বর্ষবরণ উদযাপনঃ বাঙ্গালি সংস্কৃতি নাকি মুশরিকদের সংস্কৃতি !!!

লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৫১:৪২ রাত

এদেশের মুসলিম জনতাকে আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন ইসলাম থেকে বের করে কাফির-মুশরিক বানানোর জন্য এক সর্বগ্রাসী ও সর্বাত্মক কাফিরায়ন প্রক্রিয়া চলছে। মানব জীবনের প্রতিটি বিভাগে আজ ইসলামের শত্রুরা তৎপর হয়ে উঠেছে। কখনও তা আল্লাহদ্রোহী রাষ্ট্রীয় ত্বগুতী আইনের মাধ্যমে, আবার কখনও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে। এদেশের মুসলিমদেরকে মুশরিক বানানোর বহুমুখী চক্রান্তের একটি হচ্ছে এই পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপন।

এদেশের সেকুলার ও নাস্কিত্যবাদী মিডিয়া এবং আল্লাহদ্রোহী ত্বগুত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই শিরকী অনুষ্ঠানকে বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে ব্যাপকভাবে বিস্তারের দায়িত্ব নিয়েছে।

আমরা প্রথমেই বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে চালানো এই নববর্ষ উদযাপনের ব্যাপারে কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে চাই। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ সম্রাট আকবরের সময় থেকেই পালিত হয়। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর তার খাজনা আদায়ের জন্য আরবী ও সৌরসনের সংযোগ ঘটিয়ে একটি নতুন সন তৈরি করে,যেটি আজকের বাংলা সন। মুঘল সম্রাটদের ভাষা ছিলো ফারসী এবং ফারসী ভাষায়ই রাজ্যের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। তাহলে মাত্র ৪৩৩ বছর আগে ফারসীভাষী আকবরের তৈরি সন কীভাবে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে গণ্য হয় ??

চেতনাব্যবসায়ীরা আবার এটিকে হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে থাকে !! এই চেতনাব্যবসায়ী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের কাছে প্রশ্ন, ১৫৮৪ সালে তৈরি বাংলা সন কীভাবে হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি হয় !!!

এদেশের মুসলিমরা যখনই ইসলামের কোনো বিধান কিংবা সংস্কৃতির কথা বলেন,তখনই কথিত চেতনাবাজ,শাহবাগী শ্রেণী সেটিকে আরবের সংস্কৃতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে !

প্রায় ১৩০০ বছর আগে আসা ইসলাম এখনো বাঙ্গালি সংস্কৃতি হতে পারেনি কিন্তু ৪৩৩ বছর আগের ফারসীভাষী চরিত্রহীন যিন্দিক সম্রাট আকবরের প্রচলন করা পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালি সংস্কৃতি হয়ে গেলো ???

কে ছিলো এই সম্রাট আকবর ??? আকবরের পরিচয় পেলেই আপনারা বুঝতে পারবেন কেনো হিন্দু মুশরিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সেকুলাররা আকবরের চালু করা পহেলা বৈশাখকে বাঙ্গালি সংস্কৃতি বানানোর জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে !

সেইসময়ের উলামায়ে কিরাম কর্তৃক যিন্দিক ও মুরতাদ আখ্যা পাওয়া এই সেই আকবর যে, হিন্দু,বৈদ্ধ,জৈন,জর্থ্রুস্টবাদ ইত্যাদি মানবরচিত ধর্মগুলো থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেগুলো ইসলামের কিছু বিষয়ের সাথে মিলিয়ে এক নতুন ধর্ম তৈরি করে । আকবরের তৈরি সেই নতুন ধর্মের নাম দেওয়া হয় ‘দ্বীনে এলাহী’।

তার এই নতুন ধর্ম দ্বীনে এলাহীতে পশু জবাই করা নিষিদ্ধ ছিলো,যেহেতু জৈনধর্মে পশু জবাই নিষিদ্ধ। দ্বীনে এলাহীতে খ্রিস্টান ধর্মের চিরকুমার ও কুমারিত্বের বিধান যুক্ত করা হয়। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের উপর আরোপিত জিযিয়াকে বাতিল করে দেয়,এই যিন্দিক আকবর। মুশরিকদের মনোরঞ্জনের জন্য ইসলামের আরো বিধানকে বাতিল করে এই নতুন ধর্ম দ্বীনে-এলাহী তৈরি হয়েছিলো।

আর এজন্যই ভারতের হিন্দু মুশরিকরা এই আকবরকে নিয়ে ‘আকবর দ্যা গ্রেট’ নামে সিরিয়াল তৈরি করেছে। অথচ এই মুশরিকরা ভারত থেকে ইসলামের বিভিন্ন নিদর্শন ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এই নববর্ষ উদযাপন মূলতঃ হিন্দু মুশরিকদের একটি শিরকী পূজা উৎসব ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলাম পূর্ব যুগে সূর্য পূজারী মুশরিকরা সূর্য উদয়, অস্ত ও ঠিক দিপ্রহরের সময় সূর্যের পূজা করত। আর তাই এই তিন সময়ে ইবাদাত করা আল্লাহ তা’আলা হারাম করেছেন। অথচ পহেলা বৈশাখের সূর্য উদয়ের সময় সূর্যের দিকে তাকিয়ে হস্ত প্রসারিত করে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানিয়ে "এসো হে বৈশাখ, এসো এসো" গান গাওয়া হয়, যা শিরকী সূর্য পূজা নামান্তর । এরপর চেতনাব্যবসায়ী গাজাখোরদের আড্ডাখানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে হাতি,পেঁচা,ঘোড়া ইত্যাদির মূর্তি ও মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

আপনি কী জানেন, পেঁচা এবং হাতি হচ্ছে মুশরিক হিন্দুদের দেবী লক্ষীর বাহন ! আর মঙ্গল হচ্ছে তাদের একটি দেবতা ! অর্থাৎ বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে মুসলিম প্রধান একটি দেশের অধিকাংশ মুসলিমকে এভবেই লক্ষী দেবীর বাহন ও মঙ্গল দেবতার পূজার মাধ্যমে মুশরিক বানানোর সুদূরপ্রসারি চক্রান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে। অথচ আমরা নির্বিকার !!

নাস্তিক্যবাদী সেকুলার চেতনাব্যবসায়ীদের যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমরাতো বিভিন্ন সময় ইসলামের বিভিন্ন বিধানকে বিজ্ঞানের বিপরীত হিসেবে দাড় করানোর চেষ্টা করো। চেষ্টা করো মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে ! আচ্ছা, তোমরা কী বলবে, এই মঙ্গল শোভাযাত্রা কতটুকু বৈজ্ঞানিক ???

পেঁচা,হাতি,ঘোড়ার মুখোশ পড়া মঙ্গল দেবতার পূজারী মুখোশধারী বিজ্ঞানমনষ্ক লোকদের বলছি, বলতো বিজ্ঞান অনুযায়ী এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় কী মঙ্গল রয়েছে ??

অতঃপর রমনা বটমূলসহ আশেপাশের এলাকায় বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে নারী-পুরুষের আপত্তিকর প্রদর্শনী, পরপুরুষের গালে উল্কি আকা, পরনারীর হাতে পান্তা-ইলিশ খাওয়া এসব কবে থেকে বাঙ্গালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হলো,আমরা জানতে চাই ???

আর বর্ষবরণের নামে নারীর বস্ত্রহরণ উৎসবের কথা আশা করি কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়।

আপনি ভেবে দেখুন, আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে নারী-পুরুষের এই অবাধ ও যৌন উন্মাদনাময় মেলামেশা কী এদেশে ছিলো ? না, ছিলো না। তাহলে এসব কীভাবে বাঙ্গালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয় ??

আপনি কী ভেবে দেখছেন, গাছ পূজারী,মাছ পূজারী,মূর্তি পূজারী এই হিন্দু মুশরিকদের সাথে কীভাবে আপনি লক্ষ্মী দেবী ও মঙ্গল দেবতার পূজায় লিপ্ত হয়েছেন ??

আপনি কী ভেবে দেখেছেন, বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে কীভাবে আপনাকে ঈমান বিধ্বংসী শিরকে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে ? কীভাবে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার বাহানায় পশ্চিমা অসভ্যদের নগ্নতাকে বাঙ্গালি সংস্কৃতি নামে আপনাকে গিলানো হচ্ছে ??

তাওহীদে বিশ্বাসী মুসলিমদেরকে কাফির-মুশরিকে পরিণত করার চক্রান্ত আজ নতুন নয়; বরং মানব সভ্যতায় সূচনালগ্ন থেকেই ইসলামের শত্রুরা ঈমানদেরকে কাফির বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আর তাইতো আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারার ২১৭ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন,

...............................

অর্থাৎ তারা সর্বদাই তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে,যাতে করে তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে দিতে পারে,যদি তারা সক্ষম হয়।

ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বদা চলমান এই যুদ্ধে শরীক বাংলাদেশের ত্বগুত সরকার তাইতো ইতোমধ্যে নববর্ষ ভাতা চালু করেছে,যাতে করে এদেশের মুসলিমদেরকে এই শিরকী কর্মকাণ্ডে আরো ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করানো যায়। ইতোমধ্যে এই ত্বগুত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা করার নির্দেশ জারি করেছে।

আপনাকে আজই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কী কিয়ামতের কঠিন দিনে মুশরিকদের সাথে থাকতে চান ? আপনি কী আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পেঁচা,হাতির পূজারী হিসেবে জাহান্নামের পথে রেখে যেতে চান ? নাকি তাওহীদে বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে রেখে যেতে চান ? যদি আগামী প্রজন্মকে মুসলিম হিসেবে দেখতে চান,তাহলে আজই এই শিরক ও অশ্লীল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। দ্বীনের সঠিক শিক্ষার প্রচারের মাধ্যমে পরিবার ও প্রতিবেশি সকলকে তাদের ঈমান রক্ষার জন্য সচেতন করতে হবে।

কুফর ও ঈমানের এই সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী লড়াইয়ে সর্বদা সজাগ থেকে উম্মতের ঈমানের মুহাফিজের ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সকল স্তরে এক আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়নের ঈমানী লড়াইয়ে শরীক হতে হবে।

আপনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন, আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন ও শরী’আহ কায়েম না থাকার ফলে ত্বগুত শ্রেণী তাদের ইচ্ছামতো মানুষকে কুফর ও শিরকের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দ্বীন মানার প্রতিটি পথকে বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ত্বগুতের কুফুরী আইনকে মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। কারণ, আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম না হলে ইসলাম নামক দ্বীন পরিপূর্ণভাবে মানা কিছুতেই সম্ভব নয়। এমনকি ঈমান টিকিয়ে রাখাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর তাই বর্ষবরণসহ জীবনের সকল পর্যায় থেকে কুফুরী-শিরককে উচ্ছেদ করে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টায় অংশ নিন। অংশ নিন গাযওয়ায়ে হিন্দের কাফেলায়।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সকল শিরক-কুফুরী ও অশ্লীলতা থেকে হিফাযত করে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

৮৯৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385104
১৪ এপ্রিল ২০১৮ রাত ০২:৪১
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরা মুসলীম থেকে বাঙ্গালী হয়েছি তাই বাঙ্গলী সংষ্কৃতীতে আমাদের অভ্যস্থ করানো হচ্ছে। আসুন আমরা আবার মুসলীম হই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File