স্বাগতম হে মাহে রমযান!

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২৮ জুন, ২০১৪, ০৭:৫৪:১৪ সন্ধ্যা

মাঝে মাঝে কি যে হয় ! এত বাস্ততার মাঝেও বুকের ভিতর কি যেন শুন্যতায় মনটা কেদে ওঠে| বিনা কারণেই মনে পরে যায় ফেলে আশা দিনগুলোর কথা | কতকাল আগে পেরিয়ে আসা দিন গুলো! যা করেছি , যা করিনি তার সব নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে | খুব মনে পড়ে অনেক ছোট বেলার কথা | পাহাড়ের টিলার উপর লাল কৃষ্ণচূড়া , শিউলি আর কদম গাছগুলো ঘেষে লাল ইটের একতলায় আমাদের ক্লাস ওয়ানের রুমটার কথা | ছোট সেই ক্লাসটাতে জনা কুড়ি ছাত্র ছাত্রী ছিলাম আমরা | স্কুলের পাশেই ছিল আমাদের ছোট মাদ্রাসাটা | যেখানে স্কুল শুরু হবার আগে ভোর সকালে আমরা যেতাম আরবী শেখার জন্য | আমাদের মিলের মসজিদের বড় হুজুর আর ছোট হুজুর দুজন ছিলেন আমাদের শিক্ষক | তাদের দুজনের কাছেই খুব ছোট বেলায় হাতেখড়ি হয়েছিল কায়দা, আমপারা আর তারপর কুরআন শরীফ শেখার | তারা দুজনে মিলে কত যত্ন করে যে আমাদের পড়াতেন ! এখন ইন্টারনেট এর যুগ | ঘরে বসে কম্পিউটারের বাটন টিপলেই শুনতে পাই পৃথিবীর সেরা সব ক্বারীদের সুরেলা গলার কুরআন তেলাওয়াত | ক্বারী আল ঘামাদীর বা ক্বারী আশ শুরাইমের অসাধারণ গলার মায়া ছড়ানো তেলাওয়াত যখন মুগ্ধতা ছড়ায় কানে তখন কেন জানি আজও ভীষণ মনে পড়ে আমার দ্বীন শিক্ষার প্রথম শিক্ষক হাফিজ-ক্বারী ছোট হুজুরের সেই অসাধারণ কুরআন তিলাওয়াত|

তারপর কত বছর গেল! সেই সেদিনের সেই আমি প্রাইমারি, হাই স্কুল, কলেজ আর বিশ্ব বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করেছি তাও কত বছর হলো ! ভার্সিটিতে অর্গানাইজেসন বিহেভিয়ার ক্লাসে প্রফেসর হার্বার্ট সাইমনের বিখ্যাত বই "অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিহেভিয়র " রিভিউ করে এক ঘন্টার ক্লাস প্রেসেনটেশন করার একটা এসাইনমেন্ট দিয়ে ছিলেন খান স্যার | এসাইনমেন্ট করতে গিয়ে সেই প্রথম আমার সুযোগ হলো হার্বার্ট সাইমনের কাজকে ভালো করে জানার | এই বই-এ প্রফেসর সাইমন তার বিখ্যাত "রাশ্যনাল কম্প্রিহেনসিভ মডেল " দিয়ে এনালাইসিস করেছেন কি ভাবে বিজনেস অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহীরা সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন| তার তত্বে তিনি বিরোধিতা করেছেন এই প্রথাগত ধারণার যে বিজনেস অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহীরা সিদ্ধান্ত গ্রহনের সব ইনপুট এবং বিকল্পগুলো নির্ধারণ করে তারপর সবগুলো বিকল্প চুল চেরা বিশ্লেষণ করে সংগঠনের জন্য সেই যে সিদ্ধান্ত সবচেয়ে সেরা (the best)সেটা গ্রহণ করেন| এর বিপরীতে প্রফেসর সাইমন বললেন যে, না বিজনেস অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহীরা কখনই সব তথ্য এবং সব বিকল্প আলোচনা করে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্তটা নিতে পারেনা সময়, তথ্য সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা আর তা প্রসেসিং -এর অক্ষমতার জন্য যাকে তিনি "বাউনডেড রাশনালিটি" হিসেবে অভিহিত করেছেন| প্রফেসর সাইমন তার তত্বে বলেছেন যে, প্রধান নির্বাহীরা সম্ভাব্য যে সব তথ্য এবং বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় পাওয়া সম্ভব এবং আয়ত্তাধীন শুধু সেগুলোই বিবেচনা করেন এবং সেগুলোর পারস্পরিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে “সবচেয়ে সেরাটি” নয় সম্ভাব্য সবচেয়ে “সন্তোষজনক” বিকল্পটা সিদ্ধান্ত হিসবে গ্রহণ করেন | এখানে প্রফেসর সাইমন "মিনস -এন্ডস মডেল " নাম একটি নতুন তাত্ত্বিক কাঠামোর সূচনা করেন যা লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৌশলের উপর জোর দেয় | তার এই তত্ত্ব আধুনিক বিজনেস অর্গানাইজেশনের ব্যবস্থাপনার তাত্ত্বিক আলোচনার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অবদান |১৯৭৮ সালে প্রফেসর সাইমন যখন তার এই বইয়ের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেলেন তখন নোবেল কমিটি তার বইকে গত শতাব্দীর প্রথম ভাগে প্রকাশিত সবচেয়ে প্রভাবশালী বই হিসেবে অভিহিত করেছিল|

আমার দীর্ঘ ভুমিকা শেষ | এখন আমি খুবই অল্পতে একটু বলতে চাচ্ছি কেন আমি রোযার এই শুরুতে প্রফেসর সাইমনের তত্বের কথা বললাম |হতে পারে আমার খানিকটা বায়াস আছে "রাশ্যনাল কম্প্রিহেনসিভ মডেল " এর বিষয়ে| যে তত্বটা এত মানুষ মেনে নিয়েছে সেটা রাতারাতি অগ্রায্য করা সহজ নয় মোটেই | আমি জানিনা এরকম শুধু আমারি হয় না অন্যদেরও হয় | আমি আমার নিজের অনেক কাজের সিদ্ধান্তের বিষয়েই প্রফেসর সাইমনের তাত্ত্বিক মডেলের মূল ভাবটা অনুসরণের চেষ্টা করি | অন্য ভাবে বললে যখন কোনো কাজে হাত দেই তখন যতটুকু সমর্থ আর সুযোগ আমার আছে কাজটা করার সেটাই ব্যবহার করার চেষ্টা করি | অনেক বেশি সময় ধরে আরো ভালো বিকল্প গুলো খুঁজে কাজটাকে নিখুত করার চেয়ে সম্ভাব্য আয়ত্তাধীন যা হাতে আছে তা দিয়েই কাজটা সন্তোষজনকভাবে শেষ করাকে আমি বেশি গুরত্বপূর্ণ মনে করি| দ্বীন পালনের বিষয়ে আমি যখন প্রফেসর সাইমনের তত্ত্বটার প্রাসংগিকতার কথা ভাবি তখন আমার সব সময়ই অবাক লাগে | এই মাত্র কিছুদিন আগে আমরা জানলাম বিজনেস অর্গানাইজেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে “সবচেয়ে সেরা” (the best alternative) নয় বরং সবচেয়ে সন্তোষজনক বিকল্পটা নির্বাচন করাই আসলে সর্বোত্তম বিকলপ নির্বাচন | কারণ অন্য অনেক বিকল্পের কথা ভাবা গেলেও সেগুলো হয়ত তাত্ক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নাও হতে পারে|আর সন্তোষজনক বিকল্প নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহনই বিজনেস অর্গানাইজেশনের সাফল্যের চাবিকাঠি| দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে এই শিক্ষাটাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দিয়ে গিয়েছেন পনেরশত বছর আগে| একটা উধাহরণ দিলে বাপারটা পরিস্কার হতে পারে| ইদানিং রোজা পালনের ক্ষেত্রে নানান বিষয়ে আমরা পাস্পরিক ভাবে সাংঘর্ষিক অনেক ফতওয়া দেখতে পাচ্ছি | যেমন রোজা কবে শুরু হবে, কত দিন হবে, তারাবি নামাজ কত রাকাত পড়তে হবে ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয়েই আমাদের মধ্যে মতানৈক্য | অথচ পরিপূর্ণ দ্বীন পালনের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কত সহজভাবেই না নির্দেশ দিয়েছেন | দ্বীন পালনে সহজ পন্থাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন যাতে আমরা সবাই দ্বীন পালন করতে পারি | আন্তরিকতার সাথে দ্বীন পালন করাই তো সাফল্য | দ্বীনের মধ্যে কঠিন কোনো বিষয় আছে কি সাহাবীদের এ'প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়েছেন যে আল্লাহর দ্বীন সহজ সরল এর মাঝে কঠিন কিছু নেই | হাদিসে উল্লেখিত আছে যে রাসুলুল্লাহ তিনবার এ'কথার পুনরাবৃত্তি করলেন | অর্থাৎ তার বক্তব্যের বাপরে জোর দিলেন (মুসনাদে আহমেদ, হাদিস নং ৪৪) | সুনানে নাসাঈতে রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নিম্নোক্ত ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে : একবার এলোমেলো চুল নিয়ে এক বেদুইন এসে জানতে চাইলো: ইয়া রাসুলুল্লাহর (সাঃ), আল্লাহ আমার উপর যে সালাহ ফরজ করেছেন সে সম্পর্কে আমাকে নির্দেশ দিন| উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের কথা জানালেন এবং আরো বললেন তোমার যদি ইচ্ছে হয় তবে তুমি অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করতে পারো | তখন সেই বেদুইন রোযার কথা জানতে চাইল | উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে রমজান মাসের ফরজ রোযার কথা জানালেন এবং আরো বললেন তোমার যদি ইচ্ছে হয় তবে তুমি অতিরিক্ত নফল রোজা আদায় করতে পারো | এরপর সেই বেদুইন যাকাতের কথা জানতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে যাকাতের বিষয়েও জানালেন | সেই বেদুইন রাসুলুল্লাহকে (সাঃ) সালাম করে বলল, শপথ সেই আল্লাহর যিনি আপনাকে সন্মানিত করেছেন , আমি কোনো নফল আদায় করবনা আবার আল্লাহ আমার উপর যা ফরজ করেছেন তার থেকে এতটুকু কমও করব না | বেদুইন লোকটি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ তাঁর সাহাবীদের বললেন এই লোক যদি সত্যি বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ২০৯৪ ) | এখানে লক্ষনীয় যে রাসুলুল্লাহ লোকটিকে নামাজ, রোজা এবং যাকাতের ক্ষেত্রে শুধু ফরজটুকু পালনের তাগিদ দিলেন, অন্য কোনো নফল বা ওয়াজিব বিষয়ে নয় | এটা বেদুইন লোকটির দ্বীন পালন সহজ করার জন্যই বললেন |

রোযার ক্ষেত্রেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সকল সময়ই যা সবার জন্য সহজসাধ্য সে ভাবেই রোজা রাখার কথা বলেছেন | রোযার অসামান্য ফজিলতের কারণে অনেক সাহাবিই অত্যধিক রোযা রাখার নিয়ত করেন | যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিরুত্সাহিত করেন |এ প্রসংগে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবার প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রHappy (ইনি বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি হজরত অমর ইবনুল আসে (রHappyএর ছেলে ) কে জিগ্যেস করলেন: "আমি জানতে পেরেছি যে তুমি নাকি সারারাত সালাত আদায় কর এবং দিনে রোযা রাখো"? আব্দুল্লাহ (রHappy উত্তরে বললেন, "জ্বী ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আপনি সত্যি শুনেছেন | আর অমিত এর থেকে শুধু কল্যাণই আশা করি "| রাসুলুল্লাহ (সাঃ): তাঁকে বললেন বিরতিহীন রোযাদারের রোযা গ্রহণযোগ্য নয় | তুমি মাসে তিন দিন রোযা রাখো |আব্দুল্লাহ (রHappy বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)আমিতো মাসে তিনদিন থেকে বেশি রোযা রাখার সামর্থ্য রাখি ? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাহলে তুমি দশ দিন রোযা পালন কর। |আব্দুল্লাহ (রHappy আবার বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমিতো মাসে আমিতো দশ দিনের বেশি রোযার সামর্থ্য রাখি ? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাহলে তুমি দাঊদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর রোজা পালন কর- তিনি একদিন রোজাপালন করতেন আর একদিন রোজা ভাঙতেন (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ২৩৯৯)| অন্য একটি রেওয়াতে বলা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হজরত আব্দুল্লাহ (রHappy কে তার স্ত্রী এবং পরিবারের তার উপর যে হক রয়েছে তা স্বরণ করিয়ে দিলেন এবং সারা বছর রোজা না রাখার উপদেশ দিলেন| ।

রাসুলুল্লাহ রোযাকে বলেছেন জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার ঢাল | কিন্তু ভ্রমনের সময় রোজা যেন অসহনীয় কষ্টের কারণ না হয়ে যায় সেজন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রয়োজনে রোজা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়েছেন | জামে তিরমিজীতে নিচের ঘটনার উল্লেখ আছে|মক্কা বিজয়ের অভিযানে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং অনেক সাহাবী রোযা ছিলেন | অভিযানের এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জানতে পারলেন যে সাহাবীদের জন রোজা রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে | তাঁরা রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নির্দেশের অপেক্ষা করছেন | আসরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সHappy এক বাটি পানি চাইলেন এবং সেই পানি খেয়ে রোজা ভেঙ্গে ফেললেন | অনেক সাহাবী রাসুলুলাহকে (সাঃ) অনুসরণ করে রোযা ভেঙ্গে ফেললেন কিন্তু অনেকে আবার ভাঙ্গলেন না | রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন জানতে পারলেন কিছি লোক তখন রোযা রাখছে তখন তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হলেন (হাদিস নং ৭০৮ ) | ভ্রমনকালীন এরকম আরেকটি ঘটনায় রাসুলুল্লাহ (সHappy দেখতে পেলেন যে, এক সাহাবীর উপর অন্যরা পানি ছিটাচ্ছে| রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কারণ জানতে চাইলে সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইনিতো রোযাদার | রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন বললেন সফরে রোযা রাখা সওয়াবের কাজ নয় | তোমারা আল্লাহর দেয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার কর | যে সুযোগ আল্লাহ তোমাদের দিয়েছেন তা গ্রহণ কর (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ২২৬২)|এটা অনুধাবন করা খুবই গুরত্বপূর্ণ যে আল্লাহ যখন সহজ ভাবে দ্বীন পালনের সুযোগ রেখেছেন এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) সহজ ভাবে সেটা পালনের পথ দেখিয়েছেন তখন সেটা সেভাবে পালন করাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক |

রাসুলুল্লাহকে (সাঃ) অনুসরণ করে অনেক সাহাবী "সওমে বিসাল" অর্থাৎ ইফতার না করে অবিচ্ছিন্ন রোযা রাখা শুরু করলে রোজা সহজ ভাবে করার উপায় হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের ইফতার না করে রোযা রাখাকে নিরুত্সাহিত করেছেন | যখন সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আপনিওতো সওমে বিসাল করেন? তার উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁদের বললেন আমাকেতো আল্লাহ খাওয়ান |অর্থাৎ ইফতার এবং সেহেরি করেই তিনি তাঁদের রোযা রাখতে উপদেশ দিলেন (জামে তিরমিজী,হাদিস নং ৭৭৬)| এমনকি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সময় হলে দ্রুত ইফতার করতেন এবং অন্যদের দ্রুত ইফতার করতে তাগাদা দিতেন | হজরত আয়িশা (রHappy কে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো ইয়া উম্মুল মুমিনীন রাসুলুল্লাহর (সাঃ) দুই সাহাবীতো দুই ভাবে ইফতার করেন | একজন দ্রুত ইফতার করেন এবং দ্রুত নামাজ (মাগরিব) আদায় করেন আরেকজন দেরীতে ইফতার করেন এবং দেরীতে নামাজ আদায় করেন |হজরত আয়িশা (রHappy জানতে চাইলেন কোন সাহাবী তাড়াতাড়ি ইফতার ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন ? উত্তরে তাঁকে জানানো হলো দ্রুত ইফতার এবং নামাজ আদায় করেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রHappy| হজরত আয়িশা (রHappy একথা শুনে বললেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এভাবেই ইফতার এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করতেন | (জামে তিরমিজী,হাদিস নং ৭০০) |

তারাবী নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে একটা বড় বিতর্ক ইদানিং দেখা যাচ্ছে | অথচ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কত শত বছর আগেই এর সমাধান দিয়ে গিয়েছেন | লেখার প্রথম দিকের বেদুইন লোকটির ঘটনাতা লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কিন্তু তাকে ফরজ ছাড়া আর কোনো নামাজের কথা বলেননি | তাছাড়া তিনি নিজেও সাহাবীদের বাধ্যতামূলক ভাবে তারাবী আদায়ের জন্য বলেননি | বরং সুনানে নাসাঈ এর হাদিসে তারাবি সংক্রান্ত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক রাত্রে মসজিদে যখন তারাবীর নামাজ আদায় করছিলেন তখন কিছু লোক রাসুলুল্লাহর (সাঃ) পেছনে নামাজে দাড়িয়ে গেলেন | পরদিন রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবার যখন তারাবী নামাজ আদায় করছিলেন তখন আরো বেশি সংখ্যক লোক সেই নামাজে রাসুলুল্লাহর (সাঃ)পেছনে দাড়িয়ে গেল |এভাবে তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে লোকজন যখন আবার তারাবীর জন্য জমা হলো তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আর ঘর থেকে বের হলেন না | পরদিন সকালে তিনি বললেন, তোমরা রাতে যা করেছ আমি তা লক্ষ্য করেছি | কিন্তু তোমাদের উপর তারাবী নামাজ ফরজ হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আমি আর বের হইনি (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ১৬০৭) | এখানেও দেখা যাচ্ছে যে রোজাকে সহজ করার জন্যই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তারাবী নামাজে এলেন না | আর আমরা আজ কি করছি ! দ্বীন সহজ ভাবে পালন না করে এত কঠিন করে তুলছি যে অনেকে নিরুত্সাহিত হয়ে যাচ্ছে দ্বীনের প্রতি | আমরা যদি এটা বুজতে পারি যে সব কিছুর পরে তারাবী নামাজ একটি সুন্নত নামাজ | এটা যদি রোযা রেখে কেও পড়তে পারে তা হলে খুবই ভালো কিন্তু কেও যদি না পড়তে পারে বা কম রাকাত পড়তে চায় তাতে দ্বীনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই | জামে তিরমিজীতে (হাদিস নং ৭১১) রাসুলুল্লাহর সফরকালীন রোযা রাখার বিষয়ে সাহাবীদের দ্বৈত অনুশীলন সংক্রান্ত একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে | আবূ সাঈদ খুদরী(রাঃ) এ প্রসংগে বলেছেন সফরের সময় আমাদর মধ্যে কেউ কেউ রোযা রাখতেন আবার কেউ কেউ রোযা রাখতেন না | রোযাদাররা যেমন যারা রোযা রাখতেন না তাদের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলেননি তেমনি যারা রোযা রাখতেন না তারাও রোযাদারদের বিরুদ্ধে কিছু বলেনেনি |তাঁরা মনে করতেন যে, যাদের পক্ষে সম্ভন তাঁরা রোযা পালন করছে সেটাই ভালো , পরিপূর্ণ ভাবে বোআর যারা রোজা পালনে সক্ষম নয় তারা যে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে রোযা পালন করছেন না তাও ভাল। এখানে যে বিষয়টি সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় তা হলো রোযার মত ফরজ একটি বিষয়ে সাহাবীরা দুটি পন্থা অনুসরণ করলেও তা তাদের মধে দ্বন্দের সৃষ্টি করেনি | একই ভাবে তারাবী নামাজের রাকাত নিয়েও উম্মতের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি করার কোনো দরকার নেই | কারণ উম্মতের মধ্যে ঐক্য রক্ষা করা ওয়াজিব | সেটা রক্ষা করা সুন্নত পালনের চেয়েও বেশি গুরত্বপূর্ণ |

সালাহ বা নামাজ হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে বড় ইবাদত যা সুস্থু একজন মানুষের জন্য আদায় যেকোনো পরিস্হিতিতে আদায় করা বাধ্যতামূলক | এই নামাজ সহজ করে আদায় করতে সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) |এমনকি রাসুলুল্লাহ স্বয়ং নামাজ সংক্ষিপ্ত করেছেন প্রয়োজনে | একটি শিশুর কান্না শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজ সংক্ষিপ্ত করেছিলেন যেন তার মা নামাজে অমনোযোগী না হয়ে যায় | এই ঘটনা উল্লেখ করে আনাস ইবনু মালিক (রHappy বলেছেন আমি নবী (সাঃ) থেকে সংক্ষিপ্ত এবং পুর্নাংগ সালাত অন্য কোনো ইমামের পিছনে কখনো পরিনি (সহীহ বুখারি (ইফা), হাদিস নং ৬৭৩ )| অন্য একটি ঘটনার কথাও এ প্রসংগে উল্লেখ করা যেতে পারে | আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রHappy এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন | একবার এক লোক রাসুলুল্লাহর (সাঃ) কাছে অভিযোগ করলো যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি আমদের ইমামের কারণে ফজরের জামাতে দেরিতে আসি কারণ তিনি অত্যন্ত দীর্ঘ কেরাত পড়েন| হজরত মাসউদ (রHappy রাসুলুলাহ্রর (সাঃ) প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেছেন আমি তাঁকে এর চেয়ে বেশি রাগ্বান্নিত হয়ে খুতবা দিতে আর কখনো দেখিনি | রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজে দীর্ঘ কেরাত সম্পর্কে বলেছেন তোমরা ফিতনা সৃষ্টিকারী হয়োনা | নামাযে দীর্ঘ কিরাত নিরুত্সাহিত করে তিনি বলেন তোমরা যখন অন্য লোকদের নিয়ে জামাতে ইমামতি কর তখন সংক্ষিপ্ত কিরাত পাঠ কর কারণ নামজে দুর্বল, বয়োবৃদ্ধ এবং কর্মব্যস্ত লোকজনও রয়েছে (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৯৮৪)|নামাজকে সহজ ভাবে আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহর (সাঃ) আরো অনেক ঘটনার কথা হাদিসে রয়েছে | নামাজকে সহজ ভাবে আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহর (সাঃ) আরো অনেক ঘটনার কথা হাদিসে রয়েছে | আবু দাউদ -এ এরকমই একটি ঘটনার উল্লেখ আছে তা দিয়ে এই আলোচনা শেষ করব | একবার প্রচন্ড গরমের এক দুপুরে জোহরের নামাজের আজান দেবার সময় হোল |রাসুলুল্লাহ মুয়াজ্জিনকে বললেন একটু ঠান্ডা হতে দাও |কিছুক্ষণ পর মুয়াজ্জিন আজান দিতে তৈরী হলো | রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবার বললেন একটু ঠান্ডা হতে দাও |এই হাদিসের রাবী বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দু'বার বা তিনবার আজান পড়ে দিতে বলেছেন| এভাবে যখন মনে হলো জোহরের ওয়াক্ত শেষের দিকে তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন গরমের সময় তোমরা জোহরের নামাজ দেরী করে পড়বে | এসব উধাহরণ থেকে আমরা বুজতে পারি যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সকল অবস্থায়ই দ্বীনে পালনের সহজ পথ সম্পর্কে সাহাবীদের উত্সাহিত করেছেন (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪০১) |

আসুন আমরা দ্বীনের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পদক্ষেপগুলো অনুসরণের চেষ্টা করি | নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করার চেষ্টা করি এই রোযায়| অন্যরা করছে বলেই তাদের মত করে কিছু করার দরকার নেই একদমই | এই রোযার মাসে আসুন আমরা পরিপূর্ণ ভাবে সবগুলো রোযা করার নিয়ত করি | আমদের যাদের পক্ষে সম্ভব তারা আসুন নিয়ত করি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবী নামাজ আদায়ের | আর একটু বেশি যাদের পক্ষে সম্ভব আসুন তারা মসজিদে গিয়ে নামাজগুলো আদায়ের নিয়ত করি | আসুন আমরা নিজেদের প্রতিদিনের ব্যস্ততা থেকে একটু সময় বের করি যতটুকু নিজের জন্য সহজ মনেহয় ততটুকু সময় কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য | আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীন বোঝার এবং পরিপূর্ণ ভাবে পালনের তাওফিক দিন | আমিন|

বিষয়: বিবিধ

১৬০৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239728
২৮ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আহলান সাহলান-শাহরু রামাদ্বান। পবিত্র রামাদ্বানের শুভেচ্ছা। ত্যাগ, পরিশ্রম আর তাক্বওয়াতে ভরে উঠুক আমাদের জীবন। আমরা যেন হই সত্য ও সুন্দরের পথে নিবেদিত।
আগামীতে ভাইজান এরকম বড় লেখা হলে দুই ভাগে দেওয়ার চেষ্টা করলে মনে হয় ভালো হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৫
186006
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : লেখাটা পোস্ট করার পর এতবড় দেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছিলাম | আপনার মন্তব্যে তা আরো বাড়ল|লেখাটা যত বড় তারচেয়েও অনেক বেশি বড় একটা এপোলজি চাওয়া থাকলো |সত্যি মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ |
239752
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
আফরা লিখেছেন : আসুন আমরা দ্বীনের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পদক্ষেপগুলো অনুসরণের চেষ্টা করি | নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করার চেষ্টা করি এই রোযায়| অন্যরা করছে বলেই তাদের মত করে কিছু করার দরকার নেই একদমই | এই রোযার মাসে আসুন আমরা পরিপূর্ণ ভাবে সবগুলো রোযা করার নিয়ত করি |

রমজানুল মুবারাক Good Luck Rose Good Luck
২৯ জুন ২০১৪ রাত ০৪:৫৮
186108
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আফরা:থাঙ্কস এ লট|আই এম রিয়েলি ভেরি হামবোল্ড বাই ইউর কমেন্টস এন্ড টু সী ইউ রিডিং মাই ভেরি ফার্স্ট ব্লগ|আমি কিন্তু আপনার লিখার পাঠক সব সময়ই |
239772
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০৯:০৮
ভিশু লিখেছেন : Praying Praying Praying
রমাদান কারীম!
Happy Happy Happy
Rose Rose Rose
২৯ জুন ২০১৪ রাত ০৪:৫৮
186109
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ভিশু:আপনার রোযা নিয়ে লিখাটার আগে একটা ট্রায়াল(মিস ট্রায়ালও বলতে পারেন অনেক বড় হয়ে যাবার জন্য) দিয়ে দেখলাম |থাঙ্কস এ লট লিখাটা পড়বার জন্য |এপোলজি চাওয়া থাকলো যদি ধৈর্যচুতি ঘটিয়ে থাকি তার জন্য |
242197
০৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:২৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
০৯ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৩৮
188800
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : প্যারিস থেকে আমি :অনেক পরে চোখে পড়ল আপনার মন্তব্য|এত বড় লেখা পরে আমাকে রীতিমত ঋনী করেছেন| সত্যি সত্যিই অনেক উত্সাহ পেলাম |ধন্যবাদ নিন অনেক অনেক |

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File