ভালোবাসা নির্বাসনে পাঠিয়ে তারা আমাদেরকে উপহার দিয়েছে "ভালোবাসা দিবস"(!)

লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:১৬:১৭ রাত

(লেখাটি পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো !)

একটি গল্পের মাধ্যমে শুরু করা যাক, “এক দেশে এক রাজা ছিলো। তিনি সর্বদা চাইতেন কিভাবে তার রাজ্যের উন্নতি করা যায়। রাজ্যের উন্নতিকল্পে দারিদ্র্য দূরীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের সকল ভিক্ষুককে নির্বাসনে দিবেন ! সিদ্ধান্ত যেহেতু রাজার তাই আর বাঁধা দেয় কে ! সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যের সকল ভিক্ষুককে জনমানবহীন দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হলো । কিছুদিন পর নির্বাসিত ভিক্ষুকদের কষ্টের কথা চিন্তা করে রাজার মনে দয়ার উদ্রেক হলো। ভিক্ষুকদের কল্যাণের জন্য কী করা যায় !একদিকে রাজ্যের উন্নতি অন্যদিকে ভিক্ষুকদের কল্যাণ !রাজ্যের উন্নতির কথা চিন্তা করে ভিক্ষুকদেরকে যেহেতু আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, তাই রাজ্যের জ্ঞানীগুনীদের পরামর্শে নির্বাসিত ভিক্ষুকদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এবং নির্বাসনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দিনটিকে “ভিক্ষুক সংহতি দিবস” হিসেবে ঘোষণা করা হলো। প্রতি বছর দিনটিকে মহাধুমধামের সাথে পালন করা হচ্ছে। দিনটিকে কেন্দ্র করে ভিক্ষুকদের জন্য রাজার পক্ষ থেকে ভালো খাবার রান্না করে পাঠানো হচ্ছে ! আন্তর্জাতিক বিশ্ব রাজার এই মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করে বার্তা প্রেরণ করছে ! এমনকি কিছুদিন পর বিশ্বসংঘ এই দিনটির মহৎ দিক বিবেচনা করে এর স্বীকৃতি প্রদান করে । ফলে সারাবিশ্বে এই দিনটিকে “ভিক্ষুক সংহতি দিবস” হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

এবার আসেন মূল কথায়, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের কূ-প্রবৃত্তির খায়েসকে পূর্ণ করার জন্য পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। পরিণতি যা হবার তাই হল ! সন্তান জানছেনা কে তার পিতা,ফলে সন্তান যেমন পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি পিতাও সন্তানের শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। তাই পিতার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য বছরের একটি দিনকে “বাবা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করা হলো।আর ধুমধামের সাথে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে পিতার সাথে সাক্ষাৎ করে ভালোবাসা বিনিময় করে আসে।

ঠিক একই কথা মায়ের ক্ষেত্রেও ! ফলে একটি বিশেষ দিনকে “মা দিবস” হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

সংসার জীবনকে বোঝা মনে করার ফলে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা আর থাকলনা। এর বিকল্প হিসেবে বিবাহ বহির্ভূত ‘লিভটুগেদার’ করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে লাগলো। ফলে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন এবং মধুর সম্পর্ক উধাও হয়ে গেলো।আর দু’য়েকজন যাদের সংসার আছে তারাও একসাথে থাকেন না কাজের চাপে ! কিছুদিন পরপর দেখা হয় তাদের। ভালোবাসার প্রকাশ যেহেতু জরুরী তাই হাতে গোনা যাদের পরিবার আছে তারা “ম্যারিজ ডে”কে তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা বিনিময়ের দিবস হিসেবে ঠিক করে নেয়। আর যাদের পুরো জীবনই ব্যাচেলর-স্পিনস্টার(অবিবাহিতা) হিসেবে কাটে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য তারাও একটি সুমহান দিনকে বেছে নিয়েছে। আর এই সুমহান দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যের নিরংকুশ হাতিয়ার মিডিয়া সাম্রাজ্যকে ব্যবহার করে।ফলে সারাবিশ্বে অতিদ্রুত এই মহৎ দিনটির মহত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে।আর দীর্ঘদিন ধরে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ মুসলিম জাতিও তার স্বকীয়তা হারিয়ে আমদানী করা দিবসে ভালোবাসা বেচা-কেনায় তৎপর হয়ে উঠেছে।

মুসলিমদের একটা বড় অংশ আবার এসব দিবসের বিপরীতে তাদের নিজস্ব ভার্সন আবিষ্কার করে ফেলেছে।তারা দিবস পালনের মহড়ায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার লক্ষ্যে ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন যুগান্তকারী দিনকে বিভিন্ন দিবস পালনের জন্য ঠিক করে নিয়েছে। তাইতো দেখি বদরের আদর্শকে সম্পূর্ণ নির্বাসনে দিয়ে “বদর দিবস” পালনের ঈমানী দায়িত্ব নিয়ে মহাব্যস্ত !

আবার ‘মসজিদে আকসা’ হাতছাড়া হওয়ার দিনটিকে “কুদস দিবস” হিসেবে পালন করা হচ্ছে অথচ উম্মাহ ভুলে গেছে আমাদের প্রথম কিবলা পুনরুদ্ধারের জিহাদে নিজেকে উৎসর্গ করাকে !উম্মাহ যুগের নতুন ‘আইউবী’ তৈরির পাঠশালা জিহাদের ময়দানকে পরিত্যক্ত করে রেখেছে ! একইভাবে মানবতার সুমহান শিক্ষক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর বিশ্বজয়ী আদর্শকে নির্বাসনে পাঠিয়ে মহাসমারোহে পালন করছি তার কথিত “জন্মবার্ষিকী”কে !

মুসলিম জাতির বিজয় ও ঐক্যের প্রতীক “খিলাফত”কে হারিয়ে পালন করছে “খিলাফত দিবস”! হারানো খিলাফত পূনরুদ্ধারের পথকে নির্বাসনে পাঠিয়ে জাহান্নামের পথ গ্রহণ করাকেই “ইসলামী আন্দোলন” বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে!

এভাবেই কুফফাররা পারিবারিক ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে উপহার দিয়েছে “বাবা দিবস”, “মা দিবস” “ম্যারিজ ডে” কিংবা “ভ্যালেন্টাইন ডে” !

আর আমরাও জিহাদকে নির্বাসনে পাঠিয়ে উপহার দিয়েছি “বদর দিবস” আর “কুদস দিবস”!রাসূলের(সা.) সুন্নাহকে নির্বাসনে পাঠিয়ে উপহার দিয়েছি “জন্মবার্ষিকী”!খিলাফত কায়েমের কোশেশ বাদ দিয়ে উপহার দিয়েছি“খিলাফত দিবস”।

গাফলতি ও অজ্ঞতার এই মহানিদ্রা থেকে জাগ্রত না হলে এভাবেই কুফফাররা একদিন হয়তো আমাদের ঈমানকে নির্বাসনে পাঠিয়ে উপহার দিতে পারে “ঈমান ও সংহতি দিবস” !

বিষয়: বিবিধ

১৫৩০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

176799
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:২৯
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File