ঢাকায় ‘মনোরঞ্জন’ করতে এসে অবরুদ্ধ নারায়ণগঞ্জের হিন্দু ডিসি মনোজ কান্তি বড়াল
লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৪১:২৮ সকাল
রাজধানীতে ‘মনোরঞ্জন’ করতে এসে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল। খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ায় একটি ফ্ল্যাটের ভেতরে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে। তবে জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন- তার পেছনে শত্রু লেগেছে। শত্রুরাই তাকে হেনস্তা করতে এই ‘রিউমার’টি ছড়িয়েছে। তার বাসাতেও হামলা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার এ ব্লকের ১৮ নম্বর সড়কের ৬৩/২ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ছোট বোন তুলি (৩২) ও বৃদ্ধা মা রুমাকে নিয়ে থাকেন প্রগতি মণ্ডল বালা (৩৮) নামে এক নারী। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই বাসায় অবিবাহিত দুই বোন দীর্ঘ দিন থেকে অবৈধ কাজকর্ম করে আসছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন একজোট হয়ে ওই বাসার গেট তালাবদ্ধ করে দেন। তাদের অভিযোগ, রাত থেকে ওই বাসায় এক লোক এসে অবস্থান করছে। তারা জানতে পেরেছেন বাসার ভেতরে খারাপ কাজ চলছে। পরে খবর পেয়ে খিলগাঁও থানার পুলিশ গিয়ে ওই বাসার তালা ভেঙে ভেতর থেকে এক ব্যক্তিকে প্রথমে আটক করে। পরে আটককৃত ব্যক্তি নিজেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলে পরিচয় দেন। পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে দুপুর একটার দিকে মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শফিকুল আলম নিজের গাড়িতে করে মনোজ কান্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। পরে মতিঝিলের উপ-কমিশনারের কার্যালয় থেকে মনোজ কান্তি বড়াল নিজ দায়িত্বে চলে যান।
গতকাল দুপুরে ওই বাসার সামনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের ভিড় দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রগতি মণ্ডল বালা জানান, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। কোন শত্রু তাদের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার করছে বলে তিনি দাবি করেন। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল তাদের আত্মীয়। তিনি মাঝে মধ্যেই তাদের বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালেও তিনি বেড়াতে এসেছিলেন। প্রগতি রানী জানান, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি। গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন।
এদিকে স্থানীয় হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, তারা জানতে পেরেছেন সকালে এক ব্যক্তি এম্বুলেন্সে করে এসে ওই বাসার সামনে নামেন। পরে তিনি দ্বিতীয় তলার ওই বাসায় ঢুকলে ভেতরে অবৈধ কাজকর্ম হচ্ছে বলে খবর রটে যায়। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রতিবেশী শমসের উদ্দিন জুগু জানান, তারা জানতে পেরেছেন রাত থেকে ওই ব্যক্তি প্রগতিদের বাসায় অবস্থান করছেন। এলাকায় খবরটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকার তরুণ-যুবকরা বাসাটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে পুলিশে খবর দেয়।
জেলা প্রশাসককে উদ্ধারকারী পুলিশের মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শফিকুল আলম এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপ-কমিশনার আশরাফুজ্জামান বলেন, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝির বিষয়। পুলিশ তাকে ওই বাসা থেকে ‘রেসকিউ’ করেছে। পরে তিনি নিজ দায়িত্বে চলে গেছেন। মনোজ কান্তি বড়ালের বরাত দিয়ে উপ-কমিশনার বলেন, তার এই মাসী (প্রগতির মা) অসুস্থ হওয়ায় তিনি তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। এছাড়া, জেলা প্রশাসক তাদের মাঝে মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করেন। গতকাল সকালে তিনি এবং নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন একসঙ্গে ঢাকায় আসেন বলে উপ-কমিশনারকে জানিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. দুলাল চন্দ্র চৌধুরী একসঙ্গে ঢাকায় আসার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বুধবার তার সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে আর কোন কথা বা দেখাও হয়নি। তিনি একাই ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে এসেছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ না ছাপাতে অনুরোধ করেন। পরে তিনি বলেন, তার পেছনে শত্রু লেগেছে। শত্রুরাই তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে এসব ‘রিউমার’ ছড়িয়েছে। দেহরক্ষী ও গাড়ি না নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি ডিসি’র বাংলোতে থাকলেও তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা সবাই ঢাকায় থাকেন। তার বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই ঢাকায় গিয়ে মনোরঞ্জন করার এমন ‘রিউমার’ নারায়ণগঞ্জেও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রঃমানবজমিন Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৬১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন