রোসা পার্কস, আমেরিকার সিভিল রাইট মুভমেন্ট, এবং ক্রীতদাসদের প্রতি ইসলামের মানবিকতা
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:০০:০৪ দুপুর
অনেকটা চুপিসারেই পেরিয়ে গেল ডিসেম্বর মাসের এক তারিখটা | বেশি কথা হোলনা উনিশস পঞ্চান্ন সালের শীতের এক দুপুরে আলাবামার মন্টগমারীতে ঘটা রোসা পার্কসের সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাটার | ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের একটা গ্রুপ রোসা পার্কসের উপর ফাইনাল প্রজেক্ট প্রেজেন্ট না করলে আমারও হয়ত মনেই হত না বিষয়টা ।মিসৌরির ফার্গুসনের ঘটনাটাই গত কদিন ধরে সব নিউজ মিডিয়াতে সিগনেচার নিউজ আইটেম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে |উনিশস পঞ্চান্ন সালে আলাবামা স্টেটের মন্টগমারীতে বিয়াল্লিশ বছরের কৃষ্ণাজ্ঞ মহিলা রোসা পার্কসকে এক শ্বেতাঙ্গ লোক তার জন্য সামনের সীট ছেড়ে দিয়ে বাসের পিছনের দিকের সীটে বসতে বললে রোসা পার্কস অস্বীকার করেন |তখন কালোরা আমেরিকায় চূড়ান্ত ভাবে নিগৃহীত | কালো ছেলে-মেয়েরা সাদাদের সাথে একই স্কুলে যেতে পারেনা, একই রেস্টুরেন্টে খেতে পারেনা সেগ্রীগ্রেশনের কারণে | আইন অনুযায়ী পাবলিক বাসেও কালোদের সামনের সীটে বসার অনুমতি ছিলনা | খালি বাসে কালোরা উঠলেও কালোদের অনুমতি ছিল শুধু একদম পেছনের সীত্গুলোতে বসার | সেই পরিপ্রেক্ষিতে রোসা পার্কসের সেই প্রতিবাদ ছিল খুবই সাহসী এবং অলমোস্ট আনথিঙ্কাবল | মার্কিন সিভিল রাইট মুভমেন্টের সুচনা হয়েছিল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই |এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আলাবামার সল্প পরিচিত এক ক্রিস্টান কাথলিক প্রিচার এমেরিকান সিভিল রাইট মুভমেন্টকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা আমেরিকা জুড়ে| যার ফলশ্রুতিতে সেই সল্প পরিচিত কাথলিক প্রিচার সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন | পরবর্তীকালে নোবেল কমিটি তাকে নোবেল পিস প্রাইজ দিয়ে সন্মানিত করেছিল | "আই হাভ এ ড্রিম" নামে বিখ্যাত ভাষণের রূপকার আমেরিকার ইতিহাসেত বটেই এমনকি সারা পৃথিবীর অধিকারহীন মানুষের দাবি আদায়ের সংগ্রামে অমর হয়ে যাওয়া সেই মানুষটি হলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র| |
এই সিভিল রাইট মুভমেন্টের ফলাফল হিসেবেই আমেরিকার রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক জীবনে অনেক গুরত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয় | যেমন আমেরিকান কন্সটিটিওশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এমেনডমেন্ড - এফার্মাটিভ অ্যাকশন ক্লজগুলো এসেছিল এই সিভিল রাইট মুভমেন্টের ফলাফল হিসেবেই | এই এফার্মাটিভ অ্যাকশন ক্লজগুলোই মাধমেই আমেরিকার রাষ্ট্রীয় এবং প্রশাসনিক কাঠামোয় কালোদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ডিসক্রিমিনেশন বিলোপের ক্ষেত্রে প্রথম কার্যকর নীতি বাস্তবায়নের সূচনা হয় | এই ক্লজগুলোই আমেরিকান গভের্নমেন্টের বিভিন্ন পলিসি যেমন সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে আফ্রিকান-আমেরিকান, নারী, মাইনরিটি গ্রপের আনুপাতিক হার বৃদ্ধির মূল নিয়ামক এবং ভিত্তি হিসেবে এখন স্বীকৃত| এছাড়াও এই এফার্মাটিভ অ্যাকশন ক্লজগুলোই পরবর্তীকালে আরো অনেক সিভিল রাইট সম্পর্কিত কন্সটিটূইশনাল প্রোভিশনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে | যেমন 'ইকুয়াল পে এক্ট অফ 1963', 'এইজ ডিসক্রিমিনেশন ইন এমপ্লয়মেন্ট এক্ট অফ 1967', 'টাইটেল VII অফ দি সিভিল রাইটস এক্ট অফ 1964' সহ এ'সম্পর্কিত আরো অনেক পাবলিক সার্ভিস কর্মী নিয়োগ নীতি প্রস্তাবিত ও বাস্তবায়িত হয় এই সিভিল রাইট মুভমেন্টের সরাসরি ফলাফল হিসেবেই | আমেরিকার মত একটি মাল্টি কালচারাল সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় সিভিল রাইট মুভমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য আর এই আন্দোলনের সূচনাকারী হিসেবে রোসা পার্কসের অবদানও আধুনিক আমেরিকান সমাজে তাই ভাস্বর হয়ে রয়েছে|তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ১৯৯৬ সালে তাঁকে "প্রেসিডেন্ট মেডেল অফ ফ্রিডম" পদকে ভুষিত করেন| তার আগে ১৯৯২ সালে রোসা পার্কসকে মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে "কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল" দিয়ে সন্মানিত করা হয় |
যদিও রোসা পার্কসের প্রতিবাদের থেকে সিভিল রাইটস মুভমেন্ট তথা আফ্রিকান আমেরিকানদের সমান অধিকারের আন্দোলনের শুরু কিন্তু তার সফলতা আসে প্রায় একযুগ পরে | সিভিল ওয়ার সমাপ্তির দুই শ' বছর পরেও কালোদের বিরুদ্ধে এই বঞ্চনা, শাসন-শোষণ, আর অত্যাচার এতই চরম ঘৃণাপূর্ণ ছিল যে ১৯৬১ রোম অলিম্পিকে বক্সিংএ সোনার পদক জেতার পরেও কাসিয়াস ক্লে নামের এক তরুণ বক্সারকে কৃষ্ণাজ্ঞ বলে কেনটাকির লুই ভিলে তার নিজ শহরের রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকবার অনুমতিও দিতে অস্বীকার করেছিল রেস্টুরেন্টের শ্বেতাঙ্গ সাদা মালিক | রাগে দুঃখে আর অপমানে ওহিও নদীর এক ব্রিজের উপর থেকে চোখের জলে ভেসে সেই তরুণ বক্সার নিচে নদীতে ছুড়ে ফেলেছিলেন তাঁর প্রিয় অলিম্পিক সোনার পদক |তার অল্প কয়েক বছর পরে সেই কাসিয়াস ক্লেই কালোদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সমাজের অন্যায়-অবিচার, শাসন-শোষণ আর বঞ্চনার বিপরীতে ইসলামের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিল শান্তির হাতছানি | ইসলামের মাঝে সাম্য আর শান্তির স্বাদ খুঁজে পাওয়া সেই কাসিয়াস ক্লে পরবর্তিতে মোহাম্মদ আলী নামে শুধু সর্বকালের সেরা বক্সারই নয় বরং সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবেও চির স্বরণীয় হয়ে আছেন | আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোটের অধিকার থেকেও বঞ্চিত রাখা হয় এই সেদিন পর্যন্ত যদিও সাংবিধানিক ভাবে সকল নাগরিকের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল ১৮৭০ সালে | মাত্র সেদিন প্রেসিডেন্ট জনসনের "সিভিল রাইট এক্টস ১৯৬৪" কে ধরা হয় আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রকৃত নাগরিক এবং সমান অধিকার প্রাপ্তির সত্যিকার টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে | এইতো সেদিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৮ সালে আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার পরের দিন ওকলোহোমা স্টেটের রাজধানী ভিত্তিক একটি নিউজ পেপার সেই খবরটাও প্রকাশ করেনি কালো ওবামার জয় মেনে নিতে না পেরে | তারা প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে কালো ওবামার কাছে কনসারভেটিভ রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী জন ম্যাককেইনের পরাজয়ের খবরটা পুরোপুরি ব্লাক আউট করে প্রথম পাতায় শুধু স্টেট ইলেকশনের খবর প্রচার করে | সিএনএনের নিউজে এই আশ্চর্যের খবরটা আমি নিজেই শুনেছি আর এটা যে খুবই আনইউজুয়াল এবং রেসিয়ালি মটিভেটেড হোস্টদের সেই সন্দেহের আশংকা সিএনএনের আলোচনা থেকে সেটাও আমার নিজের কানে শোনা |
আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি এই বর্ণবাদী আর অমানবিক আচরণ কিন্তু অনেক আগে থেকেই ইউরোপীয় আর মার্কিন সমাজে চলে আসছে | আধুনিক মানুষের সভ্যতার অন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনাটা হলো দাস প্রথার প্রচলন- যা ইউরোপিয়ান রাজতন্ত্রগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছিল কয়েক শতাব্দী আগে | বানিজ্যিক শ্রমৃদ্ধির আড়ালে এশিয়া-আফ্রিকা আর ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর বিশাল অঞ্চল জুড়ে ইউরোপিয়ান দেশগুলো গড়ে তুলেছিল তাদের কলোনিগুলো | যেখান থেকে নাম মাত্র কখনো বা বিনা পারিশ্রমিকে তারা সংগ্রহ করত তাদের শিল্পবিপ্লবের প্রধান উপকরণ সস্তা শ্রম - বন্দী দাস শ্রমিক | আলোঝলমল লন্ডন, সিন নদীর তীরের অপুরূপ আইফেল টাওয়ার বা টাইবার নদীর তীরে পরাক্রান্ত রোমান সম্ম্রাজ্যের রাজধানী রোম নগরী দেখতে নয় - সস্তা শ্রমের উত্স বন্দী দাস হিসেবেই আফ্রিকানদের প্রথম ইউরোপ আসা | তারপর সেই সুত্র ধরেই দাস হিসেবে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অধীন নতুন পৃথিবী আমেরিকায় প্রথম আসার অভিজ্ঞতা হয় এই আফিকার কালো মানুষদের | শোষণ, বঞ্চনা, অমানুষিক অত্যাচার আর অবিচারকে সঙ্গে করেই শুরু হত তাদের দাস জীবনের পথচলা আর দিনে দিনে ক্রমশই তা দীর্ঘায়িত হত বন্দী আর অধিকারহীন জীবনে |১৬৬২ সালে ভার্জিনিয়া স্টেট পার্লামেন্টের একটা বিলে বলা হয়েছিল ক্রীতদাসরা সারা জিবিনের জন্যই ক্রীতদাস থাকবে | ভার্জিনিয়া স্টেট পার্লামেন্টের ১৬৬৭ সালের আরেকটি আইনে বলা হয়েছিল যে ক্রীতদাসরা বাপটাইজের মাধ্যমে ধর্ম পরিবর্তন করলেও তাদের অবস্হার কোনো পরিবর্তন হবেনা- অর্থাৎ তারা মুক্তি পাবেনা | ১৬৭০ সালে ভার্জিনিয়া স্টেট আরেকটি আইন পাশ করে যাতে বলা হয়েছিল ক্রীতদাসরা মালিকের অধিকারভুক্ত অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে এবং মালিক তার ইচ্ছানুযায়ী দাসদের ব্যবহার করতে পারবে | ১৮৫৭ সালে ড্রেড স্কট আর সানফোর্ড মামলায় আমেরিকান সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয় আফ্রিকান আমেরিকান ক্রীতদাসরা যদি মুক্তও (ফ্রি) হয় তব তাদের জন্য আমেরিকার সংবিধানের ভিত্তি ডিক্লারেশন অফ ইনডিপেনডেন্সের ঘোষিত "সিটিজেন" অর্থ প্রযোজ্য হবেনা | এজন্য সংবিধানের কোনো নাগরিক অধিকারও তারা দাবী করতে পারবে না | আফ্রিকান আমেরিকান বন্দী দাসদের প্রতি শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয়ানদের অমানবিক ব্যবহার, নিষ্ঠুর অত্যাচার, অমানুষিক শাসন-শোষণ কলমের আচঁড়ে অমর করে রেখেছেন এলেক্স হ্যালি তাঁর বিখ্যাত বই "দা রুটস" এ | আফ্রিকান আমেরিকান ক্রীতদাসদের জীবনের বঞ্চনা, অত্যাচার -অবিচার আর তাদের প্রতি শ্বেতাঙ্গ মালিকদের অমানুষিক অত্যাচারের আরেকটি অসাধারণ বর্ণনা হলো হারিয়েট বীচার স্টো'র "আঙ্কেল টমস কেবিন" |
আমেরিকার ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো "সিভিল ওয়ার"| যা সংঘটিত হয়েছিল ১৭৬১ থেকে ১৭৬৫ পর্যন্ত আমেরিকার উত্তর আর দক্ষিনের স্টেটগুলোর মধ্যে মূলত দাস প্রথাকে কেন্দ্র করেই | উত্তরের স্টেটগুলো দাস প্রথা রহিত করনের পক্ষে (যদিও নর্দান স্টেটগুলোর এই অবস্হান ছিল মূলত অর্থনৈতিক কারণ দিয়েই মূলত প্রভাবিত) আর দক্ষিনের স্টেটগুলো দাস প্রথার রহিতকরনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় | আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের নেতৃত্বে উত্তরের স্টেটগুলো জয় লাভ করলে সাড়ে চার বছর ব্যাপী ব্যাপী সিভিল ওয়ার সমাপ্ত হয় এবং দাস প্রথা আনুষ্ঠানিক ভাবে রহিত করা হয় | সিভিল ওয়রের সময়কালীন ভূমিকার জন্য এখনো লিঙ্কনকে আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয় |দাস প্রথার বিরুদ্ধে আমেরিকার রাষ্ট্রীয় অবস্থান এখনো আমেরিকানদের কাছে পরম গর্বের বিষয় | আমেরিকার উদার অর্থ-সামাজিক আর গণতান্ত্রিক পরিচয়ের অন্যতম গর্বের সিগনেচার ইভেন্ট হলো এই দাস প্রথার বিলোপ | এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো সিভিল ওয়ার এর মত রক্তক্ষয়ী ঘটনার মধ্যে দিয়ে যে দাস প্রথা বিলুপ্ত করা হলো তার কু প্রভাবগুলো কিন্তু আমেরিকান সমাজে রয়েই যায় দুই শ' বছর পরেও | আফ্রিকান আমেরিকানদের সেই বঞ্চনার কথা দিয়েই এই লিখা শুরু করেছিলাম |
দাসদের প্রতি এই অমানবিক আচরণ শুধু আমেরিকাতেই নয় সমসাময়িক ইউরোপের অন্য দেশেও একই রকম ছিল | ইতিহাসের পাতায় পাতায় দাসদের প্রতি নিষ্ঠুর আর অমানবিক আচরণের উধাহরণ অতীতের সব সভ্যতার ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় | শুধু গত শতাব্দীর আমেরিকা নয় হাজার বছর আগের গ্রীস বা রোমান সভ্যতার স্বর্ণ যুগেও ক্রীতদাসদের প্রতি আচরণ ছিল অবর্ণনীয় | হাজার বছর আগে গ্রীক ক্রীতদাস স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে বিদ্রোহ কোনো রাজ্য জয় বা স্বাধীন কোনো রাজ্য প্রতিস্ঠার ইচ্ছা নিয়ে হয়নি | এটা হয়েছিল শুধু দাসদের অমানুষিক জীবনটাকে খানিকটা বেশী সহনীয় করে তোলার দাবী জানাতে | বিখ্যাত সব রোমান আরকিটেকচারাল এস্টাব্লিশমেন্ট গুলোও যে কত শত ক্রীতদাসের অর্দ্ধাহার-অনাহারের শ্রমে গড়ে উঠা তা এখনো সামাজিক বিজ্ঞানীদের গবেষনার বিষয় | আমি মাঝে মাঝেই ভাবি ক্রীতদাসদের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণের মানুষের সমস্ত ইতিহাস থেকে ইসলামের ইতিহাস কতই না ভিন্ন !
আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে রাসুল হিসেবে মনোনীত করে পৃথিবীর মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌছানোর যে দায়িত্ব দেন শুরু থেকেই তার মূল কথাই ছিল - আল্লাহর জমিনে শুধু আল্লাহরই আধিপত্য থাকবে, অন্য কারো নয় | অন্য যে কারো কর্তিত্বের, শ্রেষ্ঠত্বের দাবী পুরোপুরি ধ্বংশ করে দিতে হবে | পুরো পৃথিবীতে শুধু আল্লারই কর্তিত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের মহিমাই শুধু স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে | এই দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তাঁর রাসুলকে উদ্দেশ্য করে সুরা মুদ্দাসসিরে বলেছেন উষ্ণ বিছানার আরাম ঠেলে, গায়ের চাদর ফেলে বিছানা উঠুন| ঘুমের আরাম ছেড়ে আল্লাহর শ্রেষ্ষ্ঠত্ব প্রচারে জেহাদে অবতীর্ণ হন|এই দায়িত্ব পাবার পরে প্রায় তেইশ বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহিস সালাম আল্লাহর একত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করতে তাঁর জিহাদ অব্যাহত রাখেন|এই জিহাদ শুধু ধর্মীয় আর রাজনৈতিক ভাবেই সীমাবদ্ধ ছিলনা এটা সামাজিক ভাবেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহিস সালামকে করতে হয়েছিল | এই সামাজিক সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল দাসপ্রথা সংক্রান্ত ইসলামের নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করা | আপাত দৃষ্টিতে এটা সহজ মনে হলেও হাজার বছর আগের বংশ মর্যাদাভিত্তিক আরবীয় সমাজের নিরিখে এই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করা ছিল খুবই কঠিন | কারণ আরব তখন বংশ মর্যাদাতেই বাঁচতো এবং বংশ মর্যাদাতেই মরত | নিজের বংশের উপর অন্যদের শ্রেষ্ঠত্ব কিছুতেই মেনে নিত না | তাই ইসলামের বিধান অনুযায়ী সামজিক সাম্যতা ভিত্তিক আশরাফ-আতরাফের বিভাজন বিহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন ছিল সে সময়ে |
আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি আধুনিক আমেরিকান শ্বেতাঙ্গদের মত ইউরোপিয়ান দেশগুলোসহ অন্যান্য সব সব্ভতায়ই ক্রীতদাসদের প্রতি যে বর্ণ বৈষম্য, নিষ্ঠুর, অমানবিক শাসন-শোষণ, অত্যাচারের যে বর্ণনা আমরা ইতিহাসে পাই সে তুলনায় ক্রীতদাসদের প্রতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান সামাজিক সাম্যের একটা "গোল্ডেন রুল" প্রতিষ্ঠা করে| ইসলাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার সাথেই কল্যাণ জনক ব্যবহার করার বিশেষ নির্দেশ দেয় | দাস-দাসীদের সাথে সহানুভূতিশীল আচরণের জন্য সবাইকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইসলামে | তাদেরও অন্য সবার মত অধিকার দেয়া হয়েছে |
সহীহ বুখারী শরীফে হজরত আবু যার রাদিআল্লাহু আনহু সম্পর্কে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে(ইফা,৫৬২৪) | উমর ইবনু হাফস (রহঃ) বর্ণনা করেছেন একবার আবু যার রাদিআল্লাহু আনহুর সাথে আমর দেখা হলো | তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: আবূ যার! তোমাদের দাস-দাসী তোমাদের ভাই। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। তাই যার ভাই তাঁর অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিওনা, যা তাদের জন্য খুব বেশী কষ্টকর| যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে (সহীহ বুখারী,৫৬২৪;তিরমিযী,২৬৭৬;আবূ দাঊদ, ৪৬০৭; আহমাদ, ১৬৬৯২; দারিমী, ৯৫)-এ সহীহ সনদসহ ইরবায ইবনু সারিয়াহ বর্ণিত হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে , একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নাসীহাত করেন|তিনি বলেন: তোমরা আল্লাহ্ভীতি অবলম্বন করো, নেতৃ-আদেশ আনুগত্য করো যদিও সে কাফ্রী গোলাম হয়।
শুধু মুখের কথাতেই নয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই প্রথম নিজের বাক্তিগত দাসের সাথে আরবের তত্কালীন প্রথা বিরোধী সহানুভুতিশীল ব্যবহারের সম্পর্ক গড়ে তুলেন | তাঁর বাক্তিগত দাস যায়িদ বিন হারিসার সাথে তাঁর ব্যবহার এতই সহানুভূতিশীল ছিল যে যায়িদ রাদিআল্লাহু আনহুর পিতা তাঁর খোঁজ পেয়ে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তিনি যেতে অস্স্বীকার করেন | হজরত যায়িদের এই সিদ্ধান্তের পর রাসুল্লুল্লাহ কাবা ঘরের পাশে দাড়িয়ে সবার সামনে তাকে নিজ পুত্র হিসেবে ঘোষণা করেন | রাসুলুল্লাহ সাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনা জীবনে যখন ইসলাম রাষ্ট্র শক্তি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত তখন এক সময়ের ক্রীতদাস এই যায়িদ রাদিয়াল্লাহহু আনহুই হয়েছিলেন মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি, রাসুলুল্লাহর বিশ্বাসভাজন- আমিন এবং রাসুলুল্লাহর অনুপস্থিতিতে মদিনার অস্থায়ী শাসক |ইসলামের সাম্যময় বিধানের কারণে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাঁর উপর অর্পণ করা হয়| তাঁর অধীনে যুদ্ধ করেছেন আরবের অন্যতম বিখ্যাত সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ, জাফর ইবনে আবু তালিব মত বিখ্যাত সাহাবী |
মিশমিশে কালো রঙের হাবশী বংশদ্ভুত হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু অনহু ইসলাম গ্রহণ করার আগে ছিলেন বানু জুমহার দাস | ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কারণে তাঁর মুনিব তাঁকে অমানুষিক অত্যাচার করে | গলায় রশি বেধে উত্তপ্ত রাস্তা দিয়ে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হত, সূর্যের তাপে গনগনে উত্তপ্ত বালুর উপর তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা শুইয়ে রাখা হত ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কারণে | কিন্তু ইসলাম এই হাবশী ক্রীতদাস বেলালকে বরণ করে অসাধারণ সন্মানের সাথে | মদিনায় যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত তখন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকেই নির্বাচিত করেন | হজরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক মেয়ের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তাঁর বিয়ে দিয়েছিলেন | হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রায়শই বলতেন যে, আবুবকর আমাদের নেতা এবং তিনি আমাদের নেতা বিলাল কে আজাদ করেছেন |
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর একজন দাস ছিল তার নাম ছিল আশেক | সেই দাস তার নিজের জবানিতে বলেছেন হজরত ওমর আমাকে বলেন যে “হে আশেক মুসলমান হয়ে যাও | যদি তুমি মুসলমান হয়ে যাও তবে তোমার কিছু দক্ষতা আর যোগ্যতা দিয়ে আমাদের মুসলমানদের উপকার হবে” | কিন্তু আমি রাজি নাহলেও হজরত উমর কখনো আমার উপর বিরক্ত হননি, আমার উপর অসুন্তষ্টি প্রকাশ করেননি বা আমার সমালোচনা করেননি | কথায়, কাজে ও চিন্তায় ইসলাম সবার মত ক্রীতদাসেরও যে স্বাধীনতা দিয়েছে তার একটি উধাহরণ হলো এই ঘটনা | হজরত ওমর ছিলেন তার সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী শাসক | তিনি ইচ্ছে করলেই তাঁর দাসকে বাধ্য করতে পারতেন তাঁর আদেশ মানাতে | একজন ক্রীতদাস তাঁর অনুরোধ রক্ষা করেনি অথচ তিনি তাঁর প্রতি কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ করেননি |
হজরত ওমরের আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন জুরাইদ ইবনে হাজাম ইবনে হাসান | একবার কিছু লোক আমিরুল মোমেনীন হজরত ওমরের সাথে দেখা করতে এলেন যাদের মধ্যে ছিলেন হজরত বেলাল, খাব্বার ইবনে আরাত, আম্মার ইবনে ইয়াসির এবং কুরাইশদের ক'জন নেতা যাদের মধ্যে ছিলেন আবু সুফিয়ান (রা, হারেস ইবনে হিশাম (রা এবং সোহায়েল ইবনে আমর (রা| হজরত ওমর কুরাইশ নেতাদের অপেক্ষা করতে বলে প্রথম তিনজনকে ভিতরে ঢুকার অনুমতি দিলেন | আবু সুফিয়ান(রা বললেন আজকের দিনের থেকে বেশি অপমানিত আমি আর কোনদিন হইনি | কুরাইশদের নেতাদের রেখে একসময় যারা ক্রীতদাস ছিল তাদের আগে ডাকা হলো ! হজরত ওমর (রা বংশগত আভিজাত্যের থেকে আল্লার প্রতি অনুগত্তকেই বেশি দাম দিলেন এই আহবানে | প্রথম যাদের ভিতরে দুখের অনুমতি দেয়া হয়েছিল তারা সবাই ছিলেন বদরী যোদ্ধা আর শেষ তিনজন মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম কবুল করে ছিলেন | ইসলাম আরবি-আজমি, আশরাফ-আতরাফ, দাস-দাসী এর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করেনি | সন্মানের ভিত্তি হিসেবে স্হির করেছে শুধু তাকওয়াকে | এই তাকওয়ার ভিত্তিতেই হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বেশি সন্মান দিয়ে ছিলেন একদার মক্কার দাস বেলাল (রা, খাব্বার ইবনে আরাত (র আর আম্মার ইবনে ইয়াসির (র কে কুরায়িশ নেতাদের উপর |
এই লেখাটা শেষ করছি আরেকজন ক্রীতদাসের ঘটনা দিয়ে | ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নেওয়া হাবশী আমের ইবনে ফুহায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন বনু আসাদের দাস| রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় হজরত এরকমের বাসায় আশ্রয় নেবার আগেই ইসলামের উষালগ্নে অল্প যে কয়জন ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করেছিলেন হজরত আমের ইবনে ফুহায়ের(র ছিলেন তাদের অন্যতম | একজন ক্রীতদাস হয়েও ইসলাম গ্রহনের জন্য তাঁকে অমানুষিক অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয় | কিন্তু শত অত্যাচারের পরও ইসলামের আশ্রয় থেকে তাকে বিচ্যুত করা যায়নি | হজরত আবু বকর (র তাঁকে তার মনিবের থেকে কিনে মুক্ত করে দেন মুক্ত করে দিয়েছিলেন | মদিনায় হিজরতকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজরত আবুবকর (র নিয়ে সওর গিরিগুহায় আশ্রয় নেন তখন আমের ইবনে ফুহাইরা (র সারাদিন সেই গুহার আশেপাশে হজরত আবুবকরের (র বকরী চড়াতেন | দিনশেষে গুহার সামনে এসে সেই বকরীর দুধ তাদের দু’জনকে খাওয়াতেন | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় হিজরতের লক্ষ্যে রওনা হন তখন হজরত আবুবকর (র তাঁকে নিজের উটের পেছনে উঠিয়ে নেন |এভাবেই তিনি মদিনায় হিজরত করেন |তিনি বদর এবং উহুদের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন | উহুদ যুদ্ধের কিছুদিন পর কিছুলোক মদিনায় এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নজদে কিছু সাহাবীকে পাঠেনর অনুরোধ করে যাতে তারা সেখানকার মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দিতে পারে | তারা সাহাবীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দেয় | রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশ মতান্তরে সত্তুর জন ক্বারী সাহাবীর একটি দলকে নজদে পাঠান | এই দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয় হজরত আমের ইবনে ফুহায়রা(র কে | বীরে মাউনা নামের এক জায়গায় আমের ইবনে তোফায়েলের নেতৃত্বে একদল অমুসলিম অতর্কিতে সাহাবীদের আক্রমন করে | এই আক্রমনে একজন ছাড়া অন্য সব সাহাবী মৃত্যু বরণ করেন | বায়হাকী হজরত ওরওয়া (র থেকে বীরে মাউনার ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, আমের ইবনে তোফায়েল হজরত আমর ইবনে উমাইয়াকে (মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া একমাত্র সাহাবী) জিগ্গেস করলো: তুমি তোমার সংগীদের চেন? আমর (র বললেন, হা | আমের ঘুরে ঘুরে মৃত সব সাহাবীদের বংশ পরিচয় জানতে চাইল, তারপর জিগ্গেস করলো তুমি এদের মধ্যে কাকে দেখছ না ? আমর বললেন, আমি হজরত আবুবকরের গোলাম হজরত আমের ইবনে ফুহায়রাকে দেখছিনা | আমের বিন তোফায়েল জিগ্গেস করলো তোমাদের মধ্যে তাঁর মর্যাদা কেমন ছিল ? অমর বললেন তিনি আমাদের শ্রেষ্টতম বাক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন | আমের ইবনে তোফায়েল তখন বলল: আমি তোমাকে তাঁর ঘটনা বলছি | পাশে দাড়ানো জব্বার ইবনে সালমাকে দেখিয়ে আমের বলল যখন সে তাঁকে বর্শা দিয়ে শরীরে আঘাত করলো আর তারপর বর্শাটা তাঁর রক্তাক্ত ক্ষতস্থান থেকে বের করে নিয়ে আসল তখন কেও তাঁকে আকাশে তুলে নিল | আমি দেখতে পাইনি কে তাঁকে আকাশে তুলে নিল | সমসাময়িক সব বর্ণনাতেই হজরত আমের ইবনে ফুহায়রার লাশ পওয়া যায়নি বলেই বলা হয়েছে | এই ঘটনার পর আমের ইবনে তোফায়েল মদিনায় আসে এবং রাসুলুল্লাহ কে জিগ্গেস করে " হে মুহাম্মদ ওই বাক্তি কে যাকে তীরবৃদ্ধ করার পরপরই আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয় ?" রাসুলুল্লাহ বলেন, সে আমের ইবনে ফুহাইরা |" হজরত আমের ইবনে ফুহায়রার হত্যাকারী জব্বার ইবনে সালাম এই অলৌকিক ঘটনায় এতই প্রভাবানন্বিত হয় যে সে ইসলাম গ্রহণ করে | পরবর্তী কালে তিনি বলেছেন যে আমের ইবনে ফুহায়রার শাহাদাত বরণ এবং তাঁকে আসমানে তুলে নেবার যে দৃশ্য আমি দেখলাম, তাই আমার ইসলাম গ্রহনের কারণ হয়ে গেল |
মিশমিশে কালো গায়ের রঙের এই হাবশী দাসের গৌরব করার মত খুব বেশি কিছু ছিলনা | না ছিল অর্থ, না ছিল উঁচু বংশ পরিচয়|পৃথিবীতে দাস হিসেবে তাই চৌত্রিশ বছরের জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি অতিবাহিত করেছেন মনিবদের আমনুষিক অত্যাচার সহ্য করে|কিন্তু আল্লাহ আর তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস আর ভালবাসা এবং তাকওয়ায় তিনি ছিলেন শ্রেষ্টতমদের একজুন|আল্লাহ তাই তাঁর বান্দাকে সন্মানের সাথে স্বীয় অসীম কুদরতে আকাশে তুলে নিয়েছিলেন এবং ফেরেস্তাদের দিয়ে তার সত্কার করার ব্যবস্থা করেন| রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের সাম্যের বিধান আরবীয় সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পরিপূর্ণ ভাবে আর তাঁর সাহাবীরা আরবের সীমানা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই সাম্যের বিধান | ক্রীতদাসদের প্রতি মানবিক ব্যবহারের যে গোল্ডেন রুল রাসুলুল্লাহ আল্লাহর আদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন আল্লাহ যেন হজরত আমের ইবনে ফুহায়রার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাকেই সবার সমানে আবার সত্যায়ন করলেন |একজন ক্রীতদাস আল্লাহর আর তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস এবং তাকওয়া দিয়ে আল্লাহর কাছেও লাভ করলেন অসীম সন্মান |
পৃথিবীতে এখন ইসলামের বিরুদ্ধে তুমুল প্রচারণা|যে কোনো নেগেটিভ প্রচারণার সাথেই ইসলামকে জড়িয়ে দেবার একটা প্রবণতা এখন খুব সহজেই দেখা যাচ্ছে অমুসলিমদের সাথে প্রগতিশীল মুসলিমদের মধ্যেও|কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে ইসলামই প্রথম মানবিকতাকে ব্যবহার করেছিল সবার জন্য-শুধু উচু তলার বড় মানুষদের জন্য নয়| আধুনিক আমেরিকার বা উনবিংশ শতাব্দির যে কোনো ইউরোপিয়ান দেশের চেয়ে হাজার বছর আগেই ক্রীতদাসদের প্রতি ইসলাম অনেক বেশি মানবিক আচরণের নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছিল|
বিষয়: বিবিধ
২৮৯০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বারাক ওবামার নির্বাচনের পর যুক্তরাস্ট্রে বর্নবাদি সংঘ্াত আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় নাকি কিছু শিক্ষিত কৃষ্ঞাঙ্গ ক্রিতদাস সেচ্ছায় কনফেডারেট দের পক্ষে যুদ্ধ করেছে!
এই দাসপ্রথা পৃথিবিতে অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু মানুষ ধরে ক্রিতদাস বানান শুরু করেছিল ইউযোপিয়রাই। বাংলাদেশে পর্তুগিজ জলদস্যু দাস ব্যবসায়িদের এই জঘন্য কারবারের অনেক প্রমান এখনও আছে। আফ্রিকায় দাস ব্যবসার জন্য "রুটস" এর কাহিনি থেকে অনেক কিছুই জানা যায়। অথচ আমাদের দেশে এই জন্য প্রায়ই লিখা হয় "আরব দাস ব্যবসায়ি"! আসলে আরব নামের আড়ালে মুসলিমদের হেয় করার জন্যই এই মিথ্যা প্রচার।
মেজর সিটি গুলোতে ওদের বিচারন বেশী।
প্রথম দিকে আমারও যথেষ্ট সহানুবতী ছিল।
যেহেতু সাদা ও কালো দুই গ্রুপই ইসলাম না। উভয় পক্ষই বর্ণবাদী আচারন করে।
মেজর অপরাধ প্রবনতা ওদের মধ্যৈ সব চেয়ে
বেশী। ২য় অবস্থানে রয়েছে হিসপানিক। ২২ পাসেন্ট মাএ। যেহেতু আপনি ফিল্ডে নেই। তাই অবস্থান ক্লিয়ার না। ইসলামের ছায়া তলে না আসলে সাম্যবাদ এবং
ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
মুক্তির এক পথ ইসলামী বিপ্লব।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন