আফগানিস্তানে দালাল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তালিবানদের হামলা নিয়ে মিডিয়ার মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডার স্বরুপ উন্মোচন এবং বাস্তবতা !

লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১০:১৫:২০ রাত

‘তালিবানরা সাধারণ মানুষ মারে’ এই অপবাদের একটি পোস্টমর্টেম।


গত ২৭ জানুয়ারি তারিখে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আফগান পুতুল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তালিবান মুজাহিদরা একটি ফিদায়ী হামলা চালায়। হামলায় দালাল পুতুল বাহিনীর সৈন্য,পুলিশ ও কর্মকর্তা মিলে প্রায় ১০০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়।

হামলার পর আফগানিস্তানের পুতুল সরকারের অনুগত দালাল মিডিয়ার সহায়তায় বিশ্ব-কুফফার মিডিয়া এই হামলার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে প্রচার করছে যে, এই হামলা নাকি হাসপাতালে,বাজারে করা হয়েছে !!! এই হামলায় নাকি সাধারণ মানুষ মারা গেছে !!!

যেহেতু ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধ,তাই আমাদের সীমিত সাধ্য ও সীমিত পরিসরে হলেও এই প্রোপাগান্ডার স্বরুপ উন্মোচন করা আমাদের দায়িত্ব।

*** হামলাটি আসলে কোথায় হয়েছিলো ?

আফগানিস্তানে কাবুলে আমেরিকার পুতুল সরকারের বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনীর একটি হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সীমানার অভ্যন্তরে অবস্থিত এলাকা। এই এলাকায় দালাল-মুরতাদ পুতুল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, এমপি-মন্ত্রীদের বাসভবন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যালয়, ভারতসহ বিভিন্ন কুফফার রাষ্ট্রের দূতাবাস, পুলিশ হেডকোয়ার্টারস(পুলিশ সদরদপ্তর) এবং পুতুল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা উচ্চ শান্তি পরিষদ।

এবার আসুন.... হামলাটি হয়েছে পুতুল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষিত এলাকার ২য় চেকপোস্টে বা নিরাপত্তা চৌকিতে।

১ম চেকপোস্টটি ইস্তেশহাদী তালিবান মুজাহিদ এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। অতঃপর ২য় চেকপোস্টে এই হামলাটি চালানো হয়েছিলো।

কাবুলের এই হামলার ব্যাপারে পুতুল সরকারের অনুগত মিডিয়া pajhwok কী বলেছে দেখুন,

Nasrat Rahimi, Interior Ministry spokesman, told Pajhwok Afghan News the explosion took place at a police checkpoint near the ministry’s old building, police headquarters and a High Peace Council office.

অর্থঃ “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নুসরত রাহিমি Pajhwok Afghan News কে জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পুরোনো ভবন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারস(পুলিশ সদরদপ্তর) এবং উচ্চ শান্তি পরিষদ অফিসের নিকটে একটি পুলিশ চেক পয়েন্টে হয়েছে।”

মুখপাত্র নুসরত রাহিমি আরো বলেছে,

“The suicide bomber took an ambulance from the Jamhuriat Hospital park and crossed the first police checkpoint of the Ministry of Interior but he was identified reaching the second checkpoint where he detonated his explosives,” he said.

অর্থঃ “ফিদায়ী হামলাকারী জামহুরিয়াত হাসপাতাল পার্ক থেকে একটি এম্বুলেন্স নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১ম চেক পয়েন্ট অতিক্রম করেছিলো, কিন্তু ২য় চেকপয়েন্টে পৌছার পর তাকে সনাক্ত করা হয়,সেখানে তার বিস্ফোরকগুলোকে সে বিস্ফোরণ ঘটায়, মুখপাত্র জানায়।”

নিউজের লিংক..... https://www.pajhwok.com/en/2018/01/27/death-toll-ambulance-blast-climbs-95

দালাল-মুরতাদ পুতুল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিবিসিকে কী বলেছে দেখুন.......

Nasrat Rahimi, deputy spokesperson for the Interior Ministry, said the attacker got through a security checkpoint after telling police he was taking a patient to nearby Jamhuriat hospital.

He detonated the bomb at a second checkpoint, said Mr Rahimi.

অর্থঃ “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মুখপাত্র নসরত রাহিমি জানিয়েছে, হামলাকারী একটি চেকপয়েন্ট অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলো পুলিশকে এই কথা বলে যে, সে পাশ্ববর্তী ‘জামহুরিয়াত হসপিটাল’ এ একজন রোগীকে নিয়ে যাচ্ছে। সে (হামলাকারী) ২য় চেকপয়েন্টে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, জানিয়েছে মিঃ রাহিমি। ”

The BBC's Zia Shahreyar, speaking from the scene, says it is not easy to get through the checkpoints. Cars are searched and drivers' identities checked.

অর্থঃ বিবিসি’র জিয়া শাহরিয়ার ঘটনাস্থল থেকে কথা বলছিলেন, তিনি জানান, চেকপয়েন্টগুলো অতিক্রম করা কোনো সহজ বিষয় নয়। গাড়িগুলো সার্চ করা হয় এবং ড্রাইভারদের পরিচয়পত্র চেক করা হয়।”

http://www.bbc.co.uk/news/world-asia-42843897

অথচ প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, সেখানে নাকি সাধারণ মানুষ ছিলো !!! সেদিন কী তাহলে হামলা হবে জেনে চেকপোস্টের সৈনিক ও পুলিশিদের ছুটি দিয়ে সাধারণ মানুষকে আইডি কার্ড দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো ???

আরো দেখুন.....

হামলাটির জায়গা থেকে মাত্র অল্প কয়েক মিটার দূরে অবস্থিত দালাল সরকারের এমপি’র বাসা ছিলো,তার বক্তব্য দেখুন.......

Mirwais Yasini, an Afghan member of parliament, describes the scene of the blast that happened just metres from his house.

অর্থঃ মিরওয়াইস ইয়াসিনি নামে একজন এমপি বা সংসদ সদস্য (বিবিসিকে) জানিয়েছে, তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে বোমা বিস্ফোরণের স্থানটি অবস্থিত।

এই এমপির অডিও বক্তব্যসহ দেখুন.....

http://www.bbc.co.uk/programmes/p05w8s23

এবার খেয়াল করুন......

১। হামলাটি হয়েছে পুতুল সরকারের সুরক্ষিত এলাকার ২য় চেকপোস্টে,যেখানে আইডেন্টিটি কার্ড ব্যতীত সাধারণ মানুষের প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। তো সেখানে সাধারণ মানুষ যায় কীভাবে ??

২। হামলাটি কোনো বাজার কিংবা হাসপাতালে হয়নি বরং মুরতাদ পুতুল বাহিনী চেকপোস্টে হয়েছে। সুতরাং হামলায় সাধারণ জনগণ মারা যাবে কীভাবে ?

৩। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষিত জোনের মধ্যে যেখানে এমপিদের বাসভবন তার কয়েক মিটার দূরে হামলা হয়েছে, (দালাল এমপির স্বীকারোক্তি) সেখানে সাধারণ মানুষ যায় কীভাবে ??? বাংলাদেশের মতো হামলার তেমন আশঙ্কা নেই তারপরও এমপিদের বাসভবনের কাছে কোনো সাধারণ মানুষের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই,সেখানে প্রতিনিয়ত হামলা হচ্ছে এবং আফগান পুতুল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষিত জোনের ২য় চেকপোস্টে সব সাধারণ মানুষকে নিয়ে বসিয়েছে রেখেছে !!! মিথ্যাচার ও অপলাপের একটা সীমা থাকা উচিৎ !!!

ইসলামের দুশমন শক্তি ও তাদের পাহারাদার গোয়েবলস মিডিয়াগুলো যখন সমানে এই হামলা নিয়ে মিথ্যাচার করছে,তখন পরাজিত মানসিকতাসম্পন্ন এক শ্রেণির দেউলিয়া ব্যক্তি কুফফারদের ভাষায় মুজাহিদদের ব্যাপারে বাজে কথা বকে যাচ্ছে।

কিন্তু হুজুগে বাঙ্গালিকে দেখছি কনডেম(নিন্দা) এর বস্তা নিয়ে বিলি করতে ! আবার কাউকে দেখছি, এই হামলার কারণে তারা নাকি লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে মুখ দেখাতে পারছে না !!!!

কিন্তু যখন হাজারো-লাখো নিরপরাধ মুসলিমকে ইসলামের শত্রু ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধরা গণহত্যা করে, তখন এই কনডেম(নিন্দা) ব্যবসায়ীরা তাদের কনডেম(নিন্দা) এর দোকান বন্ধ রাখে। এই কনডেম(নিন্দা) এর দোকান শুধু তখনই খোলা হয়, যখন মুজাহিদরা এসব মুসলিম হত্যার বদলা নেওয়ার জন্য ইসলামের শত্রু ও তাদের দালালদের বিরুদ্ধে কোনো বীরত্বপূর্ণ হামলা চালায়।

পরাজিত মানসিকতাসম্পন্ন এই দেউলিয়া লোকদেরকে বলবো, তোমরা তোমাদের এই ব্যবসা যত ইচ্ছা চালিয়ে যাও,এতে আল্লাহর পথের সৈনিকদের কিছুই আসে যায় না।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এই হক্ব জামা’আতের একটি বৈশিষ্ট্যই বলেছেন, “তারা নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করে না” (সূরাহ মায়িদাহ-৫৪)

এপ্রসঙ্গে গ্লোবাল জিহাদের সম্মানিত আলিম শাইখ মাক্বদিসী হাফিঃ এর একটি স্বর্ণখচিত বাক্য মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, “কাফেলা এগিয়ে চলছে, কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করছে !”

ইনশাআল্লাহ্‌, এই কাফেলা এগিয়ে চলবে বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় করে ইসলামের পতাকাকে পরিপূর্ণভাবে বিজয়ী করা পর্যন্ত বি-ইযনিল্লাহ।

*** তালিবানরা শুধু সাধারণ মানুষ মারে ???

ইসলামের শত্রুদের ব্যাপক প্রচারণার ফলে এই প্রোপাগান্ডাটি এখন শুধু কাফির কিংবা মডারেইট মুসলিম নামধারী আবর্জনাগুলোই নয় বরং অনেক সরলমনা মুসলিমরাও বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফলে উম্মাহর পক্ষে আল্লাহর পথে জিহাদে জীবন ও সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুজাহিদদেরকে ‘সাধারণ মানুষ এমনকি নিরীহ মুসলিম হত্যার মতো খতরনাক অপবাদ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

গত ২০ জানুয়ারি কাবুলের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে তালিবানরা আক্রমণ চালিয়ে বেশকিছু সংখ্যক আমেরিকানসহ কমপক্ষে ১৪ দখলদার বিদেশীকে হত্যা করেছে।

এই হামলার পরও তালিবানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছিলো যে, তালিবানরা হোটেলে আক্রমণ করে সাধারণ মানুষ মেরেছে !!!

অথচ পরে আমেরিকা ঠিকই স্বীকার করলো যে, আমেরিকা বেশকিছুসংখ্যক ব্যক্তি উক্ত হামলায় নিহত হয়েছে।

আমেরিকান নাগরিক নিহত হওয়ার সংবাদ দেখুন সিএনএন এ....

https://edition.cnn.com/2018/01/23/politics/kabul-hotel-attack/index.html

উক্ত হামলার সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তালিবান ও ইসলামের শত্রুদের মিডিয়া বিবিসিতে প্রকাশিত কিছু বক্তব্য খেয়াল করুন......

The six Taliban militants who stormed the hotel in suicide vests were looking for foreigners, eyewitnesses say.

An eyewitness, who is not being named for security reasons, told the BBC he was spared after saying he was an Afghan. "Where are the foreigners?" they shouted.

অর্থঃ “প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, ৬ তালিবান জঙ্গি (মুজাহিদ), যারা আত্মঘাতী পোশাকে সজ্জিত হয়ে হোটেলটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছে তারা বিদেশীদের খুজছিলো। নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসি’কে জানিয়েছে, সে একজন আফগান এটি বলার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা চিৎকার করে বলছিলো বিদেশীরা কোথায় ? ”

উপরোক্ত বক্তব্যের লিংক...

http://www.bbc.co.uk/news/world-asia-42796073

আলহামদুলিল্লাহ্‌, ইসলামের শত্রু ও তাদের দোসররা যতই মিথ্যাচার চালাক না কেনো, তাদের লেখার ফাঁকফোকর দিয়েই সত্য বের হয়ে আসে। আর আল্লাহ যাদের কপালে সত্য জানা ও অনুসরণ করা নসীবে রেখেছেন, তারাই শুধু সত্যের অনুসরণ করতে পারে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মিথ্যার বেড়াজাল ছিন্ন করে সত্য জানার এবং সত্যের অনুসরণের তাউফীক্ব দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১০৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File