহি আলাই) সাওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দুটি ধনাগার দেয়া হয়েছে। আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার প্রতিপালকের নিকট এ দুআ করেছি, যেন তিনি তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের ব্যতীত এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের দলকে ভেঙ্গে টুক্বরা টুকরা করে দিবে। এ কথা শুনে আমার প্রতিপালক বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো প্রতিহত হয় না। আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করবো না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে দেবো না যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোক সমবেত হয়ে চেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলমানগণ পরস্পর একে অপরকে ধ্বংস করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে” (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৯৪ )। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহমতুল্লাহি আলাই) সা’দ ((রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে এ'রকম আরেকটি সহীহ বর্ণনায় আছে “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা আলিয়া হতে এসে বনূ মু-আবিয়ায় অবস্হিত মসজিদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি উক্ত মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত আদায় করলেন। আমরাও তার সাথে সালাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তার প্রতিপালকের নিকট দীর্ঘ দুআ করলেন। এবং দুঁআ শেষে আমাদের নিকট ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তিনটি জিনিস কামনা করেছি। তন্মধ্যে তিনি আমাকে দুটি প্রদান করেছেন এবং একটি প্রদান করেননি। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট কামনা করেছিলাম, যেন তিনি আমার উম্মাতকে দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু’আ কবুল করেছেন। তাঁর নিকট এও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমার উম্মাতকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু’আও কবুল করেছেন। আমি তাঁর নিকট এ মর্মেও দু’আ করেছিলাম যে, যেন মুসলমান পরস্পর একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। তিনি আমার এ দুআ কবুল করেননি” (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন,অধ্যায়ঃ ৫৪/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৯৬ ) |
রেকর্ডেড হিস্ট্রির প্রথম যুদ্ধের বর্ণনা পাওয়া যায় খিস্টপূর্ব ২৭০০বছর পূর্বে| তার মানে প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে মানুষ নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেরাই যুদ্ধ করছে |বলাই বাহুল্য যে এটাই একমাত্র বিষয় যেখানে কনসিস্টেন্টলি সব জাতির মানুষই পারদর্শিতা অর্জন করেছে অন্যদের মারতে |রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় মুসলমানেরা যে যুদ্ধগুলোতে অংশগ্রহন করেছিল তার সবগুলির সাথেই ইসলামের অস্তিতের প্রশ্ন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিল | এজন্যই জিহাদকে ইসলামে এত গুরত্ব দেয়া হয়েছে | আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ তের বছরের মদিনা জীবনের এইসব জিহাদে খুব সম্ভবত তিনশত জন বা তারও কম সংখ্যক সাহাবী শহীদ হন | শত্রুপক্ষেরও খুব বেশি সৈন্য যুদ্ধের ময়দানে নিহত হয়নি | কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের এবং শত্রুপক্ষের হতাহত কম রাখার ব্যাপারে চেষ্টা করতেন | শত্রুপক্ষের মহিলা, বৃদ্ধ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, শিশু দেরও সবসময়ই যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখা হত | মক্কা বিজয়ের মত ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ বিজয়্টাও হয়েছিল তাই প্রায় কোনো হতাহতর ঘটনা ছাড়াই | মক্কা বিজয়ের পরও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসী শত্রুপক্ষের বেশির ভাগ নেতা ও লোকজনদের শর্তহীন ভাবে ক্ষমা করেছিলেন | হজরত আবুবকর এবং হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের খিলাফতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় অকারণ হতাহত সংখ্যা কমানোর জন্য লিখিত আদেশ দিয়েছিলেন |
মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্রধরার বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর ভাবে সাহাবীদের সতর্ক করেছেন | এই ব্যাপারে কুরআন এবং সুন্নাহর নির্দেশনাগুলো খুবই সুস্পষ্ট | এই প্রসঙ্গে আহমাদ ইবনু আবদ আয-যাবিব (রহমতুল্লাহি আলাই) আবূ হুরায়রা ((রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদিসে খুবই সুস্পস্ট ভাবেই বলা হয়েছে যে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই -এ কথার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত এবং আমার প্রতি ও আমি যা নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। এগুলো মেনে নিলে তারা তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে, তবে শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া। আর তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে” (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অধ্যায় ১:কিতাবুল ঈমান, হাদিস নম্বর ৩৪)। সাহাবী কিরাম এই হাদিসের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বলেই হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন খলিফা থাকা অবস্থায় বিদ্রোহীরা অবরোধ করে রেখেছিল তখন তাদের বিরুদ্ধে অস্র ধরেননি | এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এই সময়ে সবর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন | মুসলমানের বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্র ধরার পরিণতির কথা যথাযথ ভাবে অনুধাবন করেছিলেন বলেই অনেক সাহাবী হজরত আলীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খিলাফতে হজরত মাবিয়ার (রাদিয়াল্লাহু আনহুকে) সাথে খিলাফতের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও সংঘটিত যুদ্ধেও অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন | আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন আন-জাহদারী (রহমতুল্লাহি আলাই) আসীফ ইবনু কায়স (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “একদা আমি বের হলাম। এই লোকটিকে সাহায্য করা আমার ইচ্ছা ছিল। এ সময় আবূ বাকরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি বললেন, হে আহনাফ! তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর চাচাত ভাই আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুকে)-এর সাহায্য করার জন্য আমি যেতে চাচ্ছি। আহনাফ (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে আহনাফ! চলে যাও। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আমি একথা বলতে শুনেছি, যখন দু'জন মুসলমান তলোয়ার নিয়ে পরস্পর যুদ্ধ করে তখন হত্যাকারী ও হত্যাকৃত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী হবে। একথা শুনে আমি বললাম অথবা বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হত্যাকারীর অবস্থা তো এই, তবে নিগৃহীত ব্যক্তির অবস্হা কি? উত্তরে তিনি বললেন, সেও তার সাথীকে হত্যা করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল” (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৮৮ )। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”(সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায় ৮১: ফিতনা, হাদিস নম্বরঃ ৬৫৯০) |কিন্তু এই আধুনিক জামানায় যখন আমাদের টেকনোলজি আর কমুনিকেশন সিস্টেমের এত উন্নতি হয়েছে, যখন দুরে বসেই পারস্পরিক পার্থক্যগুলো নিরসন করার জন্য যোগাযোগ সহজ হয়েছে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে তখন মুসলমান জাতি একে অন্যের সাথে রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিস্কার নির্দেশনাগুলো ভুলে এই আত্নঘাতী খুনোখুনিতে মত্ত এটাই সবচেয়ে বেদনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে | আমরা একের সাথে অন্যের একটুকু পার্থক্যও এখন এক্সসেপ্ট করতে পারছিনা | সব কিছুতেই নিজেদের অনুসরণ করা নিয়ম নীতিকেই নির্ভুল মনে করছি আর তার থেকে এতটুকু বিচ্চুতিকেই অন্যদের এমনকি মুসলমান হলেও হত্যার কারণ হিসেবে নির্ধারণ করছি | এই লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলমানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আল্লাহর রাসুলের কথায়তো সত্যি হচ্ছে যেমন বর্ণনা করেছেন ইবনু আবূ উমার মাক্কী (রহমতুল্লাহি আলাই) আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) “নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কি অপরাধে সে নিহত হয়েছে”(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন,অধ্যায় ৫৪: ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হাদিস নম্বরঃ ৭০৩৯)।
কিন্তু কি হচ্ছে এই আজকের মুসলিম বিশ্বে ? আমরা লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলিমকে হত্যা করতেও এতটুকু দ্বিধা করছিনা | শুধু প্রতিপক্ষ সৈন্যই নয়, মহিলা, শিশু, বয়স্ক যারা যুদ্ধে কোনো ভাবেই জড়িত নয় তাদের নির্বিচারে হত্যা করছি আমরা দিনের পর দিন আধুনিক মরনাস্র দিয়ে ক্ষমতা পাবার লক্ষ্য নিয়ে | অথচ শত্রু পক্ষেরও মহিলা, শিশু, বয়স্ক লোকজন যারা যুদ্ধের সাথে যুক্ত নয় তাদের হতাহত করার ব্যাপারে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের সতর্ক করেছেন | পবিত্র কুরানে খুব পরিস্কার ভাবেই উল্লেখ করা আছে যে একজন নিরপরাধীকে হত্যা করা মানে পুরো মানব জাতিকেই হত্যা করা | আর একজন মুমিনকে হত্যা করা মানে আজীবন জাহান্নামের আগুনে জ্বলার অপরাধের সমান | নিজেদের আকিদা বিশ্বাসকে সবার চেয়ে বেশি নির্ভুল ভাবতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি যে আল্লাহর সবচেয়ে বরকতময় নাম হচ্ছে আর রহমান -পরম দয়ালু | তিনি ক্ষমা করতে ভালো বাসেন | এটাই তার সবচে মহান গুন | তার নবীও ছিলেন দয়ার প্রতিমূর্তি | আমরা অন্যের সাথে নিজেদের পার্থক্যকে বড় করে দেখতে যেয়ে ইসলামের পথ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথ থেকেই বুঝি সরে যাচ্ছি একটু একটু করে | আমরা ভাবছিনা যে রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুসরণ না করে অন্য পথে ইসলাম কায়েম করা যায় না |আমরা ভুলে যাচ্ছি আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)) হতে বর্ণিতসহীহ হাদিসের কথা, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যাক্তি আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করে এবং যে ব্যাক্তি আমার অবাধ্যাচরণ করে সে আল্লাহ্রই অবাধ্যাচরণ করে” (সুনানে ইবনে মাজাহ , অধ্যায় ১: ভূমিকা পর্ব, হাদিস নম্বরঃ ৩)| মুসলমানদের মধ্যে এই আত্মঘাতী খুনোখুনি দেখে মন খারাপ হচ্ছে খুবই আবার এটাও মনে হচ্ছে যে পনেরশত বছর আগেইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম মুসলমানদের বিষয়ে হুবুহু এই ভবিষ্যত বাণীই করে গেছেন | এটাতো তাঁর নবুওত-এরই এক নিদর্শন | আল্লাহর থেকে এই জ্ঞান না পেলে তিনি কিভাবে হাজার বছর পরের সময় সম্পর্কে এমন অকাট্য ভবিষ্যত বাণী করলেন | এজন্য বেশি বিচলিতও হচ্ছিনা | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের কথাতো আর কখনো মিথ্যে হতে পারে না| আমার শুধু দুঃখ যে এই অভিশপ্ত সময়ই আমার জন্ম আর এগুলো আমাকে দেখতেই হবে |
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Abu Dawud Book 033, Hadith Number 4390.
Narated By Atiyyah al-Qurazi : I was among the captives of Banu Qurayzah. They (the Companions) examined us, and those who had begun to grow hair (pubes) were killed, and those who had not were not killed. I was among those who had not grown hair.
২। "পবিত্র কুরানে খুব পরিস্কার ভাবেই উল্লেখ করা আছে যে একজন নিরপরাধীকে হত্যা করা মানে পুরো মানব জাতিকেই হত্যা করা।" (সূরা-৫:৩২)
কিন্তু তার পরের আয়াতই বলা হয়েছে- "যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।"(সূরা৫:৩৩)
যথার্থই বলেছেন। আপনার উপসংহার অনুযায়ী আমরা অনেকেই অনুভব করতে পারি (ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কেউ প্রমানও করতে পারে) আমাদের আশে পাশের অসংখ্য বিষয়াদি মোহাম্মদ সঃ এর করা ভবিষ্যতবানী সমূহকে এক্সেক্টলী প্রতিফলিত করছে।
সমস্যা হচ্ছে পুরো উম্মাহ ও এর লিডারশীপ যেন অদ্ভুত এক মানুষিক জড়তা কিংবা মূড়তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে - যে জড়তাকে ওভারকাম করে ওনারা যেন কোনভাবেই কোরান ও হাদীস দিয়ে দুনিয়াকে মূল্যায়ন করার অবকাশ পাচ্ছেন না, উম্মাহর ট্রু স্টেইট ও মূল্যায়ন করতে পারছেন না।
স্বভাবতঃই আমাদের লিডারশীপ - যাদের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি, যাদের নির্দেশনা প্রয়োজন - তারা কেমন যেন মূক, বধির ও অন্ধের ন্যায় চুপচাপ করে আছেন, আবার কেউ কেউ স্যেকুলার জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে উম্মাহর সমস্যা চিহ্নিত করছেন এবং সমাধান বাতলাচ্ছেন।
কিন্তু ভুলেও কোরান ও হাদীস পর্যালোচনার মাধ্যমে উম্মাহর এ অবস্থা বিশ্লেষন করছেন না, সমস্যা চিহ্নিত করছেন না এবং সমাধানের পথ ও বাতলাচ্ছেন না - অথচ কোরান ও হাদীসসমূহে আজকের এ অবস্থাকে এক্সেক্টলী পোট্রেট করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে এ সময়ে আমাদের করনীয় কি কি?
কিন্তু আমাদের লিডারশীপরা কেন যেন কষ্ট করে কোরান ও হাদীসে যেতে চাইছেন না, এ নিয়ে পড়ালিখা ও করতে চাইছেন না। বিক্ষিপ্তভাবে এ নিয়ে লিখালিখি হয়, এ নিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি হয় - কিন্তু আর্গানাইজড ওয়েতে এ নিয়ে কোন কাজ কোথাও হচ্ছে না - যাতে উম্মাহ এ্যালার্টেড হবে এবং কোরান ও হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী এ্যাকশান নিতে পারবে।
আমরা এখন নিজেরাই নিজেদের হত্যা করছি শুধু ইগো এর বশে।
১। আপনি আসলে মৃদু মন্দ মিষ্টি ভাষায় ইসলামী নেকড়ে'কে নিরীহ ভেঁড়ার চামড়ায় ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করলেন বৈকি। ধন্যবাদ। কিন্তু এই মুক্ত তথ্য প্রবাহের যুগে 'শাক দিয়ে মাছ' ঢাকা যায় না এ সত্যটি আপনি সুচতুর ভাবে উপেক্ষা করেছেন।
ইসলামী সূত্র থেকেই আমরা জানতে পারি- ইহুদীদের বিরুদ্ধে নবী মুহাম্মদের সবচেয়ে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটে বানু কুরাইজা ইহুদী গোত্রের উপর। নবীর উপস্থিতিতে হাত বাধা অবস্থায় সে ৮০০-৯০০ বন্দীকে একে একে পরিখার ধারে এনে তরবারীর আঘাতে মস্তক ছিন্ন করে কূপের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। নবী নিজে দুই ইহুদী নেতার শিরচ্ছেদ করেন। এ দৃশ্য চলে সকাল থেকে সারাদিন এবং মশাল জ্বালিয়ে রাত্রি পর্যন্ত। পুরুষাঙ্গের পাশে জন্মানো লোমের ভিত্তিতে তাদের সাবালকত্ব যাচাই করা হয়। কুরাইজা গোত্রের শিশু ও নারীদেরকে দাস হিসেবে আটক করা হয় এবং তাদের ধন্তসম্পদ ও ঘরবাড়ী যথারীতি বাজেয়াপ্ত করে মুসলিমদের মাঝে বণ্টন করা হয়। ইসলামের আল্লাহ নিম্নোক্ত প্রত্যাদেশের মাধ্যমে এ নিষ্ঠুর বর্বরতার স্বর্গীয় অনুমোদন দেন: ‘তাদের কতককে তোমরা হত্যা করেছো ও কতককে করেছো বন্দী। এবং তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে তাদের ভূমি, বাড়ীঘর, ধন্তসম্পদ ও খামারের... অধিকারী করেছেন। আল্লাহ সর্বদা সবকিছু করতে সক্ষম’ (কুরআন ৩৩:২৬-২৭)। এই হছ্ছে কোরানের দয়ালু!? মানবিক!? আল্লার কথা। মাশাআল্লা!!!
এক ইহুদী নারী, যার স্বামীকে শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল, সে তার স্বামীর হত্যাকারীদের দাসী হয়ে বেঁচে থাকার পরিবর্তে স্বামীর মত মৃত্যু কামনা করে। মুহাম্মদ তার দাবী মঞ্জুর করলে সে সহাস্যবদনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়। নবীর যুবতী স্ত্রী আয়শা বানু কুরাইজার হত্যাযজ্ঞ সচক্ষে দেখেছিলেন। তিনি বলতেন: সে বীরাঙ্গনার মৃত্যুকালীন হাস্যপূর্ণ মুখখানি সব সময় যেন তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ইবনে ইসহাক জানান: ‘আয়েশা প্রায়শঃই বলতেন, ‘শীঘ্রই তাকে হত্যা করা হবে জানা সত্ত্বেও সেই নারীর উচ্ছল তেজ ও সশব্দ হাসির কথা আমাকে যে কী বিস্মিত করেছিল, তা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।
নবী লুণ্ঠনের মালরূপে প্রাপ্ত বানু কুরাইজার ধনসম্পদের এক-পঞ্চমাংশ নিজের হিস্যারূপে রেখে অবশিষ্ট তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ভাগ করে দেন। একই ভাবে বন্দী নারী ও শিশুদের ভাগ করা হয়। নারী বন্দীদের মধ্যে সুন্দরী তরুণীরা মুসলিমদের যৌনদাসীরূপে গৃহীত হয়। নবী নিজে রায়হানা নাম্নী এক সুন্দরী তরুণীকে তাঁর যৌনদাসী হিসেবে গ্রহণ করেন। বন্দী পুরুষদের হত্যার ঐ রাতেই তিনি রায়হানাকে বিছানায় নিয়ে সহবাস করেন। ভবিষ্যতে যুদ্ধের প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্র ও ঘোড়া সংগ্রহের জন্য কিছু বন্দীকে অন্যত্র বিক্রি করা হয়। ইবনে ইসহাক লিখেছেন: ‘অতঃপর নবী বানু কুরাইজার কিছুসংখ্যক বন্দী নারীসহ সা’দ বিন জায়েদ আল-আনসারীকে নাজদ’এ পাঠান। আনসারী ঘোড়া ও অস্ত্রের বিনিময়ে তাদেরকে বিক্রি করে দেন।
এত কিছুর শাক দিয়ে মাছ ঢাকবেন কেমন করে, জনাব আসাবাদী????
২। আপনার ২য় প্রশ্নের জবাবে বলছি- দেখুন আল্লা, রাসুল...... এগুলো হচ্ছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়। সুতরাং সবাই আল্লা/রাসুল কে তোষামদ করবে কেন! একটি দেশে ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ, ভিন্ন দর্শন, ভিন্ন ধর্মের লোক থাকবেই। সেখানে আল্লা/রাসুলের বিরুদ্ধে কথ বলা যাবে না, এটা হতে পারে না। তা ছাড়া, আল্লা/রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা নয়। দেশ আল্লা/রাসুলের না, দেশ সবার, দেশ জনগনের।
আজকের গ্লোবাল সভ্যতার এই যুগে আল্লা/রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বল্লেই- "তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে.....।" এই বর্বর চিন্তা আল্লা/নবী পূজারী ধর্মান্ধা ছাড়া আর কে ভাবতে পারে?????
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন